গ্যাস ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

গ্যাস ওয়েল্ডিং

গ্যাস ওয়েল্ডিং কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

গ্যাস ওয়েন্ডিংঃ দুইটি গ্যাসের জলন্ত মিশ্রণ হতে সরবরাহকৃত উত্তাপের মাধ্যমে যে ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে গ্যাস ওয়েল্ডিং বলে। ওয়েল্ডিং করার উক্ত পদ্ধতিতে দুইটি গ্যাসকে ব্লো-পাইপ বা টর্চ এর মাধ্যমে উপযুক্ত অনুপাতে মিশিয়ে টর্চের সাথে সংযুক্ত একটি নজলের প্রান্তভাগ জ্বালিয়ে উত্তাপ প্রদান করা হয়।

গ্যাস ওয়েল্ডিং প্রধানত চার প্রকার। যথাঃ

১। অক্সি- এসিটিলিন গ্যাস ওয়েল্ডিং (৩১০০° - ৩৪৮২সেঃ)

২। অক্সি- হাইড্রোজেন গ্যাস ওয়েল্ডিং (২০০০° - ২৪০০°সেঃ)

৩। এয়ার -এসিটিলিন গ্যাস ওয়েল্ডিং (১৮০০° - ১৩০০°সেঃ)

৪। প্রেসার গ্যাস ওয়েল্ডিং ( ১২০০°- ১৩০০সেঃ)

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত সরঞ্জাম গুলির নামঃ

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত সরঞ্জাম গুলির নাম নিম্নে দেওয়া হল-

(ক) প্রেসার রেগুলেটর

(খ) গ্যাস সিলিন্ডার

(গ) ওয়েল্ডিং টর্চ

(ঘ) নজল

(ঙ)হােজ পাইপ ইত্যাদি।

গ্যাস ওয়েন্ডিং এর সুবিধা ও অসুবিধাঃ

সুবিধাসমূহঃ

(১) অক্সি এসিটিলিন শিখস সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কারণ এটি আর্ক,ওয়েল্ডিং এর মত বিদ্ধকারী নয় ।

(২) এটি সাধারনত পাতলা সিটের জন্য বেশি সুবিধাজনক।

(৩) সরঞ্জামাদি গুলো সহজে স্থানান্তরিত করা যায় ।

 (৪)সহজে ঘরে-বাইরে জোড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যায়।

(৫) নজল পরিবর্তন করে টর্চ তাপ দেওয়া, ওয়েল্ডিং, ব্রেজিং, কাটিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অসুবিধাসমূহঃ

(১) এটি আর্ক ওয়েল্ডিং এর তুলনায় ধীর পদ্ধতি।

(২) এর Heat affected zone এবং distortion আর্কের তুলনায় বেশী ।

(৩) গ্যাসের মূল্য তুলনামূলক বেশী হওয়ায় খরচও বেশী।

(8) গ্যাসের মজুদ রাখা ও নড়াচড়া করার নিরাপত্তা কম।

(৫) খুব বেশি পুরুত্বের ধাতুকে কম খরচে ওয়েল্ডিং করা যায় না

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ উৎপন্ন চাপের পরিমান কিসের উপর  নির্ভর করে?

(১) জ্বালনী প্রবাহের হার

(২) শিখার সঠিক অবস্থান এবং

(৩) ভ্রমন গতি

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত তিনটি জ্বালানি গ্যাসের নাম কি?

১। এ্যাসিটিলিন গ্যাস

২। অক্সিজেন 

৩। মার্স গ্যাস

এদের মধ্যে এ্যাসিটিলিন গ্যাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ যে তিন ধরনের শিখা ব্যবহার করা হয় তাহাদের নাম লিখ। কোন শিখাটি ওয়েল্ডের মেটেরিয়াল এর উপর কোন প্রভাব ফেলে না? কোন শিখাটির তাপমাত্রা সূৰ্বাধিক?

গ্যাস ওয়েল্ডিং এ সাধারণত অক্সি - এ্যাসিটিলিন শিখা ব্যবহার করা হয়।

অক্সি - এসিটিলিন শিখা তিন প্রকার। যথা-

(ক) কার্বরাইজিং বা রিভিউনিং লিখে (Carburizing flame)

(খ) নিরপেক্ষ শিখা (Neutral flame)

(গ) অক্সিডাইজিং শিখা (OXyizing flame)

উপরোক্ত শিখা সমূহের মধ্যে অক্সিডাইজিং শিখার তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। নিউট্রাল শিখা ওয়েল্ডেড মেটেরিয়াল এর উপর কোন প্রভাব ফেলেনা।

আরও পড়ুনঃ টিগ ওয়েল্ডিং এবং মিগ ওয়েল্ডিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

নিউট্রাল শিখা, কার্বোরাইজিং বা রিডিউসিং শিখা এবং অক্সিডাইজিং শিখা কি? এদের তাপমাত্রা কত এবং কোন কোন ধাতু ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত হয়?

কার্বোরাইজিং শিখা/ রিডিউসিং শিখাঃ যে অক্সি - এসিটিলিন। শিখায় অক্সিজেনের চেয়ে এসিটিলিন এর পরিমান বেশী ব্যবহার করা হয়। তাকে কার্বুরাইজিং শিখা বা রিডিউসিং শিখা বলে। এ শিখার অক্সিজেন এবং এসিটিলিন গ্যাসের অনুপাত 0.9:1 । এর কার্বনের পরিমান বেশি থাকে বলেই এ শিখাকে ধাতুর উপরিভাগ শক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয়।কার্টুরাইজং শিখার (Curburizing Flame) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 5700°F; C₂H₂ : O₂ = 1:0.9।

কার্বোরাইজিং শিখা/ রিডিউসিং শিখা

নিউট্রাল শিখাঃ যে অক্সি এসিটিলিন গ্যাস শিখায় অক্সিজেন এবং এসিটিলিন এর অনুপাত 1:1 থাকে তখন তাকে নিউট্রাল শিখা বলে। এই এসিটিলিন গ্যাসের অনুপাত সমান থাকে অর্থাৎ অক্সিজেন এবং শিখার কোন গ্যাসই একক ভাবে ধাতুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না বলে একে নিউট্রাল শিখা বলা হয়। নিরপেক্ষ শিখার (Nutral Flame) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 5850°F; C₂H₂ : O₂=1:1

নিউট্রাল শিখা

ব্যবহার: নিউট্রাল শিখা ইস্পাত, ঢালাই লােহা , এলুমিনিয়াম এবং তামা ওয়েল্ডিং এ ব্যবহার করা হয়।

অক্সিডাইজিং শিখাঃ যে অক্সি-এসিটিলিন শিখায় এসিটিলিনের চেয়ে অক্সিজেনের পরিমান বেশী থাকে, তাকে অক্সিডাইজিং শিখা বলে। এতে অক্সিজেন এবং এসিটিলিনের অনুপাত 1.5:1। অক্সিডাইজিং শিখার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 6300°F ।

অক্সিডাইজিং শিখা

ব্যবহার: এ শিখা দ্বারা ইস্পাতের উপর ওয়েল্ডিং করা যায় না কারন এর সংস্পর্শে আসলে ইস্পাতের অক্সিজেন সংযােগ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এ শিখা দ্বারা তামা ও দস্তা সমৃদ্ধ ধাতুকে এবং অল্প সংখ্যক লৌহজাত ধাতুকে (যেমন: ম্যাংগানিজ ইস্পাতকে) ওয়েল্ডিং করা যায়। অক্সিডাইজিং শিখার (Oxydizing Flame) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 6300°F; C₂H₂ : O₂ = 1:1.5। 

অক্সিডাইজিং শিখা

একটি ভাল শিখার কি কি গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ?

একটি ভাল শিখার যে যে গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ তা নিম্নে দেওয়া হল-

(ক) শিখর উচ্চ তাপমাত্রা থাকতে হবে যাতে মেটালকে গলাতে পারে ।

(খ) তাপ অপচয় পূরন করার জন্য প্রয়ােজনীয় তাপের সরবরাহ। নিশ্চিত করবে।

(গ) শিখা মেটালকে পুড়িয়ে ফেলবেনা।

(ঘ) শিখা কোন ময়লা বা অন্য কোন ধাতুর সংযােগ ঘটাবেনা।

(ঙ) শিখা মেটালের উপর কার্বন সংযােগ ঘটাবেনা।

আরও পড়ুনঃ ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

ফ্লাক্স কি? ফ্লাক্সের কাজ কি?

ফ্লাক্সঃ গ্যাস ওয়েল্ডিং এর সময় বেস মেটালের জোড়া স্থান হতে অক্সাইডকে অপসারন করার জন্য এবং উক্ত অক্সাইডের গলনাংক কমিয়ে নিখুঁত ওয়েল্ড গঠনের জন্য যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় তাকে ফ্লাক্স বলে।

ফ্লাক্সের কাজঃ

(১) অক্সিজেন হতে জোড়স্থানকে রক্ষা করা।

(২) সৃষ্ট অক্সাইড দূর করা।

(৩) অন্যান্য অপদ্রব্য গাদ (Slag) হিসাবে দূর করা।

৪) শক্তিশালী ও অধিকতর নমনীয় জোড় তৈরিতে সাহায্য করা।

আরও পড়ুনঃ গ্যাস ওয়েল্ডিং জোড়ার বিভিন্ন ত্রুটিসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Md Minhajul Islam YT
    Md Minhajul Islam YT 7:46 AM

    এটাও খুব ভাল একটা পোস্ট

    • Md Shamim Hossain
      Md Shamim Hossain 11:34 AM

      Thanks

Add Comment
comment url