ডিজেল ইঞ্জিন ও পেট্রোল ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্য

ডিজেল ইঞ্জিন ও পেট্রোল ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্য

ডিজেল ইঞ্জিন ও পেট্রোল ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্য

ডিজেল ইঞ্জিনঃ

(১) ডিজেল ইঞ্জিন বা কম্প্রেশন বা ইগনিশন ইঞ্জিন ডিজেল ইঞ্জিনে সিলিন্ডারের ভেতর বায়ুকে অত্যন্ত উচ্চচাপে (৪০-৪৫ কেজি/বর্গ সেঃমিঃ) সংকুচিত করা হয়। উচ্চ চাপের ফলে সংকুচিত বাতাসের তাপ বেড়ে প্রায় লোহিততপ্ত বা ৬০০° সেলসিয়াস হয়। এ অবস্থায় অধিকতর উচ্চ চাপে ডিজেল জ্বালানি বাষ্পাকারে অনুপ্রবেশ (Inject) করিয়ে দেয়া হয়। সংকুচিত বাতাসের উচ্চ তাপে এ জ্বালানি তৎক্ষনাৎ প্রজ্জলিত হয়ে যায়।

পেট্রোল ইঞ্জিনঃ

(২) পেট্রোল বা স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন পেট্রোল বা স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনে কার্বুরেটর নির্দিষ্ট অনুপাতে পেট্রোল ও বাযুর মিশ্রণ তৈরি করে এবং ইঞ্জিন সিলিন্ডার তা গ্রহণ ও সংকুচিত করে। কিন্তু সংকুচিত মিশ্রণের চাপ ডিজেল ইঞ্জিনের মত উচ্চ হয় না। স্পার্ক প্লাগের সাহায্যে সংকুচিত মিশ্রণে ইলেকট্রিক স্পার্ক উৎপন্ন করা হয়। স্পার্কের ফলে পেট্রোল ও বায়ুর মিশ্রণ প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা


ডিজেল ইঞ্জিন ও পেট্রোল ইঞ্জিনের মধ্যে বিস্তারিত পার্থক্যঃ

ডিজেল ও পেট্রোল ইঞ্জিনের বিস্তারিত পার্থক্য নিম্নে প্রদান করা হলোঃ-

সিঃ নং ডিজেল ইঞ্জিন পেট্রোল ইঞ্জিন
সিলিন্ডার শুধু বাতাস গ্রহণ করে এবং কার্বুরেটরের প্রয়োজন নেই। সিলিন্ডার জ্বালানি (পেট্রোল) ও বাতাসের মিশ্রণ গ্রহণ করে। কার্বুরেটর পেট্রোল ও বাতাসের মিশ্রণ তৈরি করে।
সংকুচিত বাতাসে প্রজ্জ্বলনের জন্য ইনজেক্টরের মাধ্যমে জ্বালানি ইনজেক্ট করা হয়। সংকুচিত মিশ্রনে বৈদ্যুতিক স্পার্ক প্লাগ প্রজ্জ্বলিত করা হয়।
জ্বালানি হিসাবে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি হিসাবে পেট্রোল ব্যবহৃত হয়।
বাতাস ও জ্বালানির অনুপাত নির্দিষ্ট নয়। বাতাস ও জ্বালানির অনুপাত সাধারণত ধ্রুব এবং তা ১৫ঃ১।
দহন কাজের জন্য বিদ্যুৎ বা বৈদ্যুতিক স্ফুলিংগের প্রয়োজন হয় না। দহন কাজের জন্য বিদ্যুৎ বা বৈদ্যুতিক স্ফুলিংগের প্রয়োজন হয়।
সংকোচন অনুপাত ১৪ঃ১ হতে ২০ঃ১। সংকোচন অনুপাত ৪ঃ১ হতে ৮ঃ১।
সংকোচন চাপ ৪০ হতে ৪৫ কেজি/বর্গ সেঃমিঃ। সংকোচন চাপ ৭ হতে ১০ কেজি বর্গ সেঃমিঃ।
সংকোচন তাপ প্রায় ৬০০°C (লোহিত তপ্ত)। সংকোচন তাপ ২০০°C হতে ৩০০°C।
তাপীয় দক্ষতা ৩২-৩৮%। তাপীয় দক্ষতা ২৫-৩২%।
১০ প্রজ্জ্বলনের চাপ ৫০ হতে ৬০ কেজি/বর্গ সেন্টিমিটার। প্রজ্জ্বলনের চাপ প্রায় ২০ কেজি/বর্গসেন্টিমিটার।
১১ এই ইঞ্জিন ডিজেল সাইকেলের উপর চলে। এই ইঞ্জিন অটো সাইকেলের উপর চলে।
১২ ইহা স্থির প্রেসার সাইকেল। ইহা স্থির ভলিউম সাইকেল।
১৩ সাকশনের সময় শুধুমাত্র বাতাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। সাকশনের সময় বাতাস এবং জ্বালানি মিশ্রণ সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।
১৪ দহন কার্য সম্পাদনের জন্য কমপ্রেশন স্ট্রোকের শেষে হাই প্রেসার পাম্প ইনজেকটরের সাহায্যে ডিজেল স্প্রে করে। দহন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যাটারী ইগনিশন কয়েল, সিবি পয়েন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর এবং স্পার্ক প্লাগ ইত্যাদির প্রয়ােজন।
১৫ জ্বালানি পদ্ধতির জন্য হাইপ্রেসার পাম্প এবং ইনজেকটর অত্যন্ত প্রয়ােজন। জ্বালানি পদ্ধতির জন্য এসি পাম্প এবং কার্বুরেটর অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।
১৬ এই ইঞ্জিনে অপেক্ষাকৃত নিন্মমানের তৈল ব্যবহার করা হয়। এই ইঞ্জিনে উচ্চমানের তৈল ব্যবহার করা হয়।
১৭ এই ইঞ্জিনে কর্মক্ষমতা বেশী। এই ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কম।
১৮ এই ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল কম। এই ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল বেশী।
১৯ অপেক্ষাকৃত কম RPM পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ RPM পাওয়া যায়।
২০ ওজনে ভারী, সমশক্তির জন্য। ওজনে হালকা,সমশক্তির জন্য।

সারমর্মঃ ডিজেল ইঞ্জিনে সিলিন্ডারের ভেতর বায়ুকে অত্যন্ত উচ্চ চাপে সংকুচিত করা হয়। জ্বালানি
হিসেবে ব্যবহৃত হয় ডিজেল। আর পেট্রোল ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে কার্বুরেটর নির্দিষ্ট অনুপাতে পেট্রোল ও বায়ুর মিশ্রণ তৈরি করে এবং সিলিন্ডার তা গ্রস ও সংকোচিত করে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় পেট্রোল।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url