ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Welding

ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ওয়েল্ডিংঃ যে পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক ধাতুকে গলিত বা অর্ধগলিত অবস্থায় চাপ প্রয়োগে বা বিনা চাপে জোড়া দেওয়া হয় তাকে ওয়েল্ডিং বলে।

ইহাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

(ক) ফিউশন ওয়েল্ডিং।

(খ) নন ফিউশন ওয়েল্ডিং।

(ক) ফিউশন ওয়েল্ডিংঃ যে সমস্ত ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় তাপের প্রভাবে জোড়া স্থান গলে জোড়া লাগে চাপের কোন প্রয়োজন হয় না তাকে ফিউশন ওয়েল্ডিং বলে।

ফিউশন ওয়েল্ডিং দুই প্রকার। যেমনঃ

(ক) আর্ক ওয়েল্ডিং।

(খ) গ্যাস ওয়েল্ডিং।

(ক) আর্ক ওয়েল্ডিংঃ ওয়েল্ডিং করার যে পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড এবং কার্য বস্তুর মধ্যে আর্ক সৃষ্টি করে উৎপন্ন তাপ এর সাহায্যে ধাতুকে পূর্ন গলিত বা অর্ধগলিত অবস্থায় চাপ প্রয়োগে বা বিনা চাপে জোড়া দেওয়া হয় তাকে আর্ক ওয়েল্ডিং বলে।

আরও পড়ুনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

আর্ক ওয়েল্ডিং কে প্রধানত নয় ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১। কার্বন আর্ক ওয়েল্ডিং।

২। মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং।

৩। এটমিক হাইড্রোজেন আর্ক ওয়েল্ডিং। 

৪। টিগ আর্ক ওয়েল্ডিং।

৫। মিগ আর্ক ওয়েল্ডিং।

৬। সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং।

৭। ইলেকট্রো স্ল্যাগ ওয়েল্ডিং।

৮। প্লাজমা মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং।

৯। মোনেল মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং। 

নিচে কয়েক প্রকার আর্ক ওয়েল্ডিং নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

টিগ আর্ক ওয়েল্ডিংঃ

টিগ ওয়েল্ডিং

যে ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় আর্গন, হিলিয়াম ইত্যাদি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের অবিরাম প্রবাহের ছত্রছায়ায় একটি ক্ষয় হীন ইলেকট্রোড ব্যবহার করিয়া ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে টিগ ওয়েল্ডিং বলে। ইহাতে ফিলার রড ব্যবহার করা হয়।

মিগ আর্ক ওয়েল্ডিংঃ

মিগ ওয়েল্ডিং

যে ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় আর্গন, হিলিয়াম ইত্যাদি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের অবিরাম প্রবাহের ছত্রছায়ায় একটি ক্ষয়িঞ্চু  ইলেকট্রোড ব্যবহার করিয়া ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে মিগ ওয়েল্ডিং বলে। ইহাতে ইলেকট্রোড নিজেই ফিলার রডের কাজ করে।

প্লাজমা মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিংঃ

প্লাজমা মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং

প্লাজমা আর্ক ওয়েল্ডিং এর টাংস্টেন ইলেকট্রোড ও ওয়ার্ক পিচের এর মধ্যে আর্ক সৃষ্টি করা হয়। প্লাজমা আর্ককে একটি  আউটার নজলের ভিতর দিয়ে আবদ্ধ রেখে ওয়েল্ডিং করা হয়। এক্ষেত্রে সবসময় স্থির কারেন্ট এর ডিসি স্ট্রেইট পোলারিটি ব্যবহৃত হয়।

প্রয়োগক্ষেত্রঃ

উড়োজাহাজ শিল্পে, জেট ইঞ্জিন তৈরি, স্টেইনলেস ইস্পাত, টাইটানিয়াম পাইপ ও টিউব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিংঃ

সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং


আর্ক ওয়েল্ডিং এর যে পদ্ধতিতে ফ্লাক্স ফিডার টিউবের দ্বারা সরবরাহকৃত ফ্লাক্স এর ভিতর রেখে একটা আবরন বিহিন ক্ষয়শীল ইলেকট্রোডের দ্বারা আর্ক সৃষ্টি করে ওয়েল্ডিং আর্ক করা হয় তাকে সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং বলে।

আরও পড়ুনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং জোড়ার বিভিন্ন ত্রুটিসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

(খ) গ্যাস ওয়েল্ডিংঃ 

গ্যাস ওয়েল্ডিং

দুইটি গ্যাসের জ্বলন্ত মিশ্রণ হতে সরবরাহকৃত উত্তাপের মাধ্যমে যে ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে গ্যাস ওয়েল্ডিং বলে। ওয়েল্ডিং করার উক্ত পদ্ধতিতে দুইটি গ্যাসকে ব্লো-পাইপ বা টর্চের এর মাধ্যমে উপযুক্ত অনুপাতে মিশিয়ে টর্চের সাথে সংযুক্ত একটি নজলের প্রান্তভাগ জ্বালিয়ে উত্তপ প্রদান করা হয়।
গ্যাস ওয়েল্ডিং প্রধানত চার প্রকার। যথাঃ

১। অক্সি অ্যাসিটিলিন গ্যাস ওয়েল্ডিং (৩১০০°-৩৪৮২° সেঃ)

২। অক্সি হাইড্রোজেন গ্যাস ওয়েল্ডিং (২০০০°-২৪০০° সেঃ)

৩। এয়ার -অ্যাসিটিলিন গ্যাস ওয়েল্ডিং (১৩০০°-১৮০০° সেঃ)

৪। প্রেসার গ্যাস ওয়েল্ডিং (১২০০°-১৩০০° সেঃ)

আরও পড়ুনঃ গ্যাস ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

(খ) নন ফিউশন ওয়েল্ডিংঃ 

দুটি ধাতু খন্ডের পার্শ্বদেশকে শিখা অথবা বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা উত্তপ্ত করে অর্ধগলিত অবস্থায় এনে চাপ প্রয়োগ করে জোড়া দেওয়াকে নন-ফিউশন ওয়েল্ডিং বলে। যেমনঃ 

১। ফোর্জ ওয়েল্ডিং 

২।রেজিষ্টেন্স ওয়েল্ডিং।

১। ফোর্জ ওয়েল্ডিংঃ

ফোর্জ ওয়েল্ডিং

ওয়েল্ডিং করার যে পদ্ধতিতে জোড়া দেওয়ার ধাতু দুইটিকে ফোর্জ বা অন্য কোন উপযুক্ত চুল্লীতে রেখে এদের সংযুক্ত করার প্রান্তদ্বয়কে(১৩০০° সেঃ -১৪০০° সেঃ) উত্তপ্ত করে নমনীয় অবস্থায় আনার পর হাতুড়ির সাহায্যে পিটিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে জোড়া লাগানো হয় তাকে ফোর্জ ওয়েল্ডিং বলে। সাধারণত পেটা লোহা বা নরম লোহা (যাতে কার্বনের পরিমান ২% এর বেশি নয়) ফোর্জ ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে জোড়া দেওয়া হয়।

এটি তিন প্রকার হয়ে থাকে। যথাঃ

১। হ্যামার ওয়েল্ডিং।

২।ডাই ওয়েল্ডিং।

৩।কোণ ওয়েল্ডিং।

২। রেজিষ্টেন্স ওয়েল্ডিংঃ

রেজিষ্টেন্স ওয়েল্ডিং

রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং হলো মেকানিক্যাল নন ফিউশন অথবা প্রেসার প্রসেস ওয়েল্ডিং যা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত স্বয়ংক্রিয় মেশিন ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বিদ্যুতিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তর করে,ঐ তাপ দ্বারা দুইটি ধাতব পাতের নির্দিষ্ট অংশকে প্রায় গলন্ত অবস্থায় এনে চাপের সাহায্যে  জোড়া দেওয়ার পদ্ধতিকে রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং বলে।

রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং ছয় প্রকার। যথাঃ

১। স্পট ওয়েল্ডিং। 

২।সীম ওয়েল্ডিং।

৩। প্রজেকশন ওয়েল্ডিং।

৪।ফ্লাশ ওয়েল্ডিং।

৫।আপসেট ওয়েল্ডিং।

৬।পারকাশন ওয়েল্ডিং।

ওয়েল্ডিং এর সুবিধা ও অসুবিধাঃ

ওয়েল্ডিং এর সুবিধাঃ

১।একটি সুন্দর ও নিখুঁত ওয়েল্ডিং জোড়া মূল ধাতুর মতো বা তার চাইতে শক্ত হতে পারে।

২।ওয়েল্ডিং পদ্ধতির সরঞ্জামগুলি স্থানান্তরযোগ্য।

৩।যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের জটিল গঠনের কাজ সম্পাদন করা যায় যা হয়ত অন্য পদ্ধতিতে সম্ভব নয়।

৪।সাধারণত ওয়েল্ডিং পদ্ধতির সরঞ্জামাদি তেমন ব্যয়বহুল নয়।

৫।নিশ্ছিদ্র জোড়া দেওয়া সম্ভব যা অন্য পদ্ধতিতে দেওয়া সম্ভব নয়।

ওয়েল্ডিং এর অসুবিধাঃ

১।ওয়েল্ডিং পদ্ধতি ক্ষতিকারক আলোক বিকিরণ করে।

২।ওয়েল্ডিং পদ্ধতির জোড়া স্থান অমসৃণ হয়।

৩।উত্তম সর্তকতা এবং দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয়।

৪।শারীরিক ও পরিবেশের ক্ষতি করে। ৫।শুধুমাত্র ওয়েল্ডেবল ম্যাটেরিয়ালস এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

৬।জোড়ার ভেতর আভ্যন্তরীণ স্ট্রেস সৃষ্টি হয়।

ওয়েল্ডিং জোড়া কি? উহা কত প্রকার? ও কি কি?

ওয়েল্ডিং জোড়াঃ ওয়েল্ডিং পদ্ধতিতে যেসব জোড়া দেওয়া হয় তাকে ওয়েল্ডিং জোড়া বলে।

ইহা ৫ প্রকার। যথাঃ

 ১। বাট জোড়া

২। ল্যাপ জোড়া

৩। টি জোড়া

৪। কর্ণার জোড়া

৫। এজ জোড়া

ওয়েল্ডিং পজিশন কত প্রকার ও কি কি?

আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ওয়েল্ডিং পজিশন চার প্রকার। যথাঃ

(ক) ফ্লাট পজিশন

(খ) ভার্টিক্যাল পজিশন

(গ) হরাইজন্টাল পজিশন

(ঘ) ওভার হেড পজিশন।

বৃটিশ ও ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আরেকটি পজিশন হচ্ছে-

(ঙ) ইনক্লাইন্ড পজিশন

এছাড়াও

1-জি পজিশন: গ্রুভ ও ফিলেট ওয়েল্ডের জন্য ফ্লাট পজিশন এবং ফিলেট ওয়েন্ডের জন্য আনুভূমিক পজিশন ।

2-জি পজিশনঃ গ্রুভ ও ফিলেট ওয়েল্ডের জন্য ফ্লাট ও হরাইজন্টাল পজিশন, ওয়েল্ডিং এর সময় পাইপকে মােচরানাে বা ঘুরানাে হবে না।

3-জি পজিশনঃ গ্রুভ ও ফিলেট ওয়েন্ডের জন্য ফ্লাট, হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল পজিশন ।

4-জি পজিশনঃ গ্রুভ ও ফিলেট ওয়েন্ডের জন্য ফ্লাট, হরাইজন্টাল,ভার্টিক্যাল ও ওভারহেড পজিশন

5-জি পজিশনঃ পাইপ আনুভূমিকভাবে আবদ্ধ, গ্রুভ ও ফিলেট। ওয়েন্ডের জন্য ফ্লাট, ভার্টিক্যাল ও ওভারহেড পজিশন। পাইপকে মােচড়ানাে হবে না ।

6-জি পজিশনঃ পাইপ 45° কোণে হেলানাে থাকে। পাইপকে মােচড়ানাে হবে না।

অন্যান্য জোড়ার চেয়েও ওয়েন্ডিং জোড়ার সুবিধা কি? অথবা একটি ওয়েল্ডিং জোড়া রিভেট ও বােল্টের জোড়া হতে উত্তম কেন?

প্রথমতঃ ওয়েল্ডিং একটি স্থায়ী জোড়া পদ্ধতি । পক্ষান্তরে রিভেট ও বোল্ট এবং অন্যান্য জোড়া যথাক্রমে অর্ধস্থায়ী এবং অস্থায়ী জোড়া।

দ্বিতীয়তঃ ওয়েল্ডিং জোড়ায় অণুর সংযােগ ঘটে যাকে মূলধাতুর যে কোন অংশের সাথে তুলনা করা যায় । কিন্তু রিভেট বা বােল্ট অথবা অন্যান্য জোড়ায় অনুর সংযােগ ঘটে না, বরং মূলধাতুর গায়ে রিভেট বা বােল্টের। ব্যাসের সম-পরিমান ছিদ্র করায় মূলধাতুর শক্তি কমে যায় ।

তৃতীয়তঃ ওয়েল্ডিং জোড়ার টানা শক্তি রিভেট বা বােল্ট বা অন্য যে কোন জোড়ার টানা শক্তির চেয়ে বেশি।

চতুর্থতঃ ওয়েল্ডিং জোড়ায় তরল নির্গত হতে পারে না (যেমন- ট্যাংক) কিন্তু অন্যান্য জোড়ায় পারে । সুতরাং একটি ওয়েল্ডিং জোড়া রিভেট কিংবা বােল্ট তথা যে কোন জোড়া থেকে অধিক উত্তম।

আরও পড়ুনঃ ওয়েল্ডিং কাকে বলে? এবং ওয়েল্ডিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ওয়েল্ডিং জোড়ার ত্রুটি নির্ধারণে কি কি পরীক্ষা করা হয়? 

ওয়েল্ডিং জোড়ার ত্রুটি পরীক্ষা প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ

১। ধ্বংসাত্বক পরীক্ষাঃ

(ক) নেক ব্রেক টেষ্ট

(খ) ইমপেক্ট টেষ্ট

(গ) টেনসাইল টেষ্ট

(ঘ) ষ্ট টেষ্ট

(ঙ) মেশিনিং টেষ্ট

(চ) বেন্ড টেষ্ট।

২। অ-ধ্বংসাত্মক পরীক্ষাঃ

(ক) হার্ডনেস টেষ্ট

(খ) মাইক্রোস্কোপিক পার্টিক্যাল টেষ্ট

(গ) ম্যাগনেটিক পার্টিক্যাল টেষ্ট

(ঘ) আন্ট্রাসনিক টেষ্ট

(ঙ) রেডিওগ্রাফি টেষ্ট

(চ) এক্স-রে টেষ্ট

(ছ) গামা-রে টেষ্ট।

আরও পড়ুনঃ টিগ ওয়েল্ডিং এবং মিগ ওয়েল্ডিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url