ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামো কাকে বলে?

ডায়নামো হলো এমন এক ধরণের যন্ত্র যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং কন্ডাক্টরের আপেক্ষিক গতির নীতির উপর কাজ করে। যখন কন্ডাক্টর চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে ঘোরে, তখন তাতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে থাকে। এই বিদ্যুৎ প্রবাহই ডায়নামো থেকে পাওয়া যায়।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামো হলো একটি যন্ত্র যা যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। এটি বিদ্যুৎ জেনারেটর নামেও পরিচিত। ডায়নামো বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা কমিউটেটর ব্যবহার করে সরাসরি ডিসি বিদ্যুৎ (DC) তৈরি করে।

ডায়নামোগুলি বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়, ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে শুরু করে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি

ডায়নামো কত প্রকার ও কি কি?

ডায়নামো হলো এমন এক ধরণের যন্ত্র যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। প্রধানত দুই ধরণের ডায়নামো আছে এসি ডায়নামো এবং ডিসি ডায়নামো।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামো দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে। যেমন:

1. রোটরের ধরন অনুসারে:

  • Brushed ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলিতে, রোটর এবং স্টেটরের মধ্যে ঘর্ষণ তৈরি করতে ব্রাশ ব্যবহার করা হয়। Brushed ডায়নামোগুলি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের, তবে এগুলি AC ডায়নামোর তুলনায় কম দক্ষ এবং বেশি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

  • Brushless ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলিতে রোটর এবং স্টেটরের মধ্যে কোন ব্রাশ নেই। Brushless ডায়নামোগুলি brushed ডায়নামোর তুলনায় বেশি দক্ষ এবং টেকসই, তবে এগুলি বেশি ব্যয়বহুল।

2. উৎপন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহের ধরন অনুসারে:

  • AC ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC) বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। AC বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্রুত গতিতে দিক পরিবর্তন করে।  বিদ্যুৎ গ্রিডে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সাধারণত AC বিদ্যুৎ।
  • DC ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি ডিরেক্ট কারেন্ট (DC) বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। DC বিদ্যুৎ প্রবাহ কেবল একটি দিকে চলে। ব্যাটারিগুলো DC বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
  • AC/DC ডায়নামো: AC এবং DC উভয় বিদ্যুৎই উৎপাদন করতে পারে।

এছাড়াও, ডায়নামোগুলি আরও নির্দিষ্টভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে তাদের আকার, ডিজাইন, এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে। কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:

1. কুণ্ডলীর সংখ্যা অনুযায়ী:

  • একক কুণ্ডলী ডায়নামো: একটিমাত্র কুণ্ডলী ব্যবহার করে।
  • বহু কুণ্ডলী ডায়নামো: একাধিক কুণ্ডলী ব্যবহার করে।

2. চৌম্বক ক্ষেত্রের ধরণ অনুযায়ী:

  • স্থির চৌম্বক ডায়নামো: স্থির চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে।
  • বিদ্যুৎচৌম্বক ডায়নামো: বিদ্যুৎচৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে।

3. রোটরের আকৃতি অনুযায়ী:

  • সিলিন্ড্রিক্যাল রোটর ডায়নামো: সিলিন্ডার আকৃতির রোটর ব্যবহার করে।
  • ডিস্ক রোটর ডায়নামো: ডিস্ক আকৃতির রোটর ব্যবহার করে।

4. ব্যবহার অনুযায়ী:

  • বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডায়নামো: বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
  • ব্যাটারি চার্জিং ডায়নামো: ব্যাটারি চার্জ করার জন্য।
  • ওয়েল্ডিং ডায়নামো: ওয়েল্ডিং করার জন্য।
  • ইলেকট্রোপ্লেটিং ডায়নামো: ইলেকট্রোপ্লেটিং করার জন্য।
  • মোটর-ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি মোটর হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
  • স্থির চৌম্বক ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি স্টেটর তৈরি করতে স্থায়ী চৌম্বক ব্যবহার করে।
  • হাই-ভোল্টেজ ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি উচ্চ-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
  • লো-ভোল্টেজ ডায়নামো: এই ডায়নামোগুলি নিম্ন-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

ডায়নামোর সুবিধা ও অসুবিধাঃ

ডায়নামোর সুবিধা:

  • তুলনামূলকভাবে সহজ নকশা: ডায়নামোর নকশা তুলনামূলকভাবে সহজ, যার ফলে এগুলো তৈরি করা সহজ এবং কম খরচে হয়।
  • কম রক্ষণাবেক্ষণ: ডায়নামোগুলোতে চলমান অংশের সংখ্যা কম থাকে, যার ফলে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ।

  • দীর্ঘায়ু: ডায়নামোগুলো দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে, যার ফলে এগুলো ব্যবহারের জন্য একটি ভাল বিনিয়োগ।

  • টেকসই: এগুলি মজবুত এবং টেকসই, যার ফলে এগুলিকে কঠিন পরিস্থিতিতেও ব্যবহার করা যায়।

  • কম খরচে উৎপাদন: ডায়নামোগুলো তৈরি করতে কম খরচ হয়, যার ফলে এগুলো কম দামে পাওয়া যায়।

  • বিভিন্ন ধরণের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে: ডায়নামো DC, AC, বা AC/DC বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

  • জ্বালানির প্রয়োজন নেই: ডায়নামোকে চালানোর জন্য কোনো জ্বালানির প্রয়োজন হয় না, কারণ এগুলি যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়: ডায়নামোগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যাটারি চার্জিং, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রোপ্লেটিং ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।

  • পরিবেশবান্ধব: ডায়নামো পরিবেশবান্ধব কারণ এগুলি থেকে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ হয় না যা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।

ডায়নামোর অসুবিধা:

  • বড় আকারের ডায়নামোগুলো ভারী: বড় আকারের ডায়নামোগুলো ভারী এবং স্থাপন করা কঠিন হয়।

  • কম দক্ষতা: ডায়নামোগুলোর দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম, যার অর্থ হল যে এগুলি ইনপুট শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাপ হিসাবে হারিয়ে ফেলে। যার ফলে এগুলো বেশি বিদ্যুৎ অপচয় করে। ডায়নামোর দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম।

  • স্পন্দন (ripple) সমস্যা: DC ডায়নামোগুলোতে স্পন্দন (ripple) সমস্যা থাকে, যা কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

  • শব্দ দূষণ: ডায়নামোগুলো চলার সময় শব্দ করে, যা শব্দ দূষণের কারণ হতে পারে।

  • ভারী এবং বড়: ডায়নামো সাধারণত ভারী এবং বড় হয়, যার ফলে এগুলিকে পরিবহন এবং স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

  • আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত: আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অল্টারনেটর (Alternator) ব্যবহার করা হয়, যা ডায়নামোগুলোর তুলনায় বেশি দক্ষ এবং কম শব্দ করে।

  • নিয়ন্ত্রণের অভাব: ডায়নামো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

ডায়নামোর সুবিধা এবং অসুবিধা নির্ভর করে ডায়নামোর আকার, ধরণ, এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রের উপর। ডায়নামো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

AC ডায়নামো ও DC ডায়নামোর সুবিধা ও অসুবিধা:

AC ডায়নামো:

সুবিধা:

  • দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সহজ: AC বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন ক্ষতির পরিমাণ কম।
  • উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা সহজ: AC বিদ্যুৎকে সহজেই উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা যায়, যা দীর্ঘ দূরত্বে ট্রান্সমিশনের জন্য প্রয়োজন।
  • সাধারণ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: বেশিরভাগ আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি AC বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়।
  • মোটর তৈরি করা সহজ: AC মোটর তৈরি করা DC মোটরের তুলনায় সহজ এবং কম খরচে হয়।
  • উচ্চ দক্ষতা: AC ডায়নামোগুলি DC ডায়নামোগুলির তুলনায় বেশি দক্ষ। এর মানে হলো এগুলি কম শক্তি নষ্ট করে এবং বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
  • কম ঘর্ষণ: AC ডায়নামোগুলি DC ডায়নামোগুলির তুলনায় কম ঘর্ষণ তৈরি করে। এর ফলে এগুলি কম শব্দ করে এবং কম তাপ উৎপন্ন করে।
  • দীর্ঘ জীবনকাল: AC ডায়নামোগুলি DC ডায়নামোগুলির তুলনায় দীর্ঘ জীবনকাল থাকে। 
  • কম স্পার্কিং: AC ডায়নামোগুলি DC ডায়নামোগুলির তুলনায় কম স্পার্কিং তৈরি করে। এর ফলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কম থাকে।
  • দীর্ঘ ট্রান্সমিশন দূরত্ব: AC বিদ্যুৎ দীর্ঘ দূরত্বে ট্রান্সমিট করা সহজ।

অসুবিধা:

  • স্পন্দন (ripple) সমস্যা: AC বিদ্যুতে স্পন্দন (ripple) থাকে, যা কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • তুলনামূলকভাবে জটিল নকশা: DC ডায়নামোর তুলনায় AC ডায়নামোর নকশা জটিল।
  • বেশি রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন: AC ডায়নামো গুলোতে DC ডায়নামোগুলোর তুলনায় বেশি রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
  • কম দক্ষতা: AC ডায়নামোগুলোর দক্ষতা DC ডায়নামোগুলোর তুলনায় কম।
  • সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে না: AC ডায়নামোগুলি সরাসরি DC ডিভাইসগুলিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। 
  • গতি নিয়ন্ত্রণ জটিল: AC ডায়নামোগুলির গতি নিয়ন্ত্রণ করা DC ডায়নামোগুলির তুলনায় জটিল।
  • টর্ক নিয়ন্ত্রণ জটিল: AC ডায়নামোগুলির টর্ক নিয়ন্ত্রণ করা DC ডায়নামোগুলির তুলনায় জটিল।

DC ডায়নামো:

সুবিধা:

  • স্পন্দন (ripple) মুক্ত বিদ্যুৎ: DC বিদ্যুতে স্পন্দন (ripple) থাকে না, যা এটিকে স্পন্দন-সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
  • সহজ নকশা: AC ডায়নামোর তুলনায় DC ডায়নামোর নকশা সহজ।
  • কম রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন: AC ডায়নামোগুলোর তুলনায় DC ডায়নামোগুলোতে কম রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
  • বেশি দক্ষতা: AC ডায়নামোগুলোর তুলনায় DC ডায়নামোগুলোর দক্ষতা বেশি।
  • সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে: DC ডায়নামোগুলি ব্যাটারি এবং অন্যান্য DC ডিভাইসগুলিকে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
  • গতি নিয়ন্ত্রণ সহজ: DC ডায়নামোগুলির গতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • টর্ক নিয়ন্ত্রণ সহজ: DC ডায়নামোগুলির টর্ক সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

অসুবিধা:

  • দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন: AC বিদ্যুতের তুলনায় DC বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
  • উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা কঠিন: AC বিদ্যুতের তুলনায় DC বিদ্যুৎকে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা কঠিন।
  • সাধারণ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়: বেশিরভাগ আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি AC বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়।
  • মোটর তৈরি করা জটিল: AC মোটর তৈরি করা DC মোটরের তুলনায় জটিল এবং বেশি খরচে হয়।
  • কম দক্ষতা: DC ডায়নামোগুলি AC ডায়নামোগুলির তুলনায় কম দক্ষ।
  • বেশি ঘর্ষণ: DC ডায়নামোগুলি AC ডায়নামোগুলির তুলনায় বেশি ঘর্ষণ তৈরি করে।
  • ছোট জীবনকাল: DC ডায়নামোগুলি AC ডায়নামোগুলির তুলনায় ছোট জীবনকাল থাকে।
  • বেশি স্পার্কিং: DC ডায়নামোগুলি AC ডায়নামোগুলির তুলনায় বেশি স্পার্কিং তৈরি করে।
  • ছোট ট্রান্সমিশন দূরত্ব: DC বিদ্যুৎ দীর্ঘ দূরত্বে ট্রান্সমিট করা কঠিন।

AC (Alternating Current) ডায়নামোগুলি বিদ্যুৎ গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য বেশি উপযুক্ত কারণ এগুলি দক্ষ, দীর্ঘ জীবনকাল এবং দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ ট্রান্সমিট করতে পারে।

DC (Direct Current) ডায়নামোগুলি ব্যাটারি চার্জ করার জন্য এবং কিছু বিশেষ অ্যাপ্লিকেশনে যেখানে সরাসরি DC (Direct Current) বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়, সেখানে বেশি উপযোগী।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ডায়নামোর ব্যবহার:

ডায়নামো হলো একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা চৌম্বক ক্ষেত্র এবং গতির মাধ্যমে DC (Direct Current) বিদ্যুৎ তৈরি করে।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামোর ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক, যার মধ্যে রয়েছে:

1. বিদ্যুৎ উৎপাদন:

  • ছোট আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে: ডায়নামো ব্যবহার করে ছোট আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
  • দূরবর্তী এলাকায়: যেখানে বিদ্যুৎ গ্রিডের অ্যাক্সেস নেই, সেখানে ডায়নামো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

  • নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন: জলবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি, এবং সৌরশক্তির মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • বিদ্যুৎ গ্রিড: AC ডায়নামোগুলি বিদ্যুৎ গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।

  • বিকল্প শক্তি: উইন্ড টারবাইন এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি ডায়নামো ব্যবহার করে বাতাস এবং জলের শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে।

  • ছোট-স্কেল বিদ্যুৎ সরবরাহ: ডায়নামোগুলি দূরবর্তী এলাকায় বা জরুরী পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

2. ব্যাটারি চার্জিং:

  • গাড়ির ব্যাটারি: গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।
  • সোলার ব্যাটারি: সৌরশক্তি ব্যবহার করে চার্জ করা ব্যাটারি চার্জ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।
  • ব্যাকআপ ব্যাটারি: বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ব্যবহারের জন্য ব্যাকআপ ব্যাটারি চার্জ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

3. ওয়েল্ডিং:

ডায়নামোগুলি ওয়েল্ডিং করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার অর্থ হল ধাতুর দুটি টুকরোকে একসাথে গলে জোড়া দেওয়া।

  • আর্ক ওয়েল্ডিং: আর্ক ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।
  • রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং: রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।
  • স্পট ওয়েল্ডিং: স্পট ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

4. ইলেকট্রোপ্লেটিং:

  • ডায়নামোগুলি ধাতুগুলিকে ইলেকট্রোপ্লেট করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার অর্থ হল একটি ধাতুর পাতলা স্তর দিয়ে অন্য ধাতুকে আবৃত করা।

  • ধাতুতে ধাতু লেপনের জন্য ইলেকট্রোপ্লেটিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির উপর ধাতু লেপনের জন্য ইলেকট্রোপ্লেটিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • গয়না তৈরির জন্য ইলেকট্রোপ্লেটিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

5. যানবাহন:

  • ব্যাটারি চার্জিং: কিছু যানবাহনে DC ডায়নামো ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ করতে এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।

  • সাইকেল ডায়নামো: সাইকেলের হুইলের ঘূর্ণনের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা যেতে পারে।

6. অন্যান্য ব্যবহার:

  • রেলওয়ে সিগন্যাল: রেলওয়ে সিগন্যাল সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • মেরিন লাইট: সমুদ্রে জাহাজের জন্য পথ দেখানোর জন্য মেরিন লাইট সরবরাহ করার জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • ছোট ইলেকট্রিক মোটর: ছোট ইলেকট্রিক মোটর চালানোর জন্য ডায়নামো ব্যবহার করা হয়।

  • ব্যাটারি চার্জার: ডায়নামোগুলি ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন গাড়ির ব্যাটারি বা সৌর ব্যাটারি।

  • মেটাল ডিটেক্টর: কিছু ধরণের মেটাল ডিটেক্টর ডায়নামোগুলি ব্যবহার করে কাজ করে।

ডায়নামোর ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে কারণ AC  (Alternating Current) জেনারেটর বেশি দক্ষ এবং কম ব্যয়বহুল। বিকল্প হিসাবে অল্টারনেটর ব্যবহার করা হয়। তবে, এখনও কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যেখানে ডায়নামোগুলি AC জেনারেটরের তুলনায় বেশি উপযোগী।

আরও পড়ুনঃ স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামোর ভবিষ্যৎ:

ডায়নামো আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কম ব্যবহৃত হয়। কারণ অল্টারনেটর (Alternator) ডায়নামোর চেয়ে বেশি দক্ষ এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। ভবিষ্যতে ডায়নামোর ব্যবহার আরও কমে যেতে পারে, কারণ অল্টারনেটর এবং অন্যান্য আরও উন্নত প্রযুক্তি আরও বেশি উন্নত হবে।

তবে, ডায়নামোর সহজ নকশা এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কারণে কিছু ক্ষেত্রে এটি বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হবে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি

ডায়নামোর মূলনীতি কি?

ডায়নামো হলো একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা চৌম্বক ক্ষেত্র এবং গতির মাধ্যমে DC (Direct Current) বিদ্যুৎ তৈরি করে। ডায়নামো একটি যন্ত্র যা চৌম্বক আবেশ নীতি ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে।

ফ্যারাডের সূত্র অনুসারে, চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি পরিবাহী তার কে গতি দেওয়া হলে তারে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ডায়নামোতে, কয়েকটি কুণ্ডলী (coils) একটি রোটরের উপরে স্থাপন করা থাকে। রোটরটি একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘোরানো হয়।

কুণ্ডলীগুলোর মধ্য দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়, যার ফলে কুণ্ডলীগুলোতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কমিউটেটর নামক একটি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে AC  (Alternating Current) বিদ্যুৎ কে DC (Direct Current) বিদ্যুতে রূপান্তর করা হয়।

আরও পড়ুনঃ এবার নিজেই তৈরি করুন একটি ওয়াকি-টকি

ডায়নামোর মূলনীতির আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

  • চৌম্বক ক্ষেত্র: ডায়নামোতে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য স্থায়ী চৌম্বক অথবা বিদ্যুৎচৌম্বক ব্যবহার করা হয়। ডায়নামোতে চৌম্বক থাকে যা একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্র স্থির (Brushed ডায়নামো) বা ঘূর্ণায়মান (Brushless ডায়নামো) হতে পারে।
  • কন্ডাক্টর: কন্ডাক্টর (যেমন তামার তার) চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গতিতে থাকে। এই গতি কন্ডাক্টরে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে। গতির দিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের অবস্থান বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক নির্ধারণ করে।
  • কুণ্ডলী: ডায়নামোতে কয়েকটি কুণ্ডলী (coils) একটি রোটরের উপরে স্থাপন করা থাকে। কুণ্ডলীগুলো তামার তার দিয়ে তৈরি হয়।

  • রোটর: রোটর হলো ডায়নামোর ঘূর্ণায়মান অংশ। রোটর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘোরানো হয়।

  • গতি: রোটর ঘোরার সময়, কুণ্ডলীগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গতি করে।

  • চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন: রোটর ঘোরার ফলে কুণ্ডলীগুলোর মধ্য দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়।

  • বিদ্যুৎ প্রবাহ: ফ্যারাডে'র সূত্র অনুসারে, চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন কুণ্ডলীগুলোতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।

  • বিদ্যুৎ সংগ্রহ: কন্ডাক্টরের অন্তগুলিতে স্লিপ রিং বা কম্যুটেটর থাকে। এই যন্ত্রাংশগুলি চলমান কন্ডাক্টর থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে এবং ব্যবহারযোগ্য আউটপুট তৈরি করে।
  • AC বা DC বিদ্যুৎ: কন্ডাক্টরের গতির ধরণ নির্ধারণ করে যে ডায়নামোটি AC (Alternating Current) নাকি DC (Direct Current) বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। Brushed ডায়নামোগুলি সাধারণত DC বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, Brushless ডায়নামোগুলি AC বা DC বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে।
  • কমিউটেটর: কমিউটেটর হলো একটি যন্ত্রাংশ যা AC বিদ্যুৎ কে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে।

ডায়নামোর মূলনীতি অপেক্ষাকৃত সহজ। ডায়নামো তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং কম খরচে হয়। ডায়নামোগুলো দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। ডায়নামোগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি কার্যকর এবং তুলনামূলকভাবে সহজ পদ্ধতি। তবে, AC জেনারেটর আজকাল বেশি জনপ্রিয় কারণ এগুলি বেশি দক্ষ এবং কম ব্যয়বহুল।

আরও পড়ুনঃ সেন্সর কি? সেন্সর কত প্রকার ও কি কি? সেন্সর এর কাজ কি? সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ডায়নামোর কার্যকারিতা কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

ডায়নামোর কার্যকারিতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে:

1. চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা:

  • ডায়নামোতে ব্যবহৃত চৌম্বক ক্ষেত্র যত বেশি শক্তিশালী হবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

  • স্থায়ী চৌম্বক অথবা বিদ্যুৎচৌম্বক ব্যবহার করে চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

  • শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র কন্ডাক্টরে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।

2. কুণ্ডলীর সংখ্যা:

  • ডায়নামোতে যত বেশি কুণ্ডলী থাকবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

  • কুণ্ডলীর আকার এবং তামার তারের পুরুত্বও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

3. রোটরের ঘূর্ণন গতি:

  • রোটর যত দ্রুত ঘোরে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

  • রোটরের ঘূর্ণন গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদ্যুতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

4. কন্ডাক্টরের দৈর্ঘ্য এবং আকার:

  • দীর্ঘ এবং মোটা কন্ডাক্টর বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • দীর্ঘ এবং মোটা কন্ডাক্টর চৌম্বক ক্ষেত্রের বেশি অংশ ছেদ করে এবং কম প্রতিরোধ প্রদান করে, যার ফলে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হয়।

5. কন্ডাক্টরের গতি:

  • কন্ডাক্টর যত দ্রুত গতিতে চলবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

  • দ্রুত গতিতে কন্ডাক্টর চৌম্বক ক্ষেত্রের বেশি রেখা ছেদ করে, যার ফলে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হয়।

6. লোড:

  • ডায়নামোতে যত বেশি লোড থাকবে, তত কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

  • লোডের সাথে ডায়নামোর সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

7. তাপমাত্রা:

  • তাপমাত্রা বৃদ্ধি ডায়নামোর দক্ষতা কমিয়ে দেয়।

  • ডায়নামোকে শীতল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

8. ঘর্ষণ:

  • ডায়নামোর বিভিন্ন অংশে ঘর্ষণ ডায়নামোর দক্ষতা কমিয়ে দেয়।

  • নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এর মাধ্যমে ঘর্ষণ কমানো সম্ভব।

9. ডায়নামোর নকশা:

  • কার্যকর নকশা করা হলে ডায়নামো বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • একটি ভাল নকশা করা ডায়নামোতে চৌম্বক ক্ষেত্র কন্ডাক্টরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকে, কম ঘর্ষণ হয় এবং বিদ্যুৎ ক্ষতি কম হয়।

শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র, দ্রুত গতিশীল কন্ডাক্টর, দীর্ঘ এবং মোটা কন্ডাক্টর এবং কার্যকর নকশা একটি ডায়নামোকে বেশি কার্যকর করে তোলে।

আরও পড়ুনঃ রাডার কি? রাডার কিভাবে কাজ করে? রাডার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামো কীভাবে কাজ করে?

ডায়নামোতে দুটি প্রধান উপাদান থাকে স্টেটর এবং রোটর। স্টেটর হলো একটি স্থির চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে এমন একটি কুণ্ডলী। রোটর হলো একটি ঘূর্ণায়মান কুণ্ডলী যা স্টেটরের চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরে। যখন রোটর ঘোরে, তখন এটি কুণ্ডলীতে একটি বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে। এই বিদ্যুৎ প্রবাহটি তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামো একটি যন্ত্র যা চৌম্বক আবেশ নীতি ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। যখন আর্মেচার চুম্বকীয় ক্ষেত্রে ঘোরে, তখন তাতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কমিউটেটর বা স্লিপ রিং এই প্রবাহ সংগ্রহ করে এবং তা বাহ্যিক সার্কিটে পাঠায়।

ডায়নামো কাজ করার প্রক্রিয়া:

1. চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি:

  • ডায়নামোতে স্থায়ী চৌম্বক অথবা বিদ্যুৎচৌম্বক ব্যবহার করে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা হয়।

  • ডায়নামোতে চৌম্বক থাকে যা একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্র স্থির (Brushed ডায়নামো) বা ঘূর্ণায়মান (Brushless ডায়নামো) হতে পারে।

2. কুণ্ডলী:

  • ডায়নামোতে কয়েকটি কুণ্ডলী (coils) একটি রোটরের উপরে স্থাপন করা থাকে। কুণ্ডলীগুলো তামার তার দিয়ে তৈরি হয়।

3. কন্ডাক্টরের গতি:

  • কন্ডাক্টর (যেমন তামার তার) চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গতিতে থাকে।

  • এই গতি কন্ডাক্টরে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে। গতির দিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের অবস্থান বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক নির্ধারণ করে।

4. রোটর:

  • রোটর হলো ডায়নামোর ঘূর্ণায়মান অংশ। রোটর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘোরানো হয়।

5. গতি:

  • রোটর ঘোরার সময়, কুণ্ডলীগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গতি করে।

6. চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন:

  • রোটর ঘোরার ফলে কুণ্ডলীগুলোর মধ্য দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়।

7. বিদ্যুৎ প্রবাহ:

  • ফ্যারাডে'র সূত্র অনুসারে, চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন কুণ্ডলীগুলোতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।

8. বিদ্যুৎ সংগ্রহ:

  • কন্ডাক্টরের অন্তগুলিতে স্লিপ রিং বা কম্যুটেটর থাকে।

  • এই যন্ত্রাংশগুলি চলমান কন্ডাক্টর থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে এবং ব্যবহারযোগ্য আউটপুট তৈরি করে।

9. AC বা DC বিদ্যুৎ:

  • কন্ডাক্টরের গতির ধরণ নির্ধারণ করে যে ডায়নামোটি AC (Alternative Current) নাকি DC (Direct Current) বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • Brushed ডায়নামোগুলি সাধারণত DC বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। Brushless ডায়নামোগুলি AC বা DC বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে।

10. কমিউটেটর:

  • কমিউটেটর হলো একটি যন্ত্রাংশ যা AC বিদ্যুৎ কে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে।

ডায়নামোর কাজ করার ধাপগুলো সংক্ষেপে:

  • চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি।

  • কুণ্ডলীগুলো ঘোরে।

  • চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়।

  • বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।

  • কমিউটেটর AC বিদ্যুৎ কে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে।

ডায়নামো কে আবিষ্কার করেন?

ইংরেজ পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৩১ সালে ডায়নামো আবিষ্কার করেন। তিনি একটি স্থায়ী চুম্বকের চারপাশে একটি ঘূর্ণমান কয়েল ব্যবহার করে প্রথম সরাসরি তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন করেন। ফ্যারাডের এই আবিষ্কার বৈদ্যুতিক শক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।

ফ্যারাডে'র আবিষ্কারের আগে, বিজ্ঞানীরা ব্যাটারি এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতেন। এই পদ্ধতিগুলি ছিল ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর। ফ্যারাডে'র ডায়নামো একটি সহজ এবং আরও কার্যকর উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার উপায় প্রদান করে।

তিনি বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকত্বের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছিলেন যখন তিনি আবিষ্কার করেন যে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি পরিবাহী তার (তামার তার) কে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করা সম্ভব। 

এই আবিষ্কারটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছিল এবং আধুনিক বিশ্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ফ্যারাডে'র ডায়নামোর মূল নীতিটি ছিল বিদ্যুৎ-চৌম্বক প্ররোচনা। এই নীতি অনুসারে, একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি পরিবাহী তার ঘুরালে তারের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়।

ফ্যারাডে'র আবিষ্কারের পর থেকে, ডায়নামোগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যানবাহন এবং এমনকি সাইকেলেও ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য যে, ফ্যারাডে ছিলেন একজন ব্রিটিশ পদার্থবিদ এবং রসায়নবিদ। তিনি বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকত্বের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন।

ফ্যারাডের ডায়নামো তামার তারের একটি কুণ্ডলী নিয়ে গঠিত ছিল যা একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরানো হয়েছিল। ঘূর্ণন চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তন করে, যা তারে একটি বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত করে। এই প্রবাহটি তারপরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়।

ফ্যারাডের আবিষ্কারের পর থেকে, ডায়নামোর নকশা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। আধুনিক ডায়নামোগুলি আরও দক্ষ এবং শক্তিশালী, এবং সেগুলি বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যানবাহন এবং পোর্টেবল ইলেকট্রনিক ডিভাইস।

আরও পড়ুনঃ গাড়ির রেডিয়েটর ভালো রাখার উপায়

ডায়নামো তে কোন শক্তি কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়?

ডায়নামোতে, যান্ত্রিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

এটি ফ্যারাডে'র 'ল' অফ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইনডাকশন দ্বারা সম্ভব হয়, যা বলে যে একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি পরিবাহী তারের মধ্যে একটি বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত হয়।

ডায়নামোতে, ঘূর্ণায়মান শ্যাফট একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি তারের কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়, যা বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত করে। বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ ঘূর্ণন গতি এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির উপর নির্ভর করে।

আরও পড়ুনঃ যে লক্ষণে বুঝবেন গাড়ির ইঞ্জিন ভালো নেই

ডায়নামোর অংশ:

ডায়নামোর বেশ কিছু অংশ রয়েছে যা একসাথে কাজ করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রধান অংশগুলি হল:

  • আর্মেচার: আর্মেচার হল ডায়নামোর ঘূর্ণায়মান অংশ। এটি তামার তারের কয়েকটি কুণ্ডলী নিয়ে গঠিত যা চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরে।

  • ফিল্ড ম্যাগনেট: ফিল্ড ম্যাগনেট হল একটি শক্তিশালী চৌম্বক যা আর্মেচারের চারপাশে থাকে। এটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত করে।

  • কম্যুটেটর: এটি আর্মেচারের শেষে অবস্থিত একটি কপার রিং। এটি ডায়নামো থেকে উৎপন্ন এসি বিদ্যুৎকে ডিসি বিদ্যুতে রূপান্তর করে।

  • স্থায়ী চুম্বক: এটি ডায়নামোর ভিতরে অবস্থিত এবং একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই ক্ষেত্রটি আর্মেচারের তারের মধ্য দিয়ে ঘূর্ণায়মান হলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • ব্রাশ: ব্রাশ হল পরিবাহী সংযোগ যা কম্যুটেটরের সাথে যোগাযোগ করে। তারা আর্মেচার থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহ বহন করে। ব্রাশ বিদ্যুতের প্রবাহ পরিচালনা করে। ব্রাশ কমুটেটর থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে এবং এটিকে ডায়নামোর বাইরের তারে সরবরাহ করে।

  • ফ্রেম: এটি ডায়নামোর সমস্ত অংশকে একসাথে ধরে রাখে। এটি সাধারণত ধাতু বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়।

  • অক্ষ: এটি ডায়নামোর কেন্দ্রে অবস্থিত একটি রড এবং এটি আর্মেচারকে ঘুরতে সাহায্য করে।

  • ক্যাসিং: ক্যাসিং হল একটি আবরণ যা ডায়নামোর অন্যান্য সমস্ত অংশকে ধারণ করে। এটি ডায়নামোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং এটিকে একটি পরিষ্কার এবং পেশাদার চেহারা দেয়।

এই প্রধান অংশগুলি ছাড়াও, ডায়নামোগুলির অন্যান্য অংশও থাকে, যেমন একটি বিয়ারিং, একটি গিয়ার এবং একটি চেইন।

আরও পড়ুনঃ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার গাইডলাইন

ডায়নামো এবং জেনারেটর এর মধ্যে পার্থক্য:

ডায়নামো এবং জেনারেটর উভয়ই যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে, তবে তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

1. সংজ্ঞা:

  • ডায়নামো: ডায়নামো এক ধরনের বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা যান্ত্রিক শক্তিকে DC (Direct Current) বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

  • জেনারেটর:  জেনারেটর এমন একটি ডিভাইস যা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

2. কার্যপ্রণালী: 

  • ডায়নামো: ডায়নামো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূলনীতি ব্যবহার করে। যখন একটি পরিবাহীকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে সরানো হয়, তখন পরিবাহীতে একটি বৈদ্যুতিক তড়িৎপ্রবাহ আবেশিত হয়।

  • জেনারেটর: জেনারেটর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূলনীতি ব্যবহার করে। যখন একটি পরিবাহীকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে সরানো হয়, তখন পরিবাহীতে একটি বৈদ্যুতিক তড়িৎপ্রবাহ আবেশিত হয়।

3. গঠন: 

  • ডায়নামো: একটি ডায়নামো সাধারণত একটি ঘূর্ণায়মান আর্মেচার (যা চলমান অংশ) এবং একটি স্থির ক্ষেত্র চুম্বক (যা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে) নিয়ে গঠিত হয়। আর্মেচার একটি পরিবাহী উপাদান, যেমন তামা দ্বারা তৈরি এবং তারের কয়েল দ্বারা আবৃত। ক্ষেত্র চুম্বক একটি স্থায়ী চুম্বক বা একটি তড়িচ্চুম্বক দ্বারা তৈরি করা হয়।

  • জেনারেটর: একটি জেনারেটর সাধারণত একটি ঘূর্ণায়মান আর্মেচার (যা চলমান অংশ) এবং একটি স্থির ক্ষেত্র চুম্বক (যা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে) নিয়ে গঠিত হয়। আর্মেচার একটি পরিবাহী উপাদান, যেমন তামা দ্বারা তৈরি এবং তারের কয়েল দ্বারা আবৃত। ক্ষেত্র চুম্বক একটি স্থায়ী চুম্বক বা একটি তড়িচ্চুম্বক দ্বারা তৈরি করা হয়।

4. নকশা:

  • ডায়নামো: ডায়নামোতে সাধারণত একটি সরল নকশা থাকে, একটি কুণ্ডলী (আর্মেচার) এবং একটি চৌম্বক (ফিল্ড ম্যাগনেট) থাকে।

  • জেনারেটর: জেনারেটরের নকশা আরও জটিল, বিভিন্ন ধরণের কুণ্ডলী, চৌম্বক এবং অন্যান্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

5. বিদ্যুৎ উৎপাদন:

  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি তুলনামূলকভাবে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, সাধারণত কয়েক ওয়াট থেকে কয়েক শত ওয়াট পর্যন্ত।

  • জেনারেটর: জেনারেটর বিভিন্ন পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, ছোট পোর্টেবল জেনারেটর থেকে শুরু করে বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ব্যবহৃত বড় জেনারেটর পর্যন্ত।

6. ব্যবহার:

  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত সাইকেলের আলো, ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং অন্যান্য কম-বিদ্যুৎ অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।

  • জেনারেটর: জেনারেটর বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং পোর্টেবল জেনারেটর।

7. উৎপন্ন বিদ্যুৎ:

  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত ডাইরেক্ট করেন্ট (DC) উৎপাদন করে।

  • জেনারেটর: জেনারেটর ডাইরেক্ট করেন্ট (DC) বা অল্টারনেটিং করেন্ট (AC) উৎপাদন করতে পারে। অর্থাৎ জেনারেটরগুলি এসি এবং ডিসি উভয় বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে।

8. নিয়ন্ত্রণ:

  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত সরল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে।

  • জেনারেটর: জেনারেটর আরও জটিল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে পারে যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়নামো ও মোটরের মধ্যে পার্থক্য কি?

ডায়নামো এবং মোটর উভয়ই যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। তবে, তাদের কার্যপ্রণালী এবং ব্যবহারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

1. সংজ্ঞা:
  • ডায়নামো: একটি ডায়নামো একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা যান্ত্রিক শক্তিকে DC (Direct Current) বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
  • মোটর: একটি মোটর একটি বৈদ্যুতিক মেশিন যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
2. গঠন:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত একটি ঘূর্ণায়মান আর্মেচার এবং একটি স্থির চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গঠিত হয়।
  • মোটর: মোটরগুলি সাধারণত একটি স্থির আর্মেচার এবং একটি ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গঠিত হয়।
3. কার্যপ্রণালী:
  • ডায়নামো: একটি ডায়নামো তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূলনীতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যখন একটি পরিবাহীকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে সরানো হয়, তখন পরিবাহীতে একটি বৈদ্যুতিক তড়িৎপ্রবাহ আবেশিত হয়। ডায়নামোতে, যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে একটি চলমান আর্মেচারকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরানো হয়, যা তড়িৎপ্রবাহ আবেশিত করে।
  • মোটর: একটি মোটর তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূলনীতি ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন করে। যখন একটি পরিবাহীকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি তড়িৎপ্রবাহ প্রবাহিত করা হয়, তখন পরিবাহীতে একটি বল আবেশিত হয়। মোটরে, একটি স্থির চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা হয় এবং একটি পরিবাহী কয়েল (আর্মেচার) চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি তড়িৎপ্রবাহ প্রবাহিত করে ঘোরানো হয়। আবেশিত বল আর্মেচারকে ঘোরানোর কারণ হয়, যা যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন করে।
4. শক্তির প্রবাহ:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি যান্ত্রিক শক্তি কে বিদ্যুৎ শক্তি তে রূপান্তর করে।
  • মোটর: মোটরগুলি বিদ্যুৎ শক্তি কে যান্ত্রিক শক্তি তে রূপান্তর করে।
5. ব্যবহার:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত সাইকেলের আলো, হর্ন এবং অন্যান্য ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি ছোট এবং হালকা হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • মোটর: মোটরগুলি বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন ফ্যান বা পাখা, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, গাড়ি ইত্যাদি। এগুলি বিভিন্ন আকারে এবং বিভিন্ন পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
6. আর্মেচারের গতি:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলোতে, আর্মেচার চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরানো হয় যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগ করে।
  • মোটর: মোটরে, আর্মেচার চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরানো হয় তড়িৎপ্রবাহ প্রয়োগ করে।
7. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি DC (Direct Current) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • মোটর: মোটরগুলি DC (Direct Current) বা AC (Alternating Current) বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে।
8. শক্তির উৎস:
  • ডায়নামো: ডায়নামোগুলি সাধারণত বাইরের শক্তির উৎস দ্বারা চালিত হয়, যেমন সাইকেলের চাকা ইত্যাদি।
  • মোটর: মোটরগুলি বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়।
9. উদাহরণ:
  • ডায়নামো: যখন আপনি আপনার সাইকেল চালাচ্ছেন, তখন ডায়নামোটি আপনার চাকার ঘূর্ণন শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে যা আপনার হেডলাইট চালিত করে।
  • মোটর: যখন আপনি আপনার ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করেন, তখন মোটরটি বিদ্যুৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে যা ড্রাম ঘোরাতে ব্যবহৃত হয়।

সাইকেলের ডায়নামোঃ

সাইকেলে ডায়নামো একটি যন্ত্র যা যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। এটি সাইকেলের চাকার সাথে সংযুক্ত থাকে এবং চাকা ঘুরলে ডায়নামো ঘোরে। ঘূর্ণন চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা একটি কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত করে। এই বিদ্যুৎ প্রবাহটি তারপরে হেডলাইট, টেইললাইট এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলিকে শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়।

সাইকেলে ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? 

সাইকেলের ডায়নামো একটি ছোট যন্ত্র যা চাকার ঘূর্ণন শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সাইকেলের আলো, হর্ন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চালানো যায়।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়নামোর কাজের প্রক্রিয়া:

  • রোলার: ডায়নামোতে একটি রোলার থাকে যা সাইকেলের চাকার সাথে ঘোরে।

  • চাকার সাথে সংযোগ: ডায়নামো সাধারণত সামনের চাকার বা পিছনের চাকার সাথে সংযুক্ত থাকে। চাকার অক্ষের সাথে একটি রোলার সংযুক্ত থাকে যা চাকা ঘুরলে ডায়নামোর ভিতরের অংশ ঘোরায়।

  • চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি: ডায়নামোর ভিতরে স্থায়ী চৌম্বক থাকে যা একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।

  • কুণ্ডলী: ডায়নামোতে একটি কুণ্ডলী (coil) থাকে যা তামার তার দিয়ে তৈরি।

  • বিদ্যুৎ উৎপাদন: রোলার ঘুরার সময় চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে তারগুলি ঘোরে। এই ঘূর্ণায়মান তারগুলি চৌম্বক আবেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

  • রেকটিফায়ার: ডায়নামোতে একটি রেকটিফায়ার থাকে যা AC বিদ্যুৎ কে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে।

  • বিদ্যুৎ সরবরাহ: উৎপন্ন বিদ্যুৎ তারের মাধ্যমে সাইকেলের আলো, হর্ন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সরবরাহ করা হয়।

বিভিন্ন ধরণের ডায়নামো:

  • হাব ডায়নামো: এটি সামনের চাকার হাবের মধ্যে সংযুক্ত থাকে এবং খুব কম্প্যাক্ট এবং হালকা।

  • বোটল ডায়নামো: এটি সাইকেলের ফ্রেমের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং হাব ডায়নামোর চেয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।

  • রোলার ডায়নামো: এটি সরাসরি সাইকেলের টায়ারের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ডায়নামো।

সাইকেলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডায়নামোর সুবিধা ও অসুবিধা:

ডায়নামোর সুবিধা:

  • পরিবেশবান্ধব: ডায়নামো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যাটারি ব্যবহার করে না, তাই এটি পরিবেশের জন্য ভালো।

  • খরচ কম: একবার কিনে নিলে, ডায়নামো ব্যবহারের জন্য আর কোন খরচ হয় না।

  • কম রক্ষণাবেক্ষণ: ডায়নামোগুলিতে চলমান অংশ কম থাকে, তাই এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ।

  • ওজনে হালকা: এগুলি আপনার বাইসাইকেলের ওজন বাড়ায় না খুব বেশি। ডায়নামোগুলি তুলনামূলকভাবে হালকা এবং আপনার বাইসাইকেলের কর্মক্ষমতার উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।

  • সহজ ব্যবহার: এগুলির ব্যবহারে সহজ বেশিরভাগ ডায়নামোগুলি ইনস্টল করা এবং ব্যবহার করা সহজ।

ডায়নামোর অসুবিধা:

  • অতিরিক্ত প্রতিরোধ: ডায়নামো চাকার ঘূর্ণনে অতিরিক্ত প্রতিরোধ তৈরি করে, যা সাইকেল চালানোকে একটু কঠিন করে তোলে।

  • কম শক্তি: ডায়নামো তুলনামূলকভাবে কম শক্তি উৎপন্ন করে, তাই এটি উচ্চ-ওয়াটের ডিভাইসগুলি চালানোর জন্য উপযুক্ত নয়।

  • শব্দ: কিছু ডায়নামো চলার সময় শব্দ করে।

  • বিদ্যুৎ উৎপাদন: এগুলি শুধুমাত্র চলমান অবস্থায় কাজ করে। যখন আপনি আপনার বাইসাইকেল চালাচ্ছেন না তখন ডায়নামোগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না।

  • ব্যাটারির তুলনায় কম দক্ষ: এগুলি ব্যাটারির তুলনায় কম দক্ষ। ডায়নামোগুলি ব্যাটারির চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

ডায়নামো সাইকেলের কোন অংশ ঘুরলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে?

সাইকেলের চাকা ঘুরলে ডায়নামো বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। ডায়নামো সাধারণত সাইকেলের পিছনের বা সামনের চাকার কাছে সংযুক্ত থাকে।

ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এই প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপে ঘটে:
1. চাকা ঘুরে: যখন আপনি সাইকেল চালান, তখন পিছনের চাকা ঘোরে।

2. ডায়নামো ঘোরে: চাকা ঘোরার সাথে সাথে, ডায়নামোও ঘোরে।

3. চৌম্বক ক্ষেত্র: ডায়নামোর ভেতরে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে।

4. কুণ্ডলী: ডায়নামোর ভেতরে একটি কুণ্ডলীও থাকে যা চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরে।

5. বিদ্যুৎ প্রবাহ: যখন কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরে, তখন এটি বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।

6. তার: বিদ্যুৎ প্রবাহ তারের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে এবং হেডলাইট বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে।

মনে রাখবেন:

  • ডায়নামোগুলি কেবলমাত্র তখনই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে যখন সাইকেল চলমান থাকে।
  • ডায়নামোগুলি সাধারণত কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, তাই এগুলি শুধুমাত্র ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ডায়নামোগুলি সাইকেলের কর্মক্ষমতাকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে কারণ এগুলিকে ঘোরানোর জন্য কিছু শক্তির প্রয়োজন হয়।

ডায়নামো কোন সূত্রের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়?

ডায়নামো তৈরি করা হয় ফ্যারাডে'র  তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের সূত্রের উপর ভিত্তি করে। এই সূত্রটি বলে যে, একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত হয়।

ডায়নামো তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের সূত্রের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, যা নিম্নরূপ:
  • সূত্রটি নিম্নরুপ: ε = -NdΦ/dt
যেখানে:
  • ε: আবেশিত তড়িৎপ্রবাহ emf (ইলেক্ট্রোমোটিভ বল), ভোল্টে (V)
  • N: পরিবাহীর ঘূর্ণায়মান লুপের সংখ্যা।
  • Φ: চৌম্বক ফ্লাক্স, ওয়েবারে (Wb)
  • dt: সময়ের পরিবর্তন, সেকেন্ডে (s)
এই সূত্রটি বলে যে একটি পরিবাহীর মধ্যে একটি তড়িৎপ্রবাহ আবেশিত হয় যখন চৌম্বক ফ্লাক্স যা পরিবাহীকে অতিক্রম করে তা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়।

ডায়নামোতে, চৌম্বক ক্ষেত্র স্থির থাকে এবং পরিবাহী তারটি (আর্মেচার) ঘোরে। ঘূর্ণনের ফলে, চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়, যা emf প্ররোচিত করে। এই emf তারপরে সরাসরি প্রবাহ (DC) বিদ্যুৎ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

ডায়নামোর নকশা সূত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি বিবেচনা করে:
  • আর্মেচারের লুপের সংখ্যা: লুপের সংখ্যা যত বেশি হবে, emf তত বেশি হবে।
  • চৌম্বক ফ্লাক্স: চৌম্বক ফ্লাক্স যত বেশি হবে, emf তত বেশি হবে।
  • আর্মেচারের ঘূর্ণনের গতি: ঘূর্ণনের গতি যত বেশি হবে, emf তত বেশি হবে।
উপরন্তু, ডায়নামোগুলির নকশায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও বিবেচনা করা হয়:
  • দক্ষতা: ডায়নামো যত বেশি দক্ষ হবে, তত বেশি যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবে।
  • আকার এবং ওজন: ডায়নামো যত ছোট এবং হালকা হবে, তত বেশি সহজে এটি ইনস্টল এবং ব্যবহার করা যাবে।
  • খরচ: ডায়নামো তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ।

ডায়নামো তৈরির মূলে দুটি প্রধান সূত্র কাজ করে:

১) ফ্যারাডে'র ল:

মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৩১ সালে আবিষ্কার করেছিলেন যে যখন একটি পরিবাহী তার একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে ঘোরে, তখন তারের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়। এই নীতিটি ফ্যারাডে'র ল নামে পরিচিত। 

ডায়নামোতে, একটি ঘূর্ণায়মান কয়েল (আর্মেচার) একটি স্থির চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যায়। ফ্যারাডে'র ল অনুসারে, এই ঘূর্ণায়মান কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়।

২) লেন্জের নীতি:

হেনরিক লেন্জ ১৮৩৪ সালে আবিষ্কার করেছিলেন যে, যে বিদ্যুৎ প্রবাহ একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, সেই চৌম্বক ক্ষেত্র এমনভাবে কাজ করে যাতে মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনকে বিরোধিতা করে। এই নীতিটি লেন্জের নীতি নামে পরিচিত।

ডায়নামোতে, ঘূর্ণায়মান কয়েলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। লেন্জের নীতি অনুসারে, এই পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র এমনভাবে কাজ করে যাতে স্থির চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে বিপরীত দিকে বল প্রয়োগ করে। এই বল আর্মেচারকে ঘুরতে সাহায্য করে, যা একটি স্ব-উত্তেজিত লুপ তৈরি করে।

ডায়নামো তৈরিতে অন্যান্য বিষয়:
  • চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা: ডায়নামো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। 
  • আর্মেচারের ঘূর্ণন গতি: ডায়নামো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ আর্মেচারের ঘূর্ণন গতির উপর নির্ভর করে।
  • কুণ্ডলীর সংখ্যা: ডায়নামোতে কুণ্ডলীর সংখ্যা যত বেশি হবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
  • কুণ্ডলীর তারের আকার: কুণ্ডলীর তারের ব্যাস যত বড় হবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
ডায়নামো তৈরিতে ফ্যারাডে'র ল এবং লেন্জের নীতি দুটি মূল ভূমিকা পালন করে। এই নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে, ডায়নামোগুলি যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url