এবার নিজেই তৈরি করুন একটি ওয়াকি-টকি

ওয়াকি-টকি

এক সেট ওয়াকি-টকি পাবার আকাঙ্ক্ষা সবার মনেই কমবেশি থাকে। কিন্তু বাজারে এগুলোর দাম এত বেশি যা শুনলে অনেকের শখই ছুটে পালায়। আজ আর তেমনটি ঘটার অবকাশ নেই। বাজারে সাধারণত যে রেঞ্জের ওয়াকি-টকি সেট পাওয়া যায় তার প্রায় সমান রেঞ্জের ওয়াকি-টকি আজ আমরা তৈরি করতে শিখব যার খরচ পড়বে ও গুলোর মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

ওয়াকি-টকি আসলে একটি ট্রান্সমিটার (যা শব্দকে বেতার তরঙ্গের সাহায্যে ছড়িয়ে দেয়) এবং একটি রিসিভার (যা বেতার তরঙ্গকে পরিণত করে শব্দে) ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ওয়াকি-টকির অর্ধেক ডায়াগ্রাম হলো রেডিও তৈরির ডায়াগ্রাম। অর্থাৎ, পকেট-রেডিও তৈরির  ডায়াগ্রামটিই হলো আমাদের ওয়াকি-টকির রিসিভার। এখন শুধু ট্রান্সমিটারের ডায়াগ্রাম হলেই সম্পূর্ণ হয় আমাদের ওয়াকি-টকি।

ডায়াগ্রামঃ

MW ট্রান্সমিটার

এই সার্কিটে ব্যবহৃত স্পিকারটি মাইক্রোফোনের কাজ করবে। Gang-টি সাধারণ MW Gang যা রেডিওর সার্কিটেও ব্যবহৃত হয়েছে। কয়েলটিও আগের মত ফেরিট রডের উপর প্যাচানো থাকবে। তবে এই কয়েলটিতে ৩টি প্রান্ত রয়েছে। কয়েলটি তৈরি করার পদ্ধতি আগেরটির মতই। শুধু ৯০ প্যাচ দেবার পর একটি মাথা বের হবে এবং আরও ১০টি প্যাচ দিয়ে কয়েলটি তৈরি শেষ হবে।

এবার ট্র্যানজিস্টরটির E, C, B পা তিনটি বাস্তবে কিভাবে থাকবে তার ছবি নিচে দেওয়া হলো।

ট্র্যানজিস্টর

 আর অ্যান্টেনা হিসেবে প্রায় ১০ মিটার দৈর্ঘ্যের শক্ত তার ঘন করে কয়েলের মত পেঁচিয়ে ব্যবহার করাই যথেষ্ট। তবে উঁচুতে আউটডোর অ্যান্টেনা ব্যবহার করলে স্বাভাবিকভাবেই রেঞ্জ কিছু বেশি পাওয়া যাবে। চারটি মাত্র পেন্সিল ব্যাটারির সাহায্যেই এটি দীর্ঘদিন ধরে চালানো সম্ভব। এই সার্কিটটি তৈরি করতে মোট খরচ পড়বে মাত্র ৭০ থেকে ৮৫ টাকা।

যাদের কাছে আগেই একটি আলাদা MW রেডিও আছে তাঁদের জন্য অবশ্য আলাদা করে রিসিভার (রেডিও) তৈরির ঝামেলা নেই। শুধু MW ট্রান্সমিটারটি তৈরি করাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট হবে। এভাবে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার যোগ করে মোট দুটো সার্কিট তৈরি করে আপনার বন্ধুর কাছে একটি দিন এবং আপনার কাছে একটি রাখুন। তবে বন্ধুটিকে হতে হবে অবশ্যই আপনার পাশের বাসার অধিবাসী। কারণ সার্কিটটির রেঞ্জ খুব বেশি নয়। আর আপনার বন্ধুর কাছে তা দেয়ার আগে অবশ্যই Alignment-এর কাজটি খুব ভালভাবে সেরে নেবেন। এ সম্পর্কেও কিছু বলবার প্রয়োজন রয়েছে।প্রথমে দু'টি পৃথক সেটকে একই ঘরে রেখে Frequency মিলিয়ে নিন। একটি সেটের রিসিভারকে এমনভাবে Tune করুন যেন সেখানে বা তার আশেপাশে কোন রেডিও-স্টেশন না ধরে। এবার অপর সেটের ট্রান্সমিটারের Gang-টিকে ঘুরিয়ে অ্যাডজাস্ট করতে থাকুন যতক্ষণ না প্রথম সেটের রিসিভারে ‘হিস্ হিস্' জাতীয় একটি শব্দ শোনা না যায়। এ কাজে সেট দু'টিকে খুব কাছাকাছি রাখবেন না। সেক্ষেত্রে প্রচণ্ড Noise শোনা যেতে পারে। একইভাবে দ্বিতীয় সেটটির জন্য অন্য একটি Frequency নির্ধারণ করুন এবং পথম সেটটির ট্রান্সমিটারের সাথে তা মিলিয়ে নিন। তা হলেই শেষ হবে সব ঝামেলার।

Radio-Frequency মিলিয়ে কাজ করার জন্য কিছু ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে একথা অবশ্যই মনে রাখবেন। আর একটি কথা না বললেই নয়। তা হলো মিডিয়াম ওয়েভে এত বেশি রেডিও-স্টেশন কাজ করে যে তার মাঝে একটানা বেশিক্ষণ ফাঁকা জায়গা পাওয়া বেশ দুষ্কর। তাই মিডিয়াম ওয়েভে ডিজাইনকৃত এই ট্রান্সমিটারটি তৈরি করার পর কেউ যদি মনে করেন তাঁর একটি FM Transmitter-এর ডায়াগ্রাম দরকার তাহলে তা এখনই পেতে পারেন। FM (FREQUENCY MODULATION) ব্যাণ্ডে শব্দের মান অবশ্যই মিডিয়াম ওয়েভের তুলনায় ভাল আসে। এ কারণেই কর্ডলেস্ মাইক্রোফোন, কর্ডলেস্ টেলিফোন, দামী ওয়্যারলেস্ সেট এ সবকিছুতেই সাধারণত FM ব্যাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এমনকি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করা হয় FM ব্যাণ্ডে। তাই যাদের বাসায় FM ব্যাণ্ডের একটি রেডিও আছে তাঁরা FM ট্রান্সমিটারটি তৈরি করতে পারেন। তাছাড়া এটির রেঞ্জও আগেরটির চেয়ে বেশি।

ডায়াগ্রামঃ

FM ট্রান্সমিটার

সার্কিটে যে মাইক্রোফোনটি রয়েছে তা হলো CONDENSER MICRO-PHONE যা বাস্তবে দেখতে একটি 'মোটাসোটা' বোতামের মত। এর নিচের দিকে লক্ষ করলে যে দু'টি প্রান্ত দেখতে পাবেন তার মধ্যে যেটি মাইক্রোফোনের Body-র সাথে সংযুক্ত (ডায়াগ্রামের পাশে দেখুন) সেটি সংযোগ করবেন সার্কিটের নেগেটিভ বা গ্রাউণ্ডের সাথে এবং অন্য প্রান্ত 0.1µF-এর সাথে। নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, সার্কিটে ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটরের চিহ্নটি একটু অন্যরকম। এটিকে বলে TRIMMER যা বাস্তবে দেখতে ছোট ভেরিয়েবল রেজিস্টরের মত এবং এর পিঠের উপর অবস্থিত ছোট্ট স্ক্রু-টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়েই ট্রান্সমিটারটির Frequency পরিবর্তন করতে হবে। এর তিনটি পা থাকলেও নিচ থেকে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন দু'টি পা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। সুতরাং, ওই দুটি পা-র একটি এবং অপর পা-টি ব্যবহৃত হবে। 

সার্কিটের কয়েলটি হবে Air Core টাইপ। কয়েলের মাঝে Core হিসেবে ফেরিট রডের পরিবর্তে থাকবে Air বা বাতাস। অর্থাৎ কয়েলের মাঝে কোনকিছুই ব্যবহার করতে হবে না। 18 SWG-এর তার দিয়ে 0.7cm ব্যাসের একটি ফর্মার উপর (যা একটি পেন্সিলও হতে পারে) মোট পাঁচটি প্যাচ দিয়ে কয়েলটি তৈরি হবে। প্রতিটি প্যাচের মাঝে 1mm করে ফাঁকা জায়গা থাকবে। ডায়াগ্রামে নিশ্চয় দেখেছেন, কয়েলের দ্বিতীয় প্যাচের মাথা থেকে একটি প্রান্ত বের হয়ে পজিটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত হয়েছে। সুতরাং দ্বিতীয় প্যাচের একটি স্থানে ব্লেড দিয়ে ঘষে আস্তরণ উঠিয়ে ফেলুন এবং আলাদা একটি তার সেখানে খুব সাবধানে ঝালাই করে একটি প্রান্ত বের করুন। এবার কয়েলের মাঝ থেকে ফর্মা সরিয়ে ফেললেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার প্রয়োজনীয় কয়েল। মনে রাখবেন এই কয়েলটি সঠিকভাবে তৈরির উপরই অনেকখানি নির্ভর করছে আপনার ট্রান্সমিটারের কার্যক্ষমতা। অ্যান্টেনা হিসেবে নিজে একটি অ্যান্টেনা তৈরি করে নিতে পারেন বা কোন বাতিল রেডিও থেকে খুলে নিতে পারেন সেটির টেলিস্কোপিক অ্যান্টেনাটি।

পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে 6V-এর পরিবর্তে 9V ব্যবহার করলে রেঞ্জ অপেক্ষাকৃত বেশি পাবেন। সার্কিটটি তৈরি করতে খরচ হবে ৫০/৬০ টাকা। আরেকটি কথা হলো যেকোন ট্রান্সমিটার-সার্কিটের জন্য সিরামিকের পরিবর্তে মাইলার জাতীয় ক্যাপাসিটর ব্যবহার করলে অপেক্ষাকৃত ভাল ফল পাওয়া যায়। ট্রান্সমিটারের বর্ণনা আপাতত এখানেই শেষ—ওভার অ্যাণ্ড আউট।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url