স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

স্যাটেলাইট কি? 

স্যাটেলাইট হলো কৃত্রিম উপগ্রহ যা পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। এগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয় এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

স্যাটেলাইট হলো মনুষ্যবিহীন ১ টি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় (১৬০ কিলোমিটার হতে ৩৬০০০ কিলোমিটার) অবস্থান করে পৃথিবীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে পরিভ্রমণ করে থাকে (পরিভ্রমণকারী স্যাটেলাইট) অথবা পৃথিবী যে গতিতে নিজ অক্ষে আবর্তন করে বা ঘোরে সে গতির সাথে আবদ্ধ থেকে নিজস্ব অবস্থানে স্থির থাকে (স্থির স্যাটেলাইট) এবং সামগ্রিকভাবে এটি পৃথিবীস্থ একটি স্টেশন হতে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। পক্ষান্তরে, অকৃত্রিম উপগ্রহ হচ্ছে প্রাকৃতিক বিশালাকার বস্তুপিন্ড যা একটি গ্রহের বা বস্তুর চারিদিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি সুনির্দিষ্ট গতিতে পরিভ্রমণ করে থাকে, যেমন পৃথিবীর চাঁদ। "বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১" একটি স্থির কৃত্রিম স্যাটেলাইট।

স্যাটেলাইটের ব্যবহার

স্যাটেলাইট আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে স্যাটেলাইটের কিছু প্রধান ব্যবহার দেওয়া হলোঃ

  • যোগাযোগ: টেলিযোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, ইন্টারনেট, এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • আবহাওয়া: আবহাওয়ার পূর্বাভাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ।
  • অবস্থান নির্ধারণ: জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থল, জল ও আকাশে অবস্থান নির্ধারণ।
  • গবেষণা: মহাকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
  • পর্যবেক্ষণ: পৃথিবীর আবহাওয়া, ভূমি, এবং সমুদ্র পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা: জলের ব্যবহার ও বন্টন নিয়ন্ত্রণ করতে।
  • খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান: নতুন খনিজ সম্পদের উৎস খুঁজে বের করতে।
  • নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা: গুপ্তচরবৃত্তি, সীমান্ত নিরাপত্তা, যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ ইত্যাদিতে।
  • বিজ্ঞান: জ্যোতির্বিদ্যা, ভূ-বিজ্ঞান, এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সামরিক: গুপ্তচরবৃত্তি, যোগাযোগ, এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • কৃষি: ফসলের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ উন্নত করতে।
  • অন্যান্য: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা।

উদাহরণস্বরূপ:

  • বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (বাংলাদেশ-১): টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, টেলিভিশন সম্প্রচার ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে।
  • INSAT-3D: আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দুর্যোগ সতর্কীকরণ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • GPS: স্থল, জল ও আকাশে অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • হাবল স্পেস টেলিস্কোপ: মহাকাশ সম্পর্কে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • নেভিগেশন: জিপিএস (Global Positioning System) এর মাধ্যমে অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

স্যাটেলাইটের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট আরও উন্নত হবে এবং আমাদের জীবনে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্যাটেলাইট আধুনিক সভ্যতার একটি অপরিহার্য অংশ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের ব্যবহার আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও উন্নত করে তুলেছে।

স্যাটেলাইটের প্রকারভেদঃ

উদ্দেশ্য অনুসারে স্যাটেলাইটকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়:

1. যোগাযোগ স্যাটেলাইট: টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, টেলিভিশন সম্প্রচার ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে।উদাহরণ: ইন্টেলস্যাট, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু-১)।

2. আবহাওয়া স্যাটেলাইট: পৃথিবীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: GOES, METEOSAT।

3. জিপিএস স্যাটেলাইট: অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: GPS, GLONASS।

4. সামরিক স্যাটেলাইট: গুপ্তচরবৃত্তি, যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: KH-11, Lacrosse।

5. গবেষণা স্যাটেলাইট: মহাকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ।

কক্ষপথ অনুসারে স্যাটেলাইটকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়:

1. ক্ষুদ্র কক্ষপথ (LEO): পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে 200-2000 কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে ঘোরে।

উদাহরণ: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, NOAA GOES।

2. মাঝারি কক্ষপথ (MEO): পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে 2000-20,000 কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে ঘোরে।

উদাহরণ: GPS, Galileo।

3. উচ্চ কক্ষপথ (GEO): পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে 36,000 কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে ঘোরে।

উদাহরণ: ইন্টেলস্যাট, বাংলাদেশ-১।

এছাড়াও, স্যাটেলাইটকে আরও অনেক ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: 

  • আকার অনুসারে: বড়, মাঝারি, ছোট।
  • কার্যপ্রণালী অনুসারে: সক্রিয়, নিষ্ক্রিয়।
  • বিদ্যুৎ উৎস অনুসারে: সৌর-চালিত, পারমাণবিক-চালিত।

স্যাটেলাইটের প্রয়োজনীয়তা কি?

স্যাটেলাইট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্যাটেলাইটের প্রয়োজনীয়তা:

যোগাযোগ:

  • টেলিযোগাযোগ: দূরবর্তী স্থানে টেলিফোন কল, ইন্টারনেট ডেটা, এবং টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য।
  • জিপিএস: যানবাহন, মানুষ, এবং জিনিসপত্রের অবস্থান নির্ধারণের জন্য।
  • মোবাইল ফোন: দূরবর্তী স্থানে মোবাইল ফোন কল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য।

পর্যবেক্ষণ:

  • আবহাওয়া: পৃথিবীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ট্র্যাকিং করার জন্য।
  • পরিবেশ: বন উজাড়, দূষণ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
  • ভূমি ব্যবহার: কৃষি, বনায়ন, এবং শহুরে এলাকার পরিকল্পনা করার জন্য।

নিরাপত্তা:

  • সামরিক: যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি, যোগাযোগ, এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য।
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: বন্যা, ভূমিকম্প, এবং ঝড়ের মতো দুর্যোগের পর্যবেক্ষণ এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
  • আইন প্রয়োগকারী: অপরাধীদের ট্র্যাকিং এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

বিজ্ঞান:

  • মহাকাশ গবেষণা: মহাবিশ্বের গঠন, গ্রহ, এবং নক্ষত্র সম্পর্কে জানার জন্য।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞান: মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
  • ভূগোল: পৃথিবীর ভূমিরূপ এবং ভূতত্ত্ব সম্পর্কে জানার জন্য।

অন্যান্য:

  • দূরশিক্ষণ: দূরবর্তী স্থানে শিক্ষাদানের জন্য।
  • টেলিমেডিসিন: দূরবর্তী স্থানে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য।
  • কৃষি: কৃষিক্ষেত্রের পর্যবেক্ষণ এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।
স্যাটেলাইট আমাদের জীবনকে আরও উন্নত ও সহজ করে তুলেছে। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অগ্রগতি ভবিষ্যতে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে।

স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ কি?

স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ হলো তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য স্যাটেলাইট লিঙ্কে প্রতি সেকেন্ডে কতটা ডেটা প্রেরণ করা সম্ভব তা নির্দেশ করে। এটি হার্টজ (Hz)-এ পরিমাপ করা হয়।

উদাহরণ: একটি স্যাটেলাইট লিঙ্কের ব্যান্ডউইথ যদি 100 MHz হয়, তাহলে প্রতি সেকেন্ডে 100 মেগাবাইট ডেটা প্রেরণ করা সম্ভব।

ব্যান্ডউইথ নির্ভর করে:

  • স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডারের ক্ষমতার উপর।
  • স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনার আকারের উপর।
  • স্যাটেলাইটের কক্ষপথের উপর।
  • আবহাওয়া এবং অন্যান্য বাধার উপর।

ব্যান্ডউইথ ব্যবহার:

  • টেলিযোগাযোগ: টেলিফোন, টেলিভিশন, এবং ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে।
  • ডেটা ট্রান্সমিশন: ইন্টারনেট, ব্যাংকিং, এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে।
  • পর্যবেক্ষণ: আবহাওয়া, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, এবং নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে।

স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ মূল্যবান সম্পদ:

  • উচ্চ ব্যান্ডউইথের জন্য উচ্চ খরচ প্রদান করতে হয়।
  • ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ সাবধানে করা হয়।

কিছু সাধারণ স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ:

  • Ku-band: 12 GHz - 18 GHz, 500 MHz - 1 GHz ব্যান্ডউইথ।
  • Ka-band: 26 GHz - 40 GHz, 500 MHz - 2 GHz ব্যান্ডউইথ।
  • C-band: 3.4 GHz - 4.2 GHz, 500 MHz - 1 GHz ব্যান্ডউইথ।
  • L-band: 1.4 GHz - 2.4 GHz, 500 MHz - 1 GHz ব্যান্ডউইথ।
উল্লেখ্য:
  • স্যাটেলাইট প্রযুক্তি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।
  • নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
  • ভবিষ্যতে, স্যাটেলাইট লিঙ্কের ব্যান্ডউইথ আরও বৃদ্ধি পাবে।

কিভাবে এই  স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ কেনাবেচা হয়?

ব্যান্ডউইথ এর কনছেপ্ট আশা করি ক্লিয়ার হয়েছেন। এবার জানব কিভাবে এই ব্যান্ডউইথ কেনা বেচা হয়?

আমাদের স্যাটেলাইট এর কথাই বলি। আমাদের স্যাটেলাইট এর ব্যান্ডউইথ 1600 MHz. আর এটা 40 টি Transponder ধারণ করে। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার এর ব্যান্ডউইথ যদি সমান হয় তাইলে

Bandwidth per transponder = 1600/40 40 MHz.

শুনা যাচ্ছে, আমরা ২০ টি ভাড়া দিচ্ছি। তাইলে আমরা bandwidth sell করছি = 40 x 20 = 800 MHz

এখন এটা ত কোন দৃশ্যমান বস্তুনা যে হাতে বিক্রি করবে। ব্যাপারটা আসলে
Commercial, Technical তেমন কিছু নেই। যেসব দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আছে তাদের দেশের সরকার আমাদের দেশের সরকারের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে। প্রতি চ্যানেল ওয়ারি একটা রেইট বেধে দেয়া হয়। তারপর চুক্তিশেষে ঐসব দেশ আপলিঙ্ক ডাউনলিঙ্ক এর লাইসেন্স পেতে হয়। তারপর তারা নিজস্ব গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি করে আমাদের ট্রান্সপন্ডারগুলো দখলে নিয়ে আসে। আমাদের দেশ প্রতি বছর ২০ টি ট্রান্সপন্ডার থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে প্রায়।

স্যাটেলাইট তৈরিতে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয়?

উপগ্রহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, যার মধ্যে প্রধান হল:

কাঠামোগত উপাদান:

  • অ্যালুমিনিয়াম: হালকা ও টেকসই, এটি উপগ্রহের প্রধান কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • কার্বন ফাইবার: অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে হালকা ও আরও শক্ত, এটি উন্নত উপগ্রহে ব্যবহৃত হয়।
  • টাইটানিয়াম: অত্যন্ত টেকসই ও তাপ-প্রতিরোধী, এটি রকেট ইঞ্জিন ও ঢাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রিক্যাল উপাদান:

  • সৌর কোষ: সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ব্যাটারি: সৌর কোষ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে।
  • ইলেকট্রনিক্স: উপগ্রহের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

অন্যান্য উপাদান:

  • অ্যান্টেনা: পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • থার্মাল সিস্টেম: উপগ্রহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রোপেলেন্ট: উপগ্রহের অবস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

স্যাটেলাইটের ধরণভেদে ব্যবহৃত উপাদানের পরিমাণ ও ধরণ পরিবর্তিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • যোগাযোগ উপগ্রহ: বড় অ্যান্টেনা ও শক্তিশালী সৌর কোষ থাকে।
  • আবহাওয়ার উপগ্রহ: উন্নত ক্যামেরা ও ইমেজিং সিস্টেম থাকে।
  • জিপিএস উপগ্রহ: স্পষ্ট পারমাণবিক ঘড়ি থাকে।

উল্লেখ্য যে, উপগ্রহ তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলি অত্যন্ত উন্নত ও নির্ভুল হতে হয়। কারণ স্যাটেলাইট গুলো যেনো কঠোর মহাকাশ পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে।

স্যাটেলাইট ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে না কেন?

স্যাটেলাইট ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে না কারণ এটি কক্ষপথে ঘুরছে। কক্ষপথে ঘুরার সময়, স্যাটেলাইটের উপর কেন্দ্রীভূত বল এবং অভিকর্ষ বল একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে।

কেন্দ্রীভূত বল:

স্যাটেলাইটকে কক্ষপথের বাইরে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে। স্যাটেলাইটের গতিবেগের উপর নির্ভর করে।

অভিকর্ষ বল:

স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর দিকে টানে। পৃথিবীর ভরের উপর নির্ভর করে।

কক্ষপথে থাকার জন্য:

কেন্দ্রীভূত বল অভিকর্ষ বলের সমান হতে হবে। যদি কেন্দ্রীভূত বল অভিকর্ষ বলের চেয়ে বেশি হয়, স্যাটেলাইট কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে মহাকাশে চলে যাবে।যদি অভিকর্ষ বল কেন্দ্রীভূত বলের চেয়ে বেশি হয়, স্যাটেলাইট ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে যাবে।

কক্ষপথের ধরণ:

  • বৃত্তাকার কক্ষপথ: স্যাটেলাইট পৃথিবীর উপরে একই উচ্চতায় ঘোরে।
  • উপবৃত্তাকার কক্ষপথ: স্যাটেলাইট পৃথিবীর উপরে বিভিন্ন উচ্চতায় ঘোরে।

কক্ষপথের উচ্চতা:

কক্ষপথের উচ্চতা স্যাটেলাইটের গতি এবং কক্ষপথের ধরণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, স্যাটেলাইট 200 কিলোমিটার থেকে 36,000 কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে থাকে।

স্যাটেলাইট কিভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে?

স্যাটেলাইট নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে কারণ এটি জড়তার নীতি অনুসরণ করে।

  • জড়তার নীতি: কোন বস্তু তার স্থির অবস্থা বা সরলরেখায় সরল গতিতে থাকতে চায়। কোন বাহ্যিক বল না থাকলে বস্তুর অবস্থায় পরিবর্তন আসে না।
  • স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে: স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে স্থাপন করার সময় এটিকে প্রচুর গতিতে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। এই গতি স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে রাখে। পৃথিবীর অভিকর্ষ বল স্যাটেলাইটকে কক্ষপথের বাইরে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু, স্যাটেলাইটের জড়তা এটিকে কক্ষপথে রাখে।

স্যাটেলাইটের গতি কক্ষপথের উচ্চতার উপর নির্ভর করে। নিম্ন কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইট উচ্চ কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের চেয়ে দ্রুত ঘোরে।

স্যাটেলাইট ফুটপ্রিন্ট কি?

স্যাটেলাইট ফুটপ্রিন্ট হল পৃথিবীর পৃষ্ঠের সেই অংশ যা একটি নির্দিষ্ট স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার থেকে প্রেরিত সংকেত দ্বারা আচ্ছাদিত।

সহজভাবে বলতে গেলে এটি পৃথিবীর উপরে একটি কাল্পনিক মানচিত্র যা দেখায় যে স্যাটেলাইটের সংকেত কোথায় পৌঁছাতে পারে।

ফুটপ্রিন্টের আকার এবং আকৃতি স্যাটেলাইটের উচ্চতা, অ্যান্টেনার ধরণ এবং ট্রান্সমিটার শক্তির উপর নির্ভর করে।

ফুটপ্রিন্টের ধরণ:

  • বৃত্তাকার: স্যাটেলাইট স্থির কক্ষপথে থাকলে।
  • উপবৃত্তাকার: স্যাটেলাইট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে থাকলে।
  • আয়তক্ষেত্র: স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে থাকলে।

ফুটপ্রিন্টের ব্যবহার:

  • স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও নকশা করার জন্য।
  • স্যাটেলাইট ডিশের আকার নির্ধারণ করার জন্য।
  • স্যাটেলাইট সংকেতের শক্তি নির্ণয় করার জন্য।

উল্লেখ্য:

  • ফুটপ্রিন্ট স্থির নয়।
  • পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয়।
  • আবহাওয়া এবং অন্যান্য বাধা ফুটপ্রিন্টকে প্রভাবিত করতে পারে।

স্যাটেলাইটের দূরত্ব ও বেগ নির্ণয়:

স্যাটেলাইটের দূরত্ব ও বেগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

দূরত্ব নির্ণয়:

১. রাডার: রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। রাডার স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটে রেডিও তরঙ্গ পাঠানো হয়। তরঙ্গ স্যাটেলাইট থেকে প্রতিফলিত হয়ে রাডার স্টেশনে ফিরে আসে। তরঙ্গের যাতায়াতের সময় থেকে দূরত্ব বের করা হয়।

২. দূরবীন: দূরবীন ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের কোণীয় অবস্থান নির্ণয় করা হয়। ট্রাইগনোমেট্রির সাহায্যে স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করা হয়।

৩. জিপিএস: জিপিএস উপগ্রহ ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। জিপিএস রিসিভার জিপিএস উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে। সংকেতের বিশ্লেষণ করে স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করা হয়।

বেগ নির্ণয়:

১. ডপলার প্রভাব: ডপলার প্রভাব ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের বেগ নির্ণয় করা হয়। স্যাটেলাইট থেকে আসা রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন থেকে বেগ বের করা হয়।

২. ট্র্যাকিং: দূরবীন বা রাডার ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের অবস্থান ট্র্যাক করা হয়। ট্র্যাকিং ডেটা থেকে স্যাটেলাইটের বেগ বের করা হয়।

৩. কক্ষপথের তথ্য: স্যাটেলাইটের কক্ষপথের তথ্য ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের বেগ বের করা হয়।কেপলারের গ্রহের গতির নীতি ব্যবহার করে বেগ বের করা হয়।

স্যাটেলাইটের দূরত্ব ও বেগ নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলির নির্ভুলতা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আবহাওয়া, পরিবেশগত বাধা, এবং স্যাটেলাইটের সংকেতের শক্তি নির্ভুলতা প্রভাবিত করে।

স্যাটেলাইট এর দূরত্ব ও বেগের হিসাবঃ

বেগ নির্ণয়:

Fc = Centrifugal force (কেন্দ্রমুখী বল)

Fe = Centripetal force (কেন্দ্রবিমুখী বল)

এখন,

Fc = Fe

or, mv^2/(R+h)= mg

or, g = v^2/(R+h)

or, GM/(R+h)^2 = v^2/(R+h)

or, v = sqrt (GM/R+h)

এখন,

G = Gravitational constant (6.67*10^-11)

M = Mass of earth = 6* 10^24 kg

R = radius of earth = 6400 km

h = height from earth surface = 35000 km So, Velocity of satellite = 3.075 * 10^3 m/s

দুরত্ব হিসেব:

v = sqrt GM/(R+h)

or, v^2 = GM/(R+h)

or, h = GM/v^2 - R

এখন,

G = Gravitational constant = 6.67*10^-11

M Mass of earth = 6*10^24~

R = radius of earth = 6400 km

v = Velocity of satellite = 3.075*10^3 m/s

so, h = 35000 km

স্যাটেলাইট ঘূর্ণয়মান হলেও কিভাবে গ্রাউন্ডিং স্টেশন থেকে সংকেত গ্রহণ করে?

স্যাটেলাইট ঘূর্ণয়মান হলেও গ্রাউন্ডিং স্টেশন থেকে সংকেত গ্রহণ করতে পারে কারণ এটি একটি অ্যান্টেনা ব্যবস্থা ব্যবহার করে।

অ্যান্টেনা ব্যবস্থা:

  • স্যাটেলাইটের উপরে স্থাপিত।
  • দিকনির্দেশক অ্যান্টেনা বা মাল্টি-বিম অ্যান্টেনা হতে পারে।
  • দিকনির্দেশক অ্যান্টেনা নির্দিষ্ট দিকে সংকেত পাঠায় এবং গ্রহণ করে।
  • মাল্টি-বিম অ্যান্টেনা একাধিক দিকে সংকেত পাঠায় এবং গ্রহণ করে।

কিভাবে কাজ করে:

  • স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা গ্রাউন্ডিং স্টেশন থেকে আসা সংকেত গ্রহণ করে।
  • সংকেত স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডারে পাঠানো হয়।
  • ট্রান্সপন্ডার সংকেতকে বর্ধিত করে এবং নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে রি-ট্রান্সমিট করে।
  • রি-ট্রান্সমিট করা সংকেত পৃথিবীতে অবস্থিত গ্রাউন্ডিং স্টেশন দ্বারা গ্রহণ করা হয়।

ঘূর্ণনের প্রভাব:

  • স্যাটেলাইট ঘূর্ণয়মান হলে, অ্যান্টেনা স্থির থাকে না।
  • এর ফলে, সংকেতের শক্তি ও গুণমানে পরিবর্তন আসতে পারে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়:

  • অ্যান্টেনা বিমি স্টেয়ারিং: অ্যান্টেনা বিমকে গ্রাউন্ডিং স্টেশনের দিকে স্থির রাখা হয়।
  • ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা: অ্যান্টেনার বিভিন্ন উপাদান থেকে আসা সংকেতগুলিকে একত্রিত করে সংকেতের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়।

স্যাটেলাইট এবং গ্রাউন্ডিং স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব, আবহাওয়া, এবং অন্যান্য বাধা সংকেতের শক্তি ও গুণমানকে প্রভাবিত করে।

স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রভাবগুলি কমিয়ে আনা হয়।

স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা 

নিচে স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা দেওয়া হলোঃ

স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুবিধাঃ

  • যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, টেলিভিশন সম্প্রচার ইত্যাদি সুবিধা সার্বজনীন করে তুলেছে।
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস: প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়ে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সহায়তা করে।
  • অবস্থান নির্ধারণ: জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থল, জল ও আকাশে অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।
  • গবেষণা: মহাকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • শিক্ষা: দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করেছে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করে।
  • পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: বন উজাড়, দূষণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।
  • মানচিত্র তৈরি: ভূমি, সমুদ্র, বন ইত্যাদির মানচিত্র তৈরিতে সহায়তা করে।
  • খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান: খনিজ সম্পদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: দুর্যোগের সময় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করে।

স্যাটেলাইট ব্যবহারের অসুবিধাঃ

  • উচ্চ খরচ: উপগ্রহ তৈরি ও উৎক্ষেপণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।
  • মহাকাশ আবর্জনা: অব্যবহৃত উপগ্রহ ও মহাকাশযান মহাকাশে আবর্জনার সৃষ্টি করে।
  • নিরাপত্তা ঝুঁকি: সামরিক উপগ্রহ ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তি ও আক্রমণ চালানো সম্ভব।
  • ডিজিটাল বিভাজন: স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সুবিধা সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছায় না।
  • পরিবেশগত প্রভাব: উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ফলে বায়ুমণ্ডল দূষিত হতে পারে।
  • আইনি জটিলতা: উপগ্রহের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • অন্যান্য প্রযুক্তির প্রভাব: অপটিক্যাল ফাইবারের মতো প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে স্যাটেলাইটের ব্যবহার কমে যেতে পারে।

উপগ্রহ আধুনিক সভ্যতার একটি অপরিহার্য অংশ। যোগাযোগ, আবহাওয়া, অবস্থান নির্ধারণ, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উপগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্যাটেলাইট কিভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়?

সাধারণত উৎক্ষেপণ যন্ত্র বা Launch Vehicle এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়। দুই ধরনের উৎক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়ে থাকে। যথাঃ ১. অপচয়যোগ্য রকেট ২. মহাশূন্য শাটল।

  1. অপচয়যোগ্য রকেটঃ অপচয়যোগ্য রকেটগুলো মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে। স্যাটেলাইট স্থাপনের পর ধ্বংস হয়ে যায়।  
  2. মহাশূন্য শাটলঃ মহাশূন্য শাটল ব্যবহার করে বারবার রকেট উৎক্ষেপণ করা যায়।

কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন তথা রকেট উৎক্ষেপণের সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অভিকর্ষজ ত্বরণের। কারণ অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদেরকে সব সময় পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। তাই রকেট এর গতির সমতা রক্ষা করে স্যাটেলাইটসমূহ উৎক্ষেপণ করতে হয়।

স্যাটেলাইটে পাওয়ার সরবরাহ করার জন্য প্রত্যেক স্যাটেলাইট 32,000 মাউন্টেড করা থাকে, যারা সাধারণত 520 ওয়াট পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে। তাছাড়াও ব্যাক-আপ হিসেবে ক্যাডমিয়াম বাটারি রাখা হয় যা সৌর থেকেও এনার্জি সংগ্রহ করতে পারে।

তবে মাঝে মাঝে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স ও ব্যবহার করা হয়। স্যাটেলাইটের পাওয়ার সহ একে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করার জন্য এতে একটি অন বোর্ড কম্পিউটার সংযুক্ত করা থাকে।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে স্যাটেলাইট যেহেতু পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে, এটি ভূপৃষ্ঠে পড়ে যায় না কেন? এর উত্তরটিও খুব সহজ। আমরা সবাই ফিজিক্সে (পদার্থ বিজ্ঞান) কেন্দ্রমুখী বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সম্পর্কে কম-বেশি জানি। অর্থাৎ কোন বস্তু যখন অন্য কোন বস্তুকে কেন্দ্র করে তার চারদিকে ঘুরতে থাকে, তখন কেন্দ্রের দিকে একটি বল কাজ করে যাকে কেন্দ্রমুখী বল বলা হয়।

অন্য আরেকটি বল ঘূর্ণায়মান বস্তুটিকে ঘূর্ণন অক্ষ থেকে ছিটকে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রের বিপরীত দিকে কাজ করে যাকে কেন্দ্রবিমুখী বল বলা হয়। অর্থাৎ কোন ঘূর্ণায়মান বস্তুর ওপর দুটি বল কাজ করে। কেন্দ্রের দিকে কেন্দ্রমুখী বল এবং কেন্দ্রের বিপরীত দিকে কেন্দ্রবিমুখী বল কাজ করে।

কেন্দ্রমুখী বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হওয়ায় বস্তুটি ছিটকে না গিয়ে একই অক্ষ বরাবর ঘুরতে থাকে। যেমন একটি সুতার মাথায় কোন বস্তু বেঁধে হাতের অঙ্গুল দিয়ে ঘুরালে বস্তুটি হাতের আঙ্গুল কে কেন্দ্র করে ঘুরতে দেখা যায়। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রমুখী বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হয় বলে এরকম ঘটে। স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে বলে স্যাটেলাইট তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে পৃথিবীপৃষ্ঠে পরে না বা মহাকাশে হারিয়ে যায় না।

স্যাটেলাইটের জন্য কিভাবে পাওয়ার সরবরাহ করা হয়?

স্যাটেলাইটের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান দুটি উপায় হল:

১. সৌর কোষ:

  • স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে স্থাপিত।
  • সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • স্যাটেলাইটের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এটি স্যাটেলাইটের প্রধান বিদ্যুৎ উৎস।
  • ক্যাডমিয়াম ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ স্টোর করে রাখা হয়।

২. রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (RTG):

  • তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয় থেকে তাপ উৎপাদন করে।
  • তাপ বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।
  • সৌর কোষের পরিপূরক বিদ্যুৎ উৎস।
  • সূর্যের আলো না পৌঁছানো অবস্থায় (যেমন, পৃথিবীর ছায়ায়) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার:

  • স্যাটেলাইটের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ চালানোর জন্য।
  • ট্রান্সপন্ডার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য উপাদানের জন্য।

বিদ্যুৎ সরবরাহের ধরণ:

  • সরাসরি বিদ্যুৎ: সৌর কোষ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।
  • ব্যাটারি ব্যাকআপ: সৌর কোষ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সঞ্চয় করা হয়। প্রয়োজনে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।

স্যাটেলাইটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। স্যাটেলাইটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিলে স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে।

স্যাটেলাইটের ইতিহাস:

কৃত্রিম উপগ্রহের সূচনালগ্ন ও ব্যবহার উপযোগিতা: তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) কর্তৃক বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ "স্পুৎনিক ১" মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় ০৪ অক্টোবর ১৯৫৭ সালে। এসব উপগ্রহ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত কার্যকলাপের মাধ্যমে নানারকম তথ্য- উপাত্ত সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের দ্বারা দূরযোগাযোগ, জলবায়ু ও আবহাওয়া অনুধাবন, সামরিক নজরদারি, ভূ-পৃষ্ঠ ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণ, নানাবিধ গবেষণা কর্মকান্ড সম্পাদনসহ হাজারো রকমের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের ধারণা নিয়ে চিন্তা করে আসছে। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে 1957 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ "স্পুটনিক-1" উৎক্ষেপণ করে।

এটি ছিল মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। স্পুটনিক-1 ছিল 58 সেমি ব্যাসের একটি অ্যালুমিনিয়ামের গোলক, যার ওজন ছিল 83.6 কেজি।এটিতে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার ছিল যা "বিপ-বিপ" শব্দ সম্প্রচার করেছিল।

স্পুটনিক-1-এর সাফল্য মহাকাশ অনুসন্ধানের এক নতুন যুগের সূচনা করে। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও এর গতিবিধি নিয়ে কাজ করে এন২ওয়াইও. কম ওয়েবসাইটের তথ্য মতে,
বিভিন্ন দেশে ও সংস্থার মোট স্যাটেলাইটের সংখ্যা (২০২৪ সালের ৭ই এপ্রিল অনুসারে):

  1. আলজেরিয়া: 6 
  2. আরব স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন অরগানাইজেশান: 15
  3. আর্জেন্টিনা: 38
  4. এশিয়া স্যাটেলাইট টেলিকমিউনিকেশন (ASIAST): 8 
  5. অস্ট্রেলিয়া: 38
  6. আজারবাইজান: 2 
  7. বাংলাদেশ: 1
  8. বেলারুশ: 2
  9. বলিভিয়া: 1
  10. ব্রাজিল: 20
  11. বুলগেরিয়া: 6
  12. কানাডা: 79
  13. চিলি: 4 
  14. চীন/ব্রাজিল: 3
  15. কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস (FORMER USSR): 1552
  16. Czech Republic ( Former Czechoslovakia): 4 
  17. Czechia: 2 
  18. ডেনমার্ক: 10 
  19. ইকুয়েডর: 2 
  20. মিশর: 11
  21. এস্তোনিয়া: 2
  22. EUROPEAN ORGANISATION FOR THE EXPLOITATION OF METEOROLOGICAL SATELLITES: 10
  23. ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা: 92
  24. ইউরোপীয় টেলিকমিউনিকেশন স্যাটেলাইট সংস্থা: 57
  25. ফ্রান্স: 96 
  26. ফ্রান্স/জার্মানি: 2 
  27. ফ্রান্স/ইতালি: 2
  28. জার্মানি: 79
  29. গ্লোবালস্টার: 84 
  30. গ্রীস: 3
  31. হাঙ্গেরি: 3
  32. ভারত: 108
  33. ইন্দোনেশিয়া: 19
  34. আন্তর্জাতিক মোবাইল স্যাটেলাইট সংস্থা (INMARSAT): 20
  35. আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন: 5
  36. আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট সংস্থা: 87
  37. ইরান: 5 
  38. ইরাক: 1 
  39. ইসরাইল: 34 
  40. ইতালি: 48 
  41. জাপান: 209 
  42. কাজাখিস্তান: 8 
  43. কেনিয়া: 1
  44. কুয়েত: 2
  45. লাওস: 1
  46. লিথুয়ানিয়া: 9
  47. লুক্সেমবার্গ: 15
  48. মালয়েশিয়া: 9
  49. মেক্সিকো: 13 
  50. মরক্কো: 2
  51. নেদারল্যান্ডস: 9
  52. New ICO: 1 
  53. নিউজিল্যান্ড: 2 
  54. নাইজেরিয়া: 5 
  55. উত্তর আটলান্টিক Treaty সংস্থা: 8 
  56. উত্তর কোরিয়া: 1
  57. নরওয়ে: 16 
  58. O3B নেটওয়ার্ক: 20
  59. Orbcomm: 41
  60. পাকিস্তান: 6
  61. গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People Republic of China): 674
  62. পেরু: 2
  63. ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র (Republic of Philippines): 2 
  64. পোল্যান্ড: 7
  65. পর্তুগাল: 3
  66. কাতার: 1
  67. আঞ্চলিক আফ্রিকান স্যাটেলাইট যোগাযোগ সংস্থা: 2 
  68. রুয়ান্ডা প্রজাতন্ত্র: 6 
  69. স্লোভেনিয়া প্রজাতন্ত্র: 3
  70. তিউনিসিয়া প্রজাতন্ত্র: 1
  71. সৌদি আরব: 15
  72. SEA LAUNCH: 1
  73. সিঙ্গাপুর: 18
  74. সিঙ্গাপুর/তাইওয়ান: 2
  75. সোসাইট ইউরোপিয়ান ডেস স্যাটেলাইট: 68 
  76. দক্ষিণ আফ্রিকা: 7
  77. দক্ষিণ কোরিয়া: 34
  78. স্পেন: 45 
  79. সুইডেন: 13 
  80. তাইওয়ান (চীন প্রজাতন্ত্র): 18 
  81. থাইল্যান্ড: 14
  82. তুরস্ক: 21
  83. তুর্কমেনিস্তান/মোনাকো: 1
  84. সংযুক্ত আরব আমিরাত: 14
  85. যুক্তরাজ্য: 659
  86. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: 7722
  87.  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র/ব্রাজিল: 1
  88. উরুগুয়ে: 1
  89. ভেনিজুয়েলা: 3
  90. ভিয়েতনাম: 3

এই সংখ্যাগুলি পরিবর্তনশীল, কারণ নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয় এবং পুরানো স্যাটেলাইট অব্যবহৃত হয়ে পড়ে।
কিছু দেশ তাদের সামরিক স্যাটেলাইটের সংখ্যা প্রকাশ করে না।

আপলিঙ্ক ও ডাউনলিঙ্ক কি?

আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত দুটি শব্দ।

আপলিঙ্ক: 

  • পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে সংকেত প্রেরণ করে।
  • টেলিযোগাযোগ টাওয়ার থেকে স্যাটেলাইটের দিকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়।
  • তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত 5 GHz থেকে 30 GHz এর মধ্যে থাকে।
  • টাওয়ারগুলিতে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়।
  • স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা তরঙ্গ গ্রহণ করে।
উদাহরণ: টেলিফোন কল, ইন্টারনেট ডেটা, টেলিভিশন সম্প্রচার।

ডাউনলিঙ্ক: 

  • স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে সংকেত প্রেরণ করে।
  • স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীর দিকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়।
  • তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত 1 GHz থেকে 12 GHz এর মধ্যে থাকে।
  • স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা তরঙ্গ প্রেরণ করে।
  • পৃথিবীর অ্যান্টেনা তরঙ্গ গ্রহণ করে।
  • গ্রহণকারী ডিভাইস (যেমন টেলিভিশন, মোবাইল ফোন) তরঙ্গ থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করে।
উদাহরণ: টেলিভিশন সম্প্রচার, ইন্টারনেট ডেটা, জিপিএস সংকেত।

আরও কিছু উদাহরণ আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক সম্পর্কে:

স্যাটেলাইট টেলিভিশন: 
  • আপলিঙ্ক: টেলিভিশন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটে ভিডিও সংকেত প্রেরণ করা হয়।
  • ডাউনলিঙ্ক: স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে ভিডিও সংকেত প্রেরণ করা হয়।
ইন্টারনেট: 
  • আপলিঙ্ক: ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে স্যাটেলাইটে ডেটা প্রেরণ করা হয়।
  • ডাউনলিঙ্ক: স্যাটেলাইট থেকে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ডেটা প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য:
আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্কের জন্য আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। স্যাটেলাইট ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করে আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক সংকেতকে আলাদা করে। আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্কের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টেনাগুলির দিক বিভিন্ন হয়।

একটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি করতে কি কি লাগে?

অবকাঠামো:

  • উপযুক্ত জমি: গ্রাউন্ডিং স্টেশনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, রেডিও তরঙ্গের জন্য বাধাবিহীন পরিবেশ, এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
  • ভবন: স্টেশনের সরঞ্জামাদি, অ্যান্টেনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, এবং কর্মীদের জন্য ভবন।
  • বিদ্যুৎ সরবরাহ: স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা।
  • ডেটা সংযোগ: ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডেটা সংযোগ ব্যবস্থা।

প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি:

  • অ্যান্টেনা: স্যাটেলাইট থেকে রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ ও প্রেরণের জন্য উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টেনা।
  • ট্রান্সমিটার ও রিসিভার: রেডিও তরঙ্গের জন্য ট্রান্সমিটার ও রিসিভার।
  • RF সরঞ্জাম: রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সরঞ্জামাদি।
  • কম্পিউটার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: স্টেশনের সরঞ্জামাদি নিয়ন্ত্রণ ও ডেটা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কম্পিউটার ব্যবস্থা।

অন্যান্য:

  • প্রশিক্ষিত কর্মী: স্টেশনের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা: স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা।
  • আইনি অনুমোদন: স্টেশন স্থাপন ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি অনুমোদন।
গ্রাউন্ডিং স্টেশনের ধরন ও আকার স্যাটেলাইটের ধরন, ব্যবহার, এবং বাজেট অনুসারে পরিবর্তিত হয়। গ্রাউন্ডিং স্টেশন তৈরি একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশের স্যাটেলাইটসমূহ

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটঃ

  • বাংলাদেশের মালিকানাধীন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূ-স্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ।
  • এটি ২০১৮ সালের ১১ মে (বাংলাদেশ সময় ১২ মে) ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
  • ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ।
  • এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়।
  • এটি ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ করে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া।

বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটঃ

  • বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ।
  • এটি ২০২৫ সালে উৎক্ষেপণ করা হবে।
  • বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের অভিযানের সময়কাল থাকবে ১৮ বছর।
  • স্যাটেলাইটটি আবহাওয়া, নজরদারি বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হবে।
  • এটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করার ফলে অরবিটাল স্লটের প্রয়োজন হবে না।

আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ সম্পর্কে বিস্তারিত:

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ নির্মাণ করেছে বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও রয়েছে

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে সামগ্রিক প্রকল্পটি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। বাংলাদেশ সময় ১১ মে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখ শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ মহাকাশে পাঠানো হয়। ফ্যালকন ৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে যাত্রা করে নিজস্ব কক্ষপথে। রকেট উৎক্ষেপণের জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে পৌঁছায়। ঘন্টাখানেক পর এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশন সেবা পাচ্ছি আমরা।

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় যোগ হয়েছে আরো একটি মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছি। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারি তহবিল ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, অবশিষ্ট অর্থ ঋণ সহায়তা হতে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হয়েছে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরের মধ্যেই তুলে ফেলা সম্ভব হবে। এতে পরবর্তী বছর থেকে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে করা হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।

এই কৃত্রিম উপগ্রহটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্টান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেচ্ছে আমাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল বা ভূ- অবস্থিত অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখতে এবং পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই- সেবা বা অনলাইনভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই স্যাটেলাইট পূর্ণাঙ্গভাবে কর্মক্ষম বা চালু হলে সে টাকা দেশেই থেকে যাবে। একই সঙ্গে এই স্যাটেলাইটের তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেট বঞ্চিত অঞ্চল যেমন পার্বত্য, হাওড়, ইত্যাদি এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যা, বড়, জলোচ্ছ্বাস, ইত্যাদির গতিবিধি আরও আগাম এবং আরও নিখুঁতভাবে জানা যাচ্ছে এ স্যাটেলাইটের সহায়তায়। 

ইতিপূর্বে বিভিন্ন উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারায় গত পাঁচ বছরে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের মতো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা যাচ্ছে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে দুর্যোগকালীন দুর্গমতম অঞ্চলে (যেমন: চরাঞ্চল বা হাওলাঞ্চল, গভীর সমুদ্র বা নদীতে মাছ ধরার ট্রলার, ইত্যাদিতে) মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকছে। বিভিন্ন অ্যাপ বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে দুর্যোগকবলিত মানুষ উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে এবং উদ্ধারকর্মীরা সহজে ভুক্তভোগীকে খুঁজে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারছে বা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে।

ঝড়ের আগের ও পরের ছবি বা বিস্তারিত তুলনা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও নিখুঁতভাবে নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে। ঠিক কোন স্থানে কী ধরনের সহায়তা দরকার, তা দ্রুত বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হচ্ছে। এখন একটা বাড়ি হেলে পড়লে চোখে দেখে বিচার করতে হয়। এই উপগ্রহের ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সামান্য হেলে পড়ার ঘটনাও ধরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হচ্ছে বা দুর্ঘটনার ওপর আরও বেশি প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে। ভূপ্রকৃতির সূক্ষ্ম পরিবর্তন যেমন খাল বিলে পানির উচ্চতা নদীর নাব্যতার তথ্য, ইত্যাদি আরও নিখুঁতভাবে পাওয়া যাচ্ছে।

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বন্যার ব্যাপ্তি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি, বন্যা পরবর্তী সময়ে কোন জমি কবে নাগাদ ফলণের জন্য আবার উপযোগী হবে, ইত্যাদি নির্ধারণ করা সহজ ও বাস্তবসম্মত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বা মানুষের প্রভাবে পরিবেশের পরিবর্তন তথ্য বছরের পর বছর ধরে এলাকার বিল-খাল, রাস্তাঘাট, বসতভিটা, গাছগাছালি, ইত্যাদির কী কী পরিবর্তন হচ্ছে তা উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে সহজে বের করা যাচ্ছে। এই তথ্য ব্যবহার করে বাস্তব সম্যতভাবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়া রাস্তাঘাটের নিপুণ ডিজিটাল মানচিত্র  প্রনয়ণ সম্ভব হচ্ছে এবং সেই মানচিত্র মোবাইলে ব্যবহার করে যোগাযোগ দ্রুত এবং নিরাপদ করা যাচ্ছে। এত দিন উপগ্রহের সেবা ব্যবহার শুধু মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। নিজেদের উপগ্রহ হওয়ায় একে এখন দুর্যোগ মোকাবিলা, যোগাযোগ ও কার্যকরি গবেষণা, ইত্যাদি অনেক কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ ১ এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে মহাকাশে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অক্ষুন্ন রেখে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

আরও পড়ুনঃ সেন্সর কি? সেন্সর কত প্রকার ও কি কি? সেন্সর এর কাজ কি? সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url