রেসিপ্রােকেটিং পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প

পাম্প (Pump):

যান্ত্রিক উপায়ে কোন এক স্থানের পানি বা তরল পদার্থকে আকর্ষণ করে অন্য এক স্থানে প্রেরণ করার নাম পাম্পিং (Pumping) বা পাম্প করা এবং যে যন্ত্রের সাহায্যে এই কাজ করা হয়, তাকে পাম্প (Pump) বলে। অর্থাৎ যে যন্ত্র বাহ্যিক শক্তি দ্বারা চালিত হয়ে চাপ সৃষ্টি করে কোন প্রবাহীকে এক তল হতে অন্য তলে স্থানান্তর করে তাকে পাম্প বলে। পাম্পের কার্যের নামই পাম্পিং। চাপমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টির জন্য শ্রেণিভেদে পাম্প কেসিং এর অভ্যন্তরে পিস্টন বা প্লাঞ্জার বা ইম্পেলার বা গিয়ার বা স্ক্রু থাকে। উল্লেখিত যন্ত্রাংশগুলাে যখন বৈদ্যুতিক মােটর বা ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়, তখন তরল পদার্থ চাপ প্রাপ্ত হয়ে এক স্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমান বিশ্বে, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় পাম্পের গুরুত্ব অপরিসীম। পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় পাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

একটি পাম্প তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথাঃ

(ক) সাকশন পাইপ (Suction Pipe) বা শােষক নল,

(খ) বডি (Body) বা দেহ।

(গ) ডেলিভারি পাইপ (Delivery Pipe) বা প্রেরক নল।

দেহ অংশটির একদিকে আকর্ষক নল এবং অন্যদিকে প্রেরক নল সংযুক্ত থাকে। দেহমধ্যস্থ সাজসরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতির সাহায্যে পানি আকর্ষক নলের মধ্য দিয়ে দেহে আসে এবং সেখান হতে প্রেরক নল দিয়ে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প কাকে বলে? 

যে পাম্প পানি অথবা তরলকে পিস্টন অথবা প্লাঞ্জারের ডিসপ্লেসমেন্ট দ্বারা নিম্ন উচ্চতা থেকে অধিক উচ্চতায় উঠায় তাকে Reciprocating pump বলে।

(ক) রেসিপ্রােকেটিং পাম্প (Reciprocating Pump): এটি দু প্রকার। যথা :

(১) সিঙ্গেল এ্যাক্টিং পাম্প 

(২) ডবল এ্যাক্টিং পাম্প।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের মূলনীতিঃ

এ পাম্প একটি পিস্টন সংযােগকারী দণ্ড দ্বারা একটি চাকার সাথে যুক্ত থাকে। এ চাকাটিকে ফ্লাই হুইল (Fly wheel) বলা হয়। চাকাটিকে ঘুরালে পিস্টনটি চোঙাকৃতি দেহের মধ্যে সংযােগকারী দণ্ডের সাহায্যে আগে-পিছে চলাচল করতে পারে। প্রথম বহির্মুখী বা পশ্চাদমুখী স্ট্রোকে এটি পিছনে আসে। তখন চোঙাকৃতি দেহের মধ্যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে পানি আকর্ষক পাইপ হতে দেহে এসে জমা হয়। পরবর্তী স্ট্রোকে অর্থাৎ অন্তর্মুখী বা অগ্রাভিমুখী স্ট্রোকের পিস্টনটি সম্মুখে এসে ঐ পানিকে নির্গমন পথ দিয়ে সজোরে বের করে দেয়।এভাবে এক স্ট্রোকে শূন্যস্থান সৃষ্টি ও দেহের মধ্যে পানির প্রবেশ এবং পরবর্তী স্ট্রোকে দেহ হতে পানি নির্গমন হলে তাকে সিঙ্গেল অ্যাকটিং পাম্প বলে।  কিন্তু পাম্পের দেহে ভালভ-এর সংখ্যা বৃদ্ধি ও বিন্যাস করে প্রতি স্ট্রোকেই পানির আকর্ষণ ও নির্গমন সম্ভব হলে তাকে ডবল অ্যাকটিং পাম্প বলে। রেসিপ্রােকেটিং পাম্পে সাকশন স্ট্রোকের সময় যে পরিমাণ পানি সিলিন্ডারে প্রবেশ করে ঠিক সে পরিমাণ পানি সরবরাহকারী স্ট্রোকে সরবরাহকারী ভালভ দ্বারা বের হয়ে যায় ধনাত্মক চাপের প্রভাবে। সেই কারণে রেসিপ্রোকে পাম্পকে ধনাত্মক সরণ (Positive Displacement Pump) পাম্প বল।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের শ্রেণিবিভাগঃ

(১) পিস্টন বা প্লাঞ্জারের এক পার্শ্ব বা উভয় পার্শ্বের তরলের কনট্যাক্ট অনুযায়ী রেসিপ্রােকেটিং পাম্পকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

(i) সিঙ্গেল অ্যাকটিং পাম্প (Single acting pump)

(i) ডাবল অ্যাকটিং পাম্প (Double acting pump)

(২) সিলিন্ডারের সংখ্যা অনুসারে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়।

(i) সিঙ্গেল সিলিন্ডার পাম্প (Single cylinder:pump)

(ii) ডাবল সিলিন্ডার পাম্প (Double cylinder pump)

(i) ট্রিপল সিলিন্ডার পাম্প (Triple cylinder pump)

(iv) ডুপ্লেক্স ডাবল সিলিন্ডার পাম্প (Duplex Double cylinder pump)

(v) কুইনটুপ্লেক্স সিলিন্ডার পাম্প (Quintuplex cylinder pump)

(৩) এয়ার ভেসেলের অস্তিত্ব অনুযায়ী দুই প্রকার। যথা-

(i) এয়ার ভেসেলযুক্ত পাম্প (With air Vessel Pump)

(i) এয়ার ভেসেলহীন পাম্প (Without air Vessel Pump)

রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের গঠনঃ

একটি সিম্পল রেসিপ্রােকটিং পাম্পের নিম্নলিখিত কাম্পােনেন্ট দ্বারা গঠিতঃ

(i) পিস্টন বা প্লাঞ্জার (Piston or plunger) : এটি সিলিন্ডারের মধ্যে মুভ করে।

(i) সিলিন্ডার (Cylinder) : এটির মধ্যে পিস্টন মুভ করে এবং সাকশনস্ট্রোকে পানি প্রবেশ করে।

(i) সাকশন পাইপ (Suction pipe) : সাম্প (sump) হতে পানি গ্রহণ করে সিলিন্ডারে পৌছায়।

(iv) ডেলিভারি পাইপ (Delivery pipe) : সিলিন্ডার হতে পানি প্রয়ােজনীয় উচ্চতায় ডিসচার্জ করে

(v) সাকশন ভালভ (Suction valve) : সাকশন পাইপ হতে পানি সিলিন্ডারে প্রবেশ করায়।

(vi) ডেলিভারি ভালভ (Delivery Valve): সিলিন্ডার হতে পানি ডেলিভারি পাইপে পৌছায়।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প

 বিভিন্ন ধরনের রেসিকেটিং পাম্পের কার্যপ্রণালী বর্ণনাঃ

সিঙ্গেল অ্যাকটিং পাম্পের কার্যপ্রণালিঃ যখন পিস্টন বা প্লাজার বাইরের দিকে মুভ করে, তখন সিলিন্ডারের ভেতর প্রেশার কমে যায়। ফলে এ্যাটমােসফেরিক প্রেসার (বায়ুমণ্ডলীয় চাপ) নিম্ন রিজারভারের তরলের মুক্ত সারফেসে ক্রিয়া করে এবং তরল সাকশন পাইপ তথা সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। এই সময় সাকশন ভালভ ওপেন থাকে। এভাবে সাকশন স্ট্রোক সম্পন্ন হয়। অনুরূপভাবে, ডেলিভারি স্ট্রোকে সিলিন্ডারের তরল ডেলিভারি ভালভে পুশ করে এবং তরল ডেলিভারি পাইপের মধ্য দিয়ে প্রয়ােজনীয় উচ্চতায় পৌছে। ডেলিভারি স্ট্রোকে সাকশন ভালভ বন্ধ থাকে কারণ তরলের প্রেসার এর উপর ক্রিয়া করে। এটাই হচ্ছে সিঙ্গেল অ্যাকটিং রেসিপ্রােকটিং পাম্পের সাধারণ কার্যপ্রণালি।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প

দ্বৈতক্রিয়া পাম্পের কার্যপ্রণালিঃ যখন পিস্টন সিলিন্ডারের বাইরের দিকে মুভ করে তখন সিলিন্ডারের ভেতর প্রেসার কমে যায় এবং তরল সাকশন বালভ S₁ এর ভেতর দিয়ে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। একই সময়ে উচ্চ প্রেসারে ডেলিভারি ভালভ D₂ ওপেন হয় এবং তরল ডেলিভারি পাইপ D₂ তে প্রবেশ করে।

অনুরূপভাবে পিস্টন সিলিন্ডারের ভেতরের দিকে মুভ করলে সাকশন ভালভ S₂এর ভেতর দিয়ে পানি সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এবং ডেলিভারি পাইপ D₁ দিয়ে ডিসচার্জ হয়। এভাবে একটি সাইকেল সম্পন্ন হয়।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প

সিঙ্গেল অ্যাকটিং রিসিপ্রােকেটিং পাম্পে এয়ার ভেসেলের কাজঃ

এয়ার ভেসেল (Air Vessel) : এয়ার ভেসেল হচ্ছে একটি ক্লোজড চেম্বার যার বেসে একটি ছিদ্র থাকে।

এয়ার ভেসেলের ফাংশন নিচে দেওয়া হলােঃ

(i) এটি পাম্পে তরল কন্টিনিয়াস ইউনিফর্ম রেটে সাপ্লাই করে।

(i) ক্যাভিটেশন সৃষ্টি না করে পাম্পকে অধিক স্পিডে চালায়।

(i) পাম্প চালানাের জন্য প্রয়ােজনয়ি শক্তি (power) সেভ করে ।

সিঙ্গেল অ্যাকটিং রেসিপ্রােকেটিং পাশ এর সাকশন এবং ডিসচার্জ সাইডে সংযুক্ত এয়ার ভেসেলের অপারেশনঃ

প্রথম অর্ধ সাকশন স্ট্রোক পিস্টন ত্বরণে মুভ করে এবং এই কারণে তরলও সাকশন পাইপে ত্বরণ প্রাপ্ত হয়। আবার দ্বিতীয় অর্ধ শাকশনে স্ট্রোকে পিস্টন মন্দনে মুভ করে এবং তরলও সাকশন পাইপে মন্দনপ্রাপ্ত হয়। মন্দনকৃত তরল সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এয়ারকে কম্প্রেসড করে এবং এভাবে এনার্জি এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। যখন পরবর্তী সাকশন স্ট্রোকের প্রথম আরম্ভ হয় তরল ত্বরণপ্রাপ্ত হয় এবং এয়ারের সঞ্চিত এনার্জি রিলিজড করে। অতিরিক্ত তরল এয়ার ভেসেল সাপ্লাই করে এবং একই সাইকেল রিপিট হয়। অনুরূপভাবে ডেলিভারি পাইপেও এয়ার ভেসেল তরল সাপ্লাই করে।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প

রেসিপ্রোকেটিং পাম্পের সুবিধা ও অসুবিধাঃ

রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের সুবিধাঃ

(১) এর সাহায্যে পরিবর্তনশীল হেডের মাধ্যমে সুষম হারে পানি উত্তোলন করা যায়।

(২) বেগ বৃদ্ধি করে (Rising the Speed) ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। 

(৩) এর দক্ষতা তুলনামূলক বেশি।

(৪) এ পাম্প সাধারণত সেলফ প্রাইমিং (Self-Priming) বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের অসুবিধাঃ

(১) এটি ওজনে ভারি এবং আকারে অনেক বড়।

(২) মাঝে মাঝে ভালভে ত্রুটি দেখা দেয়।

(৩) এটি কম্পনযুক্ত (Pulsation) অবস্থায় পানি নির্গমন করে অর্থাৎ পাম্পের প্রবাহ কম্পনযুক্ত।

(৪) তীব্র বেগে (High Speed) চালালে পাম্প নষ্ট হতে বাধ্য।

(৫) পাম্প বসাতে বেশি জায়গার প্রয়ােজন এবং খরচ বেশি লাগে।

(৬) পরিচালনায় দক্ষ তদারকির প্রয়ােজন।

(৭) ঘােলা পানিতে চালনা সম্ভব নয়।

সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

রােটারি পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
3 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 5:53 PM

    Good post

  • Anonymous
    Anonymous 12:14 AM

    Nice post

    • Md Shamim Hossain
      Md Shamim Hossain 8:05 AM

      Thanks

Add Comment
comment url