কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটার কী?

কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যার মাধ্যমে খুব সহজে এবং অল্প সময়ে প্রচুর তথ্য সম্বলিত বড় গাণিতিক (Mathematical) হিসাবসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করা যায়। এতে রয়েছে মেমোরি, নিয়ন্ত্রণ অংশ, গাণিতিক ও যুক্তি গ্রহণ অংশ ও নির্গমন অংশ। এটি সমস্ত ধরনের ডাটাকে নম্বরে রূপান্তরিত করে সমাধান শেষে আবার ডাটায় রূপান্তরিত করে প্রকাশ করে। এটি কোনো টেক্সট, সাউন্ড বা ছবিকে নম্বরে রূপান্তরিত করা ছাড়া শনাক্ত করতে পারে না। এটি ডাটা গ্রহণ করে, পরে বিশ্লেষণ করে এবং ফলাফল প্রকাশ করে। এটি অতি দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করে।

কম্পিউটার

কম্পিউট (Compute) শব্দের অর্থ হচ্ছে গণনা করা এবং কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ হচ্ছে গণনাকারী। সুতরাং অভিধানিক দিক থেকে কম্পিউটার কে আমরা গণনাকারী যন্ত্র হিসাবে অভিহিত করতে পারি। কিন্তু কম্পিউটারের সাহায্যে শুধুমাত্র গণনা নয় এর মাধ্যমে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান অতি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়। এক কথায় কম্পিউটারকে সংজ্ঞায়িত করা অত্যন্ত কঠিন। তারপরও আমরা নিম্নলিখিতভাবে কম্পিউটারকে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।

কম্পিউটার হল বিভিন্ন গাণিতিক ও যুক্তিমূলক সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র। কম্পিউটারের সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি গাণিতিক কাজ অতি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়। তাছাড়াও গাণিতিক যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ অতি দ্রুত ও নির্ভরতার সাথে কম্পিউটার সম্পন্ন করতে পারে। অর্থাৎ কম্পিউটার হল গাণিতিক ও যুক্তিমূলক সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র।

কম্পিউটারের সাথে মানুষের মৌলিক পার্থক্য হল মানুষের মত কম্পিউটারের নিজস্ব কোন বুদ্ধি বা চিন্তা করার ক্ষমতা নেই। মানুষের দেয়া নির্দেশ অনুসারে এই যন্ত্র কাজ করে। কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতি থাকে। কম্পিউটার বিভিন্ন তথ্যকে স্মৃতিতে ধারণ করে রাখে এবং প্রয়োজনে নির্দেশ অনুযায়ী ধারণকৃত তথ্য নির্ভুলভাবে এবং তড়িৎ গতিতে উপস্থাপন করতে পারে।

 সুতরাং আমরা বলতে পারি, কম্পিউটারের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য হল- বিপুল পরিমাণ তথ্য স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রাখা, নির্ভুলভাবে কাজ করা এবং অতি দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করা।

কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

কম্পিউটারে নির্ভুল ফলাফল, দ্রুতগতি, ডাটা সংরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় কর্মক্ষমতা, সহনশীলতা, স্মৃতি বা মেমোরি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

কম্পিউটার দ্রুত গতিসম্পন্ন (High Speed):

কম্পিউটারের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১ মিলিয়ন ডাটা ক্যালকুলেশন করা কোনো ব্যাপার না। Weather রিপোর্টের ক্ষেত্রে মিলিয়ন মিলিয়ন ডাটা প্রোসেস করার দরকার হয়। গ্যাস, ইলেকট্রিক কোম্পানির বিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড় ক্যালকুলেশনের জন্য অতি দ্রুতগতিতে কম্পিউটার কাজ করে থাকে। এটি বৈদ্যুতিক সিগনালের মাধ্যমে কাজ করে যার গতি আলোর গতির চেয়ে সামান্য কম।

নির্ভুল ফল প্রকাশ (Accuracy):

মানুষ ভুল করে কিন্তু কম্পিউটার কখনও ভুল করে না। কিন্তু কম্পিউটারে প্রদান করা তথ্য যদি ভুল থাকে তখন কম্পিউটার ভুল ফলাফল প্রকাশ করে। কম্পিউটারকে যা করতে বলা হবে এটি তাই করে দেখাবে। আমরা নিউজ পেপারে কম্পিউটারের ভুল সম্বন্ধে অনেক তথ্য পেয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে এটি কম্পিউটারের ভুল নয়, যে ব্যক্তি কম্পিউটারে প্রোগ্রাম তৈরি করেছে অথবা তথ্য প্রদান করেছে সেখানে ভুল ছিল। কম্পিউটারের ভুলের এই প্রক্রিয়াকে বলে Garbage In Garbage Out ( GIGO).

ছোট স্থানে অনেক বড় ডাটা সংরক্ষণ (Storage):

সাধারণত অফিস আদালতে কাগজে লেখা ফাইলের প্রচলন রয়েছে। ধরা যাক, ১ কোটি ফাইলের মধ্যে থেকে একটি ফাইল খুঁজে বের করতে হবে। ব্যাপারটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। যদি ফাইলগুলি কম্পিউটারে রাখা হয় তবে সামান্য জায়গাতে রাখা যাবে এবং যে কোনো একটি ফাইলকে মুহূর্তের মধ্যে খুঁজে বের করা যাবে। ৪" × ৬” মাপের একটি হার্ডডিস্কের মধ্যে করে করে রাখা যাবে প্রায় এক লাখ বই এর সফট্ কপি।

শুধু টেক্সট বই নয় বিভিন্ন ধরনের ইমেজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি সবই কম্পিউটারে রাখা যাবে। একটি ২০০ GB হার্ডডিস্কের মধ্যে ২০০x ১০২৪×১০২৪×১০২৪টি অক্ষর বা সেই পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।

দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব (Dilligencey):

কম্পিউটার ক্লান্ত হয় না। কম্পিউটারের কোনো লাঞ্চ ব্রেক বা চা ব্রেক দরকার পরে না। সারাদিন ২৪ ঘণ্টা এমনকি বছরে ৩৬৫ দিনই কম্পিউটার কাজ করতে পারে। কোনো মানুষের পক্ষে এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

অসম্ভবকে সম্ভব করা (Incredibility):

এয়ারলাইন-রেললাইন বুকিং, ক্রেডিট কার্ড বা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার, আবহওয়া বার্তা, মহাকাশ গবেষণা, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার ছাড়া সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়।

স্বয়ংক্রিয়তা (Automation):

সঠিক প্রোগ্রাম এবং ডিভাইস থাকলে প্রদত্ত নির্দেশমতো কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা প্রসেস করতে পারে।

বহুমুখিতা (Versatility):

মাল্টিটাস্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটার একই সাথে অনেকগুলি কাজ করতে পারে এবং একই সাথে বহু ব্যবহারকারী ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে পারে।

যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত (Logical Decision):

যদিও কম্পিউটারের চিন্তাশক্তি বা মস্তিস্ক নেই তবুও উপযুক্ত প্রোগ্রামের মাধ্যমে এটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

কম্পিউটারের ব্যবহারঃ

ঘর থেকে শুরু করে অফিস-আদালত এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার হয় না। অফিসের কাজে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট, শিল্প-কারখানা, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, দোকানপাট, ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, আবহাওয়া অফিস, মহাশূন্য স্টেশন-ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে আজকাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

আবাসস্থলে (At Home):

হোমওয়ার্কের কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। গৃহিণী তার ফ্যামিলি বাজেট কম্পিউটারের মাধ্যমে করতে পারে। এছাড়া ভিডিও গেম খেলা, গান-শোনা, ভিডিও দেখা, টিভি দেখা ইত্যাদি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায়।

ব্যাংকে (In Banks):

ব্যাংকে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্সের হিসাব রাখা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে গ্রাহক যে কোনো সময়, যে কোনো স্থান থেকে লেনদেন করতে পারেন। এছাড়া কর্মচারীদের বেতন, বিভিন্ন প্রকার ভাতা, ওভার টাইম, আয়কর, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদির হিসাব-নিকাশ রাখা হয়।

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে (In Departmental Store):

বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্রয়-বিক্রয়, স্টক, ইনভেনটারিসহ কর্মচারীদের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ রাখা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।

রেলওয়ে ও বিমান বন্দরে (In Railway and Airlines Reservations):

রেলওয়ে ও বিমান বন্দরে রিজার্ভেশনের যাবতীয় কাজ করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। কম্পিউটারের কয়েকটি বাটন প্রেস করে দ্রুত সময়ে কাজটি করা যায়। ম্যানুয়্যাল রিজারভেশন সিস্টেমে এক টিকিট অনেকের কাছে ভুল করে বিক্রি করা হয় কিন্তু কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারে এ সমস্যা থাকে না।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে (In Communication):

এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য আদান-প্রদান করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। টেলিফোনের মাধ্যমে শুধুমাত্র কণ্ঠস্বর আদান-প্রদান করা যায়। কিন্তু কম্পিউটারের মাধ্যমে ভয়েস, পিকচার, মুভি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি সবকিছুই পাঠানো সম্ভব।

মুদ্রণ ও প্রকাশনায় (Printing and Publishing):

কম্পিউটারের সাহায্যে বই, ম্যাগাজিন, নিউজপেপার, সাইন বোর্ড, বিল বোর্ড ইত্যাদি প্রিন্ট করা হয়। যখন কোনো লেখক পাণ্ডুলিপি দিয়ে থাকেন তখন প্রথমেই কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয় পরে বিভিন্ন ধরনের স্টাইল, পিকচার ইত্যাদি সংযোজন করে কাগজে প্রিন্ট করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, কভার ইত্যাদি ডিজাইনও করা হয় এটির মাধ্যমে।

শিক্ষাক্ষেত্রে (In Education):

অফলাইন এবং অনলাইন দুই ধরনের শিক্ষাতেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের কোর্স ম্যাটেরিয়ালস সংরক্ষণ করা হয় কম্পিউটারে। পরে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস রুমে ক্লাস শিক্ষক উপস্থাপন করেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে কিছু গাণিতিক ডায়াগ্রাম সহজে বোঝানো হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে থাকেন কম্পিউটারের মাধ্যমে।

হাসপাতালে (In Hospitals):

হাসপাতালে যে সমস্ত সেনসেটিভ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলিও কম্পিউটারাইজড। এছাড়া রোগীর কেস হিস্ট্রি, ওষুধের স্টক ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।

বিনোদনে (Entertainment):

চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার অনেক বড় ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার গেম, গান, ভিডিও, টিভি দেখা ইত্যাদি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা সম্ভব। এছাড়া ইন্টারনেট চ্যাটিং বিষয়টিও রয়েছে।

গবেষণা ও উন্নয়নে (In Research and Development):

বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

সামরিক ক্ষেত্রে (In Defence):

শক্তিশালী ডিফেন্স যন্ত্রপাতি, অস্ত্র ইত্যাদি এখন কম্পিউটারাইজড। বিভিন্ন ধরনের মিশাইল নিয়ন্ত্রণ করা হয় এটির মাধ্যমে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রও নিয়ন্ত্রণ করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে (In Business and Industry):

বিজনেসম্যান তার ব্যবসার সমস্ত রেকর্ড রাখেন কম্পিউটারে। তার অ্যাকাউন্ট, কর্মচারীদের বেতন, স্টক সংক্রাস্ত হিসাব রাখেন কম্পিউটারে। এছাড়া CAM (Computer Aided Manufacturing)-এর মাধ্যমে কারখানাতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিভিন্ন কাজে কম্পিউটারঃ

কম্পিউটার বিপুল পরিমাণ তথ্যকে তার স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তীতে সেই সমস্ত তথ্যকে নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারে। অতএব বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটারের গুরুত্ব অকল্পনীয়। বর্তমানে আমরা কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসে খুব সহজেই পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে অন্য প্রান্তের যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছি।

পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে না ঘটছে তা কম্পিউটারের বোতাম টিপা মাত্রই মুহুর্তের মধ্যে জানতে পারছি। শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয় ব্যবসা-বানিজ্য, শিল্প-কারখানা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার দিনের পর দিন রেড়েই চলেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা আজকাল অতি সহজেই অনেক জটিল রোগ সনাক্ত করতে পারি যা কিছুদিন পূর্বেও অবাস্তব ছিল।

বিনোদনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। এক কথায় বলা যেতে পারে কম্পিউটারের ব্যবহার বর্তমান যুগে বহুমূখী। বর্তমান বিশ্বে যে জাতির মধ্যে কম্পিউটারের ব্যবহার যত বেশি সে জাতি তত উন্নত।

কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতিঃ

কম্পিউটারের কাজ করার জন্য নিজস্ব কোন বুদ্ধি নাই। কম্পিউটারকে কাজ করার জন্য যে সমস্ত তথ্য দেয়া হয় তা তার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রাখে এবং পরবর্তীতে নির্দেশ অনুযায়ী সেই সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নির্ভূলভাবে উপস্থাপন করে থাকে। যে তথ্য বা ডাটা কাজ করার জন্য আগাম থেকে কম্পিউটারে দেয়া হয় সেই কাজটিকে বলা হয় কম্পিউটারে ইনপুট (Input) দেয়া। ইনপুট দেয়ার পর কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ অংশ বিষয়টি প্রক্রিয়াকরণের পরে যে ফলাফল উপস্থাপন করে তাকে বলে আউটপুট (Output)। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি আলোচনা করা যেতে পারে।

কম্পিউটার
চিত্রঃ কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি।

চিত্রের স্মৃতি অংশ, নিয়ন্ত্রণ অংশ এবং গাণিতিক/যুক্তি অংশ -এই তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত কম্পিউটারের কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ (Central Processing Unit)। একে সংক্ষেপে সিপিইউ (CPU) বলা হয়। এই অংশেই কম্পিউটারের সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশ কম্পিউটারের মস্তিষ্ক স্বরূপ। ইনপুট অংশের মাধ্যমে প্রোগ্রাম বা তথ্যকে কম্পিউটারের সিপিইউতে পাঠানো হয়। ইনপুট অংশটি প্রোগ্রাম বা তথ্যকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরিত করার পর সংরক্ষণের জন্য স্মৃতি অংশে পাঠায়।

গাণিতিক/যুক্তি অংশে প্রক্রিয়াকরণের জন্য গাণিতিক যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ সংগঠিত হয়। এই অংশটি কখন কি ধরনের কাজ করবে নিয়ন্ত্রণ অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়।যেহেতু কম্পিউটার একটি প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র অতএব নিয়ন্ত্রণ অংশ প্রোগ্রামের নির্দেশ সমূহকে একটির পর একটি অনুধাবনের পর নির্বাহ করে। এই অংশ কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের কাজের সমন্বয় সাধন করে। সিপিইউ-তে সমস্ত কাজ প্রক্রিয়াকরণের পর আমাদের জন্য অনুধাবনযোগ্য ফলাফল আউটপুট অংশে উপস্থাপিত হয়।

যে সমস্ত যন্ত্র কম্পিউটারে তথ্য বা ইনপুট দেবার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাদেরকে বলা হয় ইনপুট ডিভাইস (Inpute Device)। যেমনঃ- কী-বোর্ড, মাউস ইত্যাদি। যে সমস্ত যন্ত্রের সাহায্যে কম্পিউটারের কাজের ফলাফল প্রদর্শিত হয় সেই সব যন্ত্রকে বলা হয় আউটপুট ডিভাইস (Output Device)। যেমনঃ- মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি। এই সমস্ত যন্ত্রপাতি ক্যাবল (Cable) বা তারের সাহায্যে কম্পিউটারের সিপিইউ-এর সংঙ্গে যুক্ত থাকে।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটারের বিবর্তন ও বিভিন্ন প্রজন্মঃ

চালর্স ব্যাবেজ নামে একজন ইংরেজ গণিতবিদ ১৮৩০ সালে প্রথম এনালগ কম্পিউটার আবিষ্কার করেন।এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাউয়ার্ড একিন' একটি ম্যাকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেন। পরবর্তীতে ডিজিটাল কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয় যা ম্যাকানিক্যাল কম্পিউটারের থেকে ২০০ গুণ গতিসম্পন্ন এবং সেটি ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে আজকের কম্পিউটার।

লর্ড বায়রনের মেয়ে ‘লেডি এ্যাডা বায়রন’ পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামটি তৈরি করেন। কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে গণনা করার জন্য। কম্পিউটার সৃষ্টির আগে বিভিন্ন বিজ্ঞানী গণনার জন্য বিভিন্ন গণনা যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তারই ফলাফল হিসাবে আজকের উন্নত কম্পিউটার।

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর থেকে ২০০৮-এর মধ্যে কম্পিউটারের ধারাবাহিক অগ্রগতিঃ

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ (500BC): চীনে ABACUS নামে এক ধরনের গণনা যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। এরপর কাছাকাছি একটি যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয় জাপানে এটির নাম Soroban. চিনের ABACUS-এর উপরের দিকে ২টি সারি এবং Soroban এর উপরের দিকে ১টি সারি বিদ্যামান। Soroban এর উপরের সারিকে বলে Heaven এবং নিচের ৪টি সারিকে বলে Earth. এই যন্ত্র এখনও চিন, জাপান ও রাশিয়াতে ব্যবহৃত হয়। এটি যোগ ও বিয়োগ করতে পারে।

কম্পিউটার

1617ঃ- John Napier সৃষ্টি করেন logarithms. এতে মোট নয়টি করে সারিতে গাণিতিক সংখ্যা আড়াআড়ি সাজানো হতো। এটিকে বলা হয় NAPIER'S BONES. এটি গুণ ও ভাগ করতে সক্ষম। এটি ১৭ শতাব্দীর শুরু থেকে ১৯ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে।

1642ঃ- ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ Blaise Pascal আবিষ্কার করেন Pascal's Calculator বা PASCALINE. এটি পৃথিবীর প্রথম ক্যালকুলেটর।

কম্পিউটার

1822ঃ- ব্রিটিশ গণিতবিদ Charles Babbage আবিষ্কার করেন Different Engine. তাকেই কম্পিউটারের জনক বলা হয়।

কম্পিউটার

1842ঃ- Charles Babbage আবারও আবিষ্কার করেন Analytical Engine. এটি ছিল সম্পূর্ণ অটোমেটিক এবং সব ধরনের গাণিতিক কাজে সক্ষম। এটি প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করতে পারতো এবং Instruction মেনে চলতে পারতো। এটিতেই প্রথম 0 এবং 1 বাইনারি সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। Charles Babbage এর বান্ধবী এবং বিখ্যাত কবি Lord Byron এর মেয়ে Lady Ada Augasta Byron এই বাইনারি ইনস্ট্রাকশন এর সূচনা করেন। তাকেই পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয়।

কম্পিউটার

1889ঃ- বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত প্রথম মেশিন হচ্ছে HOLLERITH MACHINE. এটি আবিষ্কার করেন HERMAM HOLLERITH. এটিতে একটি মেশিন ডাটা রেকর্ডিং করতো এবং অন্য মেশিন রেকর্ড করা ডাটা ক্যালকুলেশন করতো। এই মেশিনে নাম্বার এবং Text উভয়ই রিড করতে পারতো। এটিতেই প্রথম PuncheDcard ব্যবহার করা হয়। এটির অপর নাম Tabulating Machine.

কম্পিউটার

1930ঃ- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Howard Aiken ও IBM (International Business Machine) যৌথভাবে প্রথম ইলেকট্রিক্যাল কম্পিউটার আবিষ্কার করেন। এটির নাম ছিল MARK-1. এখান থেকেই শুরু হয় প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার।

কম্পিউটার

1936ঃ- Dr. JOHN ATANASOFF এবং JOHN BERR OY আবারও কম্পিউটারকে উন্নত করেন। তাদের কম্পিউটারের নাম ছিল ABC ( Atanasoff Berry Computer) কম্পিউটার।

কম্পিউটার

1943ঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের কোড ভাঙার জন্য একটি ইলেকট্রিনিক কম্পিউটার আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ALAN TURING COLOSSUS. ১৯৭০ সালের পরে এটির ব্যাপারে জানা যায়।

1943ঃ- J. Presper Eckert এবং John Mauchly আবিষ্কার করেন ENIAC (Electronic Numerical Integrator AnDcalculator) এটিই সাধারণের উদ্দেশ্যে প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। এটির ওজন ছিল 30 টন, এটিতে 18000 ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি 30 থেকে 50 ফুট জায়গা নিত এবং 160 কিলোওয়াট শক্তি লাগতো।

1951ঃ- এখন পর্যায়ক্রমে EDVAC (Electronic Discrete Variable Automatic Computer), EDSAC (Electronic Delay Storage Automatic Computer) এবং UNIVAC (Universal Automatic Computer) বাজারে আসে। এটি বাণিজ্যিক ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার।

1953ঃ- বাণিজ্যিকভাবে প্রথম সফল কম্পিউটার হচ্ছে IBM-650 মডেল। প্রথমে এটি মাত্র 50টি তৈরি করা হলেও পরে আবারও 1000 এর বেশি তৈরি করে বাজারে ছাড়ে IBM কোম্পানি।

1957ঃ- John Backjar আবিষ্কার করেন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ FORTRAN (Formula Translation).

1958ঃ- Jack Kilby আবিষ্কার করেন Integrated circuits (IC). যা কিনা বিদ্যুৎ প্রবাহের গতিপথের এক পরিপূর্ণ রূপ আবিষ্কার হয় এবং বদলে যায় কম্পিউটার প্রজন্মের। কম্পিউটার হয়ে উঠে অধিক গতি ও মেমোরি সম্পন্ন।

1960ঃ- Dr. Grass Hopper আবিষ্কার করেন বিজনেস অ্যাপলিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ COBOL.

1965ঃ- Dr. John Kamony আবিষ্কার করেন উন্নত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ BASIC এবং প্রথম Mini Computer এর আবিষ্কার হয়।

1969ঃ- আবির্ভাব ঘটে অপারেটিং সিস্টেম Linux ও Unix এর।

1971ঃ- Intel Corporation এর Dr. Tade Haff কম্পিউটার চিপ এর উন্নতি সাধান করেন। বাজারে আসে Intel-4004 চিপ। পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর এটি। এটি ছিল একটি চার বিটের মাইক্রোপ্রসেসর। শুরু হয় মাইক্রো কম্পিউটারের পথচলা।

1975ঃ- ইথারনেটের মাধ্যমে প্রথম LAN (Local Area Network) চালু হয়।

1976ঃ- Stiff Jobs এবং Stiff Oiesniak প্রথম Apple কম্পিউটার বাজারে আনেন।

1978ঃ- বাজারে আসে ইন্টেল উদ্ভাবিত 8086 মাইক্রোপ্রসেসর। এটি ছিল একটি আট বিটের মাইক্রোপ্রসেসর।

1979ঃ- VISICALC- নামে প্রথম স্প্রেডশীট প্রোগ্রাম বাজারে আনেন- Bob Frankstune এবং Dan Bricklin.

1980ঃ- Ms-Dos এর সাফল্য পান Bill Gets. IBM ও Microsoft একসাথে কাজ করে ছিলেন।

1981ঃ- IBM PC প্রথম বাজারে আসে।

1982ঃ- বাজারে COMPAQ কোম্পানি PC নিয়ে প্রবেশ করেন।

1983ঃ- বাজারে আসে স্প্রেডশীট LOTUS-123.

1984ঃ- Hewlet Packared (HP) প্রথম বাজারে লেজার প্রিন্টার আনেন।

1987ঃ- উন্নত প্রযুক্তির 80386 প্রসেসর বাজারে আসে।

কম্পিউটার

1988ঃ- ইন্টেল বাজারে অধিক শক্তির প্রসেসর 486 (80486) বাজারে আনেন।

1992ঃ- মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজ 3.1 বাজারে আসে।

1993ঃ- Mark Enderson একটি গ্রাফিক্যাল ওয়েব ব্রাউজার Mosaic আবিষ্কার করেন। তিনি Netscape Communications Corporation এর সাথে যুক্ত হন।

1994ঃ- Mark Enderson এবং Jim Clark আবিষ্কার করেন Netscape Navigator 1.0.

1995ঃ- বাজারে আসে পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম Windows 95.

1997ঃ- মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এক্সপোরার ইন্টারনেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। Pentium II প্রসেসর আবিষ্কার হয়।

1998ঃ- মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজ ৯৮ বাজারে আসে। ইন্টরনেটের জন্য আসে নতুন হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার।

1999ঃ- ইন্টেল বাজারে আনে Pentium III প্রসেসর। মাইক্রোসফ্ট আনে Office 2000.

2000ঃ- বাজারে আসে উইন্ডোজ 2000 অপারেটিং সিস্টেম। 1.4GH2 গতির প্রেন্টিয়াম-4 মেশিন এবং Windows ME নামে আরেকটি ভার্সন।

2001ঃ- উইন্ডোজ XP-র আবিষ্কার হয়। বাজারে আসে e-books.

2002ঃ- Microsoft.net বাজারে আসে। DVD রাইটারও বাজারে আসে।

2003ঃ- WiFi (Wireless fidelity) এবং Bluetooth বাজারে আসে । PC-র সাথে যুক্ত হয় Mobile Phone.

2004ঃ- LCD মনিটর অ্যাপলের iMac G-5, iPod বাজারে আসে।

কম্পিউটার

2005ঃ- অ্যাপল i-Pod বাজারে আসে।

কম্পিউটার

2006ঃ- বাজারে আসে সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম Windows Vista.

2010ঃ- বাজরে আসে Office -2010 এবং core to due, Duel Core ও Quad core মাইক্রো প্রোসেসর।

2015ঃ- বাজরে আসে Office 2013 এবং Windows 10.

কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্মঃ

নিচে কম্পিউটার এর বিভিন্ন প্রজন্ম বা জেনারেশন সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ-

প্রথম প্রজন্ম বা জেনারেশনঃ

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো হলো সর্ব প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার। ১৯৪৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লী ডি ফরেস্ট ট্রায়োড ভাল্ব আবিষ্কার করেন। ১৯৪৬ সালে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন মশলি ও প্রেসপার একার্ট যৌথভাবে বৃহদাকার ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করেন। তাঁরা কম্পিউটারটির নাম দেন ‘এনিয়াক’ (ENIAC) আর এনিয়াক হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার।

এই কম্পিউটারে ১৯ হাজার ডায়োড ও ট্রায়োড ভাল্ব, ৭০ হাজার রেজিস্টার, ৬০ হাজার সুইচ, ১০ হাজার ক্যাপাসিটার ছিল। তিন টন বিশিষ্ট এই কম্পিউটার চালানোর জন্য প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ শক্তি ব্যয়িত হতো ১৫০ কিলোওয়াট। এটি দ্বারা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ যোগ অথবা ৩৫০ টি গুণ করা যেত। এটি দশমিক পদ্ধতিতে কাজ করত।

কম্পিউটার

বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, জন মশলি ও প্রেসপার একার্ট ১৯৪৬ সালে একটি কোম্পানি গঠন করে ১৯৫১ সালে প্রথম ইউনিভ্যাক (UNIVAC-1) কম্পিউটার তৈরি করেন। এই ইউনিভ্যাকই ছিল প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। ১৯৫২ সালে IBM কোম্পানি IBM-650, 701 কম্পিউটার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি ও বাজারজাত করেন।

কম্পিউটার

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

১। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার দশমিক পদ্ধতিতে কাজ করত।

২। এটি বৃহদাকার ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ছিল।

৩। এটিতে ডায়োড ও ট্রায়োড ভাল্ব ব্যবহৃত হতো।

৪। এটি দ্বারা প্রতি সেকেন্ড ৫০০০ যোগ বা ৩৫০ টি গুণ করা যেতো।

৫। এটিতে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি ব্যয়িত হতো।

৬। এটি বসাতে দৈর্ঘ্যে ৯ মিটার এবং প্রস্থে ১৫ মিটারের জায়গার প্রয়োজন হতো।

৭। এটি কাজের সময় খুব গরম হতো।

৮। মাঝে মাঝে পানি ঢেলে এটিকে ঠান্ডা করার প্রয়োজন হতো।

৯। এটি সীমিত তথ্য ধারণ করতে পারত।

১০। এটি কম নির্ভর যোগ্যতাসম্পন্ন একটি যন্ত্র।

১১। পাগ বোর্ড দিয়ে প্রোগ্রাম চালনা করা হতো।

১২। এটি নাড়াচাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণ করা বড় সমস্যার বিষয় ছিল।

উদাহরণঃ UNIVAC-1, IBM-701, IBM-650, IBM-704, IBM-709

দ্বিতীয় প্রজন্ম বা জেনারেশনঃ

১৯৪৭ সালে জন বারডিন, উইলিয়াম শকলে এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন ট্রানজিস্টর (Transistor) আবিষ্কার করেন। ভ্যাকুয়াম টিউবের চেয়ে ট্রানজিস্টর আকারে অনেকগুণ ছোট। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার কম্পিউটারের ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তন এনে দেয়। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার হওয়ার পরে কম্পিউটরেও এর ব্যবহার ঘটতে আরম্ভ হয়।

ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত কম্পিউটার গুলো দ্বিতীয় প্রজন্মের (Second generation) কম্পিউটার।১৯৫২ থেকে ১৯৬৪ এ সময়কালকে দ্বিতীয় প্রজন্মের সময়কাল ধরা হয়। ট্রানজিস্টর আকারে অনেক ছোট হওয়াতে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে আকারে ছোট হয়ে আসে।

কম্পিউটার

হাইলেভেল ভাষার ব্যবহার শুরু হয় এই প্রজন্মে। এ থেকে FORTRAN, COBOL ভাষার প্রচলন শুরু হয়।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

১। এটি আকারে ছোট।

২। ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত হয়।

৩। এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয় এবং সময়ও কম লাগে।

৪। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটরের তুলনায় এটি দামে সস্তা।

৫। এটি দ্রুতগতিসম্পন্ন।

৬। তাপ সমস্যার অবসান, গতি ও নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।

৭। আভ্যন্তরীণ স্মৃতি হিসাবে চুম্বকীয় কোরের ব্যবহার।

৮। FORTRAN, COBOL ভাষার প্রচলন শুরু।

উদাহারণঃ IBM-1400 1401, IBM-1600,1620, RCA-501, NCR-300, GE-200 ইত্যাদি।

তৃতীয় প্রজন্ম বা জেনারেশনঃ

ট্রানজিসটারের পরে এল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ( সংক্ষেপে আই সি-IC)। এই সার্কিটকে একটি সূক্ষ্ম সার্কিট বলা যায়। ১৯৬৩ সালের পর Integrated Circuit (IC) আবিষ্কৃত হয়। অনেকগুলো ডায়োড ও ট্রানজিস্টর এর মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ দিয়ে যে সার্কিট (Circuit ) তৈরি করা হয় তাকে IC বলা হয়। উক্ত IC দিয়ে তৈরি কম্পিউটারকে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে।

এটি আকারে ছোট, দ্রুতগতিতে কাজ করা যায় এবং সময়ও লাগে কম। একটি আই সি চিপ প্রস্থে ৬ মিলিমিটার, দৈর্ঘ্যে ১৮ মিলিমিটার এবং উচ্চতায় ২ থেকে ৩ মিলিমিটার। এর সময়কাল ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত।

কম্পিউটার

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

১। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়।

২। এটি কম দামে ক্রয় করা যায়।

৩। এটি আকারে ছোট।

৪। এটি সহজে বহন করা যায়।

৫। এতে বিদ্যুৎশক্তি কম খরচ হয়।

৬। অর্ধপরিবাহী স্মৃতির উদ্ভব ও বিকাশ।

৭। উন্নত কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতা।

৮। বিভিন্ন ধরনের স্মৃতি ব্যবস্থার প্রচলন। যেমনঃ Magnatic tape, hard disk drive, floppy disk drive ইত্যাদির উদ্ভাবন।

৯। বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং করার ব্যবস্থা।

১০। আউটপুট হিসাবে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার।

১১। অত্যধিক কর্ম ক্ষমতা।

১২। উচ্চতর ভাষার বহুল ব্যবহার।

উদাহরণ: IBM-370, PDP-8, IBM-360, IBM-350, GE-600 ইত্যাদি।

চতুর্থ প্রজন্ম বা জেনারেশনঃ

কম্পিউটার

বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে আইসি তৈরির ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হতে থাকে। প্রথম দিকে খুব অল্প সংখ্যক যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে আই সি তৈরি হতো। একে Large Scale Integration ( LSI) এরং Very Large Scale Integration (VLSI) এ উন্নয়ন করা হয়। এ জাতীয় কম্পিউটারকে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। এতে লক্ষাধিক ট্রানজিস্টর সংযুক্ত থাকে। আইসি-এর দ্রুত উন্নয়নের ফলে কম্পিউটারের পুরো কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে একটি আইসি চিপ আকারে রাখা সম্ভব হয়।

এই চিপকেই মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয়। এই মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি হয় ১৯৭১ সালে। ফলে মাইক্রো কম্পিউটার ওই সময়ের কিছু পরেই বাজারে দেখা যায়। এই মাইক্রোপ্রসেসর একটি ছোট সিলিকন পদার্থের চিপে তৈরি। এটি আকারে ৫ বর্গ মিলিমিটার এবং বেধ ১ মিলিমিটার। একটি চিপে কম্পিউটারের কয়েকটি অংশ সমন্বিত। ১৯৬৯ সালে ইনটেল কোম্পানি ৪০০০ নামে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করেন।

১৯৭১ সালে ইনটেল আরও শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল ৪০০৪ তৈরি করেন। এর পর তাঁরা তৈরি করেন ৮০০৮ প্রসেসর। এই ইনটেল ১৯৭৪ সালে ৮০৮০ মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে কম্পিউটারকে মানুষের দ্বারপ্রান্তে এনে দেয়। মাইক্রোপ্রসেসর শিল্পে বর্তমানে চলছে গতির লড়াই।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

১। আকারে ছোট বিধায় সহজে বহনযোগ্য।

২। বিদ্যুৎ শক্তি কম খরচ হয়।

৩। এটি ব্যাটারি দিয়েও চালানো যায়।

৪। উন্নত ধরনের স্মৃতি ব্যবস্থার উদ্ভব।

৫। বৃহৎ ও অতি বৃহৎ মানের আইসি (LSI, VLSI) এর ব্যবহার।

৬। বাইট ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি।

৭। নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।

৮। প্রক্রিয়াকরণের গতি বৃদ্ধি।

৯। মাইক্রোপ্রসেসরের প্রচলন।

১০। উন্নত ধরনের High Level প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উদ্ভব।

উদহরণঃ IBM-3033, HP-3000, IBM-4341, TRS-80, IBM-PC ইত্যাদি।

পঞ্চম প্রজন্ম বা জেনারেশনঃ

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার হবে কৃত্রিম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার ক্ষমতা সম্পন্ন। এজন্য কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের উপর গবেষণা চলছে। ১৯৮১ সালে জাপানে ১৪টি দেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানীগণ পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উপর এক সম্মেলন আয়োজন করেন। বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করেন কীভাবে কম্পিউটারের বুদ্ধি দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

একে বলে কৃত্রিম বুদ্ধি। কৃত্রিম বুদ্ধি থাকার জন্য পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের চিন্তাভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকবে। নতুন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তা এরা নিজেরাই বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করে নেবে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী অচিরেই এ ধরনের কম্পিউটার তৈরি হবে। এই কম্পিউটারে মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতাও থাকবে।

মানুষের কণ্ঠে দেওয়া নির্দেশ অনুধাবন করে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার কাজ করতে পারবে। আর পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের কাজের গতি, স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা যে বিস্ময়কররূপে বৃদ্ধি পাবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

১। কৃত্রিম বুদ্ধি থাকার কারণে যে কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকবে।

২। তথ্য ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।

৩। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ করার ক্ষমতা থাকবে।

৪। অধিক শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর থাকবে।

৫। মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতা থাকবে।

৬। মানুষের কণ্ঠস্বর অনুধাবন করে কাজ করার ক্ষমতা থাকবে।

৭। স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পাবে।

৮। চৌম্বক কোর স্মৃতির ব্যবহার থাকতে পারে।

৯। বিপুল শক্তিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন ঘটবে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি

আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?

বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ সর্ব প্রথম যান্ত্রিক উপায়ের মাধ্যমে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার জন্য চিন্তা করেন একটি যন্ত্র আবিষ্কারের বিষয়ে। পরবর্তীতে চার্লজ ব্যাবেজ তার কল্পিত যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন।

কম্পিউটারের জনক কে?

কম্পিউটারের আবিষ্কার একজন প্রসিদ্ধ Mathematics professor দ্বারা করা হয়েছিল যার নাম ছিল, “Charles Babbage“. আর তাই, এনাকেই বলা হয় কম্পিউটারের জনক।

কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে?

কম্পিউটার আবিষ্কার করেন হাওয়ার্ড এইকিন।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

কার্যনীতি, আকার ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।

কম্পিউটার

এনালগ কম্পিউটারঃ

Analog Computer কাজ করে পরিমাপন (Measuring) পদ্ধতিতে। যেমনঃ- বিদ্যুতের তারের ভোল্টেজের ওঠা-নামা, কোনো পাইপের ভেতরের বাতাস বা তরল পদার্থের চাপ কম বেশি হওয়া, বাতাসের প্রবাহ ও চাপ পরিবর্তিত হওয়া ইত্যাদি পরিমাপনের ভিত্তিতে এনালগ কম্পিউটার কাজ করে।

ডিজিটাল কম্পিউটারঃ

Digital Computer কাজ করে প্রতীকী সংখ্যার মাধ্যমে প্রাপ্ত Instruction এর মাধ্যমে। বাইনারি কোড অর্থাৎ ভোল্টেজের উপস্থিতি শনাক্ত করে এর মাধ্যমে কাজ করে। কাজের ক্ষমতা এবং আকারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার প্রধানত ৪ ভাগে বিভক্ত। যেমনঃ-

মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer):

মাইক্রো কম্পিউটার হচ্ছে ছোট আকারের কম্পিউটার। একজন ব্যক্তি একটি মাত্র কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন। অফিস-আদালত, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রয়োজন ইত্যাদি সব ধরনের কাজে মাইক্রো কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা হর-হামেশা যে কম্পিউটার ব্যবহার করছি এগুলিকেই Micro Computer বলে।

পেন্টিয়াম-১ থেকে পেন্টিয়াম-৪ পর্যন্ত, বর্তমানের জনপ্রিয় IBM কম্পিউটার বা অ্যাপেল ম্যাকিনটোস-এর ম্যাক পাওয়ার পিসি বা G-5 মডেল হচ্ছে জনপ্রিয় মাইক্রোকম্পিউটার। একে পার্সোনাল কম্পিউটার (PC) বা বিজনেস কম্পিউটার (BC)ও বলা হয়। সাধারণত দুই ধরনের পার্সোনাল কম্পিউটার পাওয়া যায়। একটির নাম ডেস্কটপ (Desktop) এবং অন্যটির নাম পোর্টেবল (Portable)।

ডেস্কটপ টেবিলে রাখা হয় এবং স্থানান্তর যোগ্য নহে। যদি কয়েকটি ডেস্কটপ কম্পিউটার দিয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়, তবে প্রধান কম্পিউটারটিকে সার্ভার বা ডোমেইন বলে এবং অন্যগুলিকে ওয়ার্কস্টেশন বলে। পোর্টেবল (Protable) আবার তিন ধরনের।

আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ল্যাপটপ (Laptop):

এটাচি কেসের মতো দেখতে এবং সাত থেকে বার  কিলোগ্রাম ওজন হয়ে থাক। এটা ডেস্কটপের মতোই কাজ করে।

নোটবুক (Notebooks):

এটা দেখতে নোটবুকের মত এবং তিন থেকে চার কিলোগ্রাম ওজন হয়ে থাকে।

পামটপ (Palmtop):

এটি দেখতে পকেট ক্যালকুলেটরের মতো।

মিনি কম্পিউটার (Mini Computer):

মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে মিনি কম্পিউটারের কাজের ক্ষমতা ও কাজের গতি অপেক্ষাকৃত কম।মেইনফ্রেম কম্পিউটার ও মিনি কম্পিউটারের মধ্যে কাজের ধরন ও প্রক্রিয়াগত দিক থেকে কোনো পার্থক্য নাই। উদাহরণ: IBM S/34, IBM S/36, PDP 11, NCR S/9290 ইত্যাদি।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer):

সুপার কম্পিউটারের চেয়ে তুলনামূলক কম শক্তিশালী কম্পিউটার হলো মেইনফ্রেম কম্পিউটার। অফিস-আদালত, বড় বড় শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ও জটিল তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। উদাহরণঃ IBM 4300, UNIVAC 1100, CYBER 170 ইত্যাদি।

 আরও পড়ুনঃ হার্ড ডিস্ক পার্টিশন কি? হার্ডডিস্ক পার্টিশন করার সহজ পদ্ধতি জানুন

সুপার কম্পিউটার (Super Computer):

সুপার কম্পিউটার হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী, ব্যয়বহুল এবং সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটার । ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসব কম্পিউটার ব্যবহার হয় না, কেবল সরকারি বা খুব বড় ধরনের প্রতিষ্ঠানে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই সুপার কম্পিউটার নেই। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), আগারগাঁও, ঢাকাতে একটি সুপার কম্পিউটার রয়েছে। উদাহরণঃ আমেরিকায়-CYBER-205, জাপানের নিপ্পন কোম্পানির-SuperSXII.

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার মেমোরি কি? কম্পিউটার মেমোরি কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

হাইব্রিড কম্পিউটার (HybriD Computer):

এটা মূলত Digtal ও Analog কম্পিউটারের কাজের প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়। এতে ডেটা গ্রহণ করে এনালগ প্রক্রিয়ার এবং প্রসেসের জন্য সংখ্যায় রূপান্তরিত করে ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতাল, ক্ষেপণাস্ত্র, নভোযান, আবহাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

কম্পিউটার ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে বা নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে। একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

যেমনঃ কোন ব্যবহারকারী ভাইরাসটিকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারে বা কোন বহনযোগ্য মাধ্যম যথা ফ্লপি ডিস্ক, হার্ড ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়াও ভাইরাসসমূহ কোন নেটওয়ার্ক ফাইল সিস্টেম কে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে অন্যান্য কম্পিউটার যা ঐ সিস্টেমটি ব্যবহার করে সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে।

ভাইরাসকে কখনো কম্পিউটার ওয়ার্ম ও ট্রোজান হর্সেস এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। ট্রোজান হর্স হল একটি ফাইল যা এক্সিকিউটেড হবার আগ পর্যন্ত ক্ষতিহীন থাকে।

আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক  হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যাতে দুই বা ততোধিক কম্পিউটার একসাথে যুক্ত থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা ফাইল, প্রিন্টার ও অন্যান্য সবকিছু ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারেন, একে অপরের কাছে বার্তা পাঠাতে পারেন এবং এক কম্পিউটারে বসে অন্য কম্পিউটারে প্রোগ্রাম চালাতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url