বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে পি.সি.বি. তৈরি করুন

পি.সি.বি

আপনারা উন্নতমানের সার্কিটগুলো ভালভাবে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন যে বোর্ডে পার্টস গুলো বসানো রয়েছে তাতে পার্টসের পা-গুলো একটা অন্যটার সাথে কানেকশন পেয়েছে বোর্ডের সাথে শক্তভাবে লেপ্টে থাকা সরু তামার পাতের সাহায্যে। যাতে তামার ওপর অক্সাইড জমে ক্ষতি না করে সেজন্য তা সাধারণত রাং অথবা সবুজ রঙের আবরণ (Solder Mask) দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এইরকম যে বোর্ডটির উপর সার্কিট তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় পি.সি.বি. (P.C.B. -Printed Circuit Board)। পি.সি.বি.-তে যেকোন সার্কিট তৈরি করা অত্যন্ত সহজ যা আপনারা কাজ করতে গেলে নিজেরাই অনুধাবন করবেন। এই পি.সি.বি. কী করে তৈরি করতে হয় তা-ই এখন আমরা শিখব।

বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে পি.সি.বি. তৈরির প্রয়োজন শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই নয় বরং হবিস্টদেরও তা প্রায়ই দরকার হয়। বড় একটি সার্কিটের পি.সি.বি. লে-আউট স্বাভাবিক কারণেই একটু জটিল হয়ে থাকে যা হাতে আঁকা বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার। তখন বাণিজ্যিক পদ্ধতিই একমাত্র ভরসা। আবার এমনও হতে পারে যে, কোন একটি জটিল লে-আউট কষ্টে আপনি একটি হয়তো আঁকতে পারবেন। কিন্তু আপনার আরও চার-পাঁচজন বন্ধু যদি সেই সার্কিটটি তৈরি করে দিতে অনুরোধ করে, তখনই আপনি পড়বেন বিপদে। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিংবা সত্যি সত্যিই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পি.সি.বি. উৎপাদনের জন্য তাই এ পদ্ধতিটি জানা দরকার। আসুন তাহলে পদ্ধতিটি শেখা যাক । 

প্রথমে আপনি যে সার্কিটটির পি.সি.বি. তৈরি করতে চান সম্ভব হলে সেটি আগে ব্রেডবোর্ড কিংবা ভেরো-বোর্ডে তৈরি করে পরীক্ষা করে দেখুন সেটির কার্যক্ষমতা। প্রয়োজনে সংশোধন বা পরিবর্ধন করে একটি নিখুঁত সার্কিট তৈরি করুন। এবার সার্কিটটির লে-আউট আপনার বা আপনার বন্ধুর কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ডিজাইন করে ফেলুন। পি.সি.বি. লে-আউট ডিজাইন করার জন্য রয়েছে অনেক ধরনের সফট্ওয়্যার। তবে আপনার নাগালের মধ্যে কম্পিউটার না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা পি. সি. বি.-র লে-আউট ডিজাইন করে থাকে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও কাজটি করেন। তাঁদের কাছে আপনি আপনার সার্কিটটি পৌছে দিলে তাঁরা সেটির খুব ভাল একটি লে-আউট আপনাকে ডিজাইন করে দিতে পারবেন।

এরপর আপনাকে যেতে হবে স্ক্রীন-প্রিন্ট করার জন্য যাঁরা স্ক্রীন তৈরি করে থাকেন তাঁদের কাছে। তাঁরা আপনার লে-আউটটিকে তৈরি করে দেবেন একটি স্ক্রীনে (বিশেষ ধরনের কাপড়ে) যা একটি কাঠের ফ্রেমে লাগানো থাকবে। ঢাকার মালিটোলা এবং পুরানো ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এই স্ক্রীন আপনি তৈরি করাতে পারবেন সবচেয়ে কম খরচে। 176 sq cm. বা তার চেয়ে কিছু বেশি ক্ষেত্রফলের একটি স্ক্রীন তৈরি করাতে আপনার খরচ পড়বে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এবার স্ক্রীনটি সি.সি.বি.-র উপর রেখে কালো রং দিয়ে একটি টান দিলেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লে-আউট আঁকা সি.সি.বি.। এভাবে আপনি প্রতিবার রং দিয়ে টান দিলেই তৈরি হবে একেকটি নিখুঁত লে-আউট আঁকা সি.সি.বি.। তবে এ কাজটির জন্যও আপনার আরও কিছু আয়োজনের প্রয়োজন হবে। যেমন, যেকোন রং ব্যবহার করলেই হবে না। আপনাকে ব্যবহার করতে হবে পি.বি.সি. কালার যা আপনি কিনতে পাবেন মালিটোলাতেই ৷ আর স্ক্রীনটি পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজন হবে বেনজিন (তরল) যা আপনি একই জায়গাতে কিনতে পাবেন। পি.বি.সি. রং এবং বেনজিন দুটোই বিক্রি হয় আউন্স হিসেবে (প্রতি আউন্স ৮/১০ টাকা)। স্ক্রীনের উপর দিয়ে রং সমানভাবে ছড়িয়ে টান দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে হয় স্কুইজি (Sqeegee) যা আপনি একটি স্পঞ্জের স্যাণ্ডেল সমান করে কেটে নিয়েও তৈরি করে নিতে পারেন বা রেডিমেডও কিনতে পারেন। সি.সি.বি.-র উপর লে-আউট আঁকার কাজ শেষ হওয়ার পর কী করতে হবে তা তো আপনাদের জানাই আছে। ১ঃ১০ অনুপাত বিশিষ্ট ফেরিক-ক্লোরাইড দ্রবণে সেগুলো ডুবিয়ে রেখে সাবধানে নাড়তে হবে যতক্ষণ না লে-আউট ছাড়া বাকি তামার অংশটুকু সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়ে যায়। এরপর দ্রবণ থেকে তা উঠিয়ে শুকোতে দিন এবং বেনজিনের সাহায্যে পি.সি.বি.-র গায়ে লেগে থাকা রং পরিষ্কার করে ফেলুন। এখন পি.সি.বি.-র গায়ে পার্টসের পা-এর মাপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র করার জন্য আমাদের সকলেরই প্রয়োজন একটি ছোট ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিনের। তাই ড্রিলের জন্য হাতে তৈরি ড্রিল মেশিন ব্যবহার করতে পারেন।

নিচে কিভাবে ড্রিল মেশিন হাতে তৈরি করা যায় তা দেখানো হলঃ

বিদেশী ড্রিল মেশিন না কিনে আমরা নিজেরাই এটা তৈরি করে নিয়ে সাশ্রয় করতে পারি বেশ ক’টি টাকা। কিভাবে তৈরি করবেন তা-ও এখন শিখিয়ে দেব আপনাদের। এর জন্য খরচ পড়বে মাত্র ৭০ টাকা। ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন হবে একটা 9V-এর ডিসি মটর, একটি সুই ও কালি ফুরিয়ে যাওয়া একটি ডিসপোজেব্‌ল্ বলপেন। প্রথমে সুইটির মাথা বড় কাঁচি বা কাটার দিয়ে কেটে সমান করে নিতে হবে। এরপর মাথাটি ঘষে ঘষে চ্যাপ্টা-মাথা স্ক্রু-ড্রাইভারের মত  করে নিন, ঠিক নিচের ছবির মত।

সুই

এবার এর পিছনের দিকে কিছু চিকন তামার তার পেঁচিয়ে নিন। এরপর বলপেন থেকে দু'ইঞ্চি লম্বা একটি টুকরো কেটে নিয়ে কাটা টুকরোটির একপ্রান্তে সুইয়ের তামার তার জড়ানো প্রান্তটি একটু উত্তপ্ত করে ঠিক সোজাভাবে কিছুটা ঢুকিয়ে দিন নিচের ছবির মত।

ড্রিল মেশিন

এবার বলপেনের টুকরাটির অপর প্রান্ত ঢুকিয়ে দিন মটরের ঘূর্ণনক্ষম প্রান্তে নিচের ছবির মত।

ড্রিল মেশিন

 ব্যাস্, তৈরি হয়ে গেল ‘বাংলাদেশী প্রযুক্তি’র ড্রিল মেশিন যা কাজ করবে যে কোন বিদেশী মেশিনের চেয়েও ভালভাবে। একটি অ্যাডাপটরের সাহায্যে এবং প্রয়োজনে একটি প্রেস সুইচ (অ্যাডাপটরের পজিটিভ প্রান্তে) লাগিয়ে মেশিনটি ব্যবহার করুন। তবে পি.সি.বি.-র সংখ্যা অনেক হলে 15V-এর মটর ব্যবহার করবেন। এতে দ্রুত কাজ সারতে পারবেন। আর প্রতিটি বোর্ডে ঠিক একইভাবে লে-আউট ছাপতে পারলে একসঙ্গে কয়েকটি বোর্ড একবারে ড্রিল করতে পারবেন। তবে যদি হাজার হাজার পিস্ পি.সি.বি. তৈরির প্রয়োজন পড়ে তবে পি.সি.বি.-র জন্য বিশেষভাবে তৈরি ড্রিল-মেশিন বাইরে থেকে আনিয়ে নিতে পারেন অথবা আমাদের দেশেই এখন সবকিছু পাওয়া যায় সেখান থেকে ক্রয় করতে পারেন।

খুব সহজেই পিসিবি তৈরির কৌশল শিখে নিন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url