নিজেই একটি মিউজিক্যাল কলিং-বেল তৈরি করে নিন

 

মিউজিক্যাল কলিং-বেল

এখন আমরা এমন একটি কলিং বেল বানাতে শিখব যা থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক বাজবে। এটি তৈরি করাও অত্যন্ত সহজ। মূল সার্কিটে যাওয়ার আগে আপনারা চট করে রেজিস্টরের কালার-কোড থেকে এর মান বের করার পদ্ধতিটি শিখে নিন।

একটি রেজিস্টর হাতে নিয়ে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন এর গায়ে চারটি রঙিন ব্যাণ্ড (Colour Band) রয়েছে। এই চারটি রঙিন ব্যাণ্ডের মধ্যে একেবারে পাশে অবস্থিত সোনালি অথবা রুপালি যে ব্যাণ্ডটি থাকে তা ডানদিকে রেখে রেজিস্টরের কালার-কোডের পাঠ নিতে হয়। এই সোনালি বা রুপালি ব্যাণ্ডটিকে ৪র্থ ব্যাণ্ড ধরলে ১ম, ২য় ও ৩য় ব্যাণ্ড কোনটি হবে তা নিচের ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
রেজিস্টর
এবার আপনারা নিচের ছকটি লক্ষ করুন। 

কালার কোড ছক
নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, প্রত্যেকটি রঙের চারটি ব্যাণ্ডের জন্য আলাদা আলাদা মান রয়েছে। এর মধ্যে ৪র্থ ব্যাণ্ডের মানটি আপাতত লক্ষ না করলেও চলবে। শুধু প্রথম তিনটি ব্যাণ্ডের মান লক্ষ করুন। কেননা, প্রথম তিনটি ব্যাণ্ডের রঙ থেকেই রেজিস্টরের মান বোঝা যায়।

মনে করুন, একটি রেজিস্টরের ১ম, ২য় ও ৩য় ব্যাণ্ডের রঙ যথাক্রমে হলুদ, বেগুনি ও খয়েরি। এখন ছকে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, ১ম ব্যাণ্ডে হলুদ রঙের মান 4, ২য় ব্যাণ্ডে বেগুনি রঙের মান 7 এবং ৩য় ব্যাণ্ডে খয়েরি রঙের মান 0 সুতরাং রেজিস্টরটির মান দাঁড়াল 470 ওহম।

আবার মনে করুন, ১ম, ২য় ও ৩য় ব্যাণ্ডের রঙ যথাক্রমে লাল, লাল, লাল। তাহলে ছক থেকে মান নিলে রেজিস্টরটির প্রকৃত মান হবে 2200 ওহম। এখন আমরা জানি 1000Ω=1 KΩ। সুতরাং 2200Ω -কে 1000 দিয়ে ভাগ করে সংক্ষেপে লেখা হয় 2.2 KΩ।

আবার, হলুদ-বেগুনি-সোনালি রঙ হলে মান হবে হলুদের জন্য 4, বেগুনির জন্য 7 এবং সোনালির জন্য * 0.1 (অর্থাৎ গুণন 0.1)। সুতরাং মান দাঁড়াবে 47 * 0.1=4.7Ω। আরেকটি বিষয় লক্ষ করবেন, ৩য় ব্যাণ্ডে কালো রঙের কোন মান নেই। অর্থাৎ, ৩য় ব্যাণ্ড কালো হলে ১ম ও ২য় ব্যাণ্ডের মান থেকেই রেজিস্টরের মান পাওয়া যাবে। এখন নিচে কতকগুলো রেজিস্টরের কালার-কোড ও পাশে তার প্রকৃত মান দেয়া হলো।

আপনারা নিজে নিজে প্রথমে ছক দেখে রেজিস্টর গুলোর মান বের করুন ও পরে প্রকৃত মান দেখে মিলিয়ে নিন।
কালার-কোড প্রকৃত মান
খয়েরি-কালো-খয়েরি 100Ω
খয়েরি-কালো-লাল 1KΩ
কমলা-কমলা-লাল 3.3KΩ
খয়েরি-কালো-কালো 10Ω
লাল-লাল-হলুদ 220KΩ
কমলা-সাদা-খয়েরি 390Ω
এবার আসা যাক ৪র্থ ব্যাণ্ডের ব্যাপারে। এই ব্যাণ্ড রেজিস্টরের মান কত হবে তা বুঝতে সহায়তা না করলেও এ থেকে রেজিস্টরের মানের গ্রহণযোগ্যতা (Tolerance) বোঝা যায়। কোন রেজিস্টরের টলারেন্স ±5% হলে তার অর্থ রেজিস্টরটির মান +5% থেকে -5% পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। অর্থাৎ 100Ω মানের রেজিস্টরের টলারেন্স ±5% হলে রেজিস্টরটির মান 95Ω থেকে 105Ω পর্যন্ত হতে পারে।

বয়সে যারা একেবারেই নবীন তারা বড় কারও সাহায্য নিলে টলারেন্সের ব্যাপারটি বুঝতে পারবে। আর আপাতত না বুঝলেও ক্ষতি নেই। কারণ এটি খুব সূক্ষ্ম সার্কিট ছাড়া আর কোথাও তেমন কাজে লাগে না।
যদিও আই. সি. নিয়ে মনে হয় আপনারা কাজ করেছেন তবুও আই. সি (I.C) সম্বন্ধে আরেকটু পরিষ্কার ধারণা লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে।

আই. সি. সম্পর্কে বলছি। বর্তমানে আই. সি. নামক পার্টসটি ইলেকট্রনিক্সকে অনেক সহজ করে এনেছে। এটি আসলে একটি ‘সংক্ষিপ্ত’ সার্কিট । অর্থাৎ, গোটা একটি বড় সার্কিট কে ছোট করে পুরে দেয়া হয় এর মধ্যে। ফলে আজকাল প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে আই. সি।

আই. সি. দেখতে সাধারণত নিচের ছবির মত।

আই. সি.(I.C)

এবং ডায়াগ্রামে এটিকে চতুর্ভুজ বা ত্রিভুজাকৃতি ক্ষেত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা হয় ঠিক নিচের ছবির মত।
আই. সি.(I.C)
আই. সি. থেকে সারিবদ্ধ ভাবে এর পা-গুলো (Pin) বের হয় এবং এই পা-গুলোকে 1, 2, 3, 4, ... ইত্যাদি নম্বর দিয়ে ডায়াগ্রামে চিহ্নিত করা হয়। এখন কোন পা-টি কত নম্বরে তা বোঝা যায় আই. সি. হাতে নিয়ে এর গায়ের উপর লেখা নম্বর সোজা করে ধরলে বামদিকে ইংরেজি ইউ (U) অক্ষরের মত কাটা জায়গার সাহায্য নিয়ে। ইউ-এর মত কাটা জায়গাটির খোলা মুখটি বামদিকে ধরলে ঠিক নিচের প্রথম পা-টিই হবে 1, এবং তার পরের পা-গুলো ক্রমান্বয়ে 2, 3, 4,···হয়ে ইউ-এর মত ঘুরে ঠিক 1-এর উপরে যে পা'টি রয়েছে সেখানে এসে শেষ হবে।

নিচের দেওয়া  ছবি লক্ষ করলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আই. সি.(I.C) পিন নাম্বার
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ইউ-এর মত কাটা জায়গার পরিবর্তে ১ নম্বর পা-এর ঠিক ওপরে আই.সি.-র গায়ে একটি ডট-এর মত গর্ত থাকে অথবা বামদিকে একটি লম্বা দাগ থাকে। আই.সি.-র পা-এর সংখ্যা যতই হোক না কেন, উপরের নিয়ম অনুসারেই এর পা-গুলো সাজানো থাকে। আর ডায়াগ্রাম আঁকার সুবিধার্থে পা-এর নম্বর গুলো বিভিন্ন বিন্যাসে লেখা থাকলেও সেগুলোর কানেকশন দেবার সময় আই. সি.-র পিন (পা)-এর প্রকৃত বিন্যাস অনুসরণে দিতে হয়। কিছু কিছু আই.সি. ঝালাই করার সময় অতিরিক্ত তাপে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে আই.সি.-বেস্ ব্যবহার করা হয়, যা দেখতে নিচের ছবির মত ।
আই.সি.(I.C) বেস্ বা সকেট

এটি একটি সকেট ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিকে আই.সি. হিসেবে ধরে নিয়ে সার্কিটে ঝালাই করা হয় এবং ঝালাই শেষে আই.সি.-টি ঠিকভাবে সকেটে বসিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে আই.সি.টি সরাসরি সোল্ডারিং আয়রনের তাপের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা পায়। নতুনদের উচিত আই.সি.-বেস্ ব্যবহার করা এবং কিছুদিন অনুশীলনের পর ঝালাইয়ের কাজে পারদর্শিতা এলে তখন সরাসরি আই.সি.-তে ঝালাই করা।

ডায়াগ্রাম:
মিউজিক্যাল কলিং-বেল সার্কিট ডায়াগ্রাম
এই সার্কিটে ব্যবহৃত আই. সি. UM3483-এর মোট ১৬টি পিন। 5, 6, 7, 8 নম্বর পিনগুলোকে একসাথে সংযোগ দিতে হবে এবং এটিই সার্কিটের নেগেটিভ প্রান্ত। একই নিয়ম 2, 3, 16 নম্বর পিনগুলো হলো পজিটিভ প্রান্ত। এই সার্কিটে ব্যবহৃত ক্যাপাসিটরটির (47pF) কোন পজিটিভ-নেগেটিভ প্রান্ত নেই। অর্থাৎ, যে-কোন দিকেই লাগানো যায়। সুইচটি (SW) হলো প্রেস-সুইচ (যা চাপলে অন এবং ছেড়ে দিলে অফ হয়)। রেজিস্টর সবগুলো 1/4 W-এর। ট্র্যানজিস্টরটির তিনটি পায়ের কনফিগারেশন (E, C, B) কী রকম তা পাশে দেখানো হলো। C2060 নম্বরের ট্র্যানজিস্টরটি বাজারে সহজলভ্য না হলে C828 নম্বরের ট্র্যানজিস্টরটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে C2060 ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভাল। 

এই সার্কিট তৈরি করার সময় আই.সি.-বেস্ (১৬ পিন) ব্যবহার করতে পারেন। UM3483 নম্বরের আই.সি-এর পরিবর্তে UM3482 অথবা UM3481 নম্বরের আই. সি. ব্যবহার করলেও চলবে। এর ফলে আরও অন্যান্য মিউজিক শোনা যাবে। তবে এ দুটি আই. সি. ব্যবহার করলে মিউজিকের সংখ্যা কিছু কম-বেশি হবে। এই সার্কিটের সবগুলো পার্টসের সর্বমোট দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা পড়বে। ব্যাটারি দুটোর জন্য একটি ব্যাটারি-কেস্ ব্যবহার করবেন।

মনে রাখবেন, সার্কিটটি তৈরি করতে গিয়ে কোন ভুল করা চলবে না। কারণ একটি কানেকশনও ভুল থাকলে সার্কিটটি কাজ করবে না। কাজেই খুব সাবধানে ডায়াগ্রাম দেখে দেখে সার্কিট তৈরি করবেন। বিশেষ করে ট্র্যানজিস্টরের বেলায় ভুল বেশি হয়। কাজেই ট্র্যানজিস্টরের ক্ষেত্রে একটু বেশি সাবধান থাকবেন।

সবশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করছি। সেটি হলো, প্রায় সব বাড়িতেই কলিং-বেলের জন্য সুইচ থাকে এবং সেটিতে 220V এসি কারেন্ট ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সুইচ কখনও এই সার্কিটের জন্য ব্যবহার করবেন না। কারণ সার্কিটটি চলে মাত্র 3V ডি.সি. কারেন্টে। 220V-এর সুইচ ব্যবহার করামাত্র সার্কিটটি নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং এই সার্কিটের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি প্রেস-সুইচ ব্যবহার করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url