চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর

চাকরির ইন্টারভিউয়ের কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তরের ধরনঃ

চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন (Tell me about yourself)

এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের কেবল নিজের অতীত সম্পর্কে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকেই এই ভুলটি করে থাকে। বরং উত্তর হিসেবে খুব সংক্ষিপ্ত, বুদ্ধিদীপ্ত ও আকর্ষণীয় উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এমআইটি ক্যারিয়ার কাউন্সেলর Lily Zhang এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান অতীত-ভবিষ্যত টেকনিক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

প্রথমেই বর্তমানে কোথাও কাজ করে থাকলে সেখানকার ব্যাপারে বলতে হবে। সেখানে বড় কোন অর্জন থাকলে তা খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলতে হবে। এরপর নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তা সম্পর্কিত কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলে তা দিতে হবে।

এরপরের অংশে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে হবে। এই তথ্যগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন সেগুলো আপনাকে যোগ্য প্রমাণ করে।

প্রশ্নঃ আপনার সবচেয়ে বড় সামর্থ্য কি? (What is your greatest strength?)

এই প্রশ্নের উত্তর আপনি যে চাকরি পজিশনের জন্য এপ্লাই করছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দিতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তরে একগাদা গুণের কথা না বলে কেবল একটি বা দুটি গুণের কথা এমনভাবে বলুন যা ঐ চাকরি পজিশনের জন্য আবশ্যক। সেই সক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ কোন ঘটনা গল্পাকারে বলতে পারলে আরও ভালো।

প্রশ্নঃ আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি? (What is your greatest weakness?)

এখানে অনেকেই যে ভুলটি করে তা হল আমি খুব ইমোশনাল, সবাইকে খুব সহজেই বিশ্বাস করি ইত্যাদি টাইপের কথা বলে। এটি কখনোই করা যাবে না। আবার আমার কোন দুর্বলতা নেই এমন কথাও বলা যাবে না। এমন কোন ফিলে ঘাটতির কথা বলতে হবে যা চাকরিটির জন্য খুব বেশী আবশ্যক নয় এবং যেটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

এটি উল্লেখ করার সাথে সাথে এটিও বলতে হবে যে আপনি তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কি কি কাজ করছেন তা উল্লেখ করাও জরুরী। আমি ফেসবুকে অ্যাডিক্টেড, আমি কাচ্চি বিরিয়ানী বা বার্গার দেখলে লোভ সামলাতে পারি না, আমি মিথ্যা বলতে পারি না, ইত্যাদি উত্তর এড়িয়ে চলুন।

প্রশ্নঃ কোন জিনিসটা আপনাকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে? (What makes you unique?)

এই প্রশ্নটি একটু ট্রিকি। সুতরাং মাথা খাটিয়ে এর উত্তর দিতে হবে। অতিরঞ্জিত কিছু বলার দরকার নেই। কিংবা আপনার দক্ষতা আর কারো নেই এমন ইঙ্গিত দেওয়া থেকেও বিরত থাকুন। এর উত্তর পেতে নিজের বন্ধু বান্ধব বা খুব পরিচিত কাউকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে কোন বিষয়টি তারা আপনার মধ্যে অন্যদের থেকে ভিন্ন মনে করে। চাকরির পূব ক্রিটিক্যাল একটি স্কিলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর উত্তর দেওয়াটা ভালো হবে।

প্রশ্নঃ আপনার ব্যাক্তিত্বকে আপনার সহকর্মী / বন্ধুরা কিভাবে ব্যাখ্যা করে বা তারা কি মনে করে? (How would your colleagues or friends describe your personality?)

এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমত একটি একটি করে সংক্ষেপে কয়েকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বলতে হবে। সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বলা উচিৎ যা ঐ চাকরির জন্য প্রয়োজনীয়।

বলার সময় পজিটিভিটি ধরে রাখা এবং বিনয়ের সাথে সেগুলো বলা অত্যন্ত জরুরী। দাম্ভিকতা প্রকাশ পেতে পারে এমন কিছু বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্নঃ কেন আমরা আপনাকেই নিয়োগ দিবো?( Why should we hire you?)

এই প্রশ্নটি শুনে অনেকেই ঘাবড়ে যায়। এই প্রশ্নটি করা হলে উল্টো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করা উচিৎ। কারণ এই প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমেই আপনি নিজেকে এবং নিজের দক্ষতাকে আরও দৃড়ভাবে প্রদর্শন করতে পারবে। এই প্রশ্নটির উত্তর নিজেই আগে থেকে সাজিয়ে রাখতে হবে এবং উত্তরে ৩টি বিষয় উঠে আসছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। 

১। আপনি শুধু কাজ নয়, বরং ভালো ফলাফলও এনে দিতে সক্ষম।

২। আপনি সেই কোম্পানির টিম এবং কালচারের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম।

৩। এমন কিছু সক্ষমতার কথা বলা যেগুলোর কারণে আপনি বাকি প্রার্থীদের থেকে বেশী যোগ্য।

প্রশ্নঃ আপনার বর্তমান চাকরিটি আপনি কেন ছাড়তে চাইছেন বা ছেড়ে দিয়েছেন? (Why do you want to leave or have left your current job?) 

এই প্রশ্নটি বেশ কঠিন অনেকের জন্য। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব জটিলতা পরিহার করতে হবে। আগের এমপ্লয়ারকে নিয়ে কখনোই কটূক্তি করা যাবে না। আপনি কেন সেই চাকরিটি বা সেই বিশেষ পজিশনটি চান তা সুন্দরভাবে বাখ্যা করতে হবে।

যদি আগের চাকরিটি চলে গিয়ে থাকে তবে সব ধরণের নেগেটিভিটি এড়িয়ে ব্যাপারটি উল্লেখ করতে হবে। এই প্রশ্নের মাধ্যমে নিজের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া যায়।

প্রশ্নঃ আপনি কেমন স্যালারি আশা করছেন? (What are your salary expectations?)

এই প্রশ্নটি দেওয়ার জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি প্রয়োজন। তাই ইন্টারভিউয়ের আগেই আপনি যে পজিশনের জন্য এপ্লাই করছেন সেই পজিশনের স্যালারি সম্পর্কে রিসার্চ করে যেতে হবে। স্যালারি জিজ্ঞেস করা হলে কখনোই কোন নির্দিষ্ট কোন স্যালারি বলা যাবে না। একটি রেঞ্জ উল্লেখ করতে হবে।

রেঞ্জের নিম্নভাগে আপনি সর্বোচ্চ যা সালারি আশ করছেন তা বলতে হবে। যেমন আপনি সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা স্যালারি আশা করলে আপনার বলা উচিৎ ৫০,০০০-৬০,০০০টাকা। রেঞ্জ উল্লেখ করার মাধ্যমে আপনি নিজে যেমন ভালো অবস্থানে থাকছো, ঠিক তেমন আলোচনায় নিজেকে নমনীয় রাখছো।

প্রশ্নঃ আপনি কেন চাকরিটি চান? (Why do you want this job?)

যেকোন প্রতিষ্ঠানই কর্মী হিসেবে একদল উদ্যমী মানুষ চায়। এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার সময় এই ব্যাপারটি মাথায় রেখেই দিতে হবে। প্রথমেই বলতে হবে কেন আপনি উক্ত পজিশনটির জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন। 

এটি আরও ভালোভাবে প্রকাশ করার জন্য ঐ পজিশনটির মূল কাজগুলো করতে কেন আপনার ভালো লাগে বা অনুপ্রাণিত হোন তা বলতে বলুন। এরপর ঐ কাজটি করার জন্য কেন ঐ কেম্পানিটিকেই আপনি প্রাধান্য দিবেন তা বলুন।

প্রশ্নঃ আপনি কিভাবে কাজের ধকল আর মানসিক চাপ ঢিল করেন? (How do you handle stress and pressure?)

এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় "আমার স্ট্রেস লাগে না" বা, "আমি কষ্ট করে যেকোনভাবে কাজ শেষ করে ফেলি” এমন উত্তর দেওয়া উচিৎ নয়। বরং আপনি কোন কোন কৌশল ব্যবহার করে স্ট্রেস বা কাজের ধকল সামলান তা বলতে হবে। এবং অনেক সময় রিক্রুটার আপনার কাছে এমন একটি অভিজ্ঞতার কথাও জানতে চাইতে পারেন। 

একটি স্মার্ট উত্তর হিসেবে আপনার একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে হবে। এবং সেই পরিস্থিতি কিভাবে আপনাকে আরও সৃজনশীল করে তুলেছিলো তা বলতে হবে।

প্রশ্নঃএকটি কঠিন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিন এবং আপনি সে পরিস্থিতে কি করেছিলেন তা বলুন (Describe a difficult work situation or project and how you overcame it.) 

এই প্রশ্নটির উত্তরও আগের প্রশ্নটির মতো একটি অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে। খুব নির্দিষ্ট একটি পরিস্থিতিতে আপনি কি করেছিলেন, কিভাবে করেছিলেন, এবং  তা কিভাবে আপনার টিমকে সাহায্য করেছিলো তা বলতে হবে।

প্রশ্নঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? (What are your goals for the future?)

“আমি আপনার চেয়ারে বসে আরও ভালো প্রশ্ন করতে চাই"- এই ধরণের কথা কোন কৌতুকে যতই স্মার্ট শোনাক না কেন, বাস্তবে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। খুব বোকা না হলে নিশ্চয়ই কেউ এমন উত্তর দেওয়ার কথা চিন্তাও করবে না। তবে অবশ্যই এই প্রশ্নের একটি স্মার্ট উত্তর প্রয়োজন।

 প্রথমেই সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার শর্ট টার্ম প্ল্যান যেমন যেই রোলের জন্য এপ্লাই করছেন সেই চাকরি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা বলতে হবে। এরপর লং টার্ম প্ল্যান যেমন ভবিষ্যতে আপনি কোন পজিশনে কাজ করতে চান তা বলতে হবে।

দুটি ক্ষেত্রেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিবেন তাও সংক্ষেপে বলুন।

প্রশ্নঃ আপনি কি আমাদের কোন প্রশ্ন করতে চান? (Do you have any question for us?)

অনেকেই শেষ পর্যন্ত এসে এই প্রশ্নটির উত্তরে "না" বলে থাকে। এই প্রশ্নটি আপনার নিজের সম্পর্কে শেষ ইম্প্রেশন তৈরি করার সুযোগ। এত কষ্ট করে এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু না বলা অনেকটা তীরে এসে তরী ডুবানোর মতো। তবে এটিও মনে রাখা প্রয়োজন যাতে অনেক গুলো প্রশ্ন না করে হয়।

কি প্রশ্ন করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে। একটি বা দুটি প্রশ্ন করাই ভালো। রিক্রুটাররা মূলত এসময় নিজেদের কোম্পানি, এবং নিজেদের নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ফলো আপঃ

ইন্টারভিউ রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আপনার সব কাজ শেষ নয়। ফলো-আপ একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ইন্টারভিউ শেষে বাসায় গিয়েই ইমেইল বা এসএমএস বা লিঙ্কডিনের মাধ্যমে যিনি ইন্টারভিউ নিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানান তার সময়ের জন্য।

এছাড়া এটিও উল্লেখ করুন যে আপনি তাদের সীদ্ধান্ত জানতে অপেক্ষা করছেন এবং আপনি আশাবাদী যে আপনি তাদের কাছ থেকে ফল পাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url