গ্যাসকেট কি? গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি? গ্যাসকেট এর কাজ কি?

গ্যাসকেট কি?

গ্যাসকেট হলো যান্ত্রিক যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা দুটি বা ততোধিক পৃষ্ঠের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং ছিদ্র রোধ করে। এটি একটি নমনীয় উপাদান যা দুটি পৃষ্ঠের অসমতা পূরণ করে এবং একটি শক্তিশালী, অটুঁট সীল তৈরি করে।

একটি ধাতব পদার্থের ওপর যখন আরেকটি ধাতব পদার্থ রাখা হয় তখন মাঝখানের কিছু অংশ ফাকা থাকে। এই ফাকা অংশ বন্ধ করার জন্য গ্যাসকেট ব্যবহার করা হয়।

গ্যাসকেট কি? গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি? গ্যাসকেট এর কাজ কি?

এগুলি সাধারণত অ্যাসবেস্টস, গ্রাফাইট বা কাচের তন্তু দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলি উচ্চ তাপমাত্রা এবং রাসায়নিক প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত এবং এগুলি বিভিন্ন আকার-আকৃতিতে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ পেট্রোল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি?

গ্যাসকেটের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে:

উপাদান অনুযায়ী: 

  • রাবার: সবচেয়ে সাধারণ ধরণের গ্যাসকেট, বিভিন্ন রাসায়নিক এবং তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • ধাতু: উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, কিন্তু নমনীয়তা কম।
  • ফেব্রিক: সাধারণত অ্যাসবেস্টস বা অ্যারামিড ফাইবার দিয়ে তৈরি, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
  • প্লাস্টিক: বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সহ বিস্তৃত রকমের উপকরণ।
  • কম্পোজিট: বিভিন্ন উপকরণের সেরা বৈশিষ্ট্য একত্রিত করে।

আকৃতি অনুযায়ী: 

  • ফ্ল্যাট: দুটি সমতল পৃষ্ঠের মধ্যে সীল তৈরি করে।
  • ও-রিং: একটি বৃত্তাকার গ্যাসকেট যা একটি খাঁজে বসে।
  • জিস্কেট: একটি আয়তক্ষেত্রাকার গ্যাসকেট যা ফ্ল্যাঞ্জের সাথে বোল্ট করা হয়।
  • স্পাইরাল ওয়ান্ড: একটি কুণ্ডলী আকৃতির গ্যাসকেট যা উচ্চ চাপের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।

অ্যাপ্লিকেশন অনুযায়ী: 

  • প্লাম্বিং গ্যাসকেট: পাইপ এবং ফিটিংয়ের সংযোগ সীল করতে ব্যবহৃত হয়।
  • অটোমোটিভ গ্যাসকেট: ইঞ্জিন এবং অন্যান্য অটোমোবাইল উপাদানে ফুটো রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ইলেকট্রনিক গ্যাসকেট: ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিকে ধুলো এবং আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
  • আবহাওয়া-প্রতিরোধী গ্যাসকেট: বাইরের পরিবেশ থেকে জিনিসপত্রকে সুরক্ষা দেয়।

এছাড়াও, 

  • কম্প্রেশন গ্যাসকেট: এগুলি সাধারণত নরম, নমনীয় উপাদান যেমন রাবার, সিলিকন বা ফেল্ট দিয়ে তৈরি করা হয়। যখন সংযুক্ত করা হয়, তখন বোল্ট বা অন্যান্য বন্ধনী শক্তি গ্যাসকেটকে সংকুচিত করে, মিলনের পৃষ্ঠের মধ্যে ফাঁকগুলি পূরণ করে এবং একটি সীল তৈরি করে।
  • মেটালিক গ্যাসকেট: এগুলি সাধারণত ধাতু যেমন তামা, স্টেইনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলি উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং এগুলি বিভিন্ন আকার এবং আকারে পাওয়া যায়।

গ্যাসকেট এর কাজ কি?

গ্যাসকেটের কাজ গুলো নিচে দেওয়া হলো:

  • ছিদ্র রোধ: গ্যাসকেট তরল, গ্যাস এবং ধুলোকে দুটি সংযুক্ত পৃষ্ঠের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে বাধা দেয়। এটি ইঞ্জিনে তেল ছিদ্র, পাইপলাইনে ছিদ্র, বা বায়ুচলাচল পথে ছিদ্র রোধ করতে সাহায্য করে।
  • চাপ ধরে রাখা: গ্যাসকেট চাপযুক্ত পরিবেশে চাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। যেমন, প্রেসার কুকারে গ্যাসকেট চাপ ধরে রাখে যাতে খাবার সিদ্ধ হয়।
  • কম্পন হ্রাস: গ্যাসকেট দুটি সংযুক্ত অংশের মধ্যে কম্পন এবং শব্দ হ্রাস করতে পারে। এটি মেশিনের শব্দ কমাতে এবং মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে।
  • তাপীয় প্রসারণ মোকাবেলা: গ্যাসকেট বিভিন্ন তাপমাত্রায় ধাতুর তাপীয় প্রসারণ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। যেমন, ইঞ্জিনে গ্যাসকেট উচ্চ তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং ইঞ্জিনের অংশগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

গ্যাসকেটের ব্যবহার:

গ্যাসকেটের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেমন:

  • ইঞ্জিন: গ্যাসকেটগুলি ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ, যেমন সিলিন্ডার হেড, গাসকেট কভার এবং অয়েল প্যানের মধ্যে সীল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
  • পাইপিং এবং প্লাম্বিং: গ্যাসকেটগুলি পাইপ এবং ফিটিংয়ের মধ্যে সংযোগগুলি সিল করতে ব্যবহৃত হয়, তরল এবং গ্যাসের ফুটো প্রতিরোধ করে।
  • অ্যাপ্লায়েন্সেস: ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর এবং স্টোভের মতো অ্যাপ্লায়েন্সেসে বিভিন্ন অংশের মধ্যে সীল তৈরি করতে গ্যাসকেট ব্যবহৃত হয়।
  • অটোমোবাইল: ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন এবং অন্যান্য অটোমোবাইল উপাদানের মধ্যে সীল তৈরি করতে গ্যাসকেট ব্যবহৃত হয়।
  • ইলেকট্রনিক্স: ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে বিভিন্ন কম্পোনেন্ট সিল করতে গ্যাসকেট ব্যবহৃত হয়, যা কম্পোনেন্ট গুলোকে ধুলো এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করে।
  • দরজা এবং জানালা: বাইরের বাতাস এবং শব্দ প্রবেশ রোধ করার জন্য গ্যাসকেট ব্যবহৃত হয়।

গ্যাসকেট এবং সীলের মধ্যে পার্থক্য কি?

গ্যাসকেট এবং সীল উভয়ই যান্ত্রিক সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা দুটি পৃষ্ঠের মধ্যে ফাঁকা স্থান পূরণ করে এবং তরল বা বায়ু ছিদ্র প্রতিরোধ করে। পার্থক্যটি মূলত অ্যাপ্লিকেশন এবং উপাদানের উপর নির্ভর করে। তবে, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

গ্যাসকেট এবং সীলের মধ্যে পার্থক্য

নিচে গ্যাসকেট এবং সীলের মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলো:

নির্বাচন:
  • গ্যাসকেট: গ্যাসকেট নির্বাচন সাধারণত অপেক্ষাকৃত সহজ, কারণ এটি মূলত স্ট্যাটিক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এবং উপাদান সামঞ্জস্যপূর্ণতা, তাপমাত্রা সহনশীলতা, এবং চাপ সহনশীলতা বিবেচনা করে নির্বাচন করা হয়।
  • সীল: সীল নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও জটিল কারণ বিভিন্ন ধরণের সীল রয়েছে (যেমন ও-রিং, লিপ সীল, মেকানিক্যাল সীল) এবং অ্যাপ্লিকেশনের উপর নির্ভর করে ঘর্ষণ, কম্পন, এবং চলমান অংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতা বিবেচনা করতে হয়।
আকৃতি:
  • গ্যাসকেট: গ্যাসকেট সাধারণত ফ্ল্যাট রিং বা ফ্ল্যাঞ্জের আকারের হয়।
  • সীল: সীল বিভিন্ন আকারের হতে পারে, যেমন ও-রিং, ভি-প্যাকিং, বা চাঙা আকারের।
স্থাপন:
  • গ্যাসকেট: গ্যাসকেট সাধারণত ইনস্টল করা সহজ।
  • সীল: কিছু সীল, বিশেষ করে জটিল ডিজাইনগুলির জন্য, আরও জটিল ইনস্টলেশন প্রয়োজন হয়।
প্রয়োগক্ষেত্র:
  • গ্যাসকেট: গ্যাসকেট সাধারণত স্ট্যাটিক অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় যেখানে অংশগুলি চলাচল করে না এবং নমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।
  • সীল: সীল স্ট্যাটিক এবং ডায়নামিক উভই অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়, তবে সাধারণত আরও শক্ত এবং টেকসই হয়।
উপাদান:
  • গ্যাসকেট: সাধারণত নরম, নমনীয় উপাদান যেমন রাবার, সিলিকন, ফেল্ট, অ্যাসবেস্টস বা কাচের তন্তু দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • সীল: বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে রাবার, ধাতু (যেমন তামা, স্টেইনলেস স্টিল), প্লাস্টিক এবং সিরামিক।
নকশা:
  • গ্যাসকেট: সাধারণত সমতল বা রিং আকৃতির হয়।
  • সীল: বিভিন্ন আকার এবং ডিজাইনে আসতে পারে, যেমন O-রিং, লিপ সিল, মেকানিক্যাল সিল ইত্যাদি।
ব্যবহার:
  • গ্যাসকেট: ইঞ্জিন, পাইপিং, অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
  • সীল: ইঞ্জিন, পাম্প, ভালভ, হাইড্রোলিক সিস্টেম, রোটারি যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
কার্যপ্রণালী:
  • গ্যাসকেট: স্ট্যাটিক অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় যেখানে দুটি পৃষ্ঠের মধ্যে কোন গতি নেই। এগুলি সাধারণত নমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যা সংযুক্তির সময় চাপে পূর্ণ হয় এবং ফাঁকগুলি বন্ধ করে।
  • সীল: ডায়নামিক অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় যেখানে দুটি পৃষ্ঠের মধ্যে গতি থাকে। এগুলি সাধারণত আরও জটিল নকশাযুক্ত হয় এবং ঘর্ষণ, চাপ এবং তাপের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।
উদাহরণ:
  • গ্যাসকেটের উদাহরণ: একটি গাড়ির ইঞ্জিনে সিলিন্ডার হেড গ্যাসকেট, একটি পানির পাইপের সংযোগে রাবার গ্যাসকেট।
  • সীলের উদাহরণ: একটি হাইড্রোলিক সিলিন্ডারে পিস্টন রিং, একটি সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পে মেকানিক্যাল সিল।
গ্যাসকেট এবং সীলের মধ্যে পার্থক্য নিচে টেবিল আকারে দেওয়া হলো:

বৈশিষ্ট্য গ্যাসকেট সীল
সংজ্ঞা দুটি বা ততোধিক পৃষ্ঠের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং ছিদ্র রোধ করে এমন নমনীয় উপাদান। দুটি বা ততোধিক পৃষ্ঠের মধ্যে একটি অটুঁট সীল তৈরি করে এমন যান্ত্রিক উপাদান, তরল, গ্যাস বা ধুলোকে ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
উপাদান নমনীয় উপাদান যেমন রাবার, ফেব্রিক, প্লাস্টিক বা কম্পোজিট দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায়, যার মধ্যে রয়েছে ধাতু, রাবার, প্লাস্টিক এবং কম্পোজিট।
অ্যাপ্লিকেশন সাধারণত স্ট্যাটিক অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয় যেখানে অংশগুলি চলাচল করে না। স্ট্যাটিক এবং ডায়নামিক উভয় অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ পাইপ সংযোগ, ইঞ্জিন হেড গ্যাসকেট, দরজা এবং জানালা গ্যাসকেট। শ্যাফট সিল, পাম্প সিল, বিয়ারিং সিল, পিস্টন রিং।
আকৃতি সাধারণত ফ্ল্যাট রিং বা ফ্ল্যাঞ্জের আকারের হয়। বিভিন্ন আকারের হতে পারে, যেমন ও-রিং, ভি-প্যাকিং, বা চাঙা আকারের হয়।
নির্বাচন অপেক্ষাকৃত সহজ, উপাদান সামঞ্জস্যপূর্ণতা, তাপমাত্রা সহনশীলতা এবং চাপ সহনশীলতা বিবেচনা করে নির্বাচন করতে হয়। আরও জটিল, ঘর্ষণ, কম্পন, চলমান অংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতা বিবেচনা করে নির্বাচন করতে হয়।
জটিলতা সাধারণত সহজ। কিছু জটিল ডিজাইনের জন্য আরও জটিল ইনস্টলেশন প্রয়োজন হয়।

গ্যাসকেট তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান:

গ্যাসকেট বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায়, যার প্রতিটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। উপকরণ নির্বাচন নির্ভর করে অ্যাপ্লিকেশনের উপর, যার মধ্যে রয়েছে চাপ, তাপমাত্রা, রাসায়নিক সংস্পর্শ এবং প্রয়োজনীয় স্থায়িত্ব।

গ্যাসকেট কি? গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি? গ্যাসকেট এর কাজ কি?

কিছু সাধারণ গ্যাসকেট উপাদান:

1. রাবার:

  • সবচেয়ে সাধারণ এবং বহুমুখী গ্যাসকেট উপাদান।
  • বিভিন্ন রাসায়নিক এবং তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • নমনীয়, স্থাপন করা সহজ এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন ধরণের রাবার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রদান করে, যেমন তেল প্রতিরোধ, উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীলতা, এবং অ্যাসিড প্রতিরোধ।

সুবিধা: নমনীয়, বিভিন্ন আকারে সহজেই তৈরি করা যায়, তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।

অসুবিধা: কিছু রাসায়নিকের প্রতি সংবেদনশীল, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না।

উদাহরণ: EPDM রাবার, নাইট্রাইল রাবার, সিলিকন রাবার, ন্যাচারাল রাবার।

2. ধাতু:

  • উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
  • টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী।
  • সাধারণত রাবারের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
  • সাধারণ ধাতব গ্যাসকেট উপাদানগুলিতে স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, তামা এবং ব্রোঞ্জ অর্থাৎ সংকর ধাতু রয়েছে।

সুবিধা: উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, রাসায়নিক প্রতিরোধী।

অসুবিধা: নমনীয় নয়, তৈরি করা আরও জটিল এবং ব্যয়বহুল।

উদাহরণ: তামা, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম।

3. ফেব্রিক:

  • সাধারণত অ্যাসবেস্টস বা অ্যারামিড ফাইবার দিয়ে তৈরি।
  • উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
  • রাসায়নিক প্রতিরোধী এবং অগ্নি প্রতিরোধী।
  • শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি সহ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে ফেব্রিক ব্যবহারে।

সুবিধা: উচ্চ তাপমাত্রা এবং রাসায়নিক প্রতিরোধী, তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।

অসুবিধা: স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, পরিবেশগতভাবে অস্বাস্থ্যকর, অনেক দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ।

উদাহরণ: অ্যাসবেস্টস ফাইবার, অ্যাসবেস্টস পেপার।

4. প্লাস্টিক:

  • নমনীয়, হালকা এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।
  • রাসায়নিক প্রতিরোধ এবং তাপমাত্রা সহনশীলতা পরিবর্তিত হয়।
  • সাধারণ প্লাস্টিক গ্যাসকেট উপাদানগুলিতে পলিইথিলিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং টেফ্লন রয়েছে।

5. কম্পোজিট:

  • উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং টেকসই।
  • সাধারণত ধাতু বা প্লাস্টিকের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
  • কম্পোজিট গ্যাসকেট উপাদানগুলিতে সাধারণত রাবার এবং ধাতু, প্লাস্টিক এবং ফাইবারের সংমিশ্রণ থাকে।

6. গ্রাফাইট:

সুবিধা: উচ্চ তাপমাত্রা এবং রাসায়নিক প্রতিরোধী, ভাল তাপ পরিবাহিতা।

অসুবিধা: নমনীয় নয়, তৈরি করা আরও জটিল এবং ব্যয়বহুল।

উদাহরণ: গ্রাফাইট শীট, গ্রাফাইট প্যাকিং।

7. ফ্লোরোপলিমার (Teflon):

সুবিধা: উচ্চ তাপমাত্রা এবং রাসায়নিক প্রতিরোধী, অ-স্টিকি, খাদ্য-নিরাপদ।

অসুবিধা: ব্যয়বহুল, কিছু রাসায়নিকের প্রতি সংবেদনশীল।

উদাহরণ: PTFE (Teflon), FKM (Viton)।

অন্যান্য উপকরণ:

কর্ক: নমনীয়, তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়, তবে কম টেকসই।

চামড়া: নমনীয়, তরল প্রতিরোধী, তবে উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না।

কাচের তন্তু: উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, রাসায়নিক প্রতিরোধী।

আরও পড়ুনঃ গাড়ির রেডিয়েটর ভালো রাখার উপায়

গ্যাসকেট তৈরিতে উপকরণ নির্বাচন করার সময় বিবেচ্য বিষয়গুলি:

চাপ: গ্যাসকেটটি কতটা চাপ সহ্য করতে পারবে?

তাপমাত্রা: গ্যাসকেটটি কত তাপমাত্রার পরিসরে কাজ করবে?

গ্যাসকেট নির্বাচন করার সময় বিবেচ্য বিষয়গুলো কি কি?

গ্যাসকেট নির্বাচন করার সময় বিবেচ্য বিষয়:

  • উপাদান সামঞ্জস্যপূর্ণতা: গ্যাসকেট উপাদানটি অবশ্যই তরল, গ্যাস বা রাসায়নিকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, না হলে এটা সঠিক ভাবে কাজ করবে না।
  • তাপমাত্রা সহনশীলতা: গ্যাসকেট অবশ্যই অপারেটিং পরিবেশে নিদিষ্ট তাপমাত্রায় কাজ করার সক্ষম থাকতে হবে।
  • চাপ সহনশীলতা: গ্যাসকেটটিকে অবশ্যই অপারেটিং চাপের মাত্রা সহ্য করতে সক্ষম হতে হবে।
  • নমনীয়তা: গ্যাসকেটের নমনীয় অংশগুলির মধ্যে ভাল সীল তৈরি করতে এবং তাপীয় প্রসারণ মোকাবেলা করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • স্থাপন সুবিধা: কিছু উপাদান, যেমন রাবার, ইনস্টল করা সহজ, অন্যগুলি যেমন কিছু ধাতব গ্যাসকেটে আরও জটিল ইনস্টলেশন প্রয়োজন হতে পারে।
  • খরচ: গ্যাসকেট উপাদানের খরচ পরিবর্তিত হয়, রাবার সাধারণত সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল এবং কম্পোজিট সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।

হেড গ্যাসকেট কি?

হেড গ্যাসকেট হল একটি গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক উপাদান যা একটি দহন ইঞ্জিনের সিলিন্ডার হেড এবং ইঞ্জিন ব্লকের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি তেল, কুল্যান্ট এবং দহন গ্যাস ফুটো রোধ করতে সাহায্য করে।

গ্যাসকেট কি? গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি? গ্যাসকেট এর কাজ কি?

হেড গ্যাসকেটগুলি সাধারণত ধাতু, যেমন তামা বা স্টেইনলেস স্টিল, বা অ্যাসবেস্টস বা অ্যারামিড ফাইবারের মতো নমনীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়।

আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিন তৈলাক্তকরণ বা পিচ্ছিল করণ পদ্ধতি বা ইঞ্জিন লুব্রিকেটিং সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

হেড গ্যাসকেটের কাজ কি?

  • তেল এবং কুল্যান্টকে আলাদা রাখা: হেড গ্যাসকেট ইঞ্জিন ব্লকের তেল চ্যানেলগুলিকে সিলিন্ডার হেডের কুল্যান্ট পথগুলি থেকে আলাদা করে। এটি তেল এবং কুল্যান্ট মিশ্রণ এবং ইঞ্জিনের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে।
  • দহন গ্যাস ধরে রাখা: হেড গ্যাসকেট দহন চেম্বারগুলি সিল করে এবং দহন প্রক্রিয়া থেকে উচ্চ চাপযুক্ত গ্যাসগুলি পালাতে বাধা দেয়। এটি ইঞ্জিনের শক্তি এবং দক্ষতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • তাপ স্থানান্তর: হেড গ্যাসকেট ইঞ্জিন ব্লক থেকে সিলিন্ডার হেডে তাপ স্থানান্তর করতে সহায়তা করে। এটি ইঞ্জিনকে ওভারহিট হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও 

  • হেড গ্যাসকেট ইঞ্জিন ব্লক এবং ইঞ্জিন হেডের মাঝে Seal হিসেবে কাজ করে।
  • ইঞ্জিন সিলিন্ডারে থেকে চার্জ (বাতাস ও জ্বালানির মিশ্রণ) বাহিরে বের হতে বাধা প্রদান করে।
  • ওয়াটার জ্যাকেট বা হেড এর মাঝে যে কুল্যান্ট প্রভাহিত হয় সেটার লিকেজ রোধ করে।
  • ইঞ্জিন ব্লকে বা সিলিন্ডারে উৎপন্ন তাপকে বাধা প্রদান করে, যাতে ইঞ্জিন হেড বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ তাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

হেড গ্যাসকেটের ব্যর্থতা:

হেড গ্যাসকেট ইঞ্জিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি, এবং যদি এটি ব্যর্থ হয় তবে এটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে।

হেড গ্যাসকেট

হেড গ্যাসকেট ব্যর্থতার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ইঞ্জিন ওভারহিট: হেড গ্যাসকেট ফুটো হলে, কুল্যান্ট দহন চেম্বারে প্রবেশ করতে পারে, যার ফলে ইঞ্জিন ওভারহিট হতে পারে।
  • সাদা ধোঁয়া বের হওয়া: যদি কুল্যান্ট দহন চেম্বারে পুড়ে যায়, তাহলে এটি এক্সহাস্ট থেকে সাদা ধোঁয়া হিসাবে বের হতে পারে।
  • তেল এবং কুল্যান্ট মিশ্রণ: হেড গ্যাসকেট ব্যর্থ হলে তেল এবং কুল্যান্ট মিশ্রিত হতে পারে। এটি ইঞ্জিনের তেলকে ঘন এবং দুধালো করে তুলতে পারে।
  • ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস: হেড গ্যাসকেট ব্যর্থতা ইঞ্জিনের কম্প্রেশন হ্রাস করতে পারে, যার ফলে ইঞ্জিনের শক্তি এবং দক্ষতা হ্রাস পায়।

হেড গ্যাসকেট প্রতিস্থাপন:

হেড গ্যাসকেট ব্যর্থ হলে, এটি মেরামতের জন্য ইঞ্জিন খোলার প্রয়োজন হবে। হেড গ্যাসকেট ব্যর্থতা রোধ করতে, নিয়মিত আপনার ইঞ্জিনের তেল এবং কুল্যান্ট স্তর পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনও ওভারহিটিং বা অন্যান্য সমস্যাগুলির লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন অভিজ্ঞ মেকানিকের কাছে আপনার গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ টারবাইন কি? টারবাইন কত প্রকার ও কি কি? টারবাইন কিভাবে কাজ করে? বিস্তারিত আলোচনা

হেড গ্যাসকেটের বিভিন্ন ধরণ:

হেড গ্যাসকেট বিভিন্ন ধরণের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়, প্রতিটিরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। কিছু সাধারণ ধরণের হেড গ্যাসকেট:

  • মাল্টি-লেয়ার স্টীল গ্যাসকেট (MLS): বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরণের হেড গ্যাসকেট। এটি বিভিন্ন ধাতব স্তরগুলির সমন্বয়ে গঠিত, যা একে শক্তিশালী, টেকসই এবং তাপ সহনশীল করে।
  • স্টেইনলেস স্টীল গ্যাসকেট: উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রার জন্য উপযুক্ত। তবে, MLS গ্যাসকেটের চেয়ে কম নমনীয়।
  • কপার গ্যাসকেট: সাধারণত পুরোনো ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়। তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল কিন্তু MLS বা স্টেইনলেস স্টীল গ্যাসকেটের চেয়ে কম টেকসই।
  • কম্পোজিট গ্যাসকেট: ধাতব এবং অ-ধাতব উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। সাশ্রয়ী এবং কিছু অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপযুক্ত কিন্তু MLS গ্যাসকেটের মতো উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না।

হেড গ্যাসকেট নির্বাচন:

হেড গ্যাসকেট নির্বাচন করার সময় বিবেচ্য বিষয়গুলি:

  • ইঞ্জিনের ধরণ: বিভিন্ন ইঞ্জিনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা থাকে, তাই নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার নির্দিষ্ট ইঞ্জিন মডেলের জন্য সঠিক গ্যাসকেট নির্বাচন করছেন কিনা।
  • উপাদান: উপরে উল্লিখিত বিভিন্ন ধরণের হেড গ্যাসকেটের সুবিধা এবং অসুবিধা বিবেচনা করুন, তারপর আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা ব্যবহার করেন।
  • খরচ: হেড গ্যাসকেটের দাম পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সর্বদা সস্তা বিকল্পের চেয়ে মানের দিকে মনোযোগ দিন।

হেড গ্যাসকেট ইঞ্জিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা তেল, কুল্যান্ট এবং দহন গ্যাসকে আলাদা রাখতে সাহায্য করে। হেড গ্যাসকেটের ব্যর্থ হলে ইঞ্জিনের গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্যাগুলির ও লক্ষণগুলির প্রতি সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

হেড গ্যাসকেট কি ধাতুর তৈরি?

হেড গ্যাসকেট সাধারণত স্ট্রেইনলেস স্ট্রিল (Stainless Steel) দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে, এছাড়াও গ্রাফাইড এবং ফাইবার দ্বারাও তৈরি করা হয়ে থাকে।

গ্যাসকেট কি? গ্যাসকেট কত প্রকার ও কি কি? গ্যাসকেট এর কাজ কি?

হেড গ্যাসকেট কি কারণে পরিবর্তন করতে হয়?

যেসব কারণে হেড গ্যাসকেট পরিবর্তন বাঞ্চনীয়-

১. ইঞ্জিন ওয়েলের সাথে পানি মিশ্রিত হলে।

২. হেড গ্যাসকেটের ভিতর দিয়ে কম্প্রেশন/কুল্যান্ট/ ইঞ্জিন ওয়েল লিক করে বাহিরে আসলে।

৩. রেডিয়েটর এর পানির সাথে লুব ওয়েল মিশ্রিত হলে।

৪. রেডিয়েটরের পানিতে বুদবুদ সৃষ্ট হলে বা ওভারফ্লো হলে।

৫. ওভারহলিং করার সময় বা হেড খুলার সময় গ্যাসকেট ক্ষতিগ্রস্ত হলে।

আরও পড়ুনঃ রেসিপ্রােকেটিং পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url