কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত একাধিক কম্পিউটার যখন আন্ত:সংযোগের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে তখন সম্পূর্ণ সিস্টেমকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা হয়। তামার তার, অপটিক্যাল ফাইবার, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি আন্ত:সংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব মাধ্যম দিয়ে তথ্য এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সঞ্চালিত হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত প্রতিটি কম্পিউটারই একটি স্বতন্ত্র কম্পিউটার হিসেবে কাজ করতে পারে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর ভূমিকাঃ

বিভিন্ন কম্পিউটার কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা একসঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধা হলো অনেক কম্পিউটার পরস্পর যুক্ত থাকায় দু-একটি খারাপ হয়ে গেলেও সব কাজ বন্ধ হয়ে যায় না, অন্য কম্পিউটার দিয়ে সে কাজ সম্পূর্ণ করা যায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বাধুনিক বিকাশ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে প্রসারিত করা। নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান নিজেদের কাজের সুবিধার জন্য নিজস্ব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।

যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলো একটা নেটওয়ার্ক দ্বারা যুক্ত থাকলে তাদের প্রত্যেকে অন্যদের গবেষণালব্ধ ফলগুলো মুহুর্তের মধ্যে জেনে যেতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার পরিধি অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা কেন্দ্রেই নয়, এখন বিভিন্ন কোম্পানি, সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গৃহসমবায়সমূহ এবং অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে তারা সুফলও পাচ্ছে।

এসব ছোট ছোট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করেই বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। যেমন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক লক্ষ লক্ষ হোস্ট কম্পিউটার-এর মাধ্যমে কয়েক মিলিয়ন ব্যক্তির মধ্যে সংযোগ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।

সারসংক্ষেপঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে বুঝায় দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ। ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সর্বপ্রথম নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করে। সেই থেকেই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের জয়যাত্রা শুরু। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ, তথ্যের আদান প্রদান, ই- কমার্স, ই-মেইল, ই-লাইব্রেরি, টেলিকনফারেন্স, বুলেটিন বোর্ড ইত্যাদির প্রচলন ও প্রসার ক্রমেই বেড়েই চলেছে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধারণাঃ

কম্পিউটার নেটওয়ার্কঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে বুঝায় দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ। যে বিশেষ ব্যবস্থায় মডেম, ক্যাবল বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য এক বা একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তাদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করাই হলো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ।

চিত্রঃ একটি সাধারণ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে একটি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য একাধিক ব্যবহারকারীর স্ব স্ব কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ, তথ্যের আদান প্রদান, ই-কমার্স, ইলেক্ট্রনিক মেইল, ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি, বুলেটিন বোর্ড ইত্যাদির প্রচলন ও প্রসার ক্রমেই বেড়েই চলেছে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্যঃ

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপঃ

১। ফাইল বা তথ্যের আদান প্রদান করা।

২। হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ার করা।

৩। সফটওয়্যার রিসোর্স শোয়ার করা।

৪। তথ্য সংরক্ষণ করা।

৫। ই-কমার্স ব্যবহার করা।

৬। তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা।

৭। মেসেজ বা ই-মেইল আদান প্রদান করা ইত্যাদি।

নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহঃ

নিচে নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা দেওয়া হলোঃ-

নেটওয়ার্কের সুবিধাঃ

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধাগুলো নিম্নরূপঃ

১। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে খুব সহজে বিশ্বের একস্থান হতে অন্য স্থানে ডাটা ও সংবাদ পাঠানো যায়।

২। এতে সময়ের অপচয় কম হয় এবং খরচও কম লাগে।

৩। ঘরে বসে ক্রেতা কেনা কাটা করতে পারে।

৪। ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে বুলেটিন বোর্ড গঠন করা যায়।

৫। ই-মেইল প্রেরণ ও গ্রহণ কর যায়।

৬। প্রয়োজনে তথ্যসমূহ সংরক্ষণ করে রাখা যায় এবং সময়মত গ্রাহকের নিকট পাঠানো যায়।

৭। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে ঘরে বসে দূর দূরান্তের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা যায়।

৮। ছাত্র-ছাত্রী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়েই যে কোন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছ থেকে যে কোন সমস্যার সমাধান নিতে পারে।

এক কথায় নেটওয়ার্ক ও এর অবদান আমাদের কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনন্য গতিশীলতা এনে দিয়েছে।

নেটওয়ার্কের অসুবিধাঃ

নেটওয়ার্কের অনেক সফলতার মাঝে দু একটি অসুবিধা রয়েছে। যেমনঃ-

১। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ানোর আশাংকা থাকে।

২। অনেক সময় দক্ষ হ্যাকাররা ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাক করছে।

৩। অপ্রাপ্ত বয়স্করা অনেক অশ্লীল ওয়েব সাইট পরিদর্শন করে, ফলে তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

৪। নেটওয়ার্কের অসুবিধার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর প্রকারভেদঃ

নেটওয়ার্কের প্রকারভেদঃ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। এজন্য বিশ্বে ব্যবহৃত কম্পিউটার
নেটওয়ার্কগুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিমোক্ত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১। মালিকানা অনুসারে নেটওয়ার্কের শ্রেণিবিভাগ
২। সার্ভিস প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অনুসারে নেটওয়ার্কের শ্রেণিবিভাগ ও
৩। ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে নেটওয়ার্কের শ্রেণিবিভাগ

মালিকানা অনুসারে নেটওয়ার্কের শ্রেণিবিভাগঃ

মালিকানা অনুযায়ী কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দুই ধরনের। যথাঃ-
ক. প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ও
খ. পাবলিক নেটওয়ার্ক।

প্রাইভেট নেটওয়ার্কঃ

এই ধরনের নেটওয়ার্ক সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়। অন্য যে কেউ চাইলেই এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে না। এই ধরনের নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি অনেক ভালো হয়। সাধারণত এ ধরনের নেটওয়ার্কে ডাটা ট্রান্সমিশনের গতি অনেক ভালো হয়।

পাবলিক নেটওয়ার্কঃ

এই ধরনের নেটওয়ার্ক সাধারণত ব্যক্তির মালিকানাধীন হয় না। তবে এটি কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্য যে কেউ চাইলেই এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে। এজন্য ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করতে হয়। যেমনঃ- টেলিফোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম।

ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদঃ

ভৌগোলিক বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্কসমূহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
১। পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা প্যান (Personal Area Network-PAN)
২। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান (Local Area Network-LAN)
৩। মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ম্যান (Metropolitan Area Network-MAN)
৪। ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ওয়্যান (Wide Area Network-WAN)

পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্কঃ

PAN এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Personal Area Network । কোন ব্যক্তির নিকটবর্তী ব্যক্তিগত ডিভাইসগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান প্রদানের নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা
প্যান বলে। তবে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো ব্যক্তিগত নাও হতে পারে।

প্যান এর বিস্তৃতি সাধারণত কয়েক মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্যান USB Bus এবং Fireware Bus দ্বারা সংযুক্ত হতে পারে। প্যানে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিভাইস হচ্ছে- ল্যাপটপ, পিডিএ, মোবাইল, প্রিন্টার ইত্যাদি।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কঃ

LAN এর পূর্ণনাম হচ্ছে Local Area Network। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ক্যাবল এর মাধ্যমে এক কম্পিউটার এর সাথে অন্যান্য কম্পিউটার এর যে যোগাযোগ তাকে ল্যান বলে। একই ভবনের
বিভিন্ন তলায়, পাশাপাশি ভবনের বিভিন্ন তলায়, স্কুল কলেজ, অফিস আদালত, ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারগুলির সংযোগের ফলে যে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তার নামই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক। ১ কিলোমিটারের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক ভাল কাজ করে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় কমিনিউকেশন
মিডিয়া হিসাবে সাধারণত ক্যাবল ব্যবহার হয়।

সাধারণত সীমিত এলাকার মধ্যে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। তবে ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলে ভাল হয়। একটি ক্ষুদ্র স্থানের মধ্যে যেমন- একটি রুম বা একটি বিল্ডিং এর কয়েকটি রুম অথবা কয়েকটি বিল্ডিংয়ে অবস্থিত কম্পিউটারসমূহের মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধনের জন্য নেটওয়ার্ক বা সংযোগ গড়ে তোলা হয় তাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কম্পিউটারসমূহ ডিজিটাল ডাটা আদান প্রদান করতে পারে।

এ ধরনের নেটওয়ার্কে ‘ফাইল সার্ভার’, ‘প্রিন্ট সার্ভার’, ‘কমিউনিকেশন সার্ভার’ থাকে। ছোট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থানে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়।

চিত্রঃ লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে সাধারণত নিম্নলিখিত চার ধরনের সংযোগ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।যথাঃ-

১। স্টার টপোলজি (Star Topology)

২। রিং টপোলজি (Ring Topology)

৩। বাস টপোলজি (Bus Topology )

৪। ট্রি টপোলজি (Tree Topology )

স্টার টপোলজিঃ

স্টার টপোলজি বা স্টার সংগঠনে কম্পিউটারসমূহ একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি কম্পিউটার কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মাধ্যমে অন্য কম্পিউটারে সংকেত পাঠাতে পারে। কেন্দ্রীয় কম্পিউটারটি এক্ষেত্রে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় কম্পিউটারটি নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কটি বিকল হয়ে পড়ে, কিন্তু কোন কম্পিউটার বিকল হলেও নেটওয়ার্কের অন্য অংশের কাজে অসুবিধা হয় না।

রিং টপোলজিঃ

রিং টপোলজি বা রিং সংগঠনে কম্পিউটারসমূহ নোডের মাধ্যমে পরিবহন বাসে বৃত্তাকারে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। কোন কম্পিউটার সংকেত পাঠালে তা পরবর্তী কম্পিউটার গ্রহণ করে এবং পরবর্তী নোডের দিকে প্রবাহিত করে। এভাবে তথ্যের একমুখী প্রবাহ বৃত্তাকার পথে হয়ে থাকে।

বাস টপোলজিঃ

বাস টপোলজি বা বাস সংগঠনে কম্পিউটারগুলো নোডের মাধ্যমে একটি বাস বা সাধারণ পরিবহন মাধ্যমের সাথে সংযুক্ত থাকে। বাসের মাধ্যমে একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারে সংকেত পাঠাতে পারে। প্রতিটি কম্পিউটারের আলাদাভাবে নোডের মাধ্যমে বাসের সাথে যুক্ত থাকে বলে নেটওয়ার্কে তথ্য পরিবহনে কোন ব্যঘাত সৃষ্টি করে না। নেটওয়ার্কের একটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে তাকে সহজেই নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব।

ট্রি টপোলজিঃ

ট্রি টপোলজি বা ট্রি সংগঠনে কম্পিউটারগুলো সরাসরি কেন্দ্রিয় কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে না। বরং কম্পিউটারসমূহ গাছের ন্যায় শাখা-প্রশাখায় বিন্যস্ত থাকে। কম্পিউটারসমূহ উচ্চগতি সম্পন্ন সংযোগ পথ দ্বারা যুক্ত করা হয়।

মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্কঃ

MAN এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Warehouse
Metropoliton Area Network। একটি শহরে বিভিন্ন স্থানের কম্পিউটারের মধ্যে যে সংযোগ তাকে MAN বলে। এই ধরনের নেটওয়ার্কের জন্য মিডিয়া হিসাবে টেলিফোন লাইন, মডেম ও আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। সাধারণত কোন ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা অফিসের মধ্যে যোগাযোগ এর জন্য এই ধরনের নেটওয়ার্ক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক ভাল কাজ করে।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের চেয়ে কিছুটা বৃহৎ ভৌগলিক অঞ্চল জুড়ে যে নেটওয়ার্ক থাকে তাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। কয়েকটি বিল্ডিং থেকে শুরু করে একটি শহরে অবস্থিত বিভিন্ন কম্পিউটারসমূহের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক বা সংযোগ গড়ে ওঠে তা মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্কের অন্তর্গত। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের তুলনায় এ ধরনের নেটওয়ার্কে তথ্য পরিবহনে ভুলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়।


চিত্রঃ মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক।

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কঃ

WAN এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Wide Area
Network। এই ধরনের নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলো বিশাল জায়গা জুড়ে যেমন-একই দেশের বিভিন্ন শহরের এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এ ধরনের নেটওয়ার্কে একাধিক LAN, MAN সংযুক্ত থাকতে পারে। WAN কে ইন্টারনেট বলা হয়। এই ধরনের নেটওয়ার্কে টেলিফোন, স্যাটেলাইট, মাইক্রোওয়েভ, মডেম, বেতার তরঙ্গ ও আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। তথ্য আদান-প্রদানের জন্যে এই ধরনের নেটওয়ার্ক বেশি ব্যবহৃত হয়।

বিশাল ভৌগলিক এলাকা। যেমনঃ- কয়েকটি শহর বা দেশ, মহাদেশের কম্পিউটারের মধ্যে যে সংযোগ বা নেটওয়ার্ক থাকে তাকে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
চিত্রঃ ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক।

নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং সার্ভিস প্রদানের ভিত্তিতে নেটওয়ার্কের প্রকারভেদঃ

নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং সার্ভিস প্রদানের ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্কসমূহকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১। ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client-Server Network)
২। পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network) ও
৩। হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybride Network)

ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কঃ

কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটা স্টোর, নিরাপত্তা দেওয়া, বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক খুবই উপযোগী। এই নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটারে সকল রিসোর্স থাকে এবং অন্যান্য সকল কম্পিউটারগুলো এসব রিসোর্স ব্যবহার করে। যে কম্পিউটার রিসোর্স শেয়ার করে সেটিকে সার্ভার বলে আর যেসব কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে ক্লায়েন্ট বলে। নেটওয়ার্কের সমস্ত রিসোর্স সার্ভারে জমা থাকায় রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট অনেক সহজ হয়।

পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কঃ

পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কে প্রত্যেক কম্পিউটার হতে রিসোর্স শেয়ার করা যায়। এই নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটার একই সাথে সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট। এরা প্রত্যেকেই রিসোর্স শেয়ারের ক্ষেত্রে সমান ভুমিকা পালন করে। ডেডিকেটেড সার্ভার না থাকায় কম্পিউটারগুলোর কোন শ্রেণীবিন্যাস নেই।

হাইব্রিড নেটওয়ার্কঃ

হাইব্রিড নেটওয়ার্ক মূলত ক্লায়েন্ট সার্ভার এবং পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত। সাধারনত হাইব্রিড
নেটওয়ার্কে সার্ভার অংশের প্রাধান্য থাকে। তবে এর পাশাপাশি অল্প বিস্তারে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কের অংশ থাকে।
সারসংক্ষেপঃ নেটওয়ার্ক হলো এমন সিস্টেম যেখানে সবাই মিলে তথ্য শেয়ার করা যায় বা একসাথে কাজ করা যায়। কোন ব্যক্তির নিকটবর্তী ব্যক্তিগত ডিভাইসগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান প্রদানের নেটওয়ার্ক সিস্টেম পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক নামে পরিচিত। আবার একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ক্যাবল এর মাধ্যমে এক কম্পিউটার এর সাথে অন্যান্য কম্পিউটার বা ডিভাইসসমূহের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক গঠন করা হয় তাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। অন্যদিকে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলো বা ডিভাইসগুলো বিশাল জায়গা জুড়ে যেমনঃ- একই দেশের বিভিন্ন শহরের এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

এছাড়াও বিশেষ কাজের জন্য নিচের নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। যথাঃ-

সম্পূর্ণ পরস্পর সংযুক্ত নেটওয়ার্ক (Fully Interconnected Network):

এক্ষেত্রে প্রত্যেক কম্পিউটার অন্য সব কম্পিউটারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকে। এর সুবিধা হল যে কোন দুটি নোডের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুত সংযোগ সাধন করা যায়। তাছাড়া একটি কম্পিউটার বা একটি সংযোগ লাইন খারাপ হয়ে গেলেও বিশেষ ক্ষতি হয় না। তবে অসুবিধা হল সংযোগ লাইনগুলোর মোট দৈর্ঘ্য খুব বেশি হওয়ায় খরচ বেশি হয়।

মাল্টিপয়েন্ট (Multipoint) নেটওয়ার্কঃ

এ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় একটি সাধারণ সংযোগ লাইনের সঙ্গে সবগুলো নোড যুক্ত থাকে। এর প্রধান সুবিধা সংযোগ লাইনের খরচ কম হয়। এছাড়া একটি কম্পিউটার খারাপ হয়ে পড়লেও অন্যদের কাজ করতে কোন অসুবিধা হয় না।

টেলিমেটিক্স (Telematics):

টেলিকম্যুনিকেশন-এর(Tele-communication) টেলি ও ইনফমেটিক্স-এর (Informatics) মেটিকস যুক্ত হয়ে টেলিমেটিক্স শব্দটি গঠিত হয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে দূর হতে প্রয়োজনীয় তথ্য বিনিময়, স্থানান্তর বা সংগ্রহ করা সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদ্যাকে টেলিমেটিক্স বলে। তথ্য আহরণ, তথ্যের শ্রেণীবিভাগ, কপি তৈরি করা, সংরক্ষণ ইত্যাদি তথ্য সম্বন্ধীয় যাবতীয় বিদ্যাকে ইনফমেটিক্স বলে।

আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

নেটওয়ার্ক টপোলজিঃ

নেটওয়ার্ক টপোলজিঃ দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে ক্যাবল, হাব বা সুইচ ইত্যাদি দ্বারা নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করার জন্য যুক্তি নির্ভর পথের ডিজাইন এবং ব্যবস্থাপনাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলা হয়। অর্থাৎ যে ব্যবস্থায় কম্পিউটারসমূহ বা নোডসমূহ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে, তাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে। ব্যবহারের ক্ষেত্র, তথ্য আদান প্রদানের গতি ও নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলি বিভিন্ন ভাবে সংযুক্ত থাকে।
নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য টপোলজি হচ্ছে-
১। বাস টপোলজি (Bus Topology)
২। রিং টপোলজি (Ring Topoplogy)
৩। স্টার টপোলজি (Star Topology)
৪। ট্রি টপোলজি (Tree Topolopy)
৫। মেস টপোলজি (Fully Inter-connected Topology) ও
৬। হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology)

বাস টপোলজিঃ

যে টপোলজিতে একটি মূল ক্যাবলের সাথে সব কয়েকটি ওয়ার্কস্টেশন বা কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে তাকে বাস টপোলজি বলে। একে অনেক সময় লিনিয়ার বাস টপোলজিও বলা হয়। এখানে মূল ক্যাবল বা তারটিকে বলা হয় ব্যাকবোন (Backbone)। মূল ক্যাবলের উভয় প্রান্তে টারমিনেটর ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এখানে কোন কেন্দ্রিয় কম্পিউটার
থাকে না। প্রতিটি কম্পিউটার বা ওয়ার্কস্টেশন মূল বাসের সাথে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
চিত্র ৪.৫.১ : বাস টপোলজি

রিং টপোলজিঃ

এ ধরনের সংগঠনে কম্পিউটারগুলো পরস্পর বৃত্তাকারে যুক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। প্রতিটি কম্পিউটার
দুই দিকের দুইটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটারগুলোকে এমনভাবে সংযোগ দেয়া হয় যেন রিংয়ের সর্বশেষ কম্পিউটারটি প্রথমটির সাথে যুক্ত থাকে। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে পাঠানো ডাটা বা সংকেত বৃত্তাকার পথে (একমুখী প্রবাহ) কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্দিষ্ট কম্পিউটার ডাটা গ্রহণ করে। রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান। প্রত্যেকটি কম্পিউটার স্বাধীন।
চিত্রঃ রিং টপোলজি।

স্টার টপোলজিঃ

এ ধরনের সংগঠনে একটি কেন্দ্রিয় ডিভাইস এর সাথে অন্যান্য কম্পিউটারগুলো সংযুক্ত থাকে। কেন্দ্রিয় ডিভাইসটি হতে পারে একটি হাব বা সুইচ। হাব বা সুইচ এর মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। ডাটা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে হাব বা সুইচ। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার এ ডাটা স্থানান্তরের জন্য
প্রথমে কেন্দ্রিয় ডিভাইসে প্রেরণ করতে হয়। এরপর কেন্দ্রিয় ডিভাইস ডাটা গ্রহণকারী কম্পিউটারে ডাটা পাঠিয়ে দেয়।
চিত্রঃ স্টার টপোলজি।

ট্রি টপোলজিঃ

ট্রি টপোলজি সংগঠনে ওয়ার্ক স্টেশন বা কম্পিউটারগুলো বিভিন্ন স্তরে সংযুক্ত থাকে। বিভিন্ন স্তরের কম্পিউটারগুলোকে হাবের মাধ্যমে একটির সঙ্গে অন্যটি সংযুক্ত থাকে। প্রথম স্তরের কম্পিউটারকে দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারের হোস্ট বলে।
আবার দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোকে তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারের হোস্ট বলে। মূল হোস্ট অবশ্যই শক্তিশালী কম্পিউটার হতে হয়।
চিত্রঃ ট্রি টপোলজি।

মেশ টপোলজিঃ

মেশ টপোলজির প্রত্যেকটি ওয়ার্কস্টেশন বা কম্পিউটারের একাধিক সংযোগ ব্যবস্থা থাকে এবং প্রতিটি কম্পিউটার আলাদা লিংক ব্যবস্থাধীন থাকে। এ ব্যবস্থায় প্রতিটি কম্পিউটার সরাসরি যে কোন কম্পিউটারে ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। এ ধরনের নেটওয়ার্কভূক্ত কম্পিউটারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট লিংক বলে।
চিত্রঃ মেশ টপোলজি।

হাইব্রিড টপোলজিঃ

এ ধরনের টপোলজিতে কয়েক প্রকার টপোলজির সংমিশ্রণ দেখা যায় তাই একে হাইব্রিড টপোলজি বলে। সব ধরনের সংগঠনে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এ জন্য হাইব্রিড টপোলজি কয়েক ধরনের টপোলজির সমন্বয়ে তৈরী হয়।
চিত্রঃ হাইব্রিড টপোলজি।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কে যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতিঃ

কম্পিউটার না থাকলেও এ যোগাযোগ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যায়।

নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নোডের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সাধারণত চারটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যথাঃ

১। টেলিফোন (Telephone):

যোগাযোগের উন্নত উপায় হিসেবে টেলিফোন ব্যবস্থা ডেটা ও কন্ঠস্বর উভয় প্রকার তথ্য প্রেরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। লিজড লাইন ও ডায়ালড লাইন দু'ভাবে এ কাজ করা যায়। এ ব্যবস্থায় টেলিফোন দ্বারা টার্মিনাল বা এক কম্পিউটারের সঙ্গে অন্য কম্পিউটারের সংযোগ করা যায়। টেলিফোনে ডিজিটাল সংকেত পাঠানোর গতিবেগ সাধারণত সেকেন্ডে ১২০০ বিট বা 1200 bps ( bits per second), একে ১২০০ বাউডও (Bauds) লেখা হয়।

২। ফাইবার অপটিক কেবল (Fibre Optic Cable):

লেজার রশ্মি এ ব্যবস্থার অন্যতম বাহক। এক্ষেত্রে কাঁচ বা প্লাষ্টিকের সূক্ষ্ম নলের (ফাইবার অপটিক কেবল) মধ্যে দিয়ে লেজার (Laser) রশ্মির বারবার প্রতিফলনের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়। এখানে গতিবেগ সাধারণত 2500 Mbps (Mbps = দশ লক্ষ bps)।

৩। বেতার তরঙ্গ (Radio Waves):

রেডিও, টিভিতে বেতার তরঙ্গ সংযোগের ন্যায় দুটো কম্পিউটারের মধ্যেও সংযোগ করা যায়। এক্ষেত্রে সংকেত প্রেরণের গতিবেগ মোটামুটি 24Kbps (Kilo bps)।

৪। মাইক্রো-ওয়েভ (Micro-wave):

বেতার তরঙ্গের মত মাইক্রো-ওয়েভ বাঁকতে পারে না। সে কারণে গ্রাহক ও প্রেরক কম্পিউটারের মধ্যে কোন বাধা থাকলে সংকেত পাঠানো যায় না। কম্পিউটার প্রদত্ত সংকেতকে উচ্চ কম্পাংক বিশিষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ স্পন্দনে রূপান্তর করে প্রেরণ করে। তথ্য প্রেরিত হয়। বর্তমানে দ্রুত ঘূর্ণায়মান উপগ্রহের মাধ্যমে গৃহীত সংকেতকে শক্তিশালী করে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে পাঠানো যায়। এ অসুবিধা দূর করার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্য নেওয়া হয়।

এদের বলে সংযোগ উপগ্রহ (Communication Satelite)। এগুলো বিষুবরেখার ৩৬০০০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে Geostationary orbit-এ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। Geostationary orbit ঘোরা মানে পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারপাশে আবর্তন গতির সমান গতিতে ঘোরা এবং এর ফলে পৃথিবী থেকে এদের স্থির মনে হয়।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্যুনিকেশন প্রোটোকল (Communication Protocol):

কতগুলো টার্মিনাল বা কম্পিউটার যখন একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকে তখন তাদের পারস্পরিক সংযোগ ও তথ্য চলাচল সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এ নিয়মগুলোকে কম্যুনিকেশন প্রোটোকল বলে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ডিভাইস: মডেম, হাব, সুইচ, রাউটার ও গেটওয়েঃ

নিচে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-

নেটওয়ার্কিং ডিভাইসঃ

নেটওয়ার্ক তৈরিতে একটি কম্পিউটার ছাড়াও আরো অনেক ডিভাইস এর প্রয়োজন হয়। যেমনঃ- নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড, মডেম, হাব, সুইচ, রাউটার, গেটওয়ে ইত্যাদি। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ-

মডেমঃ

মডেম একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে মডেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মডেম এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদানে সহায়তা করে। যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রেরক কম্পিউটারের ডিজিটাল সংকেতকে (মডুলেশন প্রক্রিয়ায়) এনালগ সংকেতে এবং এনালগ সংকেতকে (ডিমডুলেশন প্রক্রিয়ায়) ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তরের মাধ্যমে গ্রাহক কম্পিউটারে অত্যন্ত দ্রুত তথ্য প্রেরণ করা যায় সেই ব্যবস্থাকে মডেম বলে।

 মডেম শব্দটি মডুলেটর-ডিমডুলেট-এর (Modulator-demodulator) সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রেরক যন্ত্র থেকে মডুলেটিং পদ্ধতিতে সংকেত পাঠানো হয়। গ্রাহক যন্ত্র সে সংকেত ডিমডুলেটিং পদ্ধতিতে পৃথক করে কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী করে। 

মডেমের দুটি অংশ। যথাঃ-

১। মডুলেটর (Modulator) ও

২। ডি-মডুলেটর (De-modulator)

চিত্রঃ মডেম।

মডুলেটর ডিজিটাল সংকেতকে অ্যানালগ (Analog) সংকেতে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের ক্রিয়াকে বলা হয় মডুলেশন। ডিমডুলেটর অ্যানালগ সংকেতকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তর করে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিমডুলেশন। বাজারে বিভিন্ন গতি সম্পন্ন মডেম পাওয়া যায়। যেমন- 600 kbps, 1200 kbps, 2400 kbps ইত্যাদি।

হাবঃ

হাবের মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। হাবের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে কম্পিউটারের সংযোগের সংখ্যা। স্টার টপোলজিতে হাব একটি কেন্দ্রিয় ডিভাইস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। হাবে মাল্টিপল পোর্ট থাকে। যখন একটি প্যাকেট কোন একটি পোর্টে পৌছায়, এটি সেই প্যাকেটকে কপি করে হাবের সকল পোর্টে পাঠায়।

চিত্রঃ হাব।

কার্যকারিতার দিক থেকে হাব দুই প্রকার যথাঃ-

১। সক্রিয় হাব (Active HUB): এ ধরণের হাব সংকেতের মানকে বৃদ্ধি করে। আবার কোন কোন সক্রিয় হাব সংকেতকে অল্প মাত্রায় প্রসেসও করে থাকে। এই সকল হাব মূল সংকেত থেকে অপ্রয়োজনীয় সংকেত বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সংকেত প্রেরণ করে।

২। নিষ্ক্রিয় হাব (Passive HUB): এ ধরণের হাব সংকেতের মানকে বৃদ্ধি করে। এ সকল হাব শুধু তথ্য আদান প্রদানে সহায়তা করে মাত্র। এজন্য এই সকল হাবকে কোন সক্রিয় হাবের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়।

সুইচঃ

সুইচ একটি ডিভাইস যা নেটওয়ার্কের ডাটাকে বিভক্ত করে নেটওয়ার্কের সকল সিস্টেমে না পাঠিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়। হাব এবং সুইচ এর কাজ প্রায় একই। তবে হাব প্রেরিত সিগন্যাল গ্রহণ করার পর একই সাথে প্রত্যেকটি কম্পিউটারে পাঠায় কিন্তু সুইচ প্রেরিত সিগন্যাল গ্রহণ করার পর টার্গেট কম্পিউটারে পাঠায়। স্টার টপোলজিতে সুইচ একটি কেন্দ্রিয় কানেকটিভ ডিভাইস হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

চিত্ৰঃ সুইচ।

রাউটারঃ

রাউটার ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। ছোট ছোট নেটওয়ার্ক রাউটারের মাধ্যমে সংযুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। রাউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে একাধিক পথ সৃষ্টি করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক যেমন ইথারনেট, টোকেন, রিং কে সংযুক্ত করতে পারে। রাউটার একই প্রোটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে পারে।

চিত্রঃ রাউটার।

গেটওয়েঃ

গেটওয়ে ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। গেটওয়ে এবং রাউটার ব্যবহার করে ছোট ছোট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। রাউটার একই প্রোটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে পারে কিন্তু গেটওয়ে বিভিন্ন প্রোটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে পারে।

চিত্রঃ গেটওয়ে।

সারসংক্ষেপঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ছাড়াও আরো অনেক ধরনের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার এর সাথে এক বা একাধিক কম্পিউটারের সংযোগ করার জন্য যে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা হয় তাদেরকে নেটওয়ার্কিং ডিভাইস বলা হয়। নেটওয়ার্কিং ডিভাইস হিসেবে নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড, মডেম, হাব, সুইচ, রাউটার, গেটওয়ে ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url