কন্ডাক্টর, সেমিকন্ডাক্টর ও ইনসুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কন্ডাক্টরঃ

যে সকল পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ সহজেই প্রবাহিত হতে পারে এবং কম বাধার সম্মুখীন হয় তাদেরকে কন্ডাক্টর বা পরিবাহী বলে। সাধারণত সকল ধাতু কম বেশি ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ধাতব পদার্থ ছাড়াও মাটি, প্রাণিদেহ, চারকোল ইত্যাদি ভালো পরিবাহী। কতগুলো বিশেষ ধাতব পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রন চার্জ নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে না।

কন্ডাক্টর, সেমিকন্ডাক্টর ও  ইনসুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

এই সকল পদার্থে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশি এবং বাইরে থেকে বিদ্যুৎ চালক বলে প্রয়োগ করে পটেনশিয়াল ডিফারেন্স বা বৈদ্যুতিক বিভবের সৃষ্টি করা হলে ঐ মুক্ত ইলেকট্রনগুলো শক্তি পেয়ে উত্তেজিত হয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। এই সকল ধাতব পদার্থই পরিবাহীর কাজ করে। বিদ্যুৎ পদার্থের পরিবাহীর কাজ করে।

বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের নিম্নবর্ণিত গুণগুলো থাকা প্রয়োজন। যথাঃ-

(ক) নিম্নমানের আপেক্ষিক রোধ বা রেজিস্ট্যান্স।

(খ) নিম্নমানের তাপীয় গুনাঙ্ক।

(গ) সহনক্ষমতা বা টলারেন্স।

(ঘ) নমনীয়তা।

(ঙ) ক্ষয়রোধ ক্ষমতা।

ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা

সুপরিবাহী পদার্থগুলো হলোঃ- রুপা, তামা, রুপা-তামার সংকর, সোনা, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা, নিকেল, সিসা, জার্মান সিলভার, পিতল, লোহা, প্লাটিনাম, ফসফরাস, ব্রোঞ্চ, রাং, ক্যাডমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্লাটিনয়েট ও পারদ।

সেমিকন্ডাক্টরঃ

যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে তবে যথেষ্ট বাধার সম্মুখীন হয় তাদেরকে সেমিকন্ডাক্টর বলে। এই সকল পদার্থের পরিবাহিতা মাঝারি রকমের। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, জার্মেনিয়াম, সিলিকন, কাঠ, কার্বন, লিড এসিড পার-অক্সাইড।

ইনসুলেটরঃ

যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে কারেন্ট সহজেই প্রবাহিত হতে পারে না অর্থাৎ যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ খুব বেশি বাধা প্রাপ্ত হয় তাদেরকে অপরিবাহী বা ইনসুলেটর বলা হয়। বিশুদ্ধ কন্ডাক্টর বা বিশুদ্ধ ইনসুলেটর বলতে কোনো পদার্থ নেই। তবে কতকগুলো পদার্থ কম ভোল্টেজ পরিসরে ইনসুলেটর এবং হাইভোল্টেজ পরিসরে কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।

অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজ ক্ষমতা পর্যন্ত একটি পদার্থ ইনসুলেটর হিসাবে কাজ করলেও তদূর্ধ্ব ভোল্টেজ তা পরিবাহী হিসাবে কাজ করবে। যে সকল পদার্থের বৈদ্যুতিক চার্জ নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে এদের মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা কম থাকে। ফলে বাইরের উৎস হতে শক্তি প্রয়োগ করা হলে বৈদ্যুতিক চার্জগুলো স্থানান্তর হতে পারে না। এ ধরনের পদার্থগুলো হলো অপরিবাহী পদার্থ।

একটি অপরিবাহী পদার্থের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। যথাঃ-

ক) উচ্চ ইনসুলেটর রেজিস্ট্যান্স।

খ) ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বা স্থায়িত্ব ।

গ) উচ্চ মানের পরাবৈদ্যুতিক ক্ষমতা।

ঘ) সহন ক্ষমতা।

ঙ) বাতাসের আর্দ্রতা শোষণের অক্ষমতা।

অপরিবাহী পদার্থ হলোঃ- লিনেন কাপড়, তুলা, কোনো শুকনো কাঠ, মার্বেল পাথর, চীনামাটি, শুকনা চামড়া, কোনো কাগজ, পশম, রেশম, গন্ধক, রজন, অভ্র, কাঁচ, রাবার, মোম, এবোনাইট, প্লাস্টিক ইত্যাদি।

পরিবাহী, অপরিবাহী ও সেমিকন্ডাক্টর পদার্থের প্রয়োজনীয়তাঃ

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক শক্তিকে এক স্থান হতে অন্য স্থানে সরবরাহ করার জন্য পরিবাহী পদার্থের তার বা ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। তার ও ক্যাবল ছাড়াও বৈদ্যুতিক মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বণ্টন ব্যবস্থায় দুটি বিপরীতধর্মী ক্যাবল বা তার যেমন, বিদ্যুৎ পরিবাহক ও আর্থের মধ্যে তড়িৎ ক্ষরণ বন্ধ করার জন্য অর্ধপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

যেমন, ক্যাবলের উপর ইনসুলেশন, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পোর্সেলিন ইত্যাদি। এছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতিতে উচ্চমানের ইনসুলেশন প্রয়োজন হয়, তা না হলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দুর্ঘটনায় বিনষ্ট হতে পারে। যেমন, সুইচগুলোতে ইনসুলেশন না দিলে এটিকে স্পর্শ মাত্র জীবন বিপন্ন হবে এবং ইনসুলেশন ব্যতীত কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি সম্ভব নয়। ইলেকট্রনিক সিস্টেমে সেমিকন্ডাক্টরের গুরুত্ব অপরিসীম।

এতে সেমিকন্ডাকটর পদার্থ হিসাবে জার্মেনিয়াম এবং সিলিকন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সকল গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তৈরি হয়।যেমনঃ- ট্রান্সজিস্টর, ডায়োড, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ইত্যাদি।

কন্ডাক্টর, সেমিকন্ডাক্টর ও ইনসুলেটরের তালিকাঃ

কন্ডাক্টর বা পরিবাহীঃ

১। রুপা

২। তামা

৩। স্বর্ণ

৪। অ্যালুমিনিয়াম

৫। টাংস্টেন

৬। দস্তা

৭। পিতল

৮। নিকেল

৯। লোহা

ইনসুলেটর বা অপরিবাহী বা অন্তরকঃ

১। কাচ

২। অ্যাম্বার

৩। সাইকা

৪। গন্ধক

৫। রাবার

৬। ব্যাকলাইট

৭। এবোনাইট

৮। চীনামাটি

৯। শুষ্ক কাঠ

সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহীঃ

১। জার্মেনিয়াম

২। সিলিকন

৩। সিলিকন কার্বাইড

৪। কার্বন

৫। ভিজা কাঠ

ট্রান্সফরমার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url