ডায়াবেটিস কী? এই রোগ সম্পর্কে যা জানা খুবই জরুরি

 

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস কি?

রক্তে শর্করার পরিমাণ যদি স্বাভাবিকের চাইতে অনেকগুণ বেশি হয়ে থাকে তাকে ডায়াবেটিস বলে। রক্তে যখন শর্করা বেশি বেড়ে যায় তখন প্রস্রাবের সাথে এই শর্করা বের হয়ে যায়। যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তবে শর্করা কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার দেহের কাজে লাগে না। মানসিক চিন্তা ভাবনার জন্যই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। আবার বংশগত কারণ কিংবা মেদাধিক্য ঘটলেও ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিস আমিষ ও চর্বির উপযুক্ত বিপাক কার্যে গন্ডগোল ঘটায়। সাধারণত ইনসুলিনের অভাবেই এ রকম হয়ে থাকে। ইনসুলিন এক জাতীয় জৈব রস। ইনসুলিন রক্তে আমিষের পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। ইনসুলিন রক্তে আমিষ, শর্করা এবং চর্বিজাতীয় খাদ্যের বিপাক ঘটায় ।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝবেন কি করেঃ

১। ক্ষুধা খুব বেশি বেড়ে যাওয়া ।

২। প্রস্রাব ঘন ঘন হওয়া।

৩। পানির পিপাসা বোধ করা।

৪ । শারীরিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা বোধ করা।

৫। নানা ধরনের চর্মরোগ বেড়ে যাওয়া।

৬। চোখে ঝাপসা দেখা।

৭। ক্ষত শুকোতে বিলম্ব হওয়া।

অনেক সময় এ ধরনের লক্ষণ শুধুমাত্র অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হয় না।

কাদের ডায়াবেটিস বেশি হয়?

১। যাদের বংশে কেউ না কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে।

২। যারা পরিশ্রম করে না ।

৩ ৷ মেদবহুল শরীর।

৪। মাঝ বয়েসী এবং বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে।

৫। যদি দীর্ঘদিন যাবৎ কর্টিসোন জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকে।

৬। অপুষ্টির কারণে।

ডায়াবেটিস হলে সাধারণত কি ধরনের জটিলতা হয়ে থাকে?

ডায়াবেটিস যদিও একটি রোগ কিন্তু দেখা যায় এ রোগের জটিলতা অনেক। ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায় তবে দেখা যায় যে, বছর কয়েক পরেই নানা রকম জটিলতা এসে উপস্থিত হচ্ছে।

১ । হৃদপিণ্ড ও রক্তবাহী নালীর জটিলতা ।

২ । বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের জটিলতা (যক্ষা)।

৩। কিডনী সংক্রান্ত জটিলতা ।

৪ । দাঁত ও মুখের জটিলতা।

৫। চোখ সংক্রান্ত নানা জটিলতা।

৬। ডায়াবেটিসে পায়ের জটিলতা।

৭। স্নায়ু সংক্রান্ত জটিলতা।

৮। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ।

৯। যৌন জীবনে জটিলতা।

১০। মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যায় (অতিরিক্ত ওজনের শিশু, মৃত শিশু, অকালে সন্তান প্রসব, শিশুর জন্মের পর পরই মৃত্যু, ত্রুটিযুক্ত শিশু)।

ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে কিভাবে মুক্ত রাখা যায়?

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকিও বেড়ে যায় অনেক । তবে এমন কিছু নিয়ম আছে যা মেনে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব ।

১। পরিমিত ভাবে আহার করতে চেষ্টা করুন।

২। সময়মত খাবার গ্রহণ করুন।

৩ । প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালরি গ্রহণ করুন।

৪। ধূমপান বর্জন করুন।

৫। বয়স এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে ব্যায়াম করুন।

৬। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম পরিহার করুন।

৭। মদ স্পর্শ করবেন না।

৮। খাবার সময়ে কম খেয়ে পরবর্তীতে অতিরিক্ত খাবেন না।

৯। সকাল-বিকাল কিছু সময় হাঁটুন সেই সাথে ওঠা বসা করলে ভাল হয়।

১০। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘামবেন ততোক্ষণ পর্যন্ত ব্যায়াম করে যাবেন।

১১। চিনি, গুড় এবং মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাবেন না।

জরুরী অবস্থাঃ

রোগী যদি খুব বেশি পরিমাণে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়, অথবা খুব কম খায় কিংবা খুব বেশি ব্যায়াম করে থাকে তবে যে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে-

১। রোগী অতিমাত্রায় ক্ষুধার্ত বোধ করে।

২। শরীরে কাঁপুনির সৃষ্টি হয়।

৩। মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হয় ।

৪। বুক ধড়ফড় করে।

৫। চোখের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।

৬ । কাজে অমনোযোগী হয়ে যায়।

৭। আঙুল ও ঠোঁট ভার বোধ হয়।

৮। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এ অবস্থায় আপনার কি করণীয়?

১। চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীকে খেতে দিন। এরপর কিছু সময় বিশ্রাম নিতে বলুন দেখবেন রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু যদি মিনিট দশেকের মধ্যেও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না ঘটে তবে ডাক্তারের সাহায্য নিন।

২। ডায়াবেটিস রোগী সব সময় কিছু চিনি বা মিছরী সঙ্গে রাখবেন।

৩। রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে তবে রোগীকে ণ্ডকানন ইনজেকশন দিতে হবে।

ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে আর কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়?

১। রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

২। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। 

৩। শ্বাসে এসিটোনের গন্ধ আসে।

৪। রোগীর বার বার প্রস্রাব হয়।

৫। রোগীর ক্ষুধা বেড়ে যায় ৷

৬। মাথা ব্যথা হয় ।

৭। বমির ভাব হয়।

৮। রোগী অত্যধিক পিপাসার্ত বোধ করে।

এ ধরনের সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় সাধারণত কি কারণে?

১। রোগী অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে।

২। পরিমিত ব্যায়াম না করলে।

৩। কোনও সংক্রমিত রোগ থাকলে ।

৪ । ইনসুলিন ইনজেকশন কম নিলে ।

এ সমস্যায় করণীয় কি?

১। প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২। রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিন।

৩। ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ান।

৪ । চা কিংবা কফি খেতে দিন।

ডায়াবেটিস থেকে যাতে জটিলতার সৃষ্টি না হয়ঃ

১। রোগ যেন না বাড়তে পারে সেজন্য নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

২। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।

৩। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

৪ । নিয়মমাফিক এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম করুন।

৫। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য কিছু পরামর্শঃ

১। বেশি চিন্তা ভাবনা করবেন না।

২। অলসতা ত্যাগ করুন এবং সংসারের কিছু দৈনন্দিন কাজে অংশ গ্রহণ করুন।

৩। নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৪। রক্ত ও প্রস্রাব নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করুন।

৫। সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন।

৬। পরিমিত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করুন।

৭। আহার যেন সুষম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

৮। রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্বে এবং যখনই খাবার খাবেন তখনই দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করে নেবেন।

৯। খাদ্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। ওষুধ গ্রহণ করুন, নিয়ম কানুনগুলো মেনে চলুন এবং তা যেন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হয়।

১০। নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করুন।

১১। শরীরের ঘা বা ক্ষত যদি শুকোতে দেরী হয়, তবে অতিশীঘ্র ডাক্তার দেখান।

১২। পায়ের যত্ন নেবার জন্য নরম জুতো ব্যবহার করুন।

১৩। খালি পায়ে হাটবেন না। পায়ের মোজা পরিষ্কার রাখুন।

১৪ । পায়ের রঙের কোনও পরিবর্তন যদি দেখে থাকেন, তবে আপনার চিকিৎসককে জানান।

১৫। পায়ের নখ যখন কাটবেন তখন লক্ষ্য রাখবেন পা যাতে না কাটে।

১৬। শুকনো তোয়ালের সাহায্যে দু'আঙ্গুলের মাঝে মুছে রাখুন। আপনার পা-কে আঘাত থেকে রক্ষা করুন।

১৭। ইনসুলিন নিলে রোজা রাখতে পারবেন না। আবার যারা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন কিংবা বড়ি খেয়ে থাকেন এরা রোজা রাখতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url