রােটারি পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

রােটারি পাম্প

রােটারি পাম্পঃ

যে পাম্পে কমপক্ষে একটি রােটেটিং এলিমেন্ট থাকে যা প্রতি রেভুলিউশনে (Revolution) নির্দিষ্ট আয়তনের ফ্লুইড ডিসপ্লেসমেন্ট ঘটায় তাকে রােটারি পাম্প বলে।

একটি রােটারি পাম্প, সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পের বহির্গমন অংশের গঠনশৈলীর অনুরূপ। কিন্তু কার্য সংঘটনে এতে পার্থক্য আছে। এতে সেন্ট্রিফিউগ্যাল এবং রেসিপ্রােকেটিং উভয় পাম্পের সুবিধা সম্বলিত। যেমন- সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পের স্থির নির্গমন ও রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের নিশ্চিত অপসারণ সুবিধা। রােটারি পাম্পে কোন ভাল্ভ ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত বেশি সান্দ্রতাবিশিষ্ট তরল পদার্থ স্থানান্তর বা সরবরাহ করতে রােটারি পাম্প ব্যবহার করা হয়।

রােটারি পাম্প

রােটারি পাম্পের শ্রেণিবিভাগঃ

রােটারি পাম্প সাধারণত নিম্নলিখিত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(১) বহির্ভূত গিয়ার পাম্প (External Gear Pump)

(২) অন্তবর্তী গিয়ার পাম্প (Internal Gear Pump)

(৩) ভেন পাম্প (Vane Pump)

(৪) রােটারি পিস্টন পাম্প (Rotary piston Pump)

(৫) লােব পাম্প (Lobe Pump)।

বিভিন্ন প্রকার রােটারি পাম্পের গঠনঃ

(১) বহির্ভূত গিয়ার পাম্প (External Gear Pump): গিয়ার পাম্প দুটি ইন্টারমেশিং স্পার গিয়ার নিয়ে গঠিত। গিয়ার দুটি একই আকৃতির এবং এদের পরিপার্শ্বে ক্লোজলি ফিটিং ক্যাসিং অবস্থিত।

বহির্ভূত গিয়ার পাম্প

(২) ইন্টারনাল গিয়ার পাম্প (Internal Gear Pump) : একটি ইন্টারনাল গিয়ার পাম্প, এর সহজতম আকৃতিতে অভ্যন্তরীণভাবে আন্তঃসংযােগকৃত দুইটি স্পর হুইল সমন্বয়ে গঠিত। হুইলসমূহ এমনভাবে ডিজাইনকৃত যে একপাশে তাদের স্পর্শ বিন্দুতে তারা ফ্লুইড প্রবাহরােধী সংযােগ তৈরি করে এবং নিচের চিত্র অনুযায়ী অপর পাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতি একটি ফাঁকা স্থান তৈরি করে।

ইন্টারনাল গিয়ার পাম্প

৩) ভেন পাম্প (Vane pump): ভেন পাম্প রােটর নিয়ে গঠিত। এই রােটর ভেনস বা ব্লেডস এর সাথে ফিটেড (Fitted) থাকে। ভেনসমূহ রােটরের মধ্যে স্লটগুলােতে রেডিয়ালে মুক্তভাবে স্লাইড করতে পারে।

ভেন পাম্প


(৪) রােটারি পিস্টন পাম্প (Rotary Piston Pump): দুই ধরনের রােটারি পিস্টন পাম্প রয়েছে। রেডিয়াল পিস্টন পাম্প এবং এক্সিয়াল পিস্টন পাম্প। নিচে রেডিয়াল পিস্টন পাম্পের গঠন দেখানাে হলাে।সিলিন্ডারসমূহ রােটর বা সিলিন্ডার ব্লকের মধ্যে রেডিয়ালি সাজানাে থাকে। এ রােটর একটি সার্কুলার বাইরের ক্যাসিং এর মধ্যে ইসেন্ট্রিক্যালি (eccentrically) বসানাে থাকে।

রােটারি পিস্টন পাম্প

(৫) লােব পাম্প (Lobe Pump) : একটি লােব ধরনের পাম্প কার্যসংঘটনের দিক থেকে গিয়ার পাম্পের অনুরূপ। অনেক ডিজাইনের লােব ধরনের রােটারি পাম্প আছে। কিন্তু সাধারণত হুইলসমূহের দুটি বা তিনটি লােব থাকে এবং মাঝে মধ্যে এর থেকে বেশিও থাকে। সকল ক্ষেত্রেই কার্যকারিতা এক রকম।

নিচের চিত্রে দুই ধরনের লােব পাম্প দেখানাে হয়েছে। লােবসমূহ এমনভাবে ডিজাইনকৃত যে, তারা তাদের স্পর্শবিন্দুতে ফ্লুইড প্রবাহরােধী সংযােগ তৈরি করে।

লােব পাম্প

বিভিন্ন ধরনের রোটারি পাম্পের কার্যপ্রণালিঃ

(১) বহির্ভূত গিয়ার পাম্প (External Gear Pump): এটি চালু করার পূর্বেই প্রথমে পাম্পটিকে তরল দ্বারা ভর্তি করতে হয়। তরল গিয়ারের দাঁত এবং ক্যাসিং এর মধ্যে ফাঁকাস্থানে প্রবেশ করে। অতঃপর দাতের সাথে বাইরের পরিধি বরাবর মুভ করে।

(২) ইন্টারনাল গিয়ার পাম্প (Internal Gear Pump) : এটি চালু করার পূর্বেই প্রথমে পাম্পটিকে তরল দ্বারা ভর্তি করতে হয়। গিয়ার ঘুরার ফলে সাকশন প্রান্তের কাছাকাছি দাঁতগুলাের সংযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে দুই হুইলের মাঝের ফাঁকা জায়গা বৃদ্ধি পায় এবং তরল ফাকা জায়গায় ঢুকে পড়ে। গীয়ার আরও ঘুরার ফলে দাঁতের মধ্যে ও অর্ধচন্দ্রাকৃতি জায়গায় তরল আটকে যায় এবং নির্গমন প্রান্তের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। একটু বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, এক্সটারনাল গিয়ার পাম্পের মতাে এখানেও প্রতিটি দাঁত রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের একটি পিস্টন বা প্লাজারের মতাে নির্গমন পাইপের মধ্যে তরলকে বল প্রয়ােগ করে ঠেলে দেয়।

(৩) ভেন পাম্প (Vane Pump) : তরল ইনলেট পাের্ট দিয়ে প্রবেশ করে 10 – 12 টি ভেনস সাধারণত কাজ করে। ভেনসমূহ ডাইরেকশন অব রােটেশন সাপেক্ষে স্লাইডলি ইনক্লাইনড (inclined) থাকে এবং ফ্রিকশন মিনিমাইজ (minimize) করে।

(৪) রােটারি পিস্টন পাম্প (Rotary Piston Pump): সেন্ট্রাল স্টেশনারি ওপেনিং এর প্রথম অর্ধেক তরলের ইনলেট হিসাবে কাজ করে এবং অপর অর্ধেক আউটলেট হিসাবে অবস্থান করে। অত্যধিক লিকেজের কারণে এই পাম্প অধিক প্রেসারের জন্য উপযুক্ত নয়।

(৫) লােব পাম্প (Lobe Pump) : এখানে লােবগুলাে ঘুরার ফলে কেসিং এবং লােবের মধ্যে যে পকেট তৈরি হয়, তার মধ্যে তরল আটকে যায়। নির্গমন পাইপে মধ্যে তরলকে বল প্রয়ােগে ঠেলে দেয়ার জন্য লােবগুলাে ঘুরে পর্যাপ্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই পাম্পের একটিই অসুবিধা, তা হলাে গিয়ার পাম্পের মতাে ধারাবাহিক নির্গমন এতে সম্ভব হয় না।

সেন্ট্রিফিউগ্যাল এবং রেসিপ্রোকেটিং পাম্পের তুলনায় রােটারি পাম্পের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহঃ

সেন্ট্রিফিউগ্যাল এবং রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের তুলনায় রােটারি পাম্পের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ নিচে দেওয়া হলাে :

সুবিধাসমূহ (Advantages) :

(১) রােটারি পাম্পের ডিসচার্জ ইউনিফর্ম এবং ফ্লাকচুয়েশন মুক্ত।

(২) রােটারি পাম্পে কোন ভালভের প্রয়ােজন হয় না।

(৩) খুব সহজেই ফেব্রিকেট এবং মেইনটেন করা যায়।

(৪), অধিক ভিসকোসিটি বিশিষ্ট তরলের ক্ষেত্রে এটি ইফিসিয়েন্টলি কাজ করতে পারে।

(৫) রােটেশনাল স্পিড অধিক হওয়ায় পাম্পকে ডাইরেক্টলি হাই স্পিড প্রাইম মুভারের সাথে কাপলড করা যায়।

অসুবিধাসমূহ (Disadvantages):

(১) রােটর এবং ক্যাসিং এর মধ্যে লিকেজ হওয়ার কারণে ওভারল ইফিসিয়েনসি কম হয়।

(২) তরলের মধ্যে স্যান্ড এবং গ্রিট থাকলে এটি উপযুক্ত নয়।

(৩) অধিক পরিমাণ তরল ডিসচার্জ করতে পারে না।

(৪) সাকশন হেড বেশি হলে এই পাম্প কাজ করতে ব্যর্থ হয়।

(৫) বড় ধরনের রােটারি পাম্পের জন্য প্রাথমিক খরচ অন্যান্য পাম্পের তুলনায় বেশি।

রােটারি পাম্পের প্রয়ােগক্ষেত্রঃ

সাধারণত রােটারি পাম্প অধিক হেড এবং কম ডিসচার্জের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। বহু শিল্পকারখানা, যেমন- পাওয়ার স্টেশন, মেশিন টুলস, এরােপ্লেন, মােটরযান শিল্প, ইঞ্জিনের লুব্রিকেটিং সিস্টেম, তেল শোধনাগার, ওষুধ শিল্প ইত্যাদি যেখানে পরিমিত ও প্রয়ােজন অনুসারে সুষম হারে তেল বা পানি সরবরাহের প্রয়ােজন, সেখানে সেন্ট্রিফিউগ্যাল বা রেসিপ্রােকেটিং পাম্প ব্যবহার না করে রােটারি পাম্প ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এই পাম্প বিশেষভাবে ওয়েল হাইড্রলিক্স ফিল্ডে ব্যবহৃত হয়।

রেসিপ্রােকেটিং পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url