মাল্টিমিডিয়া কি? মাল্টিমিডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

মাল্টিমিডিয়া কি?

মাল্টি শব্দের অর্থ দুইয়ের অধিক, কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে একের অধিক। অভিধানিকভাবে মাল্টিমিডিয়ার অর্থ হল বহু মাধ্যম। মানুষ তার ভাব প্রকাশ করার জন্য যে সব মিডিয়া বা মাধ্যম ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া তার সমন্বিত রূপ। কম্পিউটারের বিশাল কার্যক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম মাল্টিমিডিয়া। লিখিত ভাষ্য (বর্ণনা বা Text), দৃশ্য (চিত্র বা Graphics) ও ধ্বনি (শব্দ বা Sound) সমন্বয়ে সৃষ্ট বহুমাত্রিক উপস্থাপনাই হল মাল্টিমিডিয়া

মাল্টিমিডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

অনেক আগে থেকে টেলিভিশন, সিনেমা, ডকুমেন্টারী ইত্যাদিতে শব্দ ও সচলচিত্রের সমন্বয় ঘটেছে। কিন্তু তাকে কেউ মাল্টিমিডিয়া হিসাবে চিহ্নিত করেননি। কম্পিউটারে যখন ভাষার লিখিত রূপ, শব্দ, ভিডিও, এ্যানিমেশন, স্থির ও সচল চিত্রের একত্রিভূত উপস্থাপনের মত ঘটনা ঘটলো তখন তা মাল্টিমিডিয়া নামে পরিচিত হয়ে উঠলো। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার সবচেয়ে যে বড় সুবিধাটি আছে তার নাম হল ইন্টারক্টিভিটি।

আরও পড়ুনঃ ই-কমার্স কি? ই-কমার্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

মাল্টিমিডিয়া কত প্রকার ও কি কি?

তথ্য পরিবেশনের প্রকৃতি অনুসারে মাল্টিমিডিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১. ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া (InteractiveMultimedia) ও 

২. নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া (Non-Interactive Multimedia).

ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়াঃ ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া হল পরস্পর ক্রিয়াশীল মাল্টিমিডিয়া। এই ধরনের মাল্টিমিডিয়াতে শব্দ, বর্ণ ও চিত্র সবই থাকে এবং এগুলো ব্যবহারকারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং একটির সাথে অপরটির সম্পর্কযুক্ত থাকে। ধরা যাক জীব বৈচিত্রের উপর একটি প্যাকেজ তৈরী করা হয়েছে। এই প্যাকেজে বিভিন্ন প্রাণীর তালিকা আছে। এখন হরিণ নামক প্রাণীটির উপর ক্লিক করলে হরিণের বিবরণ ও ছবি দেখা যাবে।

যদি হরিণের ডাক শুনতে ইচ্ছা হয় তাহলে শব্দের জন্য নির্ধারিত স্থানে ক্লিক করলে তা শোনা যাবে। যদি হরিণের চলাফেরা ও আচরণ দেখতে চান তাহলে মুভি নামক স্থানে ক্লিক করলে তার চলাচল এবং আচরণ দেখা যাবে। এক্ষেত্রে একটি প্যাকেজের মধ্যে পরস্পর আন্তঃক্রিয়াশীল বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। সুতরাং এই প্যাকেজটিকে বলা হয় ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া।

নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়াঃ কিছু কিছু মাল্টিমিডিয়াতে উপরোক্ত সুবিধা নেই। সেখানে শব্দ, স্থির ছবি, সচল ছবি, বর্ণ সবই আছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে নেই। এই ধরনের মাল্টিমিডিয়াকে নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া বলে। সাধারণত বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি ও সফটওয়্যার নির্মাতারা তাদের নির্মাণকৃত সামগ্রীকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য বা ডেমো দেখানোর জন্য নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া প্যাকেজ তৈরী করে থাকেন।

মাল্টি শব্দের অর্থ দুইয়ের অধিক, কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে একের অধিক। কম্পিউটারের বিশাল কার্যক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম মাল্টিমিডিয়া। লিখিত ভাষ্য, দৃশ্য ও ধ্বনির সমন্বয়ে সৃষ্ট বহুমাত্রিক উপস্থাপনায় হল মাল্টিমিডিয়া।

মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহারঃ

বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার একটি বিশাল ক্ষেত্র হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অনেক কাজকে সহজ করে তুলেছে। নিম্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ায় ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হল। যথাঃ-

শিক্ষাঃ শিক্ষার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বহুবিধ। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে আজকাল শিক্ষামূলক বহু সিডি, কার্টুন ইত্যাদি তৈরী করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। আজকাল বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান শেখানোর জন্য শব্দ ও ছবির সমন্বয়ে বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া সিডি তৈরী হয়েছে। শিক্ষামূলক বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রেও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা যায়।

গবেষণাঃ আজকাল বিজ্ঞান ও সামাজিক বিভিন্ন রকম গবেষণার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, মহাকাশ বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে গবেষণার কাজে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা যায়।

যোগাযোগঃ যোগাযোগ ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার বিশাল প্রকৃত প্রয়োগ হল ইন্টারনেট। আরো পরিষ্কার করে বলা যেতে পারে ওয়েব পেজ। একটি অনলাইন ওয়েব পেইজই একইসাথে উপস্থাপিত করতে পারে একটি মাল্টিমিডিয়ার পূর্ণাঙ্গরূপ।

ব্যবসা-বাণিজ্যঃ মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র উন্নত করেছে। বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের উপস্থাপনা, মডেলিং, বাজার সিমুলেশন, টিভি বিজ্ঞাপন তৈরি, ইন্টারনেট বিজ্ঞাপন তৈরি, বিনিয়োগ বিশ্লেষণ, ভিডিও ভিত্তিক বিপণন ও প্রমোশন ইত্যাদি কাজে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা যায়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

বিনোদনঃ বিনোদন প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত মানসিকতার উপর নির্ভরশীল। মাল্টিমিডিয়া মানুষের বিনোদনের পদ্ধতিই পাল্টে দিয়েছে। মাল্টিমিডিয়ার বিনোদন ক্ষমতা বিশাল। সচিত্র সঙ্গিত (কণ্ঠ সংগিত, নৃত্য, বাদ্য ইত্যাদি), চলচিত্র, কম্পিউটার গেমস, এনিমেশন (কার্টুন ধর্মী ছবি), যে কোন মজার ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন ইত্যাদি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে তৈরি করা যায়।

প্রকাশনাঃ কিছুদিন আগেও প্রকাশনা বলতে কাগজে মুদ্রিত প্রকাশনা বুঝাতো। বর্তমানেও কাগজ ভিত্তিক প্রকাশনা ব্যাপক ব্যবহৃত। তবে বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক ডিজিটাল প্রকাশনা প্রকাশনার জগতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ রকম আরও অনেক ক্ষেত্রে আজকাল মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্ণ বা টেক্সটঃ সারা বিশ্বে টেক্সটের যাবতীয় কাজ এখন কম্পিউটারে হয়ে থাকে। এক সময় টাইপরাইটার ও ফটোটাইপ সেটার দিয়ে যেসব কাজ করা হত, বর্তমানে অফিস আদালত থেকে পেশাদারি মুদ্রণ পর্যন্ত সবখানেই এখন কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে।

চিত্র বা গ্রাফিক্সঃ বিশ্বের সবখানেই গ্রাফিক্স তৈরি, সম্পাদনা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ কম্পিউটার ব্যবহার করেই করা হয়। আমাদের দেশেও গ্রাফিক্স ডিজাইন, ড্রয়িং বা কমার্শিয়াল কাজে গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড, স্থাপত্য সকল ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভিডিও বা টিভিঃ ভিডিও এখন এক ধরনের গ্রাফিক্স। একে চলমান গ্রাফিক্সও বলা যায়। টিভি, হোম ভিডিও, মাল্টিমিডিয়া সফ্টওয়্যার, ওয়েব ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ভিডিওর ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। বর্তমানে ভিডিও সম্প্রচারও এনালগ থেকে ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে।

এনিমেশনঃ এনিমেশন এখন এক ধরনের গ্রাফিক্স। তবে এটি চলমান বা স্থির হতে পারে আবার দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক হতে পারে। এনিমেশন কখনই কেবল একক মিডিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এর সাথে অডিও, ভিডিও, টেক্সট, গ্রাফিক্স ইত্যাদির সম্পর্ক রয়েছে।

সিনেমাঃ সিনেমায় গ্রাফিক্সের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন ভিডিও এবং সিনেমার মাঝে প্রযুক্তিগত পার্থক্য অনেক কমে এসেছে।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url