ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেটের জনক কে? ইন্টারনেট কত সালে আবিষ্কার হয়? বিস্তারিত আলোচনা

ইন্টারনেট কি?

ইন্টারনেট হচ্ছে গোটা পৃথিবীব্যাপী মাকড়সার জালের মত বিস্তৃত এক কম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা যার সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো জায়গার দুটো কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মধ্যে চোখের নিমেষে যোগাযোগ করা সম্ভব। অর্থাৎ ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী এক রকমের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যার সাহায্যে আমরা খুব সহজেই সব রকমের তথ্য বা ইনফরমেশন নিজেদের মধ্যে শেয়ার বা আদান-প্রদান  করতে পারি।

ইন্টারনেট

ইন্টারনেটের মাধ্যমে লভ্য এই তথ্য বা ইনফরমেশন সমূহ চলতি কথায় মাল্টি-মিডিয়া তথ্য (Multimedia Signals) নামে পরিচিত। আরও সহজ ভাষায় বলা যায়- Internet data, যা সাধারণত চার প্রকারঃ-

  1. Text
  2. Image বা picture
  3. Audio
  4. Video

অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যে ইনফরমেশন সমূহ তথা Internet data  নিয়ে নাড়াচাড়া করি সে গুলো কখনও Text message বা Text document হতে পারে, কখনও ছবি (picture বা image ), কখনও শব্দ (audio), আবার কখনও ভিডিও বা মুভি সংকেতও হতে পারে। এই Internet data সমূহ একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাট মেনে এক বিশেষ ফাইল (file) বা মোড়কের (packet) এর আকারে server বা মোবাইল ফোনের memory তে জমা হয়।

বিভিন্ন প্রকার Internet data ফাইলের জন্য ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট গুলো নিম্নরূপঃ

  1. Text Data File: doc, docx, pdf, txt ইত্যাদি।
  2.  Image বা Picture File: jpeg, gif, png, bmp ইত্যাদি।
  3.  Audio File: pcm, mp3, wav, aiff ইত্যাদি।
  4. Video File: mp4, mov, wmv, avi ইত্যাদি।

গোটা পৃথিবী জুড়ে বেশ কিছু  ইন্টারনেট কোম্পানী আছে যারা তাদের বিশেষ কিছু অ্যাপের সাহায্যে এই মাল্টি-মিডিয়া তথ্য সমূহ (multimedia signals) বা Internet data তথা ইন্টারনেট পরিষেবা আমাদের কাছে বিক্রি করে। এদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে-

  • অনলাইন বেচা-কেনা।
  • অনলাইন আর্থিক লেন দেন ফি।
  • অন্যান্য অনলাইন ইন্টারনেট পরিষেবা।
  • Paid অ্যাডভেটাইজমেন্ট।
  • Cloud পরিষেবা ইত্যাদি।

এই ইন্টারনেট কোম্পানী গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো (Ranking বার্ষিক আয় বা  revenue income এর নিরিখে):- 

  1. Google (Rank 1)
  2.  Amazan (Rank 2)
  3. Meta Platforms (Rank 3)
  4. Alibaba (Rank 5) 
  5. Netflix (Rank 6)
  6. PayPal (Rank 10)
  7. Yahoo (Rank 29)

ইত্যাদি। 

এই Meta Platforms কোম্পানীর আগের নাম ছিল Facebook  Inc, যা কিনা আমাদের 'ফেসবুক', 'ইনস্টাগ্রাম', 'ওয়াটসঅ্যাপ' ও 'মেসেঞ্জারের' মত গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করে চলেছে। অনুরূপ ভাবে Google কোম্পানীর দ্বারা প্রদত্ত ইন্টারনেট পরিষেবার মধ্যে অন্যতম হলো- Google সার্চ ইঞ্জিন, GPS based নেভিগেশন (Google Map) এবং YouTube চ্যানেল।

কোম্পানীর Warehouses এর মত এই ইন্টারনেট কোম্পানী গুলোও আমাদের জন্য ব্যবহার যোগ্য মাল্টি-মিডিয়া তথ্য সমূহ তথা Internet data পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ কিছু জায়গায় জমা করে রাখে, যাকে বলা হয় সেই কোম্পানীর Internet Data Server বা NAS (Network Attached Storage). বিভিন্ন কোম্পানীর Data Server এর সংখ্যাও বিভিন্ন। উদাহারণ স্বরূপ, গোটা পৃথিবীতে Meta Platforms তথা Facebook কোম্পানীর মোট Data Server এর সংখ্যা আঠারোটি।

এই Data Server গ্রাহকের খুব নিকটে বা গ্রাহক থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতে পারে। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে Google কোম্পানীর Data Server দেশের রাজধানী New Delhi তে অবস্থিত। এখান থেকেই বাংলাদেশে ক্যাশ বা পিএনআই ব্যান্ডউইথ আসছে। এই ব্যান্ডউইথের দামও কম হওয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো (আইআইজি- ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ওই ব্যান্ডউইথের প্রতি ঝুঁকছে।

অন্যদিকে Meta Platforms বা Facebook কোম্পানীর কোনো Data Server বাংলাদেশে নেই।বাংলাদেশিদের কাছে Facebook কোম্পানীর নিকটতম Data Server এর অবস্থান সিঙ্গাপুরে। কোনো বড় শহরে যত গুলো বড় বড় রেস্টুরেন্ট বা খাবারের দোকান থাকে, আজকাল সে সব দোকানে গিয়ে লোকজন খাবারের জন্য তেমন একটা ভীড় করে না। তার বদলে তারা বাড়িতে বসেই খাবারের জন্য  Food Panda App এর সাহায্যে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে থাকে। Food Panda কোম্পানীর ডেলিভারী 'বয়' যথাসময়ে দোকান থেকে খাবার তুলে সেই খাবার আমাদের দরজার সামনে নিয়ে এসে হাজির করে। অর্থাৎ বিষয়টা এইরকম Food Panda কোম্পানীর নিজস্ব কোনো হোটেল নেই, নিজস্ব কোনো  রেস্টুরেন্ট নেই। শুধু আছে কম্পিউটার ও বেশ কিছু লোকজন নিয়ে সুন্দর এক ডেলিভারী নেটওয়ার্ক, যার সাহায্যে আপনার পছন্দমত শহরের যে কোনো হোটেলের সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার সামান্য টাকার বিনিময়ে (With Minimum Delivery Charge) আপনার বাড়িতে নিয়ে এসে হাজির হয়।

সব দেশেই Food Panda এর মত বেশ  কিছু  কোম্পানী আছে যারা খুব সহজেই তাদের মোবাইল (Wireless link) বা সেমি-মোবাইল (Wireless plus optical fibre links) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন কোম্পানীর এই  Internet data তথা Internet পরিষেবা আমাদের দোর-গোড়ায় কিছু টাকার বিনিময়ে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। আর এই সকল সার্ভিস প্রদানের জন্য প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট ডাটার। এই ডাটা এবং বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস যেসব কম্পানি প্রভাইড করে তাদের কে বলা হয় Internet Service Provider (ISP). বাংলাদেশে Internet Service Provider দের মধ্যে অন্যতম হলোঃ- 

  • বাংলাদেশ টি এন্ড টি বোর্ড।
  • বিডিকম।
  • বোল।
  • ব্রাক নেট সার্ভিসেস।
  • এক্সেস টেল।
  • বিজয় অনলাইন লিমিটেড।
  • আফতাব আইটি লিমিটেড।
  • অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড।
  • এশিয়া অনলাইন বিডি লিমিটেড।
  • বাংলাদেশ অনলাইন লিমিটেড।

এছাড়াও আরো অনেক ভালো internet সার্ভিস প্রোভাইডার আছেন, যাদের সার্ভিস ও ভালো।

বর্তমান সময়টা ডিজিটালের জগৎ বলা হয়। অ্যানালগের জগৎ আজ প্রায় অতীত। সেই পুরানো টেলিফোন সিস্টেম (PSTN তথা Public Service Telephone Network) ছাড়া আজকাল প্রায় সব যোগাযোগই (Communication) ডিজিটাল। আজকের সেলুলার মোবাইল Communication,  টেলিভিশন Broadcasting,  ইন্টারনেট Communication সব কিছুই ডিজিটাল। 

ইন্টারনেট

অ্যানালগের জগৎ Continuous বা অবিচ্ছিন্ন। তবে ডিজিটালের জগৎ Discrete বা বিছিন্ন , অর্থাৎ এখানে যে কোনো বিষয়ের কেবল দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বা ভিন্ন মান থাকে। এই দুই ভিন্ন মানের একটি উচ্চ (high) বা হ্যাঁ (yes), অপরটি নিম্ন (low) বা না (No), এর মধ্যবর্তী আর কোনো মান থাকতে পারে না। গণিতের ভাষায় ডিজিটালের এই জগৎ, বাইনারি সিস্টেম (Binary system) নামে পরিচিত, যেখানে কেবল দুটো সংখ্যার অস্তিত্ব রয়েছে 0 এবং 1, অর্থাৎ এখানে সব কিছুই 0 এবং 1 এই দুই সংখ্যার সমন্বয়ে তৈরী। বাইনারি সিস্টেমের এই 0 এবং 1 কে বলা হয় One Information Bit, যেখানে Bit এর পুরো নাম Binary Digit. সাধারণত 8 খানা Bit মিলে তৈরী হয় একটি Binary Word, যাকে বলা হয় 1 byte. কতকগুলো Byte বা Word  মিলে তৈরী হয় Line, কতকগুলো Line মিলে তৈরী হয় Frame বা Page আর একটা বা বেশ কতকগুলো Frame মিলে তৈরী হয় ডেটা File, অর্থাৎ কম্পিউটারে বা স্মার্টফোনে ব্যবহার যোগ্য এই ডেটা File এর ধারণাটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কাগজের ফাইল বা পুস্তকের মতই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমরা সাধারণত ডেসিমাল (decimal) সিস্টেমের সাথে পরিচিত, যেখানে 0 থেকে শুরু করে 9 পর্যন্ত 10 টি সংখ্যার অস্তিত্ব আছে। এখানে অন্য যে কোনো সংখ্যা এই 10 টি সংখ্যার সমন্বয়ে তৈরী। তবে কম্পিউটার  বা স্মার্টফোন কিন্তু Binary System এর সাথে অর্থাৎ 0 এবং 1 এই দুটি সংখ্যার সাথেই পরিচিত।

বাস্তবে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে Information বা সূচনা সমূহের (যেমন, Text , picture, audio, video ইত্যাদি) সাথে পরিচিত সে গুলো আসলে discrete নয়, তারা অ্যানালগ প্রকৃতির। এই information গুলোকে electronically এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পাঠানোর আগে সে গুলোকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে electrial voltage বা electrical current এ রূপান্তরিত করা হয়। information গুলোর এই electric form কে baseband সংকেত বলে আর যে যন্ত্রের সাহায্যে information বা বাস্তব সূচনা সমূহকে baseband সংকেতে রূপান্তরিত করা হয় তাদের transducer বলে। Transducer দের মধ্যে অন্যতম হলো- মাইক্রোফোন, টেপ-রেকর্ডার, CCD (Charge Coupled Device) ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদি। 

আপনার Smartphone বা Computer এ আজকাল যে সব transducer লাগানো আছে সেগুলো সবই digital  প্রকৃতির। এদের প্রত্যেকে Text বা document, picture বা image, audio, video ইত্যাদির electrial signal তথা baseband সংকেতকে 101011001.... এরকমের কতক গুলো binary strings বা binary word এ পরিণত করে। এ রকম অনেক গুলো binary words মিলে তৈরী হয় file, যার Standard format এর কথা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাইনারি

Computer বা Smartphone এর memory তে যে কোনো information (text, picture, audio, video ইত্যাদি) সাধারণত bit বা byte এর সমন্বয়ে তৈরী এক বিশেষ ডেটা file হিসেবে জমা থাকে, যা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। এই ডেটা file এর size সচরাচর নিম্নরূপ এককে (unit) প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যথাঃ

  1.  Kb (Kilobits)
  2. KB (Kilobytes)
  3. Mb (Megabits)
  4. MB (Megabytes)
  5.  Gb (Gigabits)
  6.  GB (Gigabytes)
  7. Tb (Terabits)
  8. TB (Terabytes)

এখানে b বলতে bits এবং B বলতে byte (যা কিনা 8-bit word) বোঝাচ্ছে। বলা বাহুল্য যে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এদের মান নিম্নরুপঃ

  • 1 Kb = 1000 bits
  • 1 KB = 1000 bytes
  • 1 Mb= 1000 Kb
  • 1 MB= 1000 KB
  • 1 Gb= 1000 Mb
  • 1 GB= 1000 MB
  • 1 Tb = 1000 Gb
  • 1 TB = 1000 GB

কাজেই দেখা যাচ্ছে যে ছোট সাইজের file এর জন্য Kb বা KB একক যথেষ্ট, মাঝারী সাইজের file এর জন্য  Mb বা MB একক যথেষ্ট। তবে বড় সাইজের file এর জন্য Gb/GB, Tb/TB একক ব্যবহৃত হয়। এই সব file গুলো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সেল ফোন ও অন্যান্য electronic device গুলোর যে অংশে জমা করে রাখা হয় তাদের memory devices বলে। উদাহারণ স্বরূপ Computer Hard Disc, Compact Disk (CD), NAS, Pen drive, Solid State Recorder (SSR), RAM (Random Access Memory) card, ROM (Read Only Memory) chip ইত্যাদি। এদের capacity (maximum available storage space) সাধারণত KB, MB, GB ও TB এককে প্রকাশ করা হয়।

ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার (অ্যানালগ বা ডিজিটাল যাই হোক না কেন) তিনটে মূখ্য অংশ থাকে। এগুলো হলোঃ

  1. প্রেরক যন্ত্র (Transmitter)
  2. গ্রাহক যন্ত্র (Receiver)
  3. প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটা মাধ্যম, যাকে এক কথায় বলে যোগাযোগ মাধ্যম (communication link or communication channel)

প্রেরক যন্ত্রের কাজ হলো, কোনো ইনফরমেশন, বার্তা বা সংকেতকে গ্রাহক যন্ত্রের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা। মাধ্যম বা link এর কাজ হলো প্রেরক যন্ত্রের কাছ থেকে বার্তা বা সংকেতকে নিয়ে গ্রাহক যন্ত্রের কাছে পৌছে দেয়া। ব্যাপারটা অনেকটা পোষ্টে চিঠি পাঠানোর মতো।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন কোনো বন্ধুকে পোষ্টে চিঠি পাঠায়, সেই চিঠি দূরত্বের হিসেবে প্রথমে স্থলপথ (মোটর গাড়িতে), জলপথ (জাহাজে) বা আকাশপথে (উড়োজাহাজে) পরিভ্রমন করে বন্ধুর নিকটবর্তী পোষ্ট-অফিসে গিয়ে পৌঁছায়। পরের ধাপে পোষ্টম্যান সেই চিঠি পায়ে হেঁটে বা সাইকেল কিংবা বাইকে চড়ে আমাদের বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়। এখানে আমি হচ্ছি প্রেরক যন্ত্র, চিঠি হচ্ছে বার্তা বা সংকেত, স্থলপথ/ জলপথ/আকাশপথ হচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যম (link) আর আমার বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজন হচ্ছে গ্রাহক যন্ত্র সদৃশ।

ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায়, কোনো সংকেত বা বার্তা, 10101101... 11001..এরকম এলোমেলো বাইনারি  স্ট্রিং এর সমন্বয়ে তৈরী এক ডেটা ফাইল বা ডেটা প্যাকেট  (যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে)। কাজেই এরূপ যোগাযোগ ব্যবস্থায়, প্রেরক যন্ত্র একটা ডিজিটাল ট্রান্সমিটার, যা কিনা ডিজিটাল সংকেত বা ডেটা প্যাকেট গুলোকে এক বিশেষ ফরম্যাটের আকারে বেঁধে, এক বিশেষ উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে যোগাযোগ মাধ্যমে (communication link) গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। অন্য দিকে গ্রাহক যন্ত্র একটা ডিজিটাল রিসিভার, যা কিনা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা সে ডেটা প্যাকেট গুলো সংগ্রহ করে এবং সাথে সাথে প্যাকেট খুলে তার মধ্যের সংকেত বা বার্তা সমূহের পুনরুদ্ধার করে। আমরা যেমন ডাক যোগাযোগে কোনো পার্সেল পাওয়ার পর তাড়াতাড়ি সেটা খুলে দেখি, অনেকটা ঠিক তার মতো।

ডিজিটাল ট্রান্সমিটার বা প্রেরক যন্ত্রের তিনটে মূল অংশ থাকে। এগুলো হচ্ছে, PCM  Encoder, Modulator এবং Power Amplifier.

অনুরূপ ভাবে ডিজিটাল রিসিভার বা গ্রাহক যন্ত্রের তিনটে মূল অংশ হচ্ছে, Low Noise Amplifier (LNA), Demodulator এবং Decoder. ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার-এই দুইয়ের combo pack কে modem বলে। আসলে modem শব্দটি হলো modulator এবং demodulator এই দুটো শব্দের সম্মিলিত রূপ।

বার্তা বা সংকেত প্রবাহের দিকের উপর নির্ভর করে এই ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দু প্রকার। যথাঃ

  1. একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা (One way or unidirectional communication)
  2.  উভয়মুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা (Two way or bidirectional communication)

একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থায়, একজন সংবাদ বা বার্তা প্রেরক আর অন্য জন বা অন্য সবাই গ্রাহক।  এরূপ যোগাযোগ ব্যবস্থার  উল্লেখযোগ্য  উদাহারণ গুলো হলোঃ

  • টেলিভিশন সম্প্রচার  ব্যবস্থা (TV broadcasting) 
  • রেডিও সম্প্রচার ব্যবস্থা (Radio broadcasting)
  • জিপিএস নেভিগেশন পরিষেবা।
  • ই-মেইল (email) ব্যবস্থা।
  • ই-নিউজপেপার।
  • YouTube এ শিক্ষামূলক ভিডিও ইত্যাদি।

ধরা যাক, কোনো এলাকার টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা, এখানে TV Station শুধু প্রেরকের কাজ করে। অন্যদিকে এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী শুধুই গ্রাহকের ভূমিকায় থাকে।

উভয়মুখী যোগাযোগ ব্যবস্থায়, সংযোগ রক্ষাকারী মাধ্যম বা link এর দুই প্রান্তে অবস্থিত দুজনের প্রত্যেকে  একসঙ্গে প্রেরক ও গ্রাহকের ভূমিকায় থাকে। অর্থাৎ এরূপ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমাদের প্রত্যেকে একে অপরের সাথে সংবাদ, সংকেত ও সূচনা আদান-প্রদান করতে পারি। এরূপ যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উদাহারণ হলোঃ

  • টেলিফোন যোগাযোগ
  • ভিডিও কনফারেন্সিং
  • সেলুলার মোবাইল যোগাযোগ
  • Amateur রেডিও
  • তাৎক্ষণিক ম্যাসেজিং ব্যবস্থা
  • ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা (বিবিধ ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যম) ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে ইন্টারনেট যোগাযোগ এক প্রকার  উভয়মুখী ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা (Two-way digital communication system). কাজেই ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকে একসঙ্গে প্রেরক ও গ্রাহকের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ প্রত্যেক  ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সেল ফোনের মধ্যে থাকে সেই মডেম (modem) নামের যন্ত্র যা কিনা ইন্টারনেটে যেমন খুব সহজে সংকেত পাঠাতে পারে, তেমনি ইন্টারনেট থেকে খুব সহজে সংকেত নিতেও পারে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

যোগাযোগ মাধ্যমঃ

ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার তৃতীয় মূখ্য অংশ হচ্ছে প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যম বা কমুনিকেশান চ্যানেল বা কমুনিকেশান লিংক, যার গুরুত্ব কিন্ত অপরিসীম। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সিস্টেমে (যেমনঃ টেলিফোন নেটওয়ার্ক, সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ডেটা নেটওয়ার্ক) ব্যবহৃত যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • সুপরিবাহী তামার তার (copper wire)
  • কোয়েক্সিয়াল  RF Cable
  • ওয়েব-গাইড (Waveguide)
  • অপটিক্যাল ফাইবার Cable (OFC)
  • ওয়ারলেস বা air link 

যে কোনো যোগাযোগ মাধ্যম তথা কমুনিকেশান চ্যানেলের মূখ্য বৈশিষ্ট্য গুলো হলোঃ

  • মিটার প্রতি তার ইনসারসান বা ট্রান্সমিশান loss. 
  • চ্যানেল bandwidth, তথা তার কার্যকরী কম্পাঙ্ক-সীমা।
  • চ্যানেল capacity অর্থাৎ তার সর্বোচ্চ সিগন্যালিং স্পীড  বা bit rate পরিবহণ করার ক্ষমতা।

অ্যানালগ যোগাযোগ ব্যবস্থায়, চ্যানেল bandwidth যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনি ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায়, চ্যানেল capacity ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বোচ্চ সিগন্যালিং rate বা bit rate মোটামুটি তার bandwidth এর সমান। 

ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার এই যোগাযোগ মাধ্যম অনেকটা যেন জলের পাইপের মত। জল যদি সংকেত বা signal  হয় এবং পাইপের প্রস্থচ্ছেদ যদি bandwidth হয়, তবে পাইপের ভেতর জলের বেগ, সিগন্যালিং স্পীড বা  bit rate এর সমতুল্য। যে পাইপের প্রস্থচ্ছেদ যত বেশী, তার মধ্যে জলের বেগ তত বেশী। 

ধরা যাক, আপনার রান্নাঘরে জলের দুটো ট্যাপ আছে। একটা সরু পাইপের, অন্যটা মোটা পাইপের। আপনার এক বালতি জলের দরকার। আপনি যদি সরু পাইপের ট্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে এক বালতি জল ভর্তি হতে ধরুন 5 মিনিট লাগলো। এবার যদি আপনি বেশ মোটা পাইপের ট্যাপ ব্যবহার করেন তাহলে দেখবেন 5 মিনিটে আপনি হয়তো 5 বালতি জল পাচ্ছেন। অন্য ভাবে বলা যায় যে, বেশী পরিমান জলকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ির ছাদে উপরে রাখা জলের ট্যাঙ্ক থেকে বালতিতে স্থানান্তরিত করতে মোটা পাইপের ট্যাপের প্রয়োজন।  সেই রকম ভাবে বলা যায় আপনি যদি ইন্টারনেটের মত broadband পরিষেবা পেতে চান, যেখানে information বা ডেটা ফাইলের সাইজ অনেক বড়, সেখানে এই বিশাল সাইজের ডেটাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানীর server বা data centre থেকে আপনার সেল ফোন বা ল্যাপটপ নামের বালতিতে সেই জলের মতই খুব তাড়াতাড়ি ভরে ফেলতে চান, তাহলে মোটা পাইপের ট্যাপের মত সেই রকম যোগাযোগ মাধ্যম বা লিংক বা চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে যার bandwidth বা bit rate অনেক বেশী। 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ডিজিটাল পরিষেবার জন্য বিভিন্ন রকম bir rate এর  প্রয়োজন। এর কিছু উদাহারণ নীচে দেয়া হলোঃ

  • ডিজিটাল টেলিফোন পরিষেবাঃ 64 to 128 Kbps.
  • Spotify অডিও পরিষেবাঃ 64 to 320 Kbps.
  • Email পরিষেবাঃ 1 Mbps.
  • Web browsing পরিষেবাঃ 3 to 5 Mbps.
  • সামাজিক মাধ্যমঃ 3 to 5 Mbps (Facebook,  Instagram, YouTube Etc).
  • ওয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলিংঃ 3 to 5 Mbps.
  • অনলাইন ভিডিও গেমসঃ 3 to 6 Mbps.
  • HD (High Definition) ভিডিও সম্প্রচারঃ 5 to 10 Mbps.

বলাবাহুল্য, আমরা সবাই high speed ইন্টারনেট পরিষেবা চাই, যাতে আমাদের সেল ফোনে সব রকমের সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট (Audio, video, picture, text) খুব তাড়াতাড়ি আমরা দেখতে পাই, বিশেষ করে live video ( যার জন্য ন্যূনতম bit rate প্রায় 5 Mbps), যা কিনা কোনো রকম hanging বা unwanted delay ছাড়া খুব সহজেই আমাদের ফোন বা ল্যাপটপের পর্দায় ডিসপ্লে হয়। কাজেই High Speed ইন্টারনেট পরিষেবা তথা Broadband পরিষেবার জন্য আমাদের সেই রকম যোগাযোগ মাধ্যমের (কমুনিকেশান লিংক) প্রয়োজন, যার Bandwidth অনেক বেশী। উল্লেখ্য যে, কোনো যোগাযোগ মাধ্যম বা কমুনিকেশান লিংকের Bandwidth (including transmitter and receiver) যত বেশী তার দামও তত বেশী। 

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিভিন্ন রকম যোগাযোগ মাধ্যমের বা লিংকের মূখ্য বৈশিষ্ট্যগুলোঃ

বিভিন্ন রকম যোগাযোগ মাধ্যমের বা লিংকের মূখ্য বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপঃ

01. সুপরিবাহী তামার তার (copper wire):

  • সর্বাধিক ট্রান্সমিশান loss : 0.5 dB প্রতি মিটার
  • Bandwidth: 300 MHz
  • চ্যানেল capacity: 300 Mbps

ব্যবহারঃ টেলিফোন নেটওয়ার্ক।

সম্প্রতি টেলিফোন নেটওয়ার্কের সাহায্যে digital voice বা ইন্টারনেট ডেটা পরিষেবাও পাওয়া যাচ্ছে। এধরণের টেলিফোন লিংক DSL (Digital Subscriber Line) নামে পরিচিত।

02. Coaxial RF Cable:

  • সর্বাধিক ট্রান্সমিশান loss : 1.5 dB প্রতি মিটার
  • Bandwidth: 20 GHz
  • চ্যানেল capacity: 20 Gbs

ব্যবহারঃ Local Area নেটওয়ার্ক (LAN), Satellite Earth station ইত্যাদি।

03. Waveguide:

  • সর্বাধিক ট্রান্সমিশান loss : 0.5 dB প্রতি মিটার @ Ka-band (22 GHz-33 GHz)
  • Bandwidth: 11 GHz
  • চ্যানেল capacity:11 Gbs

ব্যবহারঃ Local Area নেটওয়ার্ক (LAN), Satellite Earth station ইত্যাদি।

04. অপটিক্যাল ফাইবার Cable (OFC):

  • সর্বাধিক ট্রান্সমিশান  loss : 0.2 dB প্রতি কিলোমিটার
  • Bandwidth: 100 GHz
  • চ্যানেল capacity: 100 Gbps

ব্যবহারঃ High speed ইন্টারনে। 

05. Wireless বা air link:

  • সর্বাধিক ট্রান্সমিশান loss : 112 dB @10 GHz, 90 dB @900 MHz
  • Bandwidth: প্রায় অসীম
  • চ্যানেল capacity: প্রায় অসীম

ব্যবহারঃ Satellite নেটওয়ার্ক, High speed ইন্টারনেট ইত্যাদি।

ক্যাবল

মাধ্যমের ট্রান্সমিশান loss বলতে বোঝায় সেই মাধ্যম নিজে কতটা lossy অর্থাৎ সেই মাধ্যম নিজে কতটা সিগন্যাল পাওয়ার শোষণ করে তারই পরিমাপ। ধরা যাক, কোনো 'কপারের তার' বা অপটিক্যাল ফাইবার cable এর এক প্রান্তে প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে 2 watts সিগন্যাল পাওয়ার দেয়া হলো। সেই সিগন্যাল পাওয়ারের 1 watt, সেই মাধ্যম (তার  বা cable) শোষণ করে নিল, তাহলে বাকি 1 watt, মাধ্যম বা লিংকের অন্য প্রান্তে অবস্থিত গ্রাহক যন্ত্রের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে। অর্থাৎ যে মাধ্যমের Insertion loss যত বেশী, সে ক্ষেত্রে গ্রাহক যন্ত্রের কাছে তত কম পাওয়ার গিয়ে পৌঁছাবে। ফলস্বরূপ, গৃহীত সিগন্যালের কোয়ালিটি অনেক খারাপ হবে।

ক্যাবল

উল্লেখ্য যে, ট্রান্সমিশান loss মাধ্যমের দৈর্ঘের সমানুপাতিক। অর্থাৎ মাধ্যমের দৈর্ঘ যত বেশী, তার Insertion loss তত বেশী।

কাজেই অনেক দূরের কমুনিকেশানের জন্য সেই রকম মাধ্যমের দরকার যার Insertion loss অনেক কম। আবার broadband সার্ভিসের জন্য সেই রকম মাধ্যমের দরকার যার bandwidth তথা bit rate অনেক বেশী। আবার Satellite নেটওয়ার্কের বেলায় যেহেতু গ্রাহক ও প্রেরকের মধ্যে দূরত্ব হাজার হাজার কিলোমিটার, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিচার করলে এখানে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে wireless বা air link.

কাজেই দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন পরিষেবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগ মাধ্যমের দরকার হয়, যার উল্লেখ একটু আগেই করা হয়েছে।

একথা আগেই বলেছি, যে ইন্টারনেট হচ্ছে ছোটো বড় অজস্র কম্পিউটার-নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে তৈরী এক বিশাল নেটওয়ার্ক যা কিনা এক বিশাল মাকড়সার জালের মত গোটা পৃথিবীকে ছেয়ে আছে।

ইন্টারনেট একটা বিশাল বৃক্ষের মত। কতকগুলো পাতা মিলে তৈরী হয় একটা প্রশাখা, অনেকগুলো প্রশাখা মিলে তৈরী হয় শাখা এবং অনেকগুলো শাখা নিয়ে তৈরী হয় এক বিশাল বৃক্ষ। ইন্টারনেটের গঠনটাও অনেকটা সেই রকম- কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রেল- স্টেশন, এয়ারপোর্ট, টুর অপারেটর, ব্যাংক, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তথা কোম্পানী, এমনকি আমার-আপনার বাসস্থান- এদের প্রত্যেকের এক একটা নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকতে পারে। কোনো ক্যাম্পাস বা বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ এরকম একটা ক্ষুদ্র নেটওয়ার্ক কে  Local Area Network (LAN) বলে। 

এরকম কতকগুলো Local Area Network (LAN) মিলে তৈরী হয় Metropolitan Area  Network (MAN) যা কিনা একটা বড় শহরব্যাপী বিস্তৃত। এরকম অজস্র Metropolitan Area  Network (MAN) মিলে তৈরী হয় Wide Area Network (WAN) বা ইন্টারনেট- যা কিনা গোটা পৃথিবীটাকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।

আসলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, যা আমাদের পরিষেবা দেয়, তা এক Client-Server সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। উদাহারণ স্বরূপ- ব্যাংকের কথাই ধরা যাক। এখানে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ও ব্যাঙ্কের অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ Server এর ভূমিকায় এবং ব্যাংকের গ্রাহকবৃন্দ Client এর ভূমিকা পালন করে। এখানে ব্যাংক ও তার গ্রাহকগণ নিয়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরী হয় তা এক Local Area Network (LAN) বিশেষ।

অনুরূপ ভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে প্রতিটি LAN আসলে Client-Server আর্কিটেকচারের আদলে তৈরী, যেখানে একটা মুখ্য কম্পিউটার থাকে এবং নেটওয়ার্ক সুইচের মাধ্যমে তার সাথে যুক্ত থাকে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট কম্পিউটার। এই মূখ্য কম্পিউটারকে Server বলে এবং এই ছোট ছোট কম্পিউটার গুলোকে Clients (বা Client workstations) বলে।

Server আসলে এক ধরনের খুব উন্নতমানের কম্পিউটার এবং এর internal বা external storage ক্ষমতা অনেক বেশী। উল্লেখ্য যে, যে কোনো Local Area Network কে ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে হলে অর্থাৎ বিশাল ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে হলে তাকে দেশের টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে হয়। ইন্টারনেটের সাথে তার এভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য দরকার এক modem cum router যন্ত্র। এর উদাহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে 'সিসকো" বা 'ডি-লিঙ্ক' কোম্পানীর 4G WiFi Wireless router, যার মধ্যে থাকে একটা multi port  switch এবং একটা built-in modem, যা কিনা আমার-আপনার কম্পিউটার, সেল ফোন বা ল্যাপটপকে (যারা কোনো এক Local Area Network এর অংশ) দেশের Internet Service Provider (ISP) কোম্পানী গুলোর নেটওয়ার্কের (টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্ক) সাথে যুক্ত করতে সাহায্য করে।

কোনো দেশের Internet Service Provider (ISP) কোম্পানী গুলো পৃথিবীর  বড় বড় ইন্টারনেট কোম্পানীর ( Google, Amazon,  Yahoo, Microsoft,  Meta Platforms ইত্যাদি) Server বা data centre গুলোর সাথে  মূলত অপটিক্যাল ফাইবার ও স্যাটেলাইট ওয়ারলেস লিংকের সাহায্যে নিজেদের Server গুলো যুক্ত করে রাখে। আমরা যখন Google, Amazon বা Microsoft এর পরিষেবা পেতে চাই, তখন এই ISP কোম্পানী গুলো অনেকটা Zomato বা Swiggy এর ডেলিভারী বয়'দের মত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট পরিষেবা তাদের নিজস্ব কিছু Server এর মারফত আমাদের হাতের মুঠোই পৌঁছে দেয়।

বাংলাদেশে ছয়টি ডাটা সেন্টার রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটিই ঢাকায় অবস্থিত। অপরটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক তিনটি ডাটা সেন্টার রয়েছে ঢাকা কোলো নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়। আর একটি করে ডাটা সেন্টার রয়েছে কোলো সিটি, ডেভো টেক এবং জিওন বিডির।

মনে রাখা দরকার , আমরা যখন সেল ফোনের সাহায্যে ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে চাই, তখন এই সেল ফোনকে আমরা  ইন্টারনেটের সাহায্যে দুভাবে যুক্ত করতে পারি। যথাঃ-

  1. Wireless WiFi Router এর সাহায্যে নিকটতম টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
  2. Wireless বা air লিংকের সাহায্যে সরাসরি নিকটতম সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

এ ধরনের টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্ক গুলো, যারা আমাদের Integrated পরিষেবা, তথা ইন্টারনেট পরিষেবা (যথা, ভয়েস, ভিডিও, ডেটা ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক পরিষেবা) দেয়, তাদের ISDN বা Integrated Services Digital Network বলে।

সেলুলার নেটওয়ার্ক


উল্লেখ্য, এই সব নেটওয়ার্কের যোগাযোগ মাধ্যম গুলো সাধারণত data link নামে পরিচিত, যারা মূলত কপারের তার, অপটিক্যাল ফাইবার ও Wireless link দিয়ে তৈরী।

মোবাইল

সিগন্যালিং স্পীড বা সর্বোচ্চ bit rate এর উপর নির্ভর করে এই data link গুলোর বেশ কিছু প্রকার ভেদ রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো নিম্নরূপঃ

1) 3G data link: 

স্পীডঃ 3 Kbps to 20 Mbps

2) 4G data link: 

স্পীডঃ 1 Mbps to 180 Mbps

3) 5G data link: 

স্পীডঃ 1 Mbps to 250 Mbps

আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে এই সময়ে। ইন্টারনেটের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য, সংবাদ, গবেষণা এবং অনলাইন পাঠ্যমালা অ্যাক্সেস করতে পারেন।

নিম্নলিখিত অংশগুলি শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহারের গুরুত্ব উল্লেখ করেঃ

  •  তথ্য অ্যাক্সেসঃ ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের জন্য অসীম তথ্যের অ্যাক্সেস সরবরাহ করে। বই, সার্চ ইঞ্জিন, ওয়েবসাইট, ভিডিও সামগ্রী, অনলাইন লাইব্রেরি ইত্যাদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
  •  অনলাইন শিক্ষা প্লাটফর্মঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা প্লাটফর্মে যেমন Coursera, Khan Academy, Udemy, edX ইত্যাদি সার্ভিসগুলি শিক্ষার্থীদের একটি বিস্তৃত অবস্থানে শিক্ষার সুযোগ সরবরাহ করে।
  • ব্লগ, পোডকাস্ট এবং ভিডিও টিউটোরিয়ালঃ ইন্টারনেটে অনেক ব্লগ, পোডকাস্ট, এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে স্বজ্ঞতায় অধ্যয়ন করতে পারেন।

  •   অনলাইন পরীক্ষা অ্যাসেসমেন্টঃ ইন্টারনেটে পরীক্ষা অ্যাসেসমেন্টের প্লাটফর্ম মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করা হয়।
  • সহযোগী সামগ্রী এবং সাহায্যঃ শিক্ষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহযোগী সামগ্রী এবং সাহায্য সরবরাহ করতে পারেন যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
  •  বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সামগ্রীঃ ইন্টারনেটে অনেক ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সামগ্রী পাওয়া যায়, যেমন প্রাথমিক, মাঝশ্রেণীবিশেষ, পেশাদার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
  •  গবেষণা সুবিধাঃ শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গবেষণা করতে পারেন এবং নতুন ধারণা এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
  • সাম্প্রতিক তথ্য এবং বৃহৎ বিশ্লেষণঃ ইন্টারনেটে প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক তথ্য এবং বৃহৎ বিশ্লেষণ সরবরাহ করে থাকে।
  • গবেষণা সুবিধাঃ শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গবেষণা করতে পারেন এবং নতুন ধারণা এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
  •  সাম্প্রতিক তথ্য এবং বৃহৎ বিশ্লেষণঃ ইন্টারনেটে প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক তথ্য এবং বৃহৎ বিশ্লেষণ সরবরাহ করে যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে।
  • সাম্প্রতিক প্রযুক্তির ব্যবহারঃ ইন্টারনেট সাম্প্রতিক প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যেমন অনলাইন ল্যাব, সিমুলেশন, এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে সহযোগিতা করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
  • অনলাইন সহায়তা এবং বিশেষজ্ঞ মন্তব্যঃ ইন্টারনেটে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম, সাম্প্রতিক চ্যাট প্রোগ্রাম, এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন সহায়তা এবং বিশেষজ্ঞেরা থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং মন্তব্য পান।
  • সাম্প্রতিক প্রযুক্তির ব্যবহারঃ ইন্টারনেট সাম্প্রতিক প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যেমন অনলাইন ল্যাব, সিমুলেশন, এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে।
  • অনলাইন লাইব্রেরিঃ ইন্টারনেটে অনেক ধরণের পাঠ্যপুস্তক, পত্রিকা, জার্নাল, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা ইন্টারনেটে উপলব্ধ থাকে। এছাড়াও, অনলাইন লাইব্রেরিতে সামগ্রিক তথ্য, ফোরাম, ব্লগ, প্রতিবেদন ইত্যাদি পাওয়া যায়।
  • স্বতন্ত্র অনুশীলনঃ ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরণের অনুশীলন সামগ্রী পাওয়া যায়, যা শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্রভাবে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সময়ে ও পছন্দ মতো প্রত্যাশিত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করে।

ইন্টারনেটের জনক কে?

ইন্টারনেটের জনক Vinton Gray Cerf. ভিন্টন গ্রে "ভিন্ট" সার্ফ ( জন্ম ২৩শে জুন, ১৯৪৩) একজন প্রথিতযশা আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যাকে আধুনিক 'ইন্টারনেটের জনক' বলা হয়ে থাকে।তিনি ন্যাশনাল মডেল অফ টেকনোলজি, টুরিং পুরস্কার এবং ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর সদস্যপদ সহ প্রযুক্তিগত অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

ইন্টারনেট কত সালে আবিষ্কার হয়?

ইন্টারনেটের উদ্ভব প্রায় ১৯৬৯ সালের মধ্যে হয়েছিল যখন লেনার্ডো ডা ভিন্টি এবং তার দল ARPANET নামক প্রকল্পের মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এই নেটওয়ার্ক হল ইন্টারনেটের মৌলিক নামকরণ এবং এর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন স্থানে ডেটা শেয়ার করা। এরপরে, এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাংঘাতিকভাবে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল আরপিএনেটের পরিবর্তে, যা পরে ইন্টারনেট হয়ে গিয়েছে।

তাই, সাধারণত প্রাথমিক ইন্টারনেটের উদ্ভব তারিখ হিসাবে ১৯৬৯ সালকে মনে করা হয়।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল অনেক হতে পারে এবং তা নানা সমস্যা উত্পন্ন করতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ নিম্নলিখিত হতে পারেঃ

  • সময়ের অপচয়ঃ অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে সময়ের অপচয় হতে পারে, যা আপনার কর্মক্ষমতা ও দৈনন্দিন কাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • স্বাস্থ্য সমস্যাঃ একটি গবেষণায়  দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে চোখের সমস্যা, শীতল ব্যথা, মাথায় ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
  • সামাজিক সমস্যাঃ অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে আপনি সমাজের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করতে পারেন, যা আপনাকে অন্যদের থেকে অসংলগ্ন করে ফেলতে পারে।
  • নেগেটিভ ইন্টারনেট ব্যবহারঃ অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে আপনি অনেক সময় নেগেটিভ কন্টেন্টের মুখোমুখি হতে পারেন, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

এই সমস্যাগুলির প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়কে সীমিত রাখা, নির্দিষ্ট অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহার করা, স্বাস্থ্যকর কাজে সময় ব্যয় করা, ও সমাজের সাথে সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url