যে লক্ষণে বুঝবেন গাড়ির ইঞ্জিন ভালো নেই

যে লক্ষণে বুঝবেন গাড়ির ইঞ্জিন ভালো নেই

গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান অংশ হলো ইঞ্জিন। ইঞ্জিন ছাড়া গাড়ি কল্পনাই করা যায় না। সেটা হোক ইলেকট্রিক বা পোট্রোল চালিত ইঞ্জিন বা ডিজেল চালিত বা গ্যাস চালিত। তাই ইঞ্জিনের প্রতি আমাদের যত্নবান হতে হবে। ইঞ্জিনে কোন গুরুতর সমস্যা থাকলে আপনি আগে থেকেই খেয়াল করতে পারবেন। তাই আগে থেকেই যেনে রাখুন খারাপ ইঞ্জিন ও এর সমস্যাগুলো। সমস্যা অল্প থাকতেই সেটা মেরামত বা সার্ভিসিং করে ফেলুন, তা না হলে ঘটতে পারে নানা রকম বিপদ-আপদ।

যে লক্ষণে বুঝবেন গাড়ির ইঞ্জিন ভালো নেই

এখন নিচে থেকে জেনে নিন ইঞ্জিন খারাপের লক্ষণগুলোঃ

অস্বাভাবিক  নড়াচড়াঃ

গাড়িতে কোন রকম অস্বাভাবিক নড়াচড়া বা হঠাৎ করে থেমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে বুঝে নেবেন গাড়িতে খারাপ ইঞ্জিন জনিত সমস্যা রয়েছে। গাড়ি যদি থেমে থেমে পপিং এন্ড রকিং (একটি ডান্স মুডের নাম)  মুডে থাকে তাহলে তো ব্যাপক সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা হয় মূলত নষ্ট স্পার্ক প্লাগ, জ্বালানি পাইপে ময়লা অথবা গাড়ির প্রধান নিয়ন্ত্রণ পার্টসে কোন সমস্যা ইত্যাদি কারণে। 

আর এসব সমস্যায় সবশেষে আপনি যা করতে পারেন সেটা হলো গাড়ির এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে গাড়িকে একটু সময় দিন যাতে গাড়ি নিজে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। আর যদি অনেক প্রেশার দিয়ে গাড়ির এক্সেলেটর প্রয়োগ করার পরও গতি না বাড়ে তাহলে অবশ্যই কোন অভিজ্ঞ মেকানিকের শরণাপন্ন হোন।

ধোঁয়াঃ

গাড়ি থেকে যখন অতিরিক্ত ধোঁয়া বিশেষ করে কালো ধোঁয়া বের হয় তখন কখনোই সেটা কোন ভালো লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় না। অনেক সময় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন গাড়ির পেছন দিক থেকে এক্সহোস্ট পাইপ দিয়ে  ধোঁয়া বের হচ্ছে । এসব ধোয়ার আবার নির্দিষ্ট রঙ থাকে। ধোয়ার রঙ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ঠিক কোন সমস্যা আপনার ইঞ্জিনের হচ্ছে।

নীল রঙের ধোঁয়াঃ

নীল রঙের ধোঁয়া বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে ইঞ্জিনের ভেতর থেকে তেল অন্য কোন ভাবে বের হচ্ছে এবং জ্বালানির সঙ্গে পুড়ে যাচ্ছে। আর এই  জ্বালানি পোড়ার সমস্যাটি বন্ধ করতে সব সময় আপনার ক্র্যান কেসে ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে রাখতে হবে। সবথেকে বেশি ভালো হয় যদি আপনি আপনার গাড়িটি কোন মেকানিকের কাছে নিয়ে যান আর গাড়ির নির্দিষ্ট লিকেজ সারিয়ে তোলেন।

ঘড়ঘড়  শব্দঃ

ছোটখাটো ক্লিক বা টিক শব্দ খুবই সাধারণ। কিন্তু যদি ইঞ্জিন মোটর স্টার্ট করার সঙ্গে সঙ্গে কোন অদ্ভুত শব্দ পান তাহলে নিশ্চই ব্যাপারটা যথেষ্ট বিরক্তিকর। আর এমন শব্দ নিয়ে গাড়ি চালাতে ভয়ও করার কথা। আর এমন শব্দ যদি আপনার গিয়ারের মধ্যবর্তী জায়গা থেকে সবসময় আসতে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার গাড়ির ট্রান্সমিশন পাল্টানো বা মেরামত করার প্রয়োজন। আর ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি আপনি ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনে গাড়িটি চালান তাহলে তো দ্রুত পার্টস মেরামতের জন্য মেকানিকের উপদেশ প্রয়োজন।

ওয়ার্নিং লাইট বা লাল বাতিঃ

গাড়ি চালানো শেখার সময় আপনাকে গাড়ির লাইট সম্পর্কে খুবই ভালো ভাবে ধারণা নিতে হবে। গাড়ির কোন লাইট কি কাজে জ্বলে সেগুলো খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে আর সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে গাড়ি থেকে নামার সময় কোন লাইট জ্বলে রয়েছে কিনা। গাড়ির স্টার্ট নেওয়ার সময় যদি অনেকবার লাইটগুলো জ্বলে আবার নিভে তাহলে বুঝে নিতে হবে গাড়ির কম্পিউটার চেক করে নিচ্ছে কোথাও কোন সমস্যা রয়েছে কিনা।

একে একে যখন সব লাইট বন্ধ হয়ে যাবে তখন বুঝবেন এবার আপনার গাড়িটি  সঠিকভাবে চলার জন্য প্রস্তুত । আর যদি সবশেষে কোন একটা লাইট জ্বলে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার গাড়িতে খারাপ ইঞ্জিন সম্পর্কিত সমস্যা আছে। এখন সমস্যা বড় না ছোট সেটা নির্ভর করে কোন লাইটটি জ্বলে রয়েছে তাহার উপর।

 লাইটগুলো সাধারণত সেন্সরের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেন্সর হচ্ছে গাড়ির ব্রেইনের মত কাজ করে। কোন কারনে গাড়ির ইঞ্জিনে বা অন্য কোথাও সমস্যা থাকলে গাড়ির কম্পিউটার সেন্সরের মাধ্যমে লাইট জ্বালিয়ে আপনাকে সতর্ক বার্তা পাঠাবে।

সাধারণত তিনটি সমস্যার কারণে লাইটগুলো জ্বলতে পারে। যথাঃ-

১। গাড়ির ফুয়েল বা তেল  ট্যাংকে তেলের পরিমান কমে গেলে।

২। গাড়িতে তেলের প্রেশার কম থাকলে।

৩। চেক ইঞ্জিন লাইট।

চেক ইঞ্জিন লাইটঃ

লাইট বা গাড়ির ইন্ডিকেটর বিভিন্ন অর্থ বোঝাতে পারে। আপনি যদি গাড়ির গ্যাস ক্যাপের স্ক্রু শক্ত করে সংযুক্ত না করেন, তাহলে জ্বলে থাকতে পারে চেক ইঞ্জিন লাইট। এখন এরকম কোন সমস্যা চেক করতে আপনি স্ক্যানার টুল ব্যবহার করতে পারেন। স্ক্যানার টুল দেখতে অনেকটা ক্যালকুলেটরের মত।

স্ক্যানার টুল আপনি আপনার গাড়ির সংযোগ পোর্টে সংযুক্ত করে নেবেন। আর সংযুক্ত করার পর গাড়ির প্রধান নিয়ন্ত্রক পার্টসের মাধ্যমে এই স্ক্যানার টুল আপনাকে জানিয়ে দেবে ঠিক কি সমস্যার কারনে আপনার গাড়ির ওয়ার্নিং লাইট বা লালবাতি জ্বলে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ গাড়িতে কোন ধরণের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা বেশি কার্যকরী?

খারাপ ইঞ্জিন ও বিচ্ছিরি গন্ধঃ

গাড়ি ঠিকভাবে চালাতে চাইলে কীভাবে গাড়ির পার্টসগুলো যত্নে রাখতে হয় সেটা জানতে হবে সবার আগে। গাড়ির পার্টসগুলো বিশেষ ভাবে যত্নে রাখলে গাড়ির ভেতরে বাজে গন্ধ থাকে না বললেই চলে। কিন্তু খারাপ ইঞ্জিন ও এর গন্ধ পুরাই অন্যরকম। গাড়ির ভেতরে বসে কিছু খেলে বাজে গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। সেটা এক জিনিস আর গাড়ির হুডের নিচে গ্যাসোলিন, পেট্রোল এবং অনেক ধরনের ধাতব পদার্থের গন্ধ সেটা অন্য জিনিস।

এই ধরনের গন্ধ এক হতে পারে আপনার গাড়ির তেল অথবা কুল্যান্ট লিক করছে, আরেক হতে পারে এক্সহস্ট গ্যাস লিক হয়ে আপনার গাড়ির ইন্টেরিওরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গাড়ি এবং ট্রাকে অনেক ধরনের টক্সিক গ্যাস থাকে যেমন- কার্বন মনোক্সাইড। এসব গ্যাসও মারাত্মক বাজে গন্ধের কারণ হতে পারে। আর আপনি যদি গাড়ি থেকে বের হয়েও এমন গন্ধ পেতে থাকেন তাহলে অবশ্যই গাড়ি দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করুন।

হুডির নিচ থেকে অনেক সময় রাবার পোড়ার গন্ধ আসতে পারে। ড্রাইভ বেল্ট অথবা অন্যান্য পার্টসের বেল্ট যদি নষ্ট বা ছিঁড়ে যায় তখন এমন বাজে গন্ধ ছড়াতে পারে গাড়ি থেকে। রাবারের বেল্টের ভেতর যে তরল পদার্থ থাকে সেগুলো পুড়ে বা গরম হয়ে এমন গন্ধ হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ গাড়ির রেডিয়েটর ভালো রাখার উপায়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url