ইলেকট্রোড কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

ইলেকট্রোড
ইলেকট্রোড

 ইলেকট্রোড কাকে বলে? একে কীভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়ঃ

ইলেকট্রোডঃ আর্ক ওয়েল্ডিং এর সময় যে ওয়েল্ডিং রড বিদ্যুতিক আর্ক এবং ইলেকট্রোড হোল্ডারের মধ্যে মধ্যে বিদ্যুৎ বহন করে, তাকে ইলেকট্রোড বলে।

ইলেকট্রোড কে নিম্নলিখিত উপায়ে শ্রেণীবিভাগ করা যায়ঃ

১।কনজুমএ্যাবল বা ক্ষয়ীষ্ণু ইলেকট্রোড দুই প্রকার।যথাঃ

(ক) খোলা বা আবরণ বিহীন ইলেকট্রোড। 

(খ) কোটেড বা আবরণ যুক্ত ইলেকট্রোড।

কোটেড বা আবরণ যুক্ত ইলেকট্রোড তিন প্রকার। যথাঃ

(i) লাইটলি কোটেড। 

(ii) সেমি কোটেড। 

(iii) হেভীলি কোটেড।

২। ননকনজুমএ্যাবল বা অক্ষয়ীষ্ণু ইলেকট্রোড দুই প্রকার। যথাঃ

(ক) কার্বন বা গ্রাফাইট ইলেকট্রোড। 

(খ) টাংস্টেন ইলেকট্রোড। 

টাংস্টেন ইলেকট্রোড তিন প্রকার। যথাঃ

(i) বিশুদ্ধ টাংস্টেন। 

(ii)থরিয়াম মিশ্রিত টাংস্টেন। 

(iii)জিরকোনিয়াম মিশ্রিত টাংস্টেন। 

ইলেকট্রোড নির্বাচনে কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হয়?

১।বেস মেটালের ধাতবের ধরণ।

২।বেস মেটালের পুরুত্ব। 

৩।কোন অবস্থানে ওয়েল্ডিং করতে হবে।

 ৪।ওয়েল্ডিং স্তর কয়টি হবে।

ইলেকট্রোডের গায়ে কোটিং বা আবরণ  ব্যবহারের উদ্দেশ্য কি?

১। নিখুঁত আর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করা। 

২। ওয়েল্ড মেটালকে কলুষিত হতে না দেয়া।

৩। সৃষ্ট আর্ক স্থির ও স্থিতিশীল করে রাখা। 

৪। গলিত ধাতু ও আর্কের চতুর্দিকে শেড বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ধাতুকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করা।

৫। উত্তপ্ত  ধাতব কণার নিঃসরণ কম করা

 ৬। সঠিক উত্তাপ সঞ্চালনে সহায়তা করা।

 ৭। ওয়েল্ডিং বিড সুন্দর ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করা।

৮। ধীরে ধীরে ঠান্ডা হওয়ার জন্য ওয়েল্ড এর উপরে ধাতু আচ্ছাদন সরবরাহ করা।

৯। সঠিক ভাবে তাপ সঞ্চালনে সহায়তা করা।

১০। ওয়েল্ডিং জোড়কে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করা।

১১। ইলেকটোডের কোর ওয়্যারে কোন সংকর উপাদান কম থাকলে তা সরবরাহ করা।

আরও পড়ুনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

ইলেকট্রোড আবরণে ব্যবহৃত উপাদানসমূহের নামগুলোঃ

(১) কাওলিন বেনটোনাইট ট্যালক (Kaolin Bentonite Talc)

(২) লাইম কোয়ালিটি মিনারেলস (Lime Quality Minerals)

(৩) ফেরাে-টিটানিয়াম (Ferro Titanium)

(৪) ফেরাে-ম্যাঙ্গানিজ (Ferro Manganese)

(৫) ফেরাে-সিলিকন (Ferro Silicon)

(৬) আইরন অক্সাইড (Iron Oxide)

(৭) কার্বনেটস (Carbonates)

(৮) টাইটেনিয়াম (Titanium)

ইলেকট্রোডের দক্ষতাঃ

আর্ক ওয়েল্ডিং এ কনজুমাবল বা ক্ষয়ীষ্ণু ইলেকট্রোড ব্যবহারের সময় ইলেকট্রোড ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে জোড়া স্থান বরাবর ওয়েন্ডিং গঠনে সাহায্য করে। যতটুকু ইলেকট্রোড ক্ষয় হয়, অনেক সময় তার সবটুকু ওয়েল্ড গঠনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না, কিছু অপচয় হয়। উপযুক্ত ইলেকট্রোড এর ক্ষেত্রে অপচয়ের পরিমান অনেক কম।মােট যতটুকু ইলেকট্রোড ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, তার ওজনের সাথে জোড়া স্থানে সঞ্চিত জোড়া বা সংস্থাপিত ধাতুর ওজনের অনুপাতের শতকরা হিসাবকে ব্যবহৃত ইলেকট্রোড এর দক্ষতা বা ইফিসিয়েন্সি বলা হয় ।

দক্ষতা =(ইলেকট্রোডের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশের ওজন। /

ইলেকট্রোড হইতে জোড়া স্থানে সঞ্চিত ধাতুর ওজন)x১০০

সাধারনতঃ ইলেট্রোডের দক্ষতা ৭৫-৯৫% পর্যন্ত হয় । তবে আয়রন পাউডার ইলেকট্রোডের দক্ষতা ১০০% পর্যন্ত হতে পারে ।

ইলেকট্রোড নাম্বারিং পদ্ধতিঃ

যেমনঃ E 60 1 3

E =ইলেকট্রোড, ইলেকট্রিক আর্ক ওয়েল্ডিং এর জন্য তৈরি।

প্রথম অংক ও দ্বিতীয় অংক (1st & 2nd digit) = এটি ইলেকট্রোডের মিনিমাম টেনসাইল স্ট্রেংথ বা সর্বনিম্ন টানা শক্তি বুঝায় । 60 এর অর্থ ইলেকট্রোডের ধাতুর সর্বনিম্ন টানা শক্তি। 60,000 psi একইভাবে 45 এর অর্থ 45,000 psi ইত্যাদি। 

তৃতীয় অংক (3rd digit)= তৃতীয় অংকটি কোন ওয়েল্ডিং পজিশনে ইলেকট্রোডটি ব্যবহার করা যাবে তা নির্দেশ করে। অংকটি ১ হলে ইলেকট্রোডটি সকল পজিশনে (অর্থাৎ ফ্লাট, ওভারহেড, হরিজোনটাল, ভার্টিক্যাল) ব্যবহার করা যাবে । ২ হলে শুধু ফ্লাট ও হরিজোনটাল এই দুই পজিশনে ব্যবহার করা যাবে । ৩ হলে এটি শুধু ফ্লাট পজিশনে ব্যবহার করা যাবে।

চতুর্থঅংক (4th digit) = চতুর্থ অংকটি বিদ্যুৎ সরবরাহ, (এ.সি, বা ডি.সি.) ইলেকট্রোড কোটিং এর প্রকারভেদ (ইলেকট্রোডের গুনাবলী ) ও পােলারিটি নির্দেশ করে। অনেক সময় এর দ্বারা ওয়েল্ড কোয়ালিটি। এবং পেনিট্রেশনের পরিমাণও বুঝানাে হয় ।

বি:দ্র: ইলেকট্রোডের টানা শক্তি অনেক সময় তিনটি অংক দ্বারাও বুঝানাে হয়। যেমন- ই-১০০১৫, এখানে শক্তি ১০০,০০০ psi.

আরও পড়ুনঃ টিগ ওয়েল্ডিং ও মিগ ওয়েল্ডিং কাকে বলে? বিস্তারিত আলোচনা

E6013 বলতে কি বুঝায়?

 ইলেকট্রোড কে বানিজ্যিক ভাবে চিহ্নিত করার জন্য কিছু কোড নম্বর ব্যবহার করা হয় । E6013 ইলেকট্রোডকে চেনার জন্য তেমনি। একটি কোড নম্বর।এর দ্বারা নিম্নলিখিত বিষয় গুলাে নির্দেশ করে।

E 601 3

E=Electrode 

60=Tensile strength of the metal in KPsi

1=Type of welding position 

3= Type of flux used and polarity 

 

Electrode

পােলারিটি কাকে বলে? এটি কত প্রকার ও কি কি? তা কোথায় প্রযোজ্য? এর কার্যকারীতাঃ

পােলারিটিঃ ডিসি কারেন্টের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন প্রবাহের দিককে পােলারিটি বলে ।

পােলারিটি দুই প্রকারঃ

১। স্ট্রেইট পােলারিটি (Straight polarity)

২। রিভার্স পােলারিটি (Reverse polarity)

এটি ভিসি সরবরাহের ওয়েল্ডিং করার সময় প্রযােজ্য।

পােলারিটি বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ

(১) জবের ধাতুর প্রকৃতি

(২) জবের পুরুত্ব

(৩) ইলেকট্রোডের ধাতুর প্রকৃতি এবং

(৪) ব্যবহৃত ফ্লাক্সের গুণাগুণ।

আরও পড়ুনঃ গ্যাস ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

স্ট্রেইট পােলারিটি এবং রিভার্স পােলারিটি কাকে বলে? এদের কোনটিতে কি পরিমান তাপ উৎপন্ন হয়?

ডিসি সরবরাহের ওয়েল্ডিং করার সময় যখন কাজ (Workpiece) কে জেনারেটরের পজিটিভ এবং ইলেকট্রেড (ইলেকট্রোড হােল্ডার) কে এর নেগেটিভ সাইডে সংযুক্ত করা হয়, তাকে ষ্ট্রেইট  পােলারিটি বলে। পক্ষান্তরে যখন ইলেকট্রোডকে জেনারেটরের পজিটিভ সাইডে এবং কাজকে (Workpiece) উহার নেগেটিভ সাইডে সংযোজন করা হয়, তাকে রিভার্স পােলারিটি বলে। চিত্রে উভয় প্রকার পোলারিটি দেখানাে হল-

পোলারিটি
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url