ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা

ইলেকট্রিক সার্কিটঃ

যার মধ্য নিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে তাকে সার্কিট বলে অর্থাৎ কারেন্ট চলার সম্পূর্ণ পথকেই ইলেকট্রিক সার্কিট বা বর্তনী বলে।

নিচে একটি মৌলিক ইলেকট্রিক সার্কিট অঙ্কন করে দেখানো হলোঃ-

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা

ইলেকট্রিক সার্কিটের উপাদানঃ

একটি আদর্শ সার্কিটের পাঁচটি প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে। যেমনঃ-

(ক) বিদ্যুতের উৎস। যেমনঃ- ব্যাটারি, জেনারেটর ইত্যাদি।

(খ) পরিবাহী। যেমনঃ- তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তার ইত্যাদি।

(গ) নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। যেমনঃ- সুইচ, রিলে, সকেট ইত্যাদি।

(ঘ) ব্যবহার যন্ত্র। যেমনঃ- বাতি, পাখা, মোটর ইত্যাদি।

(ঙ) রক্ষণ যন্ত্র। যেমনঃ- ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি।

কন্ডাক্টর, সেমিকন্ডাক্টর ও ইনসুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ইলেকট্রিক সার্কিটের প্রকারভেদঃ

(ক) বৈদ্যুতিক লোডের উপর ভিত্তি করে ৩ প্রকার। যথাঃ-

১। ওপেন সার্কিট

২। ক্লোজড সার্কিট এবং

৩। শর্ট সার্কিট ইত্যাদি।

(খ) সংযোগের উপর ভিত্তি করে তিন প্রকার। যথাঃ-

১। সিরিজ

২। প্যারালাল

৩। মিশ্র।

(গ) উৎসের উপর ভিত্তি করে দুই প্রকার। যথাঃ-

১। এসি সার্কিট

২। ডিসি সার্কিট

ওপেন সার্কিটঃ

যদি কোনো সার্কিটের কোনো অংশ বিযুক্ত বা খোলা থাকে এবং ঐ অংশে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত না হয়, তবে তাকে ওপেন সার্কিট বলে।

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ ওপেন সার্কিট।

ক্লোজড সার্কিটঃ

যে সার্কিটে শর্ট সার্কিট বা ওপেন সার্কিট নেই অর্থাৎ একটি আদর্শ সার্কিটকে ক্লোজড সার্কিট বলে। কারেন্ট চলাচলের সম্পূর্ণ পথকেই ক্লোজড সার্কিট বলে।

নিচে একটি ক্লোজড সার্কিটের চিত্র অঙ্কন করা হলোঃ-

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ ক্লোজড সার্কিট।

ক্লোজড সার্কিটে একটি বিদ্যুৎ প্রবাহের উৎস, লোড এবং রেজিস্টর থাকে।

শর্ট সার্কিটঃ

যদি কোনো কারণে কোনো সার্কিটের মধ্যবর্তী এক বা একাধিক অংশ শর্ট হয়ে যায়, যাতে কারেন্ট কোনো লোড বা রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে সরাসরি প্রবাহিত হয়, তবে এ প্রকার সার্কিটকে শর্ট সার্কিট বলে।শর্ট সার্কিট বোঝানোর জন্য নিচের একটি লক্ষণীয় সার্কিটের সংজ্ঞা অনুসারে এটিকেও ক্লোজড সার্কিট বলা চলে, কিন্তু ক্লোজড সার্কিট হওয়া সত্ত্বেও ল্যাম্পটি জ্বলছে না।

ল্যাম্প না জ্বলার কারণ হলো, এর কন্ডাক্টরের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রিক কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে না। কারেন্ট প্রবাহ না হওয়ার কারণ হলো, এর সঙ্গে কোনো ব্যাটারি যুক্ত নেই।

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ শর্ট সার্কিট।

লোড সংযোগ মোতাবেক বৈদ্যুতিক সার্কিট সাধারণত তিন প্রকার। যথাঃ-

১। সিরিজ সার্কিট।

২। প্যারালাল সার্কিট এবং

৩। সিরিজ প্যারালাল বা মিশ্র সার্কিট ইত্যাদি।

১। সিরিজ সার্কিটঃ

যে সার্কিটের মধ্য দিয়ে শুধু কারেন্ট এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হয় এবং যাতে কম্পোনেন্টসমূহ সিরিজে যুক্ত থাকে, তাকে সিরিজ সার্কিট বলে।

নিম্নে একটি সিরিজ সার্কিটের চিত্র অঙ্কন করা হলোঃ-

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ সিরিজ সার্কিট।

সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্য :

১। একটিমাত্র পথে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

২। কম্পোনেন্টসমূহ সিরিজে যুক্ত থাকে।

৩। ভোল্টেজ প্রতিটি লোডে বিভক্ত হয়।

৪। সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্স আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি রেজিস্ট্যান্সের যোগফলের সমান।

৫। সার্কিটের মোট ভোল্টেজ তাদের আলাদা আলাদা রেজিস্ট্যান্সের মধ্যকার ভোল্টেজ ড্রপের যোগফলের সমান।

পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সিরিজ সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্সের সূত্রঃ

সিরিজ সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্স, R = R₁ + R₂ + R₃ +............ ওহমস।

২। প্যারালাল সার্কিটঃ

যে সার্কিটে কারেন্ট একাধিক পথের মাধ্যমে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে গমন করে এবং যাতে সকল অংশে ভোল্টেজ সমান থাকে, তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।

নিচে একটি প্যারালাল সার্কিট অঙ্কন করা হলোঃ-

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ প্যারালাল সার্কিট।

প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্যঃ

১। বিদ্যুৎ প্রবাহের একাধিক পথ থাকে।

২। সার্কিটে মোট কারেন্ট আলাদা আলাদাভাবে শাখা কারেন্টের যোগফলের সমান।

৩। সার্কিটের সকল রেজিস্টরের ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ একই।

৪। সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্স তার শাখাসমূহের রেজিস্ট্যান্সের উল্টানুপাতিক মানের যোগফলের সমান ।

প্যারালাল সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্সের সূত্রঃ

প্যারালাল সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্স, 1/R=1/R₁+1/R₂+1/R₃+...........ওহমস।

৩। মিশ্র সার্কিট বা সিরিজ প্যারালাল সার্কিটঃ

যে সার্কিটে লোডসমূহের কিছু অংশ সিরিজে এবং কিছু অংশ প্যারালালে যুক্ত থাকে এবং যাতে মোট কারেন্ট আলাদা আলাদা কারেন্টসমূহের যোগফলের সমান, এ প্রকার সার্কিটকে সিরিজ প্যারালাল সার্কিট বা মিশ্র সার্কিট বলে। নিচে একটি মিশ্র সার্কিট অঙ্কন করা হলো :

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
চিত্রঃ মিশ্র সার্কিট।

মিশ্র সার্কিটের বৈশিষ্ট্যঃ

নিচে মিশ্র সার্কিটের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ-

১। এ প্রকার সার্কিটে রেজিস্টরসমূহ সিরিজে এবং প্যারালালে যুক্ত থাকে।

২। সিরিজ অংশে কারেন্ট একই থাকে।

৩। প্যারালাল অংশে ভোল্টেজ একই থাকে।

৪ । মোট কারেন্ট প্রবাহ আলাদা আলাদা শাখা কারেন্টের যোগফলের সমান।

৫। সার্কিটের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মানের ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

ট্রান্সফরমার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url