কম্পিউটার মেমোরি কি? কম্পিউটার মেমোরি কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটার মেমোরি কি?

কম্পিউটার মেমরি, ‘কম্পিউটার স্টোরেজ ডিভাইস’ নামেও পরিচিত যা যেকোন তথ্য, গান, চলচ্চিত্র, ছবি, সফ্টওয়্যার ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে। সাধারণত ডেটা সংরক্ষনের জন্য ব্যবহৃত মাধ্যম বা ধারককে মেমরি বা স্মৃতি বলা হয়। প্রক্রিয়াকরণের সুবিধার্থে ডেটা মেমরিতে জমা রাখা হয় এবং প্রয়োজন মাফিক কাজে লাগানো হয়।

এই সমস্ত ডেটা দুটি ভিন্ন মোডে সংরক্ষিত হয়। একটি অস্থায়ী অন্যটি স্থায়ী প্রকৃতির। কম্পিউটার মেমরিতে সমস্ত ডেটা ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করা হয়। ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনে যে কোনও সময় সংরক্ষিত তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে।

কম্পিউটার মেমোরি

কম্পিউটার মেমোরি কত প্রকার ও কি কি?

মানুষের মতো কম্পিউটারেরও নিজস্ব স্মৃতি কোষ থাকে এবং তাকে সাহায্য করার জন্য সাহায্যকারী স্মৃতিকোষ আছে যা কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে থাকে। কম্পিউটারের এই স্মৃতিকোষ মানুষের তৈরি এবং এটা বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। কম্পিউটারের এই স্মৃতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

(ক) মূল স্মৃতি

(খ) সাহায্যকারী/সেকেন্ডারি স্মৃতি

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা 

(ক) মূল স্মৃতি (Main Memory):

কম্পিউটার সিস্টেম যে ডেটা ও ইন্সট্রাকশনের উপর বর্তমানে কাজ করছে তা এখানে সাময়িকভাবে ধারণ করে রাখে। এই মেমোরি অপেক্ষাকৃত দ্রুত এবং সরাসরি সি.পি.ইউ. দ্বারা এক্সেস করা হয়। এটা অপেক্ষাকৃত ছোট মেমোরি। মূল স্মৃতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

1. Read Only Memory (ROM)

2. Random Access Memory (RAM)

ভৌত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেমোরির শ্রেণীবিভাগঃ

নিচে ভৌত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেমোরির শ্রেণীবিভাগ দেওয়া হলোঃ-

(ক) পরিবর্তনযোগ্য মেমোরি

যে ধরনের মেমোরিতে সঞ্চিত তথ্যাবলি মুছে নতুন করে লেখা যায় তাকে পরিবর্তনযোগ্য মেমোরি বলে। যেমনঃ RAM, Magnctic Disk ইত্যাদি।

(খ) অপরিবর্তনীয় মেমোরি

যে ধরনের মেমোরিতে সঞ্চিত তথ্যাবলি মুছে যায় না তাকে অপরিবর্তনীয় মেমোরি বলে। যেমনঃ পাঞ্চ কার্ড, ROM ইত্যাদি।

(গ) উদ্বায়ী মেমোরি

বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হলে যে মেমোরি মেমোরির সঞ্চিত তথ্য মুছে যায় তাকে উদ্বায়ী মেমোরি বলে। যেমনঃ RAM

(ঘ) অনুদ্বায়ী মেমোরি

বিদ্যুতপ্রবাহ বন্ধ হলে যে মেমোরির সঞ্চিত তথ্য মুছে যায় না তাকে অনুদ্বায়ী মেমোরি বলে। যেমন- রম, ডিস্ক, টেপ ইতাদি।

(ঙ) ধ্বাংসাত্মক মেমোরি

যে মেমোরি পাঠ করার পর পরই এতে সঞ্চিক তথ্য মুছে যায় তাকে ধ্বাংসাত্মক মেমোরি বলা হয়। যেমনঃ চৌম্বক কোর।

(চ) অধ্বাংসাত্মক মেমোরি

যে মেমোরি পাঠ করার পর পরই এতে সঞ্চিত তথ্য মুছে যায় না তাকে অধ্বাংসাত্মক মেমোরি বলা হয়। যেমন- রম, চৌম্বক টেপ, ডিস্ক ইত্যাদি।

অ্যাকসেস প্রকৃতি বা সংযোগ প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে মেমোরির শ্রেণিবিভাগঃ

Access প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে মেমোরি সাধারণত নিম্নলিখিত শ্রেণির হতে পারে।

(ক) সিকুয়েন্সিয়াল মেমোরি

যে মেমোরিতে উপাত্ত বা তথ্য পঠন লিখনের পর পর সংযোগ সৃষ্টি করতে হয় তাকে সিকুয়েন্সিয়াল মেমোরি বলা হয় যেমনঃ চৌম্বক টেপ মেমোরি।

(খ) র‍্যান্ডম অ্যাকসেস মেমোরি (RAM)

যে মেমোরিতে উপাত্ত ও তথ্য পঠন/লিখনের জন্য সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি করা হয় এবং সকল মেমোরির ঠিকানার অ্যাকসেস সমান তাকে র‍্যান্ডম অ্যাকসেস মেমোরি বলা হয়। যেমন- র‍্যাম।

(গ) ডাইরেক্ট অ্যাকসেস মেমোরি

যে মেমোরিতে তথ্যকে পঠন/লিখনের জন্য সিকুয়েন্স ও র‍্যান্ডম অ্যাকসেস বা সংযোগ উভয়েই ব্যবহৃত হয় তাকে ডাইরেক্ট অ্যাকসেস মেমোরি বলে। যেমনঃ ডিস্ক মেমোরি।

(ঘ) সাইক্লিক অ্যাকসেস মেমোরি

যে মেমোরিতে তথ্যকে পঠন/লিখন করা হয় তাকে সাইক্লিক অ্যাকসেস মেমোরি বলা হয়। যেমন- চৌম্বক ড্রাম মেমোরি।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সংযোগের উপর ভিত্তি করে মেমোরির শ্রেণিবিভাগঃ

নিচে মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সংযোগের উপর ভিত্তি করে মেমোরির শ্রেণিবিভাগ দেওয়া হলোঃ-

প্রধান বা অভ্যন্তরীণ মেমোরিঃ

মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত মেমোরিকে প্রধান বা অভ্যন্তরীণ মেমোরি বলা হয়। প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রোগ্রাম ও তথ্যকে এ মেমোরিতে অস্থায়ীভাবে জমা রাখা হয়। যেমন- র‍্যাম, রম ইত্যাদি। মাদারবোর্ডে মাইক্রোপ্রসেসরের পাশাপাশি এ মেমোরি অবস্থান করে।

সহায়ক বা অনাভ্যন্তরীণ মেমোরিঃ

যে মেমোরির সাথে মাইক্রোপ্রসেসরের সরাসরি সংযোগ থাকে না, নির্দিষ্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা করে তাকে অভ্যন্তরীণ মেমোরি বলা হয়। এ মেমোরিকে আলাদা ডিভাইস ড্রাইভারের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ব্যবহারকারী ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে উপাত্ত বা প্রোগ্রামকে স্থায়ীভাবে সঞ্চয় করতে পারে বলে একে সহায়ক মেমোরি বলা হয়। সাধারণ চৌম্বক টেপ, চৌম্বক ডিস্ক, অপটিক্যাল ডিস্ক ইত্যাদি সহায়ক মেমোরির উদাহরণ।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ব্যবহৃত মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে মেমোরির শ্রেণিবিভাগঃ

মেমোরি তৈরির জন্য ব্যবহৃত মাধ্যম বা ধারক অনুযায়ী মেমোরিকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

(ক) চৌম্বক কোর মেমোরি।

(খ) পাতলা পর্দা মেমোরি।

(গ) অর্ধপরিবাহী মেমোরি।

(ঘ) অতি পরিবাহী মেমোরি।

(ঙ) চৌম্বক ফেনা মেমোরি।

(চ) চার্জড কাপলড্ মেমোরি।

(ছ) চৌম্বক টেপ মেমোরি।

(জ) চৌম্বক ডিস্ক মেমোরি।

(ঝ) অপটিক্যাল ডিস্ক বা আলোকীয় মেমোরি।

নির্মাণ কৌশলের উপর ভিত্তি করে মেমোরির প্রকারভেদঃ

নির্মাণ কৌশলের উপর ভিত্তি করে মেমোরির প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ-

১. বাইপোলার মেমোরি

২. ইউনিপোলার মেমোরি

সেমিকন্ডাক্টর পদার্থের তৈরি ট্রানজিস্টর হলো বাইপোলার ডিভাইস। ট্রানজিস্টর বা ট্রাইজস্টর লজিক বা টিটিএল ব্যবহার করে এ ধরনের মেমোরি তৈরি করা হয়। নিশ্চল র‍্যাম, ROM এবং PROM বাইপোলার মেমোরি। অপরদিকে, ইউনিপোলার মেমোরিকে মেটল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর বা MOSFET দিয়ে তৈরি করা হয়। গতিশীল র‍্যাম, ইপ্রম (EPROM), ইএপ্রম (EAPROM) হলো ইউনিপোলার র‍্যামের উদাহরণ।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি

প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মেমোরির মধ্যে পার্থক্যঃ

নিচে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মেমোরির মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলোঃ-
সিঃনং প্রাইমারি মেমোরি সেকেন্ডারি মেমোরি
এ মেমোরি ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে। এ মেমোরি ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সংযোগ সরাসরি সংযুক্ত থাকে না।
চলমান প্রোগ্রাম, উপাত্ত, নির্দেশ ও হিসাব-নিকাশের ফলাফল ইত্যাদি সংরক্ষণ করে। এটা নিকট ভবিষ্যতে গণনার প্রয়োজন এমন সব উপাত্ত, নির্দেশ, প্রোগ্রাম ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে।
সিপিইউ সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকায় এতে পঠন/লিখনের গতি দ্রুত হয়। সিপিইউ সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকায় না এতে পঠন/লিখনের গতি ধীর হয়।
সেকেন্ডরি মেমোরি অনুদ্বায়ী অর্থাৎ বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করলে সংরক্ষিত উপাত্ত তথ্য মুছে যায়। প্রধান মেমোরি উদ্বায়ী অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করলে এতে সংরক্ষিত উপাত্ত ও তথ্য মুছে যায় না।
প্রধান মেমোরির নাগাল সময় ও ধারণ ক্ষমতা কম। এর নাগাল সময় (৮০-১০০) ন্যানো সেকেন্ড। সেকেন্ডারি মেমোরিকে ক্রমিক নাগাল মেমোরি বলা হয়। কারণ, ক্রমিক নাগাল পদ্ধতিতে ক্রমানুসারে অনুসন্ধান করে মেমোরি স্থানের সংযোগ সাধন করা হয়।
প্রধান মেমোরিকে সিধা নাগাল মেমোরি বলা হয়। কারণ, ক্রমিক নাগাল পদ্ধতিতে কোনো বিশেষ অনুক্রমে অনুসন্ধান না করে সরাসরি মেমোরি স্থানের সংযোগ সাধন সম্ভব। সেকেন্ডারি মেমোরিকে ক্রমিক নাগাল মেমোরি বলা হয়। কারণ, সিধা নাগাল পদ্ধতিতে ক্রমানুসারে অনুসন্ধান করে মেমোরি স্থানের সংযোগ সাধন করা হয়।
এক্ষেত্রে মেমোরি স্থানে সংরক্ষিত প্রতিটি বিট বা শব্দের নাগাল সময় সমান। এক্ষেত্রে বিটের অবস্থান যত পরে তার নাগাল সময়ও তত বেশি।
প্রধান মেমোরিতে (রম) ফর্মওয়্যার সংরক্ষিত থাকে। সেকেন্ডারিতে মেমোরিতে ফর্মওয়্যার সংরক্ষিত থাকে না তবে অপারেটিং সিস্টেম, ডাটা ফাইল, কম্পাইলার, ইন্টরপ্রিন্টার, ও বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রোগ্রাম সঞ্চিত থাকে।
প্রধান মেমোরিতে সঞ্চিত উপাত্ত ও তথ্যাবলিকে সিপিইউ সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। সেকেন্ডারি মেমোরিতে সঞ্চিত উপাত্ত ও তথ্যাবলিকে সিপিইউ প্রধান মেমোরিকে উত্তোলন করে তবে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।
১০ প্রধান মেমোরিকে প্রাথমিক বা অভ্যন্তরীণ মেমোরিও বলা হয়। সেকেন্ডারি মেমোরিকে সহায়ক, অনাভ্যন্তরীণ মেমোরিও বলা হয়।
১১ অর্ধপরিবাহী মেমোরি, চৌম্বক কোর মেমোরি, পাতলা পর্দা মেমোরি ইত্যাদি হলো প্রধান মেমোরি ব্যবস্থার উদাহরণ। চৌম্বক টেপ, হার্ডডিস্ক, ফ্লপিডিস্ক, কম্পাক্ট ডিস্ক, পাঞ্চ কার্ড ইত্যাদি হলো সেকেন্ডারি মেমোরি ব্যবস্থার উদাহরণ।

এছাড়াও কাজের গতি বাড়ানোর জন্য আরেক ধরনের মেমোরি ব্যবহৃত হয় যাকে ক্যাশ মেমোরি বলে।

বিট, বাইট, কম্পিউটার ওয়ার্ড ও মেমোরি ধারণ ক্ষমতাঃ

কম্পিউটারের কাজের প্রকৃতি এবং গতি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন আকারের মেমোরি ব্যবহৃত হয়। মেমোরি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন একক ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ বিট, বাইট, কিলোবাইট, মেগাবাইট, গিগাবাইট, টেরাবাইট, এক্সাবাইট ইত্যাদি।

বিট (Bit):

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্ক ০ (শূন্য) এবং ১ (এক) কে বিট বলে। ইংরেজি Binary শব্দের Bi এবং Digit শব্দের t নিয়ে Bit শব্দটি গঠিত হয়। ডিজিটাল কম্পিউটারের মেশিন ভাষা হলো বিট (০ ও ১)। এক্ষেত্রে (০) বিট দিয়ে নিম্ন ভোল্টেজ (Low Voltage) এবং (১) বিট দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজ (High Voltage) নির্দেশ করা হয়।

বাইট (Byte):

৮টি বিট মিলে ১ বাইট হয়। এরূপ ৮ বিটের কোড দিয়ে যে কোনো বর্ণ, অঙ্ক বা বিশেষ চিহ্নকে প্রকাশ করা হয়। এরূপ ৮ বিট বিশিষ্ট শব্দকে বাইট বলা হয়। কম্পিউটার মেমোরি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন এককের মধ্যে সম্পর্ক-

★ ৮ বিট = ১ বাইট

★ ১০২৪ বাইট = ১ কিলোবাইট

★ ১০২৪ কিলোবাইট = ১ মেগাবাইট

★ ১০২৪ মেগাবাইট = ১ গিগাবাইট

★ ১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাইট

★ ১০২৪ টেরাবাইট = ১ এক্সাবাইট

★ ১০২৪ এক্সাবাইট = ১ পেটাবাইট

কম্পিউটার ওয়ার্ড (Computer Word):

পর পর সংলগ্ন কতকগুলো বিট বা বাইটের সমষ্টিকে একটি কম্পিউটার ওয়ার্ড বলে । সাধারণত ১৬ বা ৩২ বিটে ১ ওয়ার্ড ধরা হয়।

মেমোরির ধারণ ক্ষমতা (Memory Storage Capacity):

কম্পিউটার মেমোরিতে বাইনারি ডিজিট, শব্দ ধারণের ক্ষমতাকে মেমোরির ধারণ ক্ষমতা বলা হয়। মেমোরির ধারণ ক্ষমতার ক্ষুদ্রতম একক হলো কিলোবাইট (Kilobyte) সংক্ষেপে (KB)। ১০২৪ বাইটে ১ কিলোবাইট হয়। বর্তমানে প্রচলিত হার্ডডিস্কের ধারণ ক্ষমতা ১০২৪ গিগাবাইট বা ১ টেরাবাইট। এছাড়াও ২ ও ৪ টেরাইটের হার্ডডিস্ক এবং ৩২ ও ৬৪ গিগাবাইটের পেনড্রাইভও পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

প্রধান মেমোরি (RAM ও ROM):

1. Read Only Memory (ROM):

যে স্মৃতিতে তথ্য শুধু পাঠ করা যায় কিন্তু কোনো নতুন তথ্য সংযোজন করা যায় না তাকে Read Only Memory (ROM ) বলে। ROM এ তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যখন বিদ্যুৎ চলে যায় অথবা কম্পিউটার বন্ধ করা হয় তখন যে সমস্ত তথ্য ROM এর মধ্যে থাকে তা মুছে যায় না । ROM এর একটি ধরন PROM। যে সমস্ত ROM চিপে ব্যবহারকারী নিজেদের ইচ্ছামতো প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করতে পারে তাকে PROM চিপ বলে।

PROM এ একবার প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করার পর সংরক্ষিত তথ্য আর পরিবর্তন করা যায় না। ROM এর আরেকটি ধরন হচ্ছে EPROM যা PROM এর উপর্যুক্ত সমস্যা সমাধান করতে পারে। এখানে তথ্য মুছে ফেলা যায় এবং চিপকে পুনরায় প্রোগ্রাম করে নতুন তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।

2. Random Access Memory (RAM):

যে স্মৃতিতে কোনো একটি তথ্য মুছে ফেলে ঐ জায়গায় নতুন তথ্য লেখা যায় এবং সেই তথ্য প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করা যায় তাকে Random Access Memory বলে। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে বা কম্পিউটার অফ/বন্ধ করলে এর তথ্য মুছে যায়। প্রাইমারি স্টোরেজকে সাধারণত র‍্যাম বলে কারণ সরাসরি ডেটা এবং ইন্সট্রাকশন সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার করতে এই মেমোরির যে কোনো লোকেশন সিলেক্ট ও ব্যবহার করা সম্ভব।

মেমোরির প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা লোকেশন অন্য লোকেশনের মতোই এক্সেস করা সহজ এবং একই পরিমাণ সময়ের প্রয়োজন হয়। এটাকে রিড/রাইট মেমোরিও বলা হয় কারণ র‍্যাম চিপে তথ্য লেখাও যায় আবার এ থেকে তথ্য পড়াও যায়।

(খ) সাহায্যকারী বা সেকেন্ডারি মেমোরিঃ

কম্পিউটার সিস্টেম বর্তমানে কাজ করছে না এমন প্রোগ্রাম এবং ডেটা স্থায়ীভাবে ধারণ করতে এই স্মৃতি ব্যবহৃত হয়। এটা অপেক্ষাকৃত বড় স্মৃতি অংশ। এটা মেইন মেমোরি থেকে কম গতি সম্পন্ন মেমোরি। RAM বা মূল স্মৃতিতে কোনো তথ্য স্থায়ী ভাবে থাকে না। কম্পিউটার বন্ধ করলে বা বিদ্যুৎ চলে গেলে RAM এর সমস্ত তথ্য মুছে যায়। শুধুমাত্র ROM এ তথ্য স্থায়ী ভাবে থাকে।

সেজন্য মূল স্মৃতি বা RAM কে সাহায্য করার জন্য কতকগুলো স্মৃতি স্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে যাতে প্রয়োজন অনুসারে RAM সেসব স্মৃতি থেকে তথ্য নিতে পারে। আর এই সব স্মৃতিকে সাহায্যকারী স্মৃতি বলে। যেমন হার্ডডিস্ক, ফ্লোপিডিস্ক, চুম্বকীয় টেপ ইত্যাদি সাহায্যকারী স্মৃতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

র‍্যাম (RAM) ও রমের (ROM) মধ্যে পার্থক্যঃ

নিচে র‍্যাম (RAM) ও রমের (ROM) মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলোঃ-
নং র‍্যাম (RAM) রম (ROM)
র‍্যামে অস্থায়ীভাবে ডাটা পঠন ও লিখন সম্ভব। সাধরণত রমে একবারই স্থায়ীভাবে ডাটা সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে যে কোনো সময় সংরক্ষিত ডাটা পঠন সম্ভব।
র‍্যাম উদ্বায়ী মেমোরি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে র‍্যামে সংরক্ষিত ডাটা মুছে যায়। রম উদ্বায়ী মেমোরি নয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেও রমে সংরক্ষিত ডাটা মুছে যায় না।
চলমান প্রোগ্রাম এবং পুনঃ পুনঃ পরিবর্তনশীল ডাটা র‍্যামে সংরক্ষণ করা হয়। সহজে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না এমন ডাটা ও প্রোগ্রাম রমে সংরক্ষণ করা হয়।
র‍্যামে কোনো ধরনের প্রোগ্রাম দেয়া থাকে না। র‍ম সাধারণত তৈরির সময় প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে যা ফার্মওয়্যার নামে পরিচিত।
র‍্যামের আকারে উপর কম্পিউটারের কাজের গতি নির্ভর করে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত র‍্যাম চিপ সংযোজন করে ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। রমের আকারে উপর কম্পিউটারের কাজের ক্ষমতা নির্ভরশীল নয় এবং অতিরিক্ত রম চিপ করা যায় না।

র‍্যামের শ্রেণিবিভাগঃ

অপারেটিং মোড অনুসারে র‍্যামকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১। স্ট্যাটিক র‍্যাম (Static RAM) ও

২। ডাইনামিক র‍্যাম (Dynamic RAM)

স্ট্যাটিক র‍্যাম (Static RAM):

স্ট্যাটিক র‍্যাম ফ্লিপ-ফ্লপ দ্বারা গঠিত যা বাইনারি বিট ০ ও ১ ধারণ করে। এ ধারণকৃত ডাটা ততক্ষণ পর্যন্ত মেমোরিতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে মেমোরিতে রক্ষিত ডাটা মুছে যায়। স্ট্যাটিক র‍্যাম অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন হয় বলে এটা ভিডিও র‍্যাম, ক্যাশ মেমোরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

ডাইনামিক র‍্যাম (Dynamic RAM):

ডাইনামিক র‍্যাম-এ বাইনারি বিট ০ ও ১ বৈদ্যুতিক চার্জ আকারে ক্যাপাসিটরে জমা থাকে। ক্যাপাসিটর চার্জ থাকলে ১ অবস্থা, না থাকলে ০ অবস্থা বোঝায়। বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা অবস্থায়ও ক্যাপাসিটরের চার্জ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কয়েক মিলিসেকেন্ড পর পর র‍্যাম কন্ট্রোলারের সাহায্যে প্রত্যেক মেমোরি কোষে লেখা তথ্য নতুন করে লিখতে হয়। ক্যাপাসিটরের পরিভাষায় একে মেমোরি রিফ্রেশিং বলা হয়। মাইক্রোকম্পিউটারের প্রধান মেমোরি হিসেবে সাধারণত ডাইনামিক র‍্যাম ব্যবহার করা হয়।

স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ডাইনামিক র‍্যামের সুবিধা ও অসুবিধাঃ

নিচে স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ডাইনামিক র‍্যামের সুবিধা ও অসুবিধা দেওয়া হলোঃ-

ডাইনামিক র‍্যামের সুবিধাঃ

১। সমান পরিসরে ডাইনামিক র‍্যামে স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় বেশি ডাটা সংরক্ষণ করা যায়।

২। স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ডাইনামিক র‍্যামে শক্তির অপচয় কম হয়।

৩। ডাইনামিক র‍্যামে প্রতি বিট সংরক্ষণের খরচ স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় কম।

ডাইনামিক র‍্যামের অসুবিধাঃ

১। পুনঃপুনঃ প্রোগ্রামিং-এর জন্য ডাইনামিক র‍্যামে অতিরিক্ত বর্তনীর প্রয়োজন হয়।

২। সাধারণত স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ডাইনামিক র‍্যাম থেকে ডাটা উদ্ধার ও সংরক্ষণ সময় বেশি প্রয়োজন হয়।

৩। স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ডাইনামিক র‍্যামের গতি কম হয়।

এ ছাড়াও কয়েক ধরনের র‍্যাম প্রচলিত আছে। যেমনঃ ইন্টিগ্রেটেড র‍্যাম, PRAM, CMOS RAM ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

রম (ROM)-এর শ্রেণিবিভাগঃ

তথ্য সংরক্ষণের কৌশলের উপর ভিত্তি করে রমকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

১। এমরম (MROM-Mask Programmable Read Only Memory)

২। পিরম বা প্রম (PROM-Programmable Read Only Memory)

৩। ইপিরম বা ইপ্রম (EPROM-Erasable Programmable Read Only Memory)

৪। ইইপিরম বা ইইপ্রম (EEPROM-Electrically Erasable Programmable Read Only Memory)

৫। ইএপ্রমরম (EAPROM-Electrically Alterable Programmable Read Only Memory)

এমরম (MROM-Mask Programmable Read Only Memory):

ফটোগ্রাফিক্স মাস্ক ব্যবহার করে প্রোগ্রামের মাধ্যমে এতে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। সাধরণত ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানিতেই এমরম প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে। এটা বেশ ব্যয়বহুল। তবে একই ধরনের প্রোগ্রাম সম্বলিত অনেক এমরমের ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। একবার প্রোগ্রাম করা হলে এতে পুনরায় প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা যায় না।

পিরম বা প্রম (PROM-Programmable Read Only Memory):

সাধারণত রমের অসুবিধা হলো ব্যবহারকারী এতে নিজের ইচ্ছামতো প্রোগ্রাম পরিবর্তন করতে বা নতুন করে প্রোগ্রাম লিখতে পারে না। অথচ বাজারে যে সমস্ত প্রোগ্রাম করা রম পাওয়া যায় তাতে সকল কাজ হয় না।এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় প্রম (PROM)। এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী তার নিজস্ব প্রোগ্রামকে মাইক্রোপ্রোগ্রামে রূপান্তরিত করে প্রম-এ সংরক্ষণ করতে পারে। বাজারে নতুন যে প্রম পাওয়া যায় তাতে সমস্ত কোষে একটি করে ফিউজ লাগানো থাকে। ফলে সদ্য কেনা একটি প্রমের সমস্ত কোষই বাইনারি ১ থাকে।

বিশেষ প্রম প্রোগ্রামের সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রমে বিশেষ বিশেষ মেমোরি কোষের ফিউজগুলোতে উচ্চ তড়িৎ চালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে ০ করে দিতে পারে। এভাবে ব্যবহারকারী তার লিখিত মাইক্রোপ্রোগ্রামকে প্রমে সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রমকে একবার প্রোগ্রাম করা হলে এতে সংরক্ষিত তথ্য আর পরিবর্তন করা যায় না।

অর্থাৎ প্রম তখন রমে পরিণত হয়ে যায় এবং এতে সংরক্ষিত তথ্য শুধুমাত্র পাঠ করা যায়। রমের ন্যায় প্রমও অ-উদ্বায়ী, অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করলে এতে সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায় না। অধিক সংখ্যক রম একই প্রোগ্রামে প্রোগ্রামিং করার জন্য বিশেষ প্রম প্রোগ্রামের যন্ত্র পাওয়া যায়।

ইপিরম বা ইপ্রম (EPROM-Erasable Programmable Read Only Memory):

রম বা প্রমে একবার তথ্য সংরক্ষণ করা হলে আর পরিবর্তন করা যায় না। তাই এ অসুবিধা দূর করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের রম তৈরি করা হয়েছে যার নাম ইপিরম বা ইপ্রম। ইপ্রমে সংরক্ষিত তথ্যকে মুছে বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে আবার নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায়। ইপ্রমে একটি ছোট কোয়ার্টজের জানালা থাকে, জানালা দিয়ে এর সিলিকন ওয়েফার (Silicon Wafer) দেখা যায়।

সংরক্ষিত তথ্য মুছে ফেলার সময়ে একটি আলট্রাভায়োলেট ল্যাম্পের তলায় ইপ্রমকে রাখা র‍্যাম্পের অতি বেগুনি রশ্মি জানালা দিয়ে সিলিকন ওয়েফার-এর উপর পড়ে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইপ্রমের তথ্য মুছে যায়। পরবর্তীতে প্রম প্রোগ্রামের সাহায্যে নতুন করে আবার ইপ্রমে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।

ইপ্রম উদ্বায়ী নয় অর্থাৎ বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করলে প্রোগ্রামকৃত তথ্য কোনো অবস্থায় মুছে যায় না। সাধারণত ফেট (FET-Field Effect Transistor) ব্যবহার করে ইপ্রম তৈরি করা হয়।

ইইপ্রম বা ইইপ্রম (EEPROM-Electrically Erasable Programmable Read Only Memory):

ইপ্রম-এর প্রধান অসুবিধা হলো এতে সংরক্ষিত তথ্য মুছতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে এবং আংশিকভাবে কোনো তথ্য মুছা যায় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য ইইপ্রম তৈরি করা হয়েছে। অতি সহজে এতে সংরক্ষিত সকল তথ্য বা প্রয়োজন মতো এক বা একাধিক বিট বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা মুছে পুনঃ পুনঃ প্রোগ্রাম করা যায়।

এজন্য এর নাম ইলেকট্রিক্যালি ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমোরি সংক্ষেপে ইইপ্রম। প্রোগ্রাম করার সময় একে কম্পিউটার থেকে খুলতে হয়। এতে সংরক্ষিত তথ্য মুছতে ইপ্রমের তুলনায় অনেক কম সময় লাগে।

ইএপ্রমরম (EAPROM-Electrically Alterable Programmable Read Only Memory):

ইইপ্রমের ন্যায় ইএপ্রম এরও যে কোনো বিট অর্থাৎ তথ্য বিদ্যুৎপ্রবাহ দ্বারা মুছে নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায়। তবে লেখা মুছার সময় একে কম্পিউটার থেকে বের করতে হয় না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url