অনলাইন ব্যবসা কি? অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

অনলাইন ব্যবসা কি?

অনলাইন ব্যবসা হল যে সকল ব্যবসা ঘরে বসে ভার্চুয়াল ভাবে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলো হচ্ছে অনলাইন ব্যবসা। অর্থাৎ যে সকল ব্যবসা, একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ এবং সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব সেগুলি হচ্ছে অনলাইন ব্যবসা।
অনলাইন ব্যবসা

অনলাইন ব্যবসায়ের ধারণাঃ

সাধারণভাবে অনলাইনে পণ্য কেনা বেচাকে অনলাইন ব্যবসায় মনে করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র ক্রয়-বিক্রয় নয় বরং ব্যবসায়ের অন্যান্য কাজ যেমন পণ্য ও সেবা বাজারজাতকরণ প্রসারের কাজটিও অনলাইনে সম্পাদন করা যায়।

অর্থাৎ ইন্টারনেটকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ের যে কোন ধরনের কাজ অনলাইনে সম্পাদন করা হলে তাকেও অনলাইন ব্যবসায় বলা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিক্রয় ডটকম বাংলাদেশের বিখ্যাত অনলাইন ব্যবসায়গুলোর মধ্যে একটি।

আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

অনলাইন ব্যবসায়ের গুরত্বঃ

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ব্যাংকিং সেক্টরে অনলাইন ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিকাশ কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন করে। নিচে অনলাইন ব্যবসায়ের গুরত্ব তুলে ধরা হলোঃ-

১। ব্যবসায়ের গতিশীলতা বৃদ্ধিঃ অনলাইন ব্যবসায়ের ফরমায়েশ প্রদান, মজুদ মাল ব্যবস্থাপনা, ক্রেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন থেকে শুরু করে পণ্যের মূল্য পরিশোধ পর্যন্ত্ যাবতীয় সকল কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদিত হয় বলে ব্যবসায়ে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

২। অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করতে অনলাইন ব্যবসায় গুর“ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একদিকে উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয়ের নিশ্চয়তা অন্যদিকে বেকার তরুণ-তরুণীদের কাজের মাধ্যমে আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করে অনলাইন ব্যবসায় পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

৩। দক্ষ বাজারজাতকরণ হাতিয়ারঃ অনলাইন ব্যবসায়ে পণ্য ও সেবা বাজারজাতকরণ অপেক্ষাকৃত দক্ষ ও শক্তিশালী। বর্তমানে ক্রেতারা যেহেতু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্টরনেটের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে জানতে চায় এবং এর মাধ্যমে সহজেই ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত্ কাজ সম্পাদন করতে পারে সেহেতু সাধারণ ব্যবসায়ের তুলনায় অনলাইন ব্যবসায়ীগণ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা লাভ করেন।

৪। বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কঃ অনলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে উৎপাদক বা সরবরাহকারী বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে পারে। ব্যবসায়ী তার চেম্বারকে একটি বিল্ডিং এর মধ্যেই আবদ্ধ রাখে না, বরং এটিকে ছড়িয়ে দেয় সকল দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারে।

৫। ব্যবসায়িক বিস্তারঃ অনলাইন সারা বিশ্বে এমন একটি কৌতূহলী নাম যার মানে হলো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এখন আর কোনো এলাকা, জেলা বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সমগ্র বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার। সমগ্র বিশ্ব অনলাইনে একটি মার্কেটে পরিণত হয়েছে।

৬। নতুন পণ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রেঃ এ ব্যবসায়ের বাজার ও ক্রেতা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। সংগৃহীত তথ্য বিচার-বিশে-ষণ করে নতুন নতুন পণ্য বা সেবা উন্নয়ন করে উপহার দিতে পারে অনলাইন ব্যবসায়।

৭। সার্বক্ষণিক সেবা দানঃ এ ধরনের ব্যবসায় কখনও বন্ধ হয় না। প্রথাগত ব্যবসায়ের মতো এটিকে কোনো সময়সূচি মেনে চলতে হয় না। গ্রাহকরা তাদের সুবিধামতো যে কোনো মুহূর্তে (২৪/৭) সেবা পেতে পারে। এ কারণেই অনলাইন ব্যবসায় গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়েছে।

৮। সর্বাধুনিক যোগাযোগের মাধ্যমঃ ব্যবসায়ের অভ্যরীণ ও বাহ্যিক প্রতিটি পক্ষের যেমনঃ-কর্মী, ক্রেতা, সরবরাহকারী, অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সর্বাধুনিক পদ্ধতি হিসেবে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানো হয় যা অনলাইন ব্যবসায়কে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে।

৯। সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারঃ অনলাইন ব্যবসায়ের নতুন দিগন্ত্ উম্মোচনের সাথে সাথে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়ের সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করছে। এখন ব্যবসায়ীকে দিনের পর দিন ভোক্তা/ক্রেতার জন্য পণ্য বা সেবা বা তথ্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় না। বরং মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর একপ্রান্ড থেকে অন্যপ্রান্ডে ভোক্তার নিকট তথ্য চলে যাচ্ছে। ফলে সময়ের সদ্ব্যবহার হচ্ছে।

১০। অফুরন্ত সুযোগের ব্যবস্থাঃ অনলাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্ব এক মার্কেটে পরিণত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের পরিশ্রম অনেক কমে গিয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইন, রং, ওজন, মূল্য, গুণাগুণ, মূলহ্রোস, বিশেষ সুবিধা ইত্যাদি অতি সহজে ভোক্তা ও ক্রেতাকে অবহিত করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

অনলাইন ব্যবসায়ের পদ্ধতিঃ

প্রথাগত ব্যবসায়কে অনলাইন ব্যবসায়ে পরিণত করতে অথবা নতুনভাবে অনলাইন ব্যবসায় শুরু করতে নিম্নোক্ত দিক নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে হয়। যথাঃ-

১। উদ্যোগ গ্রহণঃ প্রকল্প ধারণা অনুসারে পছন্দের ব্যবসায়টি শুরু করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবসায়কে রিইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসায়ের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়।

২। ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনঃ অনলাইন ব্যবসায় যেহেতু ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই প্রতিষ্ঠানের নামে নিরাপদ হোস্টিং সাইটে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।

৩। ওয়েব হোস্ট খুঁজে বের করাঃ ওয়েব হোস্ট হচ্ছে এমন কতকগুলো কোম্পানি যারা তাদের সার্ভার অন্যের ওয়েব সাইটে তৈরী করার জন্য জায়গা ভাড়া দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই কোম্পানি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েব হোস্টের কাজ করে থাকে।

৪। ওয়েব সাইট ডিজাইনঃ দুইভাবে ওয়েব সাইট তৈরী করা যায়। ব্যবসায়ী নিজে অথবা কোন প্রশিক্ষিত এক্সপার্ট ডিজাইনার দিয়ে ওয়েব সাইট তৈরী করতে পারেন।

৫। অনলাইন ক্যাটালগ তৈরীঃ অনলাইনে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার অনলাইন ক্যাটালগ তৈরী করতে হয় যাতে ক্রেতারা সহজেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যটি খুঁজে বের করতে পারে। এক্ষত্রে পণ্য বা সেবার ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় ক্যাটালগের পণ্যের সাথে মূল্যসহ পরিশোধ পদ্ধতিও উলে-খ করা থাকে। এতে সম্ভাব্যবক্রেতাগণের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষিত হতে পারে।

৬। অনলাইনে মূল্য পরিশোধঃ পরবর্তী ধাপে ক্রেতাদেরকে অনলাইনে মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি নির্ধারিণ করতে দিতে হবে। ব্যবসায়ী যেমন-ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনলাইন মূল্য পরিশোধ করে থাকেন তেমনি ক্রেতারাও ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এমন কি অধুনা বিকাশ পদ্ধতিতে আমাদের দেশে এ ধরণের মূল্য পরিশোধ করে থাকেন।

৭। বিজ্ঞাপন প্রদানঃ প্রথাগত ব্যবসায়ের মতোই অনলাইন ব্যবসায়ে বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং কার্যক্রম চালাতে হয়। এক্ষেত্রে অনলাইন এবং অফলাইনে বিজ্ঞাপন প্রদান করতে হবে। সাথে সাথে ই-মার্কেটিং এর কৌশল উন্নয়ন করতে হবে। এরবকার্যকারিতার ওপর ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে।

৮। পণ্য ডেলিভারী পদ্ধতি নির্ধারণঃ পণ্যের প্রকৃতির উপর পণ্য ডেলিভারী পদ্ধতি নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি সফটওয়্যার যদি পণ্য হয় সেক্ষেত্রে ডাউনলোড এর মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারী করা যায়। আবার পণ্য যদি একটি ক্যামেরা হয় সেক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিস এর মত পদ্ধতিতে পণ্য ডেলিভারী করা যায়।

৯। তদারকি নিশ্চিতকরণঃ বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধির গতিপথ অনুসরণ ও বিশ্লেষণ করা যায়। কতজন ক্রেতা ওয়েব সাইটটি পর্যবেক্ষণ করেছেন, কতজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং কারা কারা পণ্য ক্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।

১০। ব্যবসায়ের অন্যান্য দিক বিবেচনাঃ অনলাইন ব্যবসায় সংক্রান্ত্ অন্যান্য বিষয় যেমনঃ- ব্যাংকিং, কর প্রদান, বিল পরিশোধ, হিসাবরক্ষণ, ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ও অন্যান্য আইনগত দিক বিবেচনা করতে হয়।

সারসংক্ষেপঃ ব্যবসায়ের গতিশীলতা আনয়নে অনলাইন ব্যবসায়ের গুরত্ব রয়েছে। ব্যবসায়িক বিস্তারে অনলাইন ব্যবসায়ের গুরত্ব পরিলক্ষিত। অনলাইন ব্যবসায় পদ্ধতির প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে উদ্যোগ গ্রহণ। অনলাইনে মূল্য পরিশোধ অনলাইন ব্যবসায়ের অন্যতম পদ্ধতি।

আরও পড়ুনঃ ই-কমার্স কি? ই-কমার্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url