আল্লাহর ৯৯ নাম | আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত

আল্লাহর ৯৯ টি নাম ও অর্থঃ

আল্লাহর ৯৯ টি নাম ও অর্থ নিচে দেওয়া হলোঃ-

১. الرَّحْمَنُ =আর-রহমান =অর্থ =সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়।

২. الرَّحِيمُ = আর-রহীম =অর্থ =সবচাইতে ক্ষমাশীল।

৩. الْمَلِكُ =আল-মালিক =অর্থ =অধিপতি।

৪. الْقُدُّوسُ = আল-ক্বুদ্দূস =অর্থ =পূতঃপবিত্র, নিখুঁত।

৫. السَّلَامُ =আস-সালাম =অর্থ =শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা।

৬. الْمُؤْمِنُ = আল-মু’মিন =অর্থ =জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী।

৭. الْمُهَيْمِنُ= আল-মুহাইমিন =অর্থ =অভিভাবক, প্রতিপালক।

৮. الْعَزِيزُ = আল-’আযীয =অর্থ =সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত।

৯. الْجَبَّارُ = আল-জাব্বার =অর্থ =দুর্নিবার, সমুচ্চ, মহিমান্বিত।

১০. الْمُتَكَبِّرُ = আল-মুতাকাব্বির =অর্থ =সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত।

১১. الْخَالِقُ =আল-খলিক্ব =অর্থ =সৃষ্টিকর্তা, (শূন্য থেকে)।

১২ الْبَارِئُ =আল-বারি’ =অর্থ =বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, পরিকল্পনাকারী।

১৩. الْمُصَوِّرُ = আল-মুসউয়ির =অর্থ =আকৃতিদানকারী।

১৪. الْغَفَّارُ = আল-গফ্‌ফার =অর্থ =পুনঃপুনঃ মার্জনাকারী।

১৫. الْقَهَّارُ = আল-ক্বহ্‌হার =অর্থ =দমনকারী।

১৬. الْوَهَّابُ = আল-ওয়াহ্‌হাব =অর্থ =স্থাপনকারী।

১৭. الرَّزَّاقُ = আর-রযযাক্ব =অর্থ =প্রদানকারী।

১৮. الْفَتَّاحُ = আল-ফাত্তাহ় =অর্থ =প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী।

১৯. الْعَلِيمُ = আল-’আলীম =অর্থ =সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী।

২০. الْقَابِضُ = আল-ক্ববিদ =অর্থ =নিয়ন্ত্রণকারী, সরলপথ প্রদর্শনকারী।

২১. الْبَاسِطُ = আল-বাসিত =অর্থ =প্রসারণকারী।

২২. الْخَافِضُ = আল-খফিদ =অর্থ =(অবিশ্বাসীদের) অপমানকারী।

২৩. الرَّافِعُ = আর-ঢ়ফি’=অর্থ =উন্নীতকারী।

২৪. الْمُعِزُّ = আল-মু’ইয্ব =অর্থ =সম্মানপ্রদানকারী।

২৫. الْمُذِلُّ = আল-মুঝ়িল =অর্থ =সম্মানহরণকারী।

২৬. السَّمِيعُ =আস-সামী’=অর্থ =সর্বশ্রোতা।

২৭. الْبَصِيرُ =আল-বাসীর =অর্থ =সর্বদ্রষ্টা।

২৮. الْحَكَمُ = আল-হাকাম =অর্থ =বিচারপতি।

২৯. الْعَدْلُ = আল-’আদল্‌ =অর্থ =নিখুঁত।

৩০. اللَّطِيفُ = আল-লাতীফ =অর্থ =অমায়িক।

৩১. الْخَبِيرُ = আল-খবীর =অর্থ = সম্যক অবগত।

৩২. الْحَلِيمُ = আল-হালীম =অর্থ =ধৈর্যবান, প্রশ্রয়দাতা।

৩৩. الْعَظِيمُ = আল-’আযীম =অর্থ =সুমহান।

৩৪. الْغَفُورُ = আল-গ’ফূর =অর্থ =মার্জনাকারী।

৩৫. الشَّكُورُ =আশ-শাকূর =অর্থ =সুবিবেচক।

৩৬. الْعَلِيُّ =আল-’আলিই =অর্থ =মহীয়ান।

৩৭. الْكَبِيرُ = আল-কাবীর =অর্থ =সুমহান।

৩৮. الْحَفِيظُ = আল--হাফীয =অর্থ =সংরক্ষণকারী।

৩৯. الْمُقِيتُ = আল-মুক্বীত =অর্থ =লালনপালনকারী।

৪০. الْحَسِيبُ = আল-হাসীব =অর্থ =মীমাংসাকারী।

৪১. الْجَلِيلُ = আল-জালীল =অর্থ =গৌরবান্বিত।

৪২. الْكَرِيمُ = আল-কারীম =অর্থ =উদার, অকৃপণ।

৪৩. الرَّقِيبُ =আর-রক্বীব =অর্থ =সদা জাগ্রত,অতন্দ্র পর্যবেক্ষণকারী।

৪৪. الْمُجِيبُ =আল-মুজীব =অর্থ =সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা।

৪৫. الْوَاسِعُ =আল-ওয়াসি=অর্থ =অসীম, সর্বত্র বিরাজমান।

৪৬. الْحَكِيمُ =আল-হাকীম =অর্থ =সুবিজ্ঞ, সুদক্ষ।

৪৭. الْوَدُودُ =আল-ওয়াদূদ =অর্থ =স্নেহশীল

৪৮. الْمَجِيدُ =আল-মাজীদ =অর্থ =মহিমান্বিত

৪৯. الْبَاعِثُ =আল-বা‘ইস =অর্থ =পুনরুত্থানকারী

৫০. الشَّهِيدُ =আশ-শাহীদ =অর্থ =সাক্ষ্যদানকারী

৫১. الْحَقُّ =আল-হাক্ক্ব =অর্থ =প্রকৃত সত্য।

৫২. الْوَكِيلُ =আল-ওয়াকীল =অর্থ =সহায় প্রদানকারী,আস্থাভাজন, উকিল

৫৩. الْقَوِيُّ =আল-ক্বউই =অর্থ = ক্ষমতাশালী

৫৪. الْمَتِينُ = আল মাতীন =অর্থ =সুদৃঢ়, সুস্থির

৫৫. الْوَلِيُّ =আল-ওয়ালিই=অর্থ =বন্ধু, সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী

৫৬. الْحَمِيدُ = আল-হামীদ =অর্থ =সকল প্রশংসার দাবীদার, প্রশংসনীয়

৫৭. الْمُحْصِي = আল-মুহসী =অর্থ =বর্ণনাকারী, গণনাকারী

৫৮. الْمُبْدِئُ = আল-মুব্‌দি=অর্থ =অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক, সৃজনকর্তা

৫৯. الْمُعِيدُ = আল-মু’ঈদ =অর্থ =পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী, পুনরূদ্ধারকারি

৬০. الْمُحْيِي = আল-মুহীই=অর্থ =জীবনদানকারী

৬১. الْمُمِيتُ = আল-মুমীত =অর্থ =ধ্বংসকারী, মৃত্যু আনয়নকারী

৬২. الْحَيُّ =আল-হাইই =অর্থ = চিরঞ্জীব, যার কোন শেষ নাই

৬৩. الْقَيُّومُ = আল-ক্বইয়ূম =অর্থ =অভিভাবক, জীবিকানির্বাহ প্রদানকারী

৬৪. الْوَاجِدُ = আল-ওয়াজিদ =অর্থ =পর্যবেক্ষক, আবিষ্কর্তা, চিরস্থায়ী

৬৫. الْمَاجِدُ = আল-মাজিদ=অর্থ =সুপ্রসিদ্ধ

৬৬. الْوَاحِدُ = আল-ওয়াহিদ =অর্থ =এক, অনন্য, অদ্বিতীয়

৬৭. الصَّمَدُ =আস-সমাদ =অর্থ =চিরন্তন, অবিনশ্বর, নির্বিকল্প, সুনিপুণ, স্বয়ং সম্পূর্ণ

৬৮. الْقَادِرُ = আল-ক্বদির =অর্থ =সর্বশক্তিমান

৬৯. الْمُقْتَدِرُ = আল-মুক্বতাদির=অর্থ =প্রভাবশালী, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী

৭০. الْمُقَدِّمُ =আল-মুক্বদ্দিম =অর্থ =অগ্রগতিতে সহায়তা প্রদানকারী

৭১. الْمُؤَخِّرُ =আল-মুআক্ষির =অর্থ =বিলম্বকারী

৭২. الْأَوَّلُ =আল-আউয়াল =অর্থ =সর্বপ্রথম, যার কোন শুরু নাই

৭৩. الْآخِرُ =আল-আখির =অর্থ =সর্বশেষ, যার কোন শেষ নাই

৭৪. الظَّاهِرُ =আজ-জহির =অর্থ =সুস্পষ্ট, সুপ্রতীয়মান, বাহ্য (যা কিছু দেখা যায়)

৭৫. الْبَاطِنُ = আল-বাত়িন =অর্থ =লুক্কায়িত, অস্পষ্ট, অন্তরস্থ (যা কিছু দেখা যায় না)

৭৬. الْوَالِيَ = আল-ওয়ালি =অর্থ =সুরক্ষাকারী বন্ধু, অনুগ্রহকারী, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভু

৭৭. الْمُتَعَالِي =আল-মুতা’=অর্থ =আলী সর্বোচ্চ মহিমান্বিত, সুউচ্চ

৭৮. الْبَرُّ =আল-বার্‌র=অর্থ =কল্যাণকারী

৭৯. التَّوَّابُ =আত-তাওয়াব =অর্থ =বিনম্র, সর্বদা আবর্তিতমান

৮০. الْمُنْتَقِمُ =আল-মুন্‌তাক্বিম =অর্থ =প্রতিফল প্রদানকারী

৮১. الْعَفُوُّ =আল-’আফুউ =অর্থ =শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী

৮২. الرَّءُوفُ =আর-র’ওফ =অর্থ =সদয়, সমবেদনা প্রকাশকারী

৮৩. مَالِكُ الْمُلْكِ =মালিকুল মুলক্‌ =অর্থ =সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী

৮৪. ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ =জুল জালালি ওয়াল ইকরম =অর্থ = মর্যাদা ও ঔদার্যের প্রভু

৮৫. الْمُقْسِطُ = আল-মুক্বসিত =অর্থ =ন্যায়পরায়ণ, প্রতিদানকারী

৮৬. الْجَامِعُ = আল-জামি’ =অর্থ =একত্র আনয়নকারী, ঐক্য সাধনকারী

৮৭. الْغَنِيُّ =আল-গ’নিই =অর্থ =ঐশ্বর্যবান, স্বতন্ত্র

৮৮. الْمُغْنِي = আল-মুগ’নি =অর্থ =সমৃদ্ধকারী, উদ্ধারকারী

৮৯. الْمَانِعُ = আল-মানি’ =অর্থ =প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা

৯০ الضَّارُّ =আদ়-দ়়র্‌র=অর্থ =যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী

৯১. النَّافِعُ = আন-নাফি’=অর্থ =অনুগ্রাহক, উপকর্তা, হিতকারী

৯২. النُّورُ =আন-নূর =অর্থ =আলোক

৯৩. الْهَادِي = আল-হাদী =অর্থ =পথপ্রদর্শক

৯৪. الْبَدِيعُ = আল-বাদী’=অর্থ =অতুলনীয়, অনিধগম্য।

৯৫. الْبَاقِي = আল-বাকী =অর্থ =অপরিবর্তনীয়, অনন্ত, অসীম, অক্ষয়

৯৬. الْوَارِثُ = আল-ওয়ারিস় =অর্থ =সবকিছুর উত্তরাধিকারী

৯৭. الرَّشِيدُ= আর-রশীদ =অর্থ =সঠিক পথের নির্দেশক

৯৮. الصَّبُورُالنور = আস-সবূরআন নূর =অর্থ =ধৈর্যশীল জ্যোতি। 

৯৯. الْمُنْتَقِمُ = আল মুনতাকীম =অর্থ = প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলতঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামের জিকির করবে, সে জান্নাতে যাবে।’ তাছাড়া এ গুণবাচক নামগুলোর আলাদা আলাদা অনেক উপকার ও ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম (اَلْكَبِيْرُ) ‘আল-কাবিরু’।

(اَلْكَبِيْرُ) ‘আল-কাবিরু’র অর্থ হলো সবচেয়ে বড়, যার নিকটেও কেউ নেই; তিনি ব্যতীত সব কিছুই ছোট; আসমান-জমিনের মহিমা ও গর্ব শুধুমাত্র তারই।’

আল্লাহর কাছে তার গুণবাচক নামসমূহের মাধ্যমে প্রার্থনা ও যিকির করলে আল্লাহ খুশি হন।

এ প্রসঙ্গে আল- কুরআনের সূরা আরাফের ১৮০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে। ’

উত্তম নাম বলতে সে সকল নামকে বোঝানো হয়েছে, যা গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে। তার গুণবাচক নামকে বলা হয়, আসমাউল হুসনা। উপরোক্ত আয়াতেও ‘আসমাউল হুসনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এসব আসমাউল হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য লাভ করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

আয়াতের মর্ম কথা হলো, হামদ, সানা, গুণ ও প্রশংসাকীর্তন, তাসবীহ-তাহলীলের যোগ্য যেহেতু শুধুমাত্র আল্লাহ-ই এবং বিপদাপদে মুক্তি দান আর প্রয়োজন মেটানোও শুধু তাঁর-ই ক্ষমতায়। কাজেই যদি প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হয়, তবে তাঁরই করবে আর নিজের প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি কিংবা বিপদমুক্তির জন্য ডাকতে হলে শুধু তাঁকেই ডাকবে, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। আর ডাকার পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘আসমায়ে হুসনা’ বা উত্তম নামে -ই ডাকবে।

এ আয়াতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে দুটি হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রথমত : আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্তাই প্রকৃত হামদ-সানা বা বিপদমুক্তি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ডাকার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ তাঁকে ডাকার জন্য মানুষ এমন মুক্ত নয় যে, যেকোনো শব্দে ইচ্ছা ডাকতে থাকবে, বরং আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহপরবশ হয়ে আমাদিগকে সেসব শব্দ সমষ্টি শিখিয়ে দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ব ও মর্যাদার উপযোগী। সেই সাথে এ সমস্ত শব্দেই তাঁকে ডাকার জন্য আমাদিগকে বাধ্য করে দিয়েছেন যাতে আমরা নিজের মত শব্দ পরিবর্তন না করি। কারণ, আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্যের সব দিক লক্ষ্য রেখে তাঁর মহত্বের উপযোগী শব্দ চয়ন করতে পারা মানুষের সাধ্যের ঊর্ধ্বে। (মায়ারেফুল কুরআন)

বিভিন্ন হাদীস অণুসারে, আল্লাহ’র ৯৯টি নামের একটি তালিকা আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিক ক্রম নেই; তাই সম্মিলিত মতৈক্যের ভিত্তিতে কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকাও নেই। তাছাড়া কূরআন এবং হাদিসের বর্ণনা অণুসারে আল্লাহ্’র সর্বমোট নামের সংখ্যা ৯৯-এর অধিক, প্রায় ৪,০০০। অধিকন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত একটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ তার কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন।

এই নামসমূহের ব্যাপারে ক্বুরআনের বর্ণনায় আল্লাহ তাআলার উদ্ধৃতি এসেছে “ আল্লাহ বলে আহ্বান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। — সূরা বনী-ইসরাঈল আয়াত ১১০। ”

অনেকগুলো হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত যে,[৩] মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ’র অনেকগুলো নাম-এর উল্লেখ করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশুদ্ধ হাদিসে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) জনাব মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উক্তি বর্ণনা করেন যে, “ حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، جَمِيعًا عَنْ سُفْيَانَ، – وَاللَّفْظُ لِعَمْرٍو – حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ لِلَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ اسْمًا مَنْ حَفِظَهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ ‏”‏ ‏.‏ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي عُمَرَ ‏”‏ مَنْ أَحْصَاهَا ‏”‏ ”

অর্থাৎ, “ আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম আছে; সেগুলোকে মুখস্থকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিজোড় (অর্থাৎ, তিনি একক, এবং এক একটি বিজোড় সংখ্যা), তিনি বিজোড় সংখ্যাকে ভালোবাসেন। আর ইবনে উমরের বর্ণনায় এসেছে যে, (শব্দগুলো হলো) “যে ব্যক্তি সেগুলোকে পড়বে”।[৪] ”

ক্বুরআনের বর্ণনায় আল্লাহ’র গুণবাচক নামসমূহকে “সুন্দরতম নামসমূহ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (নিম্ন-বর্ণিত দেখুন সূরা আল আরাফ ৭:১৮০, বনী-ইসরাঈল 17:110, ত্বোয়া-হা 20:8, আল হাশ্‌র 59:24)

আল্লাহর ৯৯ নামের ছবিঃ

আল্লাহর ৯৯ নাম

আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলতঃ

মহান রাব্বুল আল-আমিনের ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে, যেগুলো স্রষ্টার গুণসমূহকে প্রকাশ করে। আল্লাহর কাছে তার গুণবাচক নামসমূহের মাধ্যমে প্রার্থনা ও যিকির করলে আল্লাহ খুশি হন।

এ প্রসঙ্গে আল- কুরআনের সূরা আরাফের ১৮০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে।’

উত্তম নাম বলতে সে সকল নামকে বোঝানো হয়েছে, যা গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে। তার গুণবাচক নামকে বলা হয়, আসমাউল হুসনা। উপরোক্ত আয়াতেও ‘আসমাউল হুসনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এসব আসমাউল হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য লাভ করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আয়াতের মর্ম কথা হলো, হামদ, সানা, গুণ ও প্রশংসাকীর্তন, তাসবীহ-তাহলীলের যোগ্য যেহেতু শুধুমাত্র আল্লাহ-ই এবং বিপদাপদে মুক্তি দান আর প্রয়োজন মেটানোও শুধু তাঁর-ই ক্ষমতায়। কাজেই যদি প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হয়, তবে তাঁরই করবে আর নিজের প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি কিংবা বিপদমুক্তির জন্য ডাকতে হলে শুধু তাঁকেই ডাকবে, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। আর ডাকার পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘আসমায়ে হুসনা’ বা উত্তম নামে -ই ডাকবে।

এ আয়াতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে দুটি হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রথমতঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্তাই প্রকৃত হামদ-সানা বা বিপদমুক্তি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ডাকার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ তাঁকে ডাকার জন্য মানুষ এমন মুক্ত নয় যে, যেকোনো শব্দে ইচ্ছা ডাকতে থাকবে, বরং আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহপরবশ হয়ে আমাদিগকে সেসব শব্দ সমষ্টি শিখিয়ে দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ব ও মর্যাদার উপযোগী। সেই সাথে এ সমস্ত শব্দেই তাঁকে ডাকার জন্য আমাদিগকে বাধ্য করে দিয়েছেন যাতে আমরা নিজের মত শব্দ পরিবর্তন না করি। কারণ, আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্যের সব দিক লক্ষ্য রেখে তাঁর মহত্বের উপযোগী শব্দ চয়ন করতে পারা মানুষের সাধ্যের ঊর্ধ্বে। (মায়ারেফুল কুরআন)

ইমাম বোখারি ও মুসলিম, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে রেওয়ায়েত করেছেন যে, রাসুলে করীম সা. এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলোকে আয়ত্ত করে নেবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বোখারী ২৭৩৬, মুসলিম ২৬৭৭)।

আল্লাহর ৯৯ নামের পিকচারঃ

আল্লাহর ৯৯ নাম

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url