তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?

যে কোন প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরণে ব্যবহৃত সকল ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি” কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?

যে প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য দ্রুত আহরণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সংরক্ষণ, আধুনিকীকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণ করা হয় তাকে তথ্য প্রযুক্তি বলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকাঃ

বর্তমান যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে কাজ করছে। যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন এবং তথ্য প্রযুক্তির সাথে তা একীভূত হওয়ার ফলে এর প্রতি মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে অনেকগুণ। পৃথিবীর উপরিভাগ কিংবা অভ্যন্তর, গভীর সমুদ্র থেকে দূর মহাকাশ সর্বত্রই আজ প্রযুক্তির ব্যবহার। ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এদেশেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তথ্য ও উপাত্তের ধারণাঃ

উপাত্তঃ ডাটা বা উপাত্তকে আমরা কাচাঁমালের সাথে তুলনা করতে পারি। কাচামালকে যেমন ব্যবহার উপযোগী করতে হলে প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন তেমনি উপাত্তকেও অর্থবহ করতে হলে প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত কাচামাল সমূহকে ডাটা বা উপাত্ত বলে। উপাত্ত শব্দ, সংখ্যা, ছবি, প্রতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ উপাত্তের জন্ম দেয়।

কোন ঘটনায় বহু উপাত্ত জড়িত থাকে। যেমন আমরা যখন কোন সুপার শপ থেকে পণ্য ক্রয় করি তাহলে রিসিট দেয়া হয়। একটু লক্ষ্য করলেই এতে কিছু উপাত্ত দেখতে পাবো যেমনঃ পণ্য ক্রয়ের তারিখ এবং সময়, পণ্যের বিবরণ, দাম ইত্যাদি। এসব উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করেই একটি সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটি বৈধ রিসিট পাওয়া যায়।

তথ্যঃ কোন বিশেষ প্রেক্ষিতে ডাটাকে অর্থবহ করাই হল তথ্য বা ইনফরমেশন। ডাটা হল কিছু বিশৃঙ্খল ফ্যাক্ট যা অর্থবহ বা কার্যকর নয়। আর তথ্য হল কোন প্রেক্ষিতে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো উপাত্ত যা সহজবোধ্য, অর্থবহ, কার্যকর এবং ব্যবহার উপযোগী।

উপাত্ত + প্রেক্ষিত + অর্থ = তথ্য

ধরা যাক ০৬১২১৪ একটি উপাত্ত, এটি তথ্য হবে যখন কোন বিশেষ প্রেক্ষিতে এটিকে অর্থবহ করা হবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে এর অর্থ ভিন্ন হবে। যেমনঃ-

(ক) যদি এই উপাত্তটি দিয়ে dd.mm.yy ফরমেটে ইংরেজী তারিখ প্রকাশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ ।

(খ) আবার যদি এটি দিয়ে hour:min:sec এই ফরমেটে সময় প্রকাশ করা হয় তবে এর অর্থ হবে ৬ টা ১২ মিনিট ১৪ সেকেন্ড। কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুসারে বলা যায় যে, কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে কম্পিউটারে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ফলাফলই হল তথ্য।

উপাত্ত ও তথ্যের মধ্যে পার্থক্যঃ

নিচে উপাত্ত ও তথ্যের মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলোঃ-
নংঃ উপাত্ত তথ্য
সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত কাচামাল সমূহকে ডাটা বা উপাত্ত বলে। তথ্য হল কোন প্রেক্ষিতে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো উপাত্ত যা সহজবোধ্য, অর্থবহ, কার্যতর এবং ব্যবহার উপযোগী।
তথ্যের ক্ষুদ্রতম এককই উপাত্ত যা বিভিন্ন উৎস থেকে  সংগ্রহ করা হয়। উপাত্তকে প্রসেস করে তথ্যে রূপান্তর করা হয়।
উপাত্ত পুরোপুরি কোন অর্থ বা ভাবার্থ প্রকাশ করে না। তথ্য কোন বিষয়ের অর্থ বা ভাবার্থ প্রকাশ করে যা ব্যবহারকারী বুঝতে পারে।
উপাত্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে না। তথ্য উপাত্তের উপর নির্ভর করে।
উপাত্ত তথ্য তৈরি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। তথ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ

তথ্য প্রযুক্তিঃ আধুনিক যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। সাধারণভাবে তথ্য প্রযুক্তি বলতে তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রয়োগ করার প্রযুক্তিকে বুঝায়। একে ইনফরমেশন টেকনোলজি বা আইটি বলা হয়ে থাকে। টেলিযোগাযোগ, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, অডিও-ভিডিও সম্প্রচার, ডাটাবেস ব্যবস্থাপনা, সফ্টওয়্যার উন্নয়ন, নেটওয়ার্ক, মুদ্রণ প্রযুক্তি, বিনোদন প্রযুক্তি, শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, তথ্য ভান্ডার সবগুলোকে তথ্য প্রযুক্তি বলা যেতে পারে। এক কথায় কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, একত্রিকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রয়োগ ব্যবস্থাকে তথ্য প্রযুক্তি বলা হয়।

যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ কম্পিউটার কিংবা অন্য কোন যন্ত্রের মাধ্যমে ডাটাকে একস্থান হতে অন্য স্থানে কিংবা এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া হচ্ছে ডাটা কমিউনিকেশন। কাজেই কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একস্থান (উৎস) হতে অন্যস্থানে (গন্তব্য) নির্ভরযোগ্যভাবে ডাটা বা উপাত্ত আদান-প্রদান সম্ভব। ডাটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি (Communication Techology) বলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ

তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ মাধ্যমের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে একত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology-ICT) বলা হয়। কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে তথ্যকে এক স্থান থেকে অন্যত্র নির্ভরযোগ্য ভাবে আদান-প্রদান করাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার মানুষ ও তাদের কার্যক্রমকে বহুগুণে গতিশীল ও কার্যকর করে তুলেছে।

সারসংক্ষেপঃ সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত কাচামালসমূহকে ডাটা বা উপাত্ত বলে। আর কোন বিশেষ প্রেক্ষিতে ডাটাকে অর্থবহ করাই হল তথ্য বা ইনফরমেশন। আবার তথ্য সংগ্রহ, এর সত্যতা ও বৈধতা যাচাই, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, আধুনিকীকরণ, পরিবহন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারেরঃ

নিচে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার গুলো দেওয়া হলোঃ-

বাসস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারেরঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের বাসস্থানকে করে তুলেছে অধিকতর নিরাপদ। আমরা আমাদের বাসস্থানের বাইরের দিকে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এর ফলে অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য কিছুর গতি-বিধি মনিটরিং করা যায়। এমন কি প্রয়োজনে রেকর্ডিং করা যায়। পরবর্তিতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে রেকর্ডকৃত তথ্য থেকে অপরাধী সনাক্ত করা বা সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মধ্যে সেন্সর ব্যবহারের ফলে এগুলো বাসস্থানের নিরাপত্তায় আইসিটির ব্যবহার প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান করতে পারে। যেমন- ঘরে থাকা অবস্থায় লাইট, ফ্যান, এসি ইত্যাদি চালু থাকে এবং কেউ না থাকলে এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া আমাদের ঘরের দরজায় বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ও বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সংবাদপত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারেরঃ

আজকাল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া সংবাদ মাধ্যম কল্পনা করা যায় না। আগে সংবাদ মাধ্যম বলতে কাগজে ছাপানো পত্রিকাকেই বুঝাত। তাছাড়াও ছিল সীমিত পরিসরে রাষ্ট্রীয় রেডিও এবং টেলিভিশন ব্যবস্থা। অতীতে দেশের এক প্রান্তে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে তা জানতে ২/৩ দিন সময় লাগ। এরফলে অনেক তথ্যে বিকৃতি ঘটত বা হারিয়ে যেত। পূর্বে দেশের এক প্রান্তে পত্রিকা ছাপানো হত, সেটি দেশের অপর প্রান্তে যেতে সারাদিন লেগে যেত। কখনো কখনো পরের দিন পত্রিকায় পৌছাত।

যদিও সাধারণভাবে আমরা সকালে নাস্তার টেবিলে পত্রিকা আশা করি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহরে ফলে অতি দ্রুত আমরা প্রতিদিনের সংবাদপত্র পেয়ে থাকি। কারণ এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একযোগে সংবাদপত্র ছাপানো হয়। বর্তমানে কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আমরা জানতে পারি। কারণ সংবাদ কর্মীরা টেলিফোনের মাধ্যমে তা কেন্দ্রীয় অফিসে পৌঁছে দিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় অফিস তা ব্রডকাস্ট করতে পারে। তাছাড়া ভিডিও কনফারেন্সিং- এর মাধ্যমেও সংবাদ আদান-প্রদান করতে পারে।

দেশের কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে তার সংবাদ এবং ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসে পৌঁছে দিতে পারে। ফলে আমরা ঘরে বসে কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই জানতে পারি এবং প্রাসঙ্গিক ভিডিও ফুটেজ দেখতে পারি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আজ আমরা সহজেই ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশন, স্যাটেলাইট ইত্যাদির মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সংবাদ, তথ্য এবং গবেষণা, ফলাফল পেয়ে থাকি এবং নিজের ইচ্ছা, চিন্তাধারা, কোনো গবেষণার ফলাফল আপলোড করতে পারি।

তাছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদ সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে প্রচার করছে। ফলে সাধারণ জনগণের নিকট সংবাদের গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো খবর সম্পর্কে সন্দেহ হলে ইন্টারনেট বা টেলিফোনের মাধ্যমে আমরা কোয়েরি করে নিশ্চিত হতে পারি।

কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারেরঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশ এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায় কোন ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে পারি এবং সে অনুযায়ী নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারি। বর্তমানে প্রায় সকল অফিস-আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এর ফলে এ ফিল্ডের দক্ষ লোকের যেমন- প্রোগ্রামার, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এডমিনিস্ট্রেটর ইত্যাদি প্রয়োজন এবং এদের সাথে আরো অনেক সাপোর্টিং স্টাফ প্রয়োজন।

এর ফলে অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের দেশে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এর ফলে অনেক বেকার যুবক/যুবতীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ/প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী তৈরি করার জন্য অনেক ট্রেনিং স্কুল/সেন্টার গড়ে উঠেছে-যাতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। কিন্তু তাদের একটু যুযোপযোগী প্রশিক্ষণ দিলে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে এদের বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব।

আউট সোর্সিং হলো দেশে বসে অনলাইনের মাধ্যমে অন্যদেশের ক্লায়েন্টদের কাজ করিয়ে দিয়ে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করা। কাজগুলোর মধ্যে কম্পিউটার বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, ওয়েব ডিজাইন করা, ইমেজ এডিটরের কাজ। যারা একাজে জড়িত তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত ব্যবসায়ী বলা হয়।

অফিস-আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

অফিস আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। অফিসে যেখানে আগে প্রচুর পরিমাণে কাগজপত্র স্তূপ দেয়া থাকত আজ সেখানে কাগজপত্র দেখা যায় না বললেই চলে। এতসব ফাইলের পরিবর্তে রয়েছে একটি মাত্র কম্পিউটার এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগ। কম্পিউটারেই সংরক্ষিত আছে অফিসের সকল কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য। কম্পিউটারের মাধ্যমেই করা হয় বেতন, পাওনা ইত্যাদির হিসাব। দপ্তরে দপ্তরে ফাইল নিয়ে পিয়নদের দৌড়ঝাপ চোখে পড়ে না, কারণ ই-মেইলের মাধ্যমেই এ কাজগুলো সেরে নেয়া হয়।

বিচারক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন। বিচার প্রার্থীরা অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি এবং বিচার দায়ের করতে পারেন। সাধারণ জনগণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। সাধারণ মানুষ আইন মান্য করতে উৎসাহী হবেন। সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের সকল আইনকে বিনামূল্যে জনগণের জন্য অনলাইনে প্রকাশ করতে পারে।

বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে সমন্বিতভাবে করা সম্ভব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে আদালত তথা বিচার ব্যবস্থার সকল কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করাই হলো ই-কোর্ট। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ই-কোর্ট চালু হয়েছে এবং সাফল্যজনকভাবে কাজ করছে।

বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

বর্তমান যুগে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। ছোট-বড় সকলেই কম্পিউটারে গেম খেলতে এবং অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে পছন্দ করে। তাছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন গেম খেলতে পারে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকের সাথে গল্পের আসর করা যায়। তাছাড়া পৃথিবীর বিখ্যাত সিনেমা, গল্প, উপন্যাস ডকুমেন্টারি ইত্যাদি অনলাইনে দেয়া থাকে।

যে কেউ ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় তা উপভোগ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া টুলস ব্যবহার করে শব্দ ছবি এনিমেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে স্বপ্নের ভুবন তৈরি করা যায়। যেমনঃ সৌরজগৎ, সাগরের তলদেশ ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে।

দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহার রয়েছে। কয়েকটি ব্যবহার নিচে দেওয়া হলোঃ

১. মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পরীক্ষার ফলাফল খুব সহজেই জানা যায়।

২. মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজেই টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়।

৩. অনলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ঘরে বসেই চাকরির আবেদন করা যায়। পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইন থেকে ডাউনলোড বা প্রিন্ট করা যায়।

৪. অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকেই ট্রেন ও প্লেনের টিকিট ক্রয় করা যায়।

৫. অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই সব ধরনের পত্রিকা (যা ইন্টারনেটে থাকে) পড়া যায়।

৬. ইন্টারনেটে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্যের বেচাকেনা ও বিল পরিশোধ করা যায়।

৭. এটিএম মেশিনের মাধ্যমে বুথ থেকে যেকোনো সময় টাকা ওঠানো যায়।

৮. ই-বুক পড়ার সুবিধা পাওয়া যায়।

৯. স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মস্থলে কর্মীদের কাজ মনিটরিং করা যায়।

তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তির একীভূতকরণঃ

তথ্য প্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই বোঝানো হয়। তবে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি আর এ ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই । নতুন নতুন সব প্রযুক্তির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে তথ্য প্রযুক্তি এক অভিনব রূপ লাভ করেছে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকাই প্রধান। যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, অডিও-ভিডিও কম্পিউটিং, সম্প্রচারসহ আরো বহুবিধ প্রযুক্তি এর সাথে যুক্ত হয়েছে। ফলে তথ্য প্রযুক্তি বা আইটি এখন আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
চিত্রঃ তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একীভূতকরণ।

ইন্টারনেট আবিষ্কার নিঃসন্দহে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি মাইলপলক। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন ঘরে বসেই বিশ্বকে পাওয়া যাচ্ছে হাতের মুঠোয়। প্রচলিত চিঠির বদলে এসেছে ই-মেইল এর ব্যবস্থা যার সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দেয়া যাচ্ছে বিশ্বের যে কোনো স্থানে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন টেক্সট, ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিং, ব্রডকাস্টিং, ভিওআইপি, অনলাইন অডিও-ভিডিও স্ট্রিমিং প্রভৃতি কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে। অনলাইন রেডিও, অনলাইন টিভির মতো সেবাগুলোও প্রসার লাভ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি ওয়েবসাইট তথ্যের প্রাপ্যতাকে আরও সহজ করেছে।

টেলিফোনের মাধ্যমে শব্দকে ইলেক্ট্রনিক ডাটায় রূপান্তরিত করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণ করা যায়। বর্তমানের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু শব্দ নয় লেখা, গ্রাফিক্স, স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র সবকিছুকেই ডিজিটাল ফরমেটে নিয়ে ইলেক্ট্রনিক ডাটায় রূপান্তর করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণ করা যায়। মডেমের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে টেলিফোন লাইনের সংযোগ দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আরেক শক্তিশালী উদ্ভাবন হলো মোবাইল টেলিফোন। মুঠোয় ধরে রাখা এ ফোনের মাধ্যমে আজ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কথা বলা যাচ্ছে।

যে কোনো স্থানে এ ফোন বয়েও বেড়ানো যাচ্ছে। আধুনিক স্মার্টফোনগুলো আরও বেশি সুবিধা দিচ্ছে। হ্যান্ডসেটেই ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সেবা গ্রহণ, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা যাচ্ছে। এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বের যেকোনো স্থানেই পাঠিয়ে দেয়া যাচ্ছে তথ্য। আর এমএমএস এর মাধ্যমে প্রেরণ করা যাচ্ছে মাল্টিমিডিয়া সম্বলিত তথ্য। শুধু তাই নয় জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এর সেবাও নেয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোনে। স্মার্টফোনগুলো আজ চলছে অপারেটিং সিস্টেমে।

হ্যান্ডসেটগুলোতে আরও বেশি ইন্টারনেটনির্ভর সুবিধা নিয়ে এসেছে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি যার সফল বাস্তবায়ন হলো WiMAX (Worldwide Interoperability for Microwave Access) এবং 3GPP LTE (Long Term Evolution) স্ট্যান্ডার্ড। এতসব প্রযুক্তির সম্মিলনে তথ্য প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি এসেছে সমকেন্দ্রিকতায়। এদের আর এখন আলাদা করে ভাববার কোনো অবকাশ নেই। তাই এখন এই দুই প্রযুক্তি মিলেমিশে একক একটি প্রযুক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে যাকে বলা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

সারসংক্ষেপঃ তথ্য প্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই বোঝানো হয়। তবে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি আর এ ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নতুন নতুন সব প্রযুক্তির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে তথ্য প্রযুক্তি এক অভিনব রূপ লাভ করেছে। যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, অডিও ভিডিও কম্পিউটিং, সম্প্রচারসহ আরো বহুবিধ প্রযুক্তি এর সাথে যুক্ত হয়েছে। ফলে তথ্য প্রযুক্তি বা আইটি এখন আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ এবং অবদানঃ

নিচে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ এবং অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ-

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবিকাশঃ

আধুনিক যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ মানুষের দীর্ঘ দিনের চেষ্টার ফসল। অনসন্ধানে দেখা যায় মানুষ সূচনা লগ্নে আকার-ইঙ্গিতে তথ্যের আদান-প্রদান করত। পরবর্তীতে দেয়ালে আঁচড় কেটে, পাথর খোদাই করে ইত্যাদি পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করা হত। অবশেষে কাগজ-কলমের আবির্ভাব ঘটে। আধুনিক সভ্যতার উন্নয়ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স, ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়নের হার অত্যন্ত উচ্চ।

ইলেক্ট্রনিক্স প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটিং, কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্সসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখাকে পৃথকভাবে কল্পনা করা যায় না। এসব প্রযুক্তি মিলে সৃষ্টি হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। ষাটের দশকে উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে প্রতিটি ইন্টেলস্যাট উপগ্রহে ২৪০টি টেলিফোন সার্কিট অথবা একটি টেলিভিশন চ্যানেল পরিবহনের ব্যবস্থা ছিল। তথ্য যুগের সূচনা হলো কম্পিউটারের প্রাথমিক যুগের বিবর্তনসমূহ। মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে যন্ত্রের সাহায্যে গণনা কাজের সহায়তা পেতে শরু করে ছিল।

তথ্য প্রযুক্তির সত্যিকার বিকাশ ঘটে মূলত ১৯৭০-৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসরের আবিষ্কার ও সফলভাবে কম্পিউটারের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। তাই তথ্য প্রযুক্তির যুগকে মাইক্রোপ্রসেসরের যুগ বললেও খুব বেশি বলা হবে না। মাইক্রোপ্রসরের কল্যাণে ১৯৭৬ সালে মাইক্রোকম্পিউটার, ১৯৮১ সালে পার্সোনাল কম্পিউটার, ১৯৮৪ সালে মেকিনটোশ এবং সেই থেকে ১৯৯৬ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রতিটি মুহূর্তই তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এ প্রযুক্তির মূলে রয়েছে আধুনিক টেলিযোগাযোগ, ডাটা নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা। টেলিযোগাযোগ আধুনিক বিশ্বের একটি অপরিহার্য ব্যবস্থা। বাঁধা বা কোন প্রকার সেন্সরশীপ ছাড়াই পৃথিবীর এক স্থান হতে অন্য স্থানে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব। টেলিফোন কল ছাড়াও বিশাল পরিমাণ ডাটা এ নেটওয়ার্ক দিয়ে স্থানান্তর করা যায়। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স এবং সফ্টওয়্যার কৌশলের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আধুনিক ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়।

কম্পিউটার দিয়ে ডাটা প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক প্রসারের সাথে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি ডাটা স্থানান্তরের গুরুত্ব ও প্রযোজনীয়তা বেড়ে চলেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ধারাটি হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি যার মূলে রয়েছে বাইনারি পদ্ধতি। তাই বর্তমান যুগকে ডিজিটাল যুগও বলা যায়। ফাইবার অপটিক ক্যাবল আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

চুলের মত সরু এ ক্যাবল দিয়ে বয়ে নেয়া যায় একসাথে অসংখ্য টেলিফোন কল, বিশাল পরিমাণ ডাটা এবং অনেক টেলিভিশন সংকেত। বিশ্বব্যাপি দ্রুত যোগাযোগের জন্য সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে স্থাপিত হয়েছে ফাইবার অপটিক ক্যাবল। ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে প্রেরিত সংকেতের গুণ ও মান উপগ্রহ দিয়ে প্রেরিত সংকেতের তুলনায় অনেক উন্নত।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদানঃ

আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব অপরিসীম। এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অবদান হলোঃ-

১। অপচয় রোধ করে।

২। সময় সাশ্রয় হয়।

৩। তথ্যের প্রাপ্যতা সহজ হয়।

৪। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল, এসএমএস, এমএমএস প্রভৃতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৫। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের অর্ডার দেয়া যায়।

৬। প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের গতিকে ত্বরান্বিত করে।

৭। সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৮। ব্যবসায়-বাণিজ্যে লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৯। ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায়।

১০। শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মনুষ্যশক্তির অপচয় কমায়।

১১। মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটায়।

১২। শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।

১৩। ই-গভর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে কাজের সমন্বয় ঘটানো যায়।

১৪। সিটিজেন চার্টারের মতো নাগরিক সুবিধাগুলো ঘরে বসেই পাওয়া যায়।

১৫। ঘরে বসেই বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন বিলের মতো বিভিন্ন ইউটিলিটি বিলগুলো এখন মোবাইল ফোনেই দেয়া যায়।

সারসংক্ষেপঃ তথ্য প্রযুক্তির সত্যিকার বিকাশ ঘটে মূলত ১৯৭০-৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসরের আবিষ্কার ও সফলভাবে কম্পিউটারের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। তাই তথ্য প্রযুক্তির যুগকে মাইক্রোপ্রসেসরের যুগ বললেও খুব বেশি বলা হবে না। মাইক্রোপ্রসরের কল্যাণে ১৯৭৬ সালে মাইক্রোকম্পিউটার, ১৯৮১ সালে পার্সোনাল কম্পিউটার, ১৯৮৪ সালে মেকিনটোশ এবং সেই থেকে ১৯৯৬ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রতিটি মুহূর্তই তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধাঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা নিচে দেওয়া হলোঃ-

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধাঃ

১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে পারিবারিক বা ব্যবসায়িক সদস্যদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়।

২।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অপচয় কম হয়।

৩। ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই মতামত আদান প্রদান করা যায়।

৪। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে প্রায় সমস্তক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে উন্নতি হয়।

৫। ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে স্বয়ংক্রিয় বা ডিজিটাল করেছে। এ জন্য কম খরচেই ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।

৬। তথ্য ও যোগাযোগ অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।

৭। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ, নিরাপদ, দ্রুত, আরামদায়ক ও সুলভ হয়েছে।

৮। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার মান আগের থেকে অনেক উন্নত হচ্ছে।

৯। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনেক সুবিধা প্রদান করে। খুব সহজেই লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে।

১০। টেলিমেডিসিন এর এর ব্যবহার বেড়েছে। যার ফলে চিকিৎসার পরিষেবা পাওয়া অনেক সহজ হয়েছে। অর্থাৎ আপনি বাড়িতে বসেই ডাক্তার এর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন।

১১। শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে অতিরিক্ত শ্রম শক্তির অপচয়কে রোধ করে।

১২। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে খুব সহজেই যেকোনো তথ্য সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারি। যেমনঃ ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জানা সম্ভব হয়েছে।

১৩। এই প্রযুক্তিতে সাহায্যে তৎক্ষণাৎ কোনো সময়ের বিষয়রবস্তু সম্বন্ধে সবাই অবগত হতে পারে এবং প্রত্যেকের মতামত Realtime এ পাওয়া সম্ভব।

১৪। যোগাযোগের মাধ্যম অনেক উন্নত হয়েছে। তথ্য আদান প্রদান করা খুব সহজ এবং সুলভ হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে।

আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধাঃ

১। কোন ব্যক্তি বিশেষের ই-মেইলের মাধ্যমে হয়রানি।

২। অন্যের কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করা।

৩। প্রতারণা করা।

৪। অপবাদ দেয়া।

৫। কম্পিউটার সিস্টেমে অবাঞ্ছিত প্রবেশ/ নিয়ন্ত্রণ।

৬। কোন প্রতিষ্ঠানের নিষিদ্ধ বা সংরক্ষিত তথ্য অধিকার বা চুরি।

৭। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাইবার সন্ত্রাস করা।

৮। গোপনীয় বা অবৈধ তথ্য পাচার ও অবৈধ আর্টিকেল বিক্রয়।

৯। পাইরেটকৃত সফটওয়্যার বিক্রয় ও বিতরণ। 

১০। পর্নোগ্রাফি/ অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বিষয় প্রদর্শনের মাধ্যমে যুব সমাজকে দূষিত করা।

১১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অত্যাধিক পরিমাণ ব্যবহার করার ফলে আমাদের অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

১২। অনেক সময় দেখা যায় মিথ্যাচার খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

১৩। অনেক গোপন বিষয় মাঝে মাঝে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

১৪। অনলাইন জুয়া, হ্যাকিং, স্প্যামিং, সাইবার আক্রমণ, সাইবার চুরি, টাইম এন্ড রিসোর্স চুরি, সফ্টওয়্যার এন্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপ্রার্টি পাইরেসি, ভাইরাস এবং ওয়ার্ম ইত্যাদি ধরনের অপরাধ।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদানঃ

তথ্য প্রযুক্তিতে বর্তমানে যে সব মৌলিক উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো হলোঃ- কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, আধুনিক টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, ই-মেইল, অডিও ভিডিও, মাইক্রোওয়েভ, স্যাটেলাইট, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স ইত্যাদি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিচে আলোচনা করা হলোঃ-

কম্পিউটারঃ

ল্যাটিন শব্দ Computare থেকে ইংরেজি Computer শব্দটির উৎপত্তি। Computer শব্দটির আভিধানিক অর্থ গণনাযন্ত্র বা হিসাবকারী যন্ত্র। পূর্বে কম্পিউটার দিয়ে শুধুমাত্র হিসাব-নিকাশের কাজই করা হতো। কিন্তু বর্তমান অত্যাধুনিক কম্পিউটার দিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে জটিল হিসাব-নিকাশের কাজ নির্ভুলভাবে করা ছাড়াও বহু রকমের কাজ করা যায়। কম্পিউটার সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি হিসাব-নিকাশ করতে পারে। কম্পিউটারে কাজ করার গতি হিসাব করা হয় সাধারণত ন্যানোসেকেন্ড এ।

ন্যানোসেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের একভাগ সময় মাত্র। ইলেকট্রন প্রবাহের মাধ্যমে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। মূলত কম্পিউটার একটি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র, যা নিজস্ব স্মৃতিভাণ্ডারে সুনির্দিষ্ট এক বা একাধিক কাজের নির্দেশাবলি সংরক্ষণ করে রাখে। ব্যবহারকারী ডাটা বা উপাত্ত সরবরাহ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণ (প্রসেসিং) করে কাজের ফলাফল প্রদান করে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ইন্টারনেটঃ

ইন্টারনেট শব্দটির পূর্ণরূপ হলো ইন্টারকানেকটেড নেটওয়ার্ক (Inter Conntected Networks)। অন্য কথায় নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কই হলো ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়া একমাত্র আধিপত্য বিস্তারকারী মাধ্যমটির নাম ইন্টারনেট (Inernet)।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাঃ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হলোঃ-

১. ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে কাঙ্ক্ষিত তথ্যের নাম লিখে সার্চ করলেই তথ্যগুলো প্রদর্শিত হয়।

২. ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বর যে কোন প্রান্তে ই-মেইল করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।

৩. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।

৪. VOIP এর মাধ্যমে প্রচলিত ফোনের চাইতে খুব কম খরচে বিশ্বর যে কোন প্রান্তে কথা বলা যায়।

৫. ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।

৬. বিভিন্ন ধরনের সফ্টওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যায়।

৭. ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়।

৮. ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-কমার্সের সাহায্যে ঘরে বসেই পণ্য কেনা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url