সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সাবমেরিন কি?

সাবমেরিন হলো এক ধরণের জাহাজ যা পানির নিচে চলতে পারে। এগুলো সামরিক এবং বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।

সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সামরিক সাবমেরিনগুলি অন্যান্য জাহাজ, ডুবোজাহাজ এবং স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং বিশেষ বাহিনীকে সন্নিবেশ করানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়।

বেসামরিক সাবমেরিনগুলি গবেষণা, অনুসন্ধান এবং উদ্ধার এবং অফশোর তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রথম সাবমেরিনগুলি 17 শতকে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা 19 শতকের আগ পর্যন্ত ব্যবহারিক হয়ে ওঠেনি, যখন বাষ্প ইঞ্জিনের বিকাশ সাধিত হয় তখনই সাবমেরিন গুলো পানির নিচে দীর্ঘ সময় ধরে চলার সক্ষমতা অর্জন করে।

বিংশ শতাব্দীতে, সাবমেরিনগুলি আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, জার্মান সাবমেরিনগুলি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে বাণিজ্যিক জাহাজের উপর আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, সাবমেরিনগুলি আটলান্টিক মহাসাগরে মিত্রবাহিনী এবং জার্মানির মধ্যে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সাবমেরিনগুলি পারমাণবিক শক্তিচালিত হয়ে ওঠে, এই জন্য পানির নিচে আরও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে এবং অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

আজ, সাবমেরিনগুলি বিশ্বের অনেক নৌবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলি একটি শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক অস্ত্র এবং দূরবর্তী আক্রমণ চালানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুনঃ সেন্সর কি? সেন্সর কত প্রকার ও কি কি? সেন্সর এর কাজ কি? সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি?

সাবমেরিনের প্রকারভেদ:

  • পারমাণবিক শক্তিচালিত: দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে থাকতে পারে এবং দূরবর্তী ভ্রমণ করতে পারে।
  • ডিজেল-ইলেকট্রিক: পারমাণবিক সাবমেরিনের চেয়ে কম পরিসীমা, কিন্তু নির্মাণে কম ব্যয়বহুল।
  • আক্রমণকারী: অন্যান্য জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ আক্রমণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন: পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • গবেষণা: বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।

সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে?

  • পানিতে ডুবতে: ব্যাল্লাস্ট ট্যাঙ্কগুলিকে পানি দিয়ে ভরা হয়।
  • ভেসে উঠতে: ব্যাল্লাস্ট ট্যাঙ্কগুলি থেকে পানি সম্পূর্ণ বের করে দেওয়া হয়।
  • সামনে এবং পিছনে চলতে: প্রপেলার ব্যবহার করা হয়।
  • পানির নিচে শব্দ সনাক্ত করতে: সোনার ব্যবহার করা হয়।
  • অন্যান্য জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ আক্রমণ করতে: অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

সাবমেরিনের মূল নীতি:

একটি সাবমেরিন, যাকে ডুবোজাহাজও বলা হয়, পানির নিচে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে সক্ষম এক ধরণের জলযান। এটি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে সামরিক অপারেশন, গবেষণা এবং পর্যটন ইত্যাদি।

  • আর্কিমিডিসের নীতি: এই নীতি অনুসারে, পানিতে নিমজ্জিত বস্তু যে পরিমাণ পানি সরিয়ে দেয় তার ওজনের সমান উত্তোলন বল অনুভব করে। সাবমেরিনে জলের ভেতরে ডুবতে বা ভেসে উঠতে সাহায্য করার জন্য  ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়। যখন ট্যাঙ্কগুলিতে পানি ভরা থাকে, তখন সাবমেরিন ভারী হয়ে জলের নিচে ডুবে যায়। যখন ট্যাঙ্ক থেকে পানি বের করে দেওয়া হয়, তখন সাবমেরিন হালকা হয়ে পানির উপরে ভেসে ওঠে।
  • হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপ: পানির গভীরতায় যাওয়ার সাথে সাথে চাপ বৃদ্ধি পায়। সাবমেরিনের শরীর বা বাইরের অংশ এই চাপ সহ্য করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়।

সাবমেরিনের বিভিন্ন অংশের নাম:

বাহ্যিক অংশ:
  • প্রেসার হাল: সাবমেরিনের মূল অংশ, যা পানির চাপ সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • কন্ট্রোল টাওয়ার: সাবমেরিনের চালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সোনার ডোম: পানির নিচে বস্তু সনাক্ত করতে ব্যবহৃত সোনার সিস্টেম রাখে।
  • পেরিস্কোপ: পানির উপরে না উঠেও চারপাশ দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • হাইড্রোফোন: পানির নিচে শব্দ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
  • হাইড্রোপ্লেন: সাবমেরিনের গভীরতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রোপেলার: সাবমেরিনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও সামনে-পিছনে চালিয়ে নিয়ে যেতে এবং ঘুরানোর কাজে প্রোপেলার ব্যবহার করা হয়।
  • রডার: সাবমেরিনের দিক পরিবর্তন করতে ব্যবহৃত হয়।
  • স্টার্ন প্লেন: সাবমেরিনের পেছনের অংশের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয় এবং সাবমেরিনের দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক: পানি দিয়ে ভরা বা খালি করে সাবমেরিনের ভাসা নিয়ন্ত্রণ করে। সাবমেরিন ডুবতে এবং ভেসে উঠতে সাহায্য করে।
  • কনার টাওয়ার: সেলের উপরে অবস্থিত, চারপাশে দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • স্নোরকেল: পানির নিচে থাকাকালীন ডিজেল ইঞ্জিনের জন্য বাতাস সরবরাহ করে।
অভ্যন্তরীণ অংশ:
  • ক্রু কোয়ার্টার: স্ক্রু এবং নাবিকদের থাকার, খাওয়ার এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ইঞ্জিন রুম: সাবমেরিনের চালিকাশক্তি সরবরাহ করে। সাবমেরিনের ইঞ্জিন ধারণ করে।
  • ব্যাটারি রুম: সাবমেরিনের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
  • টর্পেডো রুম: টর্পেডো সংরক্ষণ করে।
  • টর্পেডো টিউব: টর্পেডো ছুঁড়তে ব্যবহৃত হয়।
  • কন্ট্রোল রুম: সাবমেরিনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখে। সাবমেরিন চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • কারগো হোল্ড: মালামাল বা সরঞ্জাম বহন করে।
  • গ্যালি: নাবিকদের জন্য খাবার তৈরি করে।
  • টয়লেট: নাবিকদের ব্যবহারের জন্য।
  • অস্ত্র: অন্যান্য জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • রেডিও: যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
  • জীবন সহায়তা ব্যবস্থা: সাবমেরিনের ভেতরে বায়ু, পানি এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা: আগুন, পানি ঢোকা এবং অন্যান্য বিপদ থেকে সাবমেরিনকে রক্ষা করে।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থা: সাবমেরিনের ভেতরে এবং বাইরে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মনে রাখবেন: এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয় এবং বিভিন্ন ধরণের সাবমেরিনের অংশগুলি পরিবর্তিত হতে পারে। সাবমেরিনের ডিজাইন এবং প্রযুক্তি সময়ের সাথে সাথে উন্নত হচ্ছে, তাই নতুন অংশ এবং ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে।

সাবমেরিন পানিতে ডুবে এবং ভেসে ওঠে কিভাবে?

সাবমেরিন পানিতে ডুবতে এবং ভেসে উঠতে ব্যালাস্ট ট্যাংক এবং স্টার্ন প্লেন ব্যবহার করে। সাবমেরিন পানিতে ডুবতে এবং ভেসে উঠতে ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে।

সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এই ট্যাঙ্কগুলো জলরোধী এবং পানি দিয়ে ভরা বা খালি করা যায়।
  • পানিতে ডুবতে: ব্যালাস্ট ট্যাঙ্কগুলো পানি দিয়ে ভরা হয়। পানি ট্যাঙ্কে প্রবেশ করলে সাবমেরিন ভারী হয়ে পানিতে ডুবে যায়। ট্যাঙ্কগুলোতে পানি ভরার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে সাবমেরিন কতটা গভীরে যেতে চায় তা নির্ধারণ করা হয়।
  • ভেসে উঠতে: ব্যালাস্ট ট্যাঙ্কগুলো থেকে পানি বের করে দেওয়া হয়। ট্যাঙ্ক থেকে পানি বের হয়ে গেলে সাবমেরিন হালকা হয়ে পানিতে ভেসে ওঠে।  ট্যাঙ্কগুলো থেকে পানি বের করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে সাবমেরিন কতটা উপরে উঠতে চায় তা নির্ধারণ করা হয়।
এই প্রক্রিয়াটি আরও সহজভাবে আলোচনা করা হলো:

ব্যালাস্ট ট্যাংক:
  • সাবমেরিনের ভেতরে বেশ কয়েকটি ব্যালাস্ট ট্যাংক থাকে যা পানি দিয়ে ভরা বা খালি করা যায়।
  • যখন ট্যাংকগুলিতে পানি থাকে, তখন সাবমেরিন ভারী হয়ে যায় এবং ডুবে যায়।
  • যখন ট্যাংকগুলি খালি করা হয়, তখন সাবমেরিন হালকা হয়ে ভেসে ওঠে।
স্টার্ন প্লেন:
  • সাবমেরিনের পিছনের অংশে অবস্থিত স্টার্ন প্লেন সাবমেরিনের দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • যখন স্টার্ন প্লেন উপরে থাকে, তখন সাবমেরিনের নাক উপরে উঠে এবং ডুবে যায়।
  • যখন স্টার্ন প্লেন নিচে থাকে, তখন সাবমেরিনের নাক নিচে নেমে ভেসে ওঠে।
এছাড়াও, সাবমেরিনে আরও কিছু যন্ত্র থাকে যা ডুবতে এবং ভেসে উঠতে সাহায্য করে:
  • হাইড্রোলিক পাম্প: ব্যালাস্ট ট্যাংকে পানি পাম্প করে।
  • কম্প্রেসড এয়ার সিস্টেম: ট্যাংক থেকে পানি বের করে।
  • ব্যাটারি: বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

সাবমেরিন ডুবন্ত অবস্থায় কিভাবে কাজ করে:

  • ডুবন্ত অবস্থায়, সাবমেরিন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • এই বিদ্যুৎ ব্যাটারি চার্জ করতে এবং ইলেকট্রিক মোটর চালাতে ব্যবহার করা হয়।
  • ইলেকট্রিক মোটর প্রপেলার ঘোরায়, যা সাবমেরিনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সাবমেরিন ভেসে ওঠা অবস্থায় কিভাবে কাজ করে:

  • ভেসে ওঠা অবস্থায়, সাবমেরিন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
  • এই বিদ্যুৎ ব্যাটারি চার্জ করতে এবং জেনারেটর চালাতে ব্যবহার করা হয়।
  • জেনারেটর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যা ইলেকট্রিক মোটর চালাতে ব্যবহার করা হয়।
  • ইলেকট্রিক মোটর প্রপেলার ঘোরায়, যা সাবমেরিনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মনে রাখবেন: সাবমেরিনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে যা ডুবন্ত অবস্থায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং জরুরী পরিস্থিতিতে সাবমেরিনকে ভেসে উঠতে সাহায্য করে।

সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজের বিভিন্ন ব্যবহার কি কি?

সাবমেরিনের বিভিন্ন ব্যবহার নিচে দেওয়া হলো।
সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সামরিকক্ষেত্রে ব্যবহার:

  • শত্রু জাহাজ ও স্থাপনা আক্রমণ: সাবমেরিন গুপ্তভাবে শত্রু জাহাজ ও উপকূলীয় স্থাপনায় আক্রমণ করতে পারে। টর্পেডো, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদ ব্যবহার করে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়।
  • গোয়েন্দাগিরি: শত্রুদের গোয়েন্দাগিরি করতে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে সাবমেরিন ব্যবহার করা হয়। বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা শত্রুদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
  • মাইন স্থাপন: শত্রু জলপথে মাইন স্থাপন করে নৌ চলাচল ব্যাহত করা হয়।
  • বাণিজ্যিক জাহাজ আটকানো: যুদ্ধকালে শত্রু রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজ আটকিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি করা হয়।
  • ক্ষেপণাস্ত্র বহন: কিছু আধুনিক সাবমেরিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে যা দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
  • উদ্ধার ও অনুসন্ধান: ডুবে যাওয়া জাহাজ ও নৌযানের উদ্ধার ও অনুসন্ধানে সাবমেরিন সহায়তা করতে পারে। তাদের বিশেষ সেন্সর ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিখোঁজ জিনিস খুঁজে বের করা হয়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা:

  • সমুদ্রের গভীরতা অন্বেষণ: বিজ্ঞানীরা সাবমেরিন ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা অন্বেষণ করেন এবং নতুন প্রজাতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কার করেন।
  • সমুদ্রের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, প্রবাহ, এবং অন্যান্য পরিবেশগত বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা সাবমেরিন ব্যবহার করেন।
  • পানির নিচের ভূতত্ত্ব গবেষণা: পানির নিচের পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কে জানতে সাবমেরিন ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য ব্যবহার:

  • পানির নিচের নির্মাণ কাজ: সেতু নির্মাণ, পাইল লাগানো, এবং অন্যান্য পানির নিচের নির্মাণ কাজে সাবমেরিন ব্যবহার করা হয়।
  • খনিজ সম্পদ উত্তোলন: তেল, গ্যাস, এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সাবমেরিন ব্যবহার করা হয়।
  • পর্যটন: কিছু লোক সমুদ্রের গভীরতা ভ্রমণের জন্য পর্যটন সাবমেরিন ব্যবহার করে।

সাবমেরিন পানির কত গভীর পর্যন্ত যেতে পারে?

একটি সাবমেরিন কতটা গভীরে যেতে পারে তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপর, যেমন:
  • ডিজাইন: বিভিন্ন ধরণের সাবমেরিন আছে, যেমন আক্রমণাত্মক সাবমেরিন, গবেষণা সাবমেরিন, বাণিজ্যিক সাবমেরিন, প্রভৃতি। প্রতিটি ধরণের সাবমেরিনের নিজস্ব নকশা এবং গভীরতার সীমা থাকে।
  • উপকরণ সামগ্রী: সাবমেরিন তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণগুলি কতটা চাপ সহ্য করতে পারে তার উপর গভীরতার সীমা নির্ভর করে। উচ্চ-মানের ইস্পাত এবং অন্যান্য শক্তিশালী উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি সাবমেরিনগুলি গভীরতায় যেতে পারে।
  • প্রযুক্তি: সাবমেরিনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি কতটা উন্নত তার উপরও গভীরতার সীমা নির্ভর করে। উন্নত সেন্সর, ন্যাভিগেশন সিস্টেম এবং প্রপালশন সিস্টেম সাবমেরিনগুলিকে আরও গভীরতায় যেতে সাহায্য করে।
  • কার্যক্রম: সাবমেরিন কতক্ষণ ধরে ডুবে থাকতে পারে তার উপরও গভীরতার সীমা নির্ভর করে। কিছু সাবমেরিন দীর্ঘ সময় ধরে ডুবে থাকার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যখন অন্যগুলি শুধুমাত্র ছোট সময়ের জন্য ডুবে থাকতে পারে।
সাধারণভাবে, আধুনিক সাবমেরিন 600 মিটার (2,000 ফুট) থেকে 1,000 মিটার (3,300 ফুট) গভীরতায় যেতে পারে। কিছু বিশেষ সাবমেরিন আরও গভীরতায় যেতে পারে, যেমন রাশিয়ান নেভির K-129 সাবমেরিন যা 6,800 মিটার (22,000 ফুট) গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম ছিল। 

তবে সাবমেরিনগুলি সাধারণত তাদের সর্বোচ্চ গভীরতায় পরিচালনা করা হয় না। নিরাপত্তার জন্য, সাবমেরিনগুলি তাদের সর্বোচ্চ গভীরতার 80% এর মধ্যে পরিচালনা করা হয়। 

একটি সাবমেরিন কতটা গভীরে যেতে পারে তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। আধুনিক সাবমেরিন সাধারণত 600 মিটার থেকে 1,000 মিটার গভীরতায় যেতে পারে, তবে কিছু বিশেষ সাবমেরিন আরও গভীরতায় যেতে পারে।

কোন দেশে কয়টি সাবমেরিন আছে বা বিশ্বে কতটি সাবমেরিন আছে?

নির্ভুলভাবে বলা কঠিন কারণ বিভিন্ন ধরণের সাবমেরিন আছে এবং সব দেশই তাদের সাবমেরিনের সংখ্যা প্রকাশ করে না। তবে, কিছু তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বে মোটামুটি ৫০০ টিরও বেশি সাবমেরিন আছে।

সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এই সংখ্যাটিতে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ধরণের সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত।
  • সামরিক সাবমেরিন: বেশিরভাগ দেশের নৌবাহিনীরই সাবমেরিন আছে।
  • পারমাণবিক সাবমেরিন: এই সাবমেরিনগুলো পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে থাকতে পারে। বিশ্বে মোটামুটি ১৮০ টি পারমাণবিক সাবমেরিন আছে।
  • ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন: এই সাবমেরিনগুলো ডিজেল বা বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত এবং পারমাণবিক সাবমেরিনের তুলনায় ছোট এবং কম সক্ষম। বিশ্বে মোটামুটি ৩২০ টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন আছে।
  • বেসামরিক সাবমেরিন: গবেষণা, খনন, পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

কয়েকটি দেশ যাদের সবচেয়ে বেশি সাবমেরিন আছে:

  • যুক্তরাষ্ট্র: ৬৭ টি পারমাণবিক সাবমেরিন
  • রাশিয়া: ৩১ টি পারমাণবিক সাবমেরিন, ৩০ টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন
  • চীন: ১২ টি পারমাণবিক সাবমেরিন, ৭০ টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন
  • যুক্তরাজ্য: ১১ টি পারমাণবিক সাবমেরিন
  • ফ্রান্স: ৮ টি পারমাণবিক সাবমেরিন
  • ভারত: ১ টি পারমাণবিক সাবমেরিন, ১৪ টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন
  • বাংলাদেশের সাবমেরিন: বাংলাদেশের নৌবাহিনীর ২ টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন আছে।

সাবমেরিন কে আবিষ্কার করেন?

একক ব্যক্তি সাবমেরিন আবিষ্কার করেননি। বরং, এটি সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন উদ্ভাবক এবং প্রকৌশলীদের কাজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছিল।

প্রাথমিক ধারণা:
  • ১৬ শতকে: ইংরেজ যান্ত্রিক প্রকৌশলী উইলিয়াম বোর্ন পানির নিচে ভ্রমণের জন্য একটি যানবাহনের ধারণা প্রদান করেন।
  • ১৭ শতকে: ডাচ বিজ্ঞানী কর্নেলিস ড্র্রেবেল রাজা জেমস প্রথমের জন্য একটি কাঠের ডুবোজাহাজ তৈরি করেন।
গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি:
  • ১৮ শতকে: ইংরেজ আবিষ্কারক হোরেস ব্লান্ড প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কার্যকরভাবে কাজ করে এমন একটি ডুবোজাহাজ তৈরি করেন।
  • ১৯ শতকে: আমেরিকান আবিষ্কারক রবার্ট ফুলটন বাষ্পচালিত ডুবোজাহাজ তৈরি করেন। ফরাসি আবিষ্কারক হেনরি ডেপ্লয় আধুনিক সাবমেরিনের ভিত্তি স্থাপন করে এমন দ্বি-কর্মক্ষম ইঞ্জিন এবং ব্যালাস্ট ট্যাংক ব্যবহার করে।
২০ শতক ও তার পরে:
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিনগুলি সামরিক অস্ত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার সাবমেরিনের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করে।
  • আজকের সাবমেরিনগুলি অত্যন্ত উন্নত যানবাহন যা গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ করতে পারে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
  • গিবার্ড ডি লোডিয়ের: ফরাসি আবিষ্কারক, "প্লাঞ্জিং বোট" নকশা করেন।
  • সাইমন লক: আমেরিকান আবিষ্কারক, "টার্টল" নকশা করেন।
  • জন পি. হল্যান্ড: আইরিশ-আমেরিকান আবিষ্কারক, "ফেনিয়ান রাম" নকশা করেন।
  • গর্ডন রিড: ব্রিটিশ আবিষ্কারক, "হোল্যান্ড নং 1" নকশা করেন।
উল্লেখ্য যে, সাবমেরিনের বিকাশে আরও অনেক ব্যক্তির অবদান ছিল।

সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ কিভাবে অন্যান্য জাহাজ আক্রমণ করে?

সাবমেরিন বিভিন্ন উপায়ে অন্যান্য জাহাজ আক্রমণ করতে পারে।

সাবমেরিন কি? সাবমেরিন কত প্রকার ও কি কি? সাবমেরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রধান উপায়গুলো হল:

1. টর্পেডো ব্যবহার:
  • টর্পেডো হলো স্ব-চালিত অস্ত্র যা পানির নিচে লক্ষ্যস্থলে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
  • টর্পেডোতে বিস্ফোরক ওয়ারহেড থাকে যা আঘাতের সময় বিস্ফোরিত হয়।
  • আধুনিক টর্পেডোগুলি অত্যন্ত নির্ভুল এবং দ্রুত গতিতে চলে।
  • সাবমেরিন একাধিক টর্পেডো একসাথে ছুঁড়ে দিতে পারে।
2. ক্ষেপণাস্ত্র:
  • সাবমেরিনগুলি বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র, ল্যান্ড-অ্যাটাক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পারমাণবিক অস্ত্র বহন করে)।
  • সাবমেরিনগুলি বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে অন্যান্য জাহাজ, স্থল লক্ষ্যবস্তু এবং এমনকি উপগ্রহ আক্রমণ করতে পারে।
  • অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি দূরবর্তী জাহাজ আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ল্যান্ড-অ্যাটাক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি স্থল লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করে এবং দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করতে পারে।
3. গোলাবারুদ:
  • সাবমেরিনগুলি ডেক গান এবং মেশিনগান ব্যবহার করে শত্রু জাহাজের উপর এবং কাছাকাছি আক্রমণ ও স্থল লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করতে পারে।
4. মাইন:
  • সাবমেরিনগুলি শত্রু জলপথে মাইন স্থাপন করতে পারে যা অন্যান্য জাহাজকে বিস্ফোরিত করে।
5. খনি ব্যবহার:
  • খনি হলো বিস্ফোরক যন্ত্র যা পানির নিচে লুকানো থাকে।
  • জাহাজ যখন খনিতে ধাক্কা লাগে তখন সেগুলো বিস্ফোরিত হয়।
  • খনি ব্যবহার করে জাহাজগুলোকে ডুবিয়ে দেওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব।
6. গুলি ব্যবহার:
  • কিছু সাবমেরিনে ডেক গান বা টর্পেডো টিউবের মাধ্যমে গুলি করার ব্যবস্থা থাকে।
  • গুলি ব্যবহার করে ছোট জাহাজ এবং নৌকাগুলো আক্রমণ করা সম্ভব।
7. রামিং:
  • কিছু ক্ষেত্রে, সাবমেরিন সরাসরি শত্রু জাহাজের সাথে ধাক্কা দিয়ে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি, কারণ সাবমেরিনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সাবমেরিনগুলি তাদের আক্রমণগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। তারা রাতের বেলা বা খারাপ আবহাওয়ায় আক্রমণ করতে পারে। তারা শত্রুর রাডার এবং সোনার থেকে বাঁচতে স্টেলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।

সাবমেরিন বিভিন্ন উপায়ে অন্যান্য জাহাজ আক্রমণ করতে পারে। টর্পেডো, খনি, গুলি এবং রামিং সহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করে তারা লক্ষ্যস্থলকে ডুবিয়ে দিতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাদের আক্রমণগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে।

বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটির নাম কি?

বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটির নাম বানৌজা শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন কয়টি?

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন দুইটি। সাবমেরিন দুটির নাম বনৌজা নবযাত্রা এবং বনৌজা জয়যাত্রা।

বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি কোথায় অবস্থিত?

উপকূলীয় শহর কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা অঞ্চলে অবস্থিত।

বাংলাদেশের সাবমেরিন কয়টি?

বাংলাদেশের সাবমেরিন দুইটি। 

বাংলাদেশ সাবমেরিন কততম দেশ?

বিশ্বের ৪১তম সাবমেরিন ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ঘাঁটি কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের বর্তমানে দ্বিতীয় সাবমেরিন ঘাঁটি নেই। একমাত্র সাবমেরিন ঘাঁটি হল "বানৌজা শেখ হাসিনা", যা কক্সবাজারের পেকুয়ায় অবস্থিত। এই ঘাঁটিটি ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ২০১৮ সালে এটি কার্যকরভাবে চালু করা হয়েছিল।

ঘাঁটিটিতে দুটি ডুবোজাহাজ রয়েছে:
  • বিএনএস নবযাত্রা।
  • বিএনএস জয়যাত্রা।
ভবিষ্যতে আরও সাবমেরিন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরও সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি হতে পারে। তবে, বর্তমানে দ্বিতীয় সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।

বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন দুটির নাম কি?

  • বিএনএস নবযাত্রা।
  • বিএনএস জয়যাত্রা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url