মেয়েদের চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়

চুল পড়া রোধে করণীয়ঃ

নারীর রূপ ও লাবণ্যের বর্ণনায় যার কথা না বললেই নয়, তা হলো ঝলমল ঘন কালো চুল। তবে চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে কিছু পরিচর্যাও করতে হয় বটে। আর এই গ্রীষ্মে পরিচর্যার মাত্রা যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।

মেয়েদের চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়

চুলের ঝরে পড়া ও রুক্ষতাকে চুলের প্রধান দুটি সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তাই চুলের ঝরে পড়া রোধে করণীয় কী কী তা জেনে নিই।

১। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা চাই প্রচুর শাক-সবজি ও মৌসুমি ফল আর আমিষের মধ্যে দুধ, ডিম, মাছ তো থাকছেই।

২। ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণের। এছাড়া চুল পড়া রোধে মেডিটেশনও করা যেতে পারে।

৩। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করতে হবে। তবে শ্যাম্পু করার আগে অবশ্যই তেল দিয়ে এক ঘণ্টা রাখতে হবে। নাহলে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে।

৪। সপ্তাহে এক দিন হট অয়েল ম্যাসাজ করুন আর সাথে লেবুর রস দিতে পারলে আরও ভালো।

৫। শ্যাম্পু করার পর খুব ভালো করে বেশি করে পানি ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিতে হবে যেন গোড়ায় শ্যাম্পু না থেকে যায়। শ্যাম্পু করার পর কনডিশনার এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে যেন গোড়ায় না যায়।

৬। ঘন ঘন ব্লো ড্রাই বা হেয়ার স্ত্রেইট করা থেকে বিরত থাকুন।

৭। এছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিজেই বিশেষ তেল তৈরি করে নিতে পারেন। শুকনো আমলকী, বহেরা, হরিতকী ও মেথির গুণাগুণ আমরা সকলেই জানি। আমলকী,বহেরা,হরিতকী ও মেথি একসাথে গুঁড়ো করে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। তেলের মিশ্রণটি একটি কাঁচের বোতলে রেখে তা এক সপ্তাহ রোদে দিতে হবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন রাতে তেলটি গরম করে মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। যদি ত্বক তৈলাক্ত হয় অথবা ব্রণের সমস্যা থাকে তবে রাতে তেল না দেওয়াই ভালো। তেল মাথায় দিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতেও ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

আমলকী, বহেরা, হরিতকী চুল পড়া রোধ করে এবং মেথি চুলের কোমলতা বজায় রাখে। এই গুঁড়ো মিশ্রণটি একবার বানিয়ে প্রায় ছয় মাস সংরক্ষণ করা যায়। চুল ছোট বা বড় যেমনই হোক না কেন, তার যত্নে কোন কমতি রাখা চলবে না। তবেই চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে আর আকর্ষণীয়।

চুলের রুক্ষতা দূরীকরণের কিছু সহজ উপায়ঃ

নারীর সৌন্দর্য বর্ধনে চুলের ভূমিকার কোন তুলনা হয় না। যেকোনো নারীকে খুব সহজেই রূপবতী করে তুলতে পারে তার ঝলমলে রেশমি চুল আর এই চুলই যখন রুক্ষ হয়ে পড়ে তখন লাবণ্যময়ী একটি চেহারাতেও এনে দেয় মলিনতার ছাপ। আমাদের বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে চুল রুক্ষ হওয়ার অনেক কারণ আছে। চুল রুক্ষ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ ধূলোবালি। আজকালের আত্মনির্ভরশীল মেয়েরা বিভিন্ন কাজের তাগিদে ঘরের বাইরে পা বাড়ায়। এতে চুলে ধূলোবালি লাগে। এছাড়া অনেক সময় তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য ভেজা চুলকে শুকানোর জন্য আমরা ব্লো ড্রাই করি।

এতেও চুল রুক্ষ হয়ে উঠে। এছাড়াও রিবনডিং, হেয়ার কালার এসবের জন্যও চুল ধীরে ধীরে তার মসৃণতা হারায় আর রুক্ষ হয়ে যায়। রুক্ষ চুলের আগা খুব সহজেই ফেটে যায় যা চুলের বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়। তাই আসুন জেনে নিই খুব সহজে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু সহজ উপায়।

১। চুল বা ত্বকের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হল পানি। প্রচুর পরিমাণে পানি আমাদের শরীরকে যেমন সতেজ রাখে তেমনি আমাদের চুলকেও রাখে সতেজ। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।

২। চুলের রুক্ষতা দূরীকরণে তেলের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। অলিভ অয়েল অথবা রেড়ির তেল (ক্যাস্টর অয়েল) যেকোনো তেলই চুলকে মসৃণ করে তোলে। যেকোনো তেল রাতে ঘুমানোর আগে দিয়ে সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে ফেলা সবচেয়ে উত্তম। তবে যাদের তেল বেশিক্ষণ রাখতে সমস্যা তারা গোসলের ১ ঘণ্টা আগে তেলটি হালকা কুসুম গরম করে নিয়ে কিছুক্ষন মাসাজ করে নিতে পারেন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলতে পারেন। যেকোনো প্রকার তেলের মধ্যে চুলের রুক্ষতার জন্য অলিভ অয়েল সবচেয়ে ভালো। চুলকে কোমল ও লাবণ্যময়ী করে তোলে।

৩। যাদের চুল রুক্ষ আর সাথে খুশকিও আছে তারা হালকা কুসুম গরম তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে দিতে পারেন আর শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার হিসেবে ১/২ মগ পানিতে সাদা ভিনেগার মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে চুল ঝরঝরে হয় আর চুল খুশকি মুক্তও হয়।

৪। চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে ও রুক্ষতা দূর করতে মেয়নেজও ব্যবহার করতে পারেন। ১/২ কাপ মেয়নেজ নিয়ে হালকা গরম করে মাথায় ৪০-৪৫ মিনিট রাখুন। এতে চুলের রুক্ষ ভাব চলে যায় আর চুল অনেক সিল্কি হয়ে উঠবে।

৫। চুলের রুক্ষতার জন্য মেহেদি প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের মেহেদি পাওয়া যায়। সেগুলোর প্যাক বানিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললেও চুল অনেক কোমল ও ঝরঝরে হয়ে উঠে।

৬। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলকে কোমল, নমনীয় ও ঝলমলে করার একটি অন্যতম উপায় হল- ১টি পাকা কলা, ১টি ডিম, ২-৩ চা চামচ টক দই, ২-৩ চা চামচ মধু, ১টি লেবুর সম্পূর্ণ রস সবকিছু একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সেটি মাথায় ১ ঘণ্টার মতো রাখতে হবে। মিশ্রণটি দেওয়ার আগে চুলে ভালো করে তেল মাসাজ করে নিতে হবে। এতে করে প্যাকটি খুব সহজে চুলে বসবে। অনেক সময় অনেকের চুলে মধু স্যুট করে না।

সেক্ষেত্রে তারা মধু পরিহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ১ ঘণ্টা রেখে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের গোড়া যেমন মজবুত হয় তেমনি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের রুক্ষতাও দূর হয়ে যায়। এই প্যাকটি মাসে অন্তত ২বার ব্যবহার করতে হবে। আশা করি আমার লেখাটি আপনাদের সবার উপকারে আসবে। ভালো থাকুন এবং হাসি-খুশি থাকুন।

পানি যখন ক্ষার, কী হবে প্রতিকার?

সাজগোজ নিয়ে তো সবসময় বলা হয় তবে আজকে বলব এমন একটি ব্যাপারে যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই সময়োপযোগী এবং যা সম্পর্কে সবারই সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। পানির অপর নাম জীবন একথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবে সেই পানিই যদি হয় সমস্যার কারণ তবে পানি নামক সেই জীবন যেন দুর্ভোগ ভোগান্তি ডেকে আনে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পৌঁছতে পারেনি। যদিও বা কিছু কিছু অঞ্চলে ওয়াসার পানি আসে, গ্রীষ্মকালে নানাবিধ কারণে সেই পানি হয়ে ওঠে ব্যবহারের অযোগ্য। লেখকের জানা মতে ব্যবহারযোগ্য বিশুদ্ধ পানির সংকটে খিলগাঁও, সবুজবাগ, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মালিবাগ এর বিভিন্ন এলাকা রয়েছে।

রাজধানী ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষারীয় পানি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়েই টিউবওয়েল বা আলাদা পানির মোটর বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। কোন কোন অঞ্চলের পানিতে থাকে অতিরিক্ত পরিমানে ক্ষার, কোথাও পানি হয় বেশ লবণাক্ত। যা ব্যবহার করাটা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ, তেমনি লম্বা সময়ের জন্য এরকম পানির ব্যবহার ত্বক ও চুলের ক্ষতির অন্যতম কারণ।

কীভাবে বুঝবেন আপনার পানি ক্ষার?

যদিও কিছু এলাকার পানি স্বভাবতই ক্ষারীয় হয়, তবুও দেখে নিনঃ

১। পানি ধারণ করার পর যখন পানির পাত্রের নিচে লালচে হলুদ আয়রন জমে থাকবে।

২। পানির স্বাদ বেশ ক্ষারীয় হবে।

৩। কলের মুখে আয়রনের স্থায়ী দাগ বসে যাই।

৪। পানিতে খনিজ পদার্থের তীব্র একটা গন্ধ থাকবে।

৫। পানি ফুটানোর হাঁড়ির তলায় আলাদা পুরু একটা স্তর পড়ে যাবে।

৬। পানির জন্য ফিল্টার ব্যবহার করলে ফিল্টার এর সাদা অংশ খুব দ্রুতই লালচে হবে।

খেয়াল করবেন যখন গৃহস্থালির কাজ যেমন কাপর কাঁচা বাসন মাজা ও অন্যান্য ধোয়া মোছার সময় প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সাবানের প্রয়োজন হবে।  ব্যবহারের জন্য সব ক্ষার পানিই যে সবসময় ক্ষতিকারক, এমনটি নয়। যাদের পানি মাত্রাতিরিক্ত ক্ষারীয়, তারা অবশ্যই পানি কে ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবহার করবেন।

খাবার পানির ক্ষেত্রেঃ

সেই পুরনো বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। পানি ফুটিয়ে পান করা। তবে অতিরিক্ত ক্ষার পানির ক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে, ঠাণ্ডা করে তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় তলায় দ্রবণীয় খনিজ জাতীয় পদার্থ জমে থাকতে। এমনকি পানির উপরেও ভেসে থাকতে দেখা যায়। সাবধানতার সাথে উপরের অন্তত ২ ইঞ্চি পানি ফেলে নিচের অংশে থিতিয়ে থাকা খনিজ গুলো রেখে বাকি পানি খাবার জন্য ব্যবহার করতে হবে। যে কল থেকে খাবার পানি সংরক্ষণ করা হবে, সেই কলের মুখে ফিল্টার ক্যাপ বসিয়ে আপনি আয়রন বা ক্ষারীয় অন্যান্য খনিজ অনেকাংশেই আটকাতে পারবেন। পরে সেই পানি ফুটিয়ে যথাসাধ্য নিরাপদ করে পান করতে হবে।

ক্ষারীয় পানিকে সাধারণ পানিতে পরিণত করার জন্য বর্তমানে অনেক নিত্য নতুন মেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যার ২-১ টা স্যানিটারি ফিটিংসের দোকানে খোঁজ করলে আমাদের দেশেও হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার যেমন ঝামেলাপূর্ণ, তেমনি সময়সাপেক্ষ আর ব্যায়বহুলও বটে। তাই আমি যতটা সম্ভব কম সময় ও ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি উল্লেখ করলাম।

চুলের ক্ষেত্রেঃ

ক্ষার পানি ব্যবহার এর কারণে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, এমনকি অনেকের চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যায়। চুল ধোয়ার কাজে এই পানি ব্যবহার করা হয় বলে পানিতে থাকা ক্ষারীয় পদার্থ চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য কেড়ে নেয়। এ থেকে রক্ষা পেতে যা যা করতে পারেন-

গোসলের সময় শাওয়ার ব্যবহারকারীরা শাওয়ার এর মুখে ফিল্টার ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। বড় হার্ডওয়্যার এর দোকানগুলোতে শাওয়ার ফিল্টার পাওয়া যায়। এতে করে আপনি একইসাথে ত্বক ও চুলকে ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবেন।

এখন বর্ষাকাল। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে কোন ক্ষারীয় পদার্থ থাকেনা বললেই চলে। চুলে তেল দেওয়ার সময় ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে দিন। এটি পানির কারণে তৈরি হওয়া চুলের রুক্ষতা কে প্রতিরোধ করে। সপ্তাহে একদিন ৩ ভাগ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও ১ ভাগ ডিসটিলড ওয়াটার মিশিয়ে চুলে মাস্ক এর মতো লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট, এরপর ঠাণ্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। সাদা সিরকা ২ মগ পানিতে ৩ টেবিল চামচ সাদা সিরকা মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন উপকার পাবেন। Chelating shampoo ব্যবহার করতে পারেন। 

এটি পানির কারণে সৃষ্ট রুক্ষতাকে কমিয়ে চুলকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে এর সঙ্গে কন্ডিশনার ব্যবহার করা আবশ্যক। দেশে এই জাতীয় শ্যাম্পু খুব একটা পরিচিত নয় বিধায় খুঁজে নাও পেতে পারেন। অনলাইন পেজে খোঁজ করলে মিলেও যেতে পারে। না পাওয়া গেলে শ্যাম্পুর বোতলের উপকরণে ETDA সমৃদ্ধ কিনা, তা দেখে নিন। কারণ এটি Chelating শ্যাম্পুরই বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

শুধু পানি পান, গোসল বা চুল ধোয়া নয়, দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজে পানি ছাড়া এক মুহূর্তের কথা ভাবা যায়না। তাই নিরাপদ পানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন ও সঙ্কটের সময় ছাড়াও সবসময় পানির অপচয় রোধ করুন।

চুলের রঙ নষ্ট হওয়ার কারণ ও প্রতিকারঃ

আপনার কালো চুল কি দিনে দিনে খয়েরি বা লাল হয়ে যাচ্ছে ? তাহলে এবার সাবধান হবার সময় এসে গেছে। এই সমস্যাটা আজকাল অনেকের মধ্যেই খুব দেখা যাচ্ছে। মনে রাখবেন যদি আপনার চুলের প্রাকৃতিক রঙ কালো হয় তবে চুল আপনা থেকেই লাল হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা নয়।

কী কী কারণে চুল লাল হতে থাকে?

১) চুলের ড্যামেজ বা অপুষ্টির কারণে চুল কালো থেকে লাল হয়ে যায়। সূর্যের রশ্মির ক্ষতিকর UV ray আমাদের চুলের ড্যামেজ করে আর চুল লাল করার জন্য একটা বিশেষ কারণ।

২) যে পানি আপনি ব্যবহার করছেন সেটাও একটা বিশেষ কারণ হতে পারে। পানিতে ক্লোরিন বা আইরন থাকলে চুলের ভালো রকমের ক্ষতি করে।

৩) আপনি যে প্রোডাক্ট চুলে লাগান তাতে যদি পেরক্সাইড থাকে সেটা চুলের ভীষণ ক্ষতি করে।

৪) চুলে ভীষণ গরম কিছু লাগালে যেমন হেয়ার স্ট্রেটনার অথবা হেয়ার কার্লার এইসব বেশি ব্যবহার করলে চুল বাদামি রঙের হতে থাকে।

৫) চুলে অনেক বেশি পরিমানে আর ঘন ঘন মধু লাগালেও চুল তার স্বাভাবিক রঙ হারিয়ে ফেলে।

প্রতিকারঃ

সমস্যা যখন আছে তার প্রতিকারও আছে। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু সমস্যা এড়ানো যাবে। তাহলে দেখে নেয়া যাক এর প্রতিকারগুলো –

১) রোদে বের হওয়ার আগে আর গোসলের পরে চুলে লাগিয়ে নিতে হবে লিভ-অন কন্ডিশনার বা হেয়ার সেরাম। এটা চুলকে রোদ আর পলিউশনের হাত থেকে আপনার চুলকে বাঁচাবে।

২) যদি সারাদিন বা অনেক সময়ের জন্য রোদে বের হতে হয় তাহলে মাথাটা একটা স্কার্ফ দিয়ে বা ওড়না দিয়ে ভালো করে ঢেকে নিতে হবে। আপনি ব্যবহার করতে পারেন ফ্লোরাল স্কার্ফ এতে আপনাকে দারুন স্টাইলিশ দেখাবে আর আপনি সবার মধ্যমনি হয়ে উঠবেন। একেই বোধ হয় বলে রথ দেখা আর কলা বেচা মানে স্টাইল আর স্বাস্থ্য দুটোই একসাথে।

৩) চুলের জন্য কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে হারবাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।

৪) ভেজা চুলে রাস্তায় বের হবেন না। এতে বাইরের ধুলো ময়লা সব চুলে আটকে থাকবে আর এর ফলে চুল রুক্ষ আর ফ্রিজি হয়ে যাবে। তাই বাইরে বের হবার আগে চুল শুকিয়ে বের হতে হবে। তাই বলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানো উচিত নয়।চুল শুকানোর জন্য সেরাম লাগিয়ে নিয়ে মাঝে মাঝে মোটা চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে হবে এতে চুল শুকিয়ে যাবে।

৫) সান ড্যামেজের হাতে থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই আছেন যারা ছাতা ব্যবহার করেন না কিন্তু আমাদের দেশের এরকম আবহাওয়াতে ছাতা ব্যবহার অতি আবশ্যক।

৬) এটা বলার দরকার রাখে না কিন্তু হেলদি ডায়েট অবশ্যই বজায় রাখতে হবে আর প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে।

হোম রেমেডিঃ

১) শ্যাম্পুর সাথে একটু কোকো মিশিয়ে নিয়ে লাগানো যেতে পারে। চুল ধোওয়ার জন্য সয়া সস আর অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে এই মিশ্রণটা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

২) সপ্তাহে একদিন করে প্রোটিনরিচ হেয়ার মাস্ক লাগাতে হবে। এর জন্য একটা ডিম ফেটিয়ে নিয়ে এর সাথে এক কাপ টক দই ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবারে এই মিশ্রণটাকে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। এবারে শ্যাম্পু করার আগে এটা লাগিয়ে নিন ও কম করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

চুলের যত্নে সঠিক চিরুনি

আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত চিরুনিটিই কিন্তু হতে পারে আপনার চুলের ক্ষতির কারণ। তাই বিভিন্ন প্রকার চিরুনির কিছু সাধারণ তথ্য জেনে নেয়া যাক।

চিরুনির প্রকারভেদঃ

১) প্যাডল ব্রাশঃ
এটি একটি আয়তাকার হেড-ব্রাশ/চিরুনি যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে । এই ব্রাশটি মাঝারি থেকে লম্বা চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং চুলের জট ছাড়াতে কার্যকর।

২) পিন ব্রাশঃ
এটি ধাতব পিন যুক্ত ডিম্বাকৃতির চিরুনি। ধাতব পিনগুলো ঘন চুলের ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। এই চিরুনিটি ঘন ও কার্লি চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো।

৩) কুইল ব্রাশঃ
এই চিরুনিটি ডিম্বাকৃতির বা গোলাকৃতির যেটি কিনা মাথার ত্বক ম্যাসেজ করে এবং চুলের ন্যাচারাল অয়েল মাথায় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এই চিরুনিটি সব ধরনের চুলের জন্য উপযুক্ত।

​৪) Wide-tooth comb বা চওড়া-দাঁতযুক্ত চিরুনিঃ
নামেই বোঝা যাচ্ছে, এই চিরুনিটির দাঁতগুলো ফাঁকা ফাঁকা যা চুলের জট ছাড়ায় এবং চুল ধোয়ার সময় শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পুরো মাথায় ছড়িয়ে দিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সব ধরনের চুলের জন্য, বিশেষত জট ছাড়াতে কার্যকর।

৫) Boar bristle brush / বোর ব্রিস্‌ল ব্রাশঃ
এই ব্রাশটি ভিন্ন আকৃতির হতে পারে। মূলত এর ব্রিস্‌ল গুলোই অন্যান্য চিরুনি থেকে এটিকে আলাদা করে। ব্রিস্‌লগুলোচুলের জন্য উপকারীও বটে। কেননা , ব্রিস্‌ল সফ্ট হওয়ায় চুল ছিড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এটি হেয়ার স্টাইলিং এ ব্যবহার করা হয়, এছাড়াও স্ক্যাল্পের সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে। রুক্ষ চুলের জন্যও এই চিরুনিটি ভালো কাজ করে কারণ এটি চুলের ন্যাচারাল অয়েল চুলের আগা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে চুলকে কোমল, উজ্জ্বল করে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৬) নরমাল চিরুনিঃ 

এছাড়াও শুধুমাত্র প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য রয়েছে নরমাল কিছু চিরুনি যেগুলো অনেক আকারের পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারে চুল দেখায় কোমল ও মসৃণ। ​চুলের প্রয়োজন বুঝে বেছে নিন সঠিক ও কার্যকর চিরুনি এবং কেনার আগে অবশ্যই চিরুনির গঠন উপাদান দেখে কিনুন।

চুল ঝরে পড়ছে? কী করি?

সুস্থ,সুন্দর ও ঝলমলে চুল প্রত্যেক নারীর স্বপ্ন কিন্ত এই চুল ঝরতে শুরু করলে এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নে য়।এই চুল পড়ে যাওয়া, ঝরে বা কমে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও কিছুটা প্রভাব ফেলে। চুল পড়লে ব্যথা লাগে না ঠিকই কিন্তু মন ভেঙ্গে যায়। অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকলে তা বিড়ম্বনাও সৃষ্টি করে। ছেলেদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে মাথায় টাক পড়া জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। বিউটি এক্সপার্টদের মতে প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এর বেশি হলেই সেটি চুল ঝরে পড়া সমস্যা বলে চিহ্নিত হবে।

কেন চুল পড়ে?

বেশ কিছু কারণে চুল ঝরতে পারে,যেমনঃ চুলে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি(রঙ বা ট্রিটমেন্ট)করতে নানা রকমের রাসায়নিক উপাদানের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের(থাইরয়েড)ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ, খুশকি ও চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা ইত্যাদি। অনেক সময় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপও চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

চুল ঝরে পড়া কমানোর উপায়ঃ

১। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য মোটা ও প্রশস্ত দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। তাতে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে। এরপর স্বাভাবিক চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল সাজানোর বা বাঁধার কাজ করতে পারেন।

২। ভেজা চুল আঁচড়ানো বন্ধ করুন। চুল ভেজা থাকা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে, ফলে চিরুনি করলে চুল বেশি ওঠে বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। চুল শুকিয়ে গেলে বা অল্প ভেজা থাকা অবস্থায় চিরুনি করুন।

৩।অনেকেরই ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে অতিরিক্ত ঘষাঘষি করার অভ্যাস থাকে। আসবাবপত্র ঝাড়পোছের মত তোয়ালে দিয়ে চুলে বাড়ি দেয়ারও প্রবণতা থাকে। এমন অভ্যাসে চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এসকল বদভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

৪। নিয়মিত আপনার চিরুনি পরিষ্কার করুন। প্রতিদিনের ব্যবহারে চিরুনি দ্রুত ময়লা হয়। কাজেই সবান, পানি ও ব্রাশের সাহায্যে এটি পরিষ্কার করে নিন। অপরিচ্ছন্ন চিরুনি ব্যবহার ও চুল ঝরার একটি কারণ। প্রতিদিন গোসলের সময় বা শ্যাম্পু করার সময় খুব সহজেই এটি পরিষ্কার করা যায়।

৫। চুল পড়া কমানোর একটি সহজ ও কার্যকরী উপায় হলো চুলের গোড়ায় উষ্ণ তেল ম্যাসাজ করা। সুপ্রাচীন কাল থেকেই উপমহাদেশে চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করা একটি স্বাভাবিক ও সাধারন ব্যাপার। নারিকেল, জলপাই, বাদাম, সরিষা প্রভৃতি তেল, চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত চুলের গোড়ায় উষ্ণ তেল ম্যাসাজ করলে ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের মৃত কোষ ও খুশকি দূর হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। তেল হালকা গরম করে আঙ্গুলের বা কটন বলের সাহায্যে পুরো মাথায় চক্রাকারে ম্যাসাজ করুন। কয়েক ঘণ্টা অথবা পুরো রাত অপেক্ষা করুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুলে তেল দেয়া অবস্থায় বাড়ির বাইরে না যাওয়ায় ভালো, কারণ তেল ধূলা, ময়লা বেশি আকর্ষন করে। এতে করে চুলে খুশকির উপদ্রব হতে পারে, তাতে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে।

৬। যে সকল শ্যাম্পুতে সালফেট, সিলিকন বা প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক উপাদান আছে,সেগুলো বর্জন করুন। এই ধরণের উপাদান মাথার ত্বকের ক্ষতি করে, চুলকে রুক্ষ, শুষ্ক ও মলিন করে ফেলে। চুল ভঙ্গুর ও নিষ্প্রান হয়ে যায়, ফলে চুল ঝরে পড়া ত্বরান্বিত হয়।

৭। কমপক্ষে তিন দিন পর পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, তা না হলে ত্বকে ধুলা, ময়লা, তেল জমে ও জীবাণু জন্মাতে পারে, খুশকি হতে পারে। মাথার ত্বক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।

চুল ঝরে পড়া বন্ধে চুলের যত্নঃ

১। চুলের যত্নে অতিরিক্ত হেয়ার ট্রিটমেন্ট ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার বন্ধ করুন। চুলের রঙ ঘন ঘন পরিবর্তন করা, চুলে আয়রন করা, ব্লো ডাই ইত্যাদির ফলে চুল বেশি ঝরে।

২। একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে-“চুলের গোড়া শক্ত করে বাধঁলে চুল বড় হয়”। ধারণাটি ভুল। সবসময় চুলে শক্ত বিনুনি বা ঝুটি করলে চুলের গোড়া দূর্বল হরে পড়ে। রাবার বা ইলাষ্টিকের ব্যান্ড দিয়ে চুল শক্ত করে না বাঁধাই ভালো। চুল কম ঝরবে।

৩। চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে রান্না ঘরে হানা দিন। দ্বিধার কিছু নেই, নতুন চুল গজানোর একটি ঔষধি উপায় হলো পেঁয়াজের ব্যবহার। পেঁয়াজের রস এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। কয়েকটি পেয়াজের রস করে তুলার সাহায্যে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন করে ব্যবহার করুন,উপকার পাবেন।

৪। আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। সুষম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার চুল ও মাথার ত্বককে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করবে। এতে চুল ঝরে পড়ার প্রবনতা হ্রাস পায়। যে সকল খাবারে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন ই,ভিটামিন সি,জিংক, ভিটামিন বি ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, সেগুলো বেশি করে গ্রহণ করুন। জাঙ্ক ফুড, তেলেভাজা, মেয়নেজ,বাটার যুক্ত খাবার কম খাওয়াই ভালো। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খান।

চুল পড়া কমাতে হেয়ার প্যাকঃ

উপকরণঃ
১। সদ্যপ্রস্তুত করা গ্রীন টি(গাঢ়) ৩ টেবিল চামচ
২। ১টি ডিমের কুসুম

প্রস্তুত প্রণালিঃ একটি পাত্রে সদ্যপ্রস্তুত করা গ্রীন টি(গাঢ়)নিন। তাতে ডিমের 
কুসুম যোগ করুন। গ্রীন টি হালকা গরম হতে হবে। ভালো করে নেড়ে একটি ক্রিমের মতো মাস্ক তৈরী করতে হবে। বেশি ঘন হয়ে গেলে তাতে আর একটু গ্রীন টি যোগ করতে পারেন।

পুরো চুল প্রথমে ভালো ভাবে আচঁড়ে নিন। মাথার চুল দু ভাগে ভাগ করে ধীরে ধীরে পুরো চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ৩০-৪৫ মিনিট আপেক্ষা করুন,যেন মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। এবার ঠান্ডা পানি দিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল সম্পূর্নভাবে পরিষ্কার করুন। কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুই দিন করে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যাবে।

উপকারিতাঃ গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুল ঝরে পড়া রোধে সাহায্য করে। ডিমে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট ও মিনারেলস থাকে,যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান

চুল পড়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া, চুল ঠিকমতো বৃদ্ধি না পাওয়া সহ নানা সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। তাই চুল নিয়ে যেন আমাদের চিন্তার অন্ত নেই। এই চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের বিকল্প নেই। এটি যেমন নিরাপদ তেমনি কার্যকরী। আমাদের হাতের কাছেই এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। আজ তাই তেমনই কিছু প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী জিনিসের নাম এবং গুণাবলী নিয়ে লেখা হল।

ডিমঃ
চুল পড়া কমিয়ে চুলকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ডিমের জুড়ি নেই। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। একটি ডিমের সাদা অংশ, এক চা চামচ অলিভ অয়েল এবং মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি সারা চুলে মাখিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এছাড়াও একটি সেদ্ধ ডিম প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখুন।

মেথিঃ
চুলের যত্নে মেথি হচ্ছে আরেকটি কার্যকরী উপাদান। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমিয়ে আনে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলের প্রাকৃতিক রঙ ধরে রাখে। এক চা চামচ মেথি গুঁড়া, ২ চা চামচ নারিকেলের দুধ একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন লাগান।

আলুর রসঃ
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অনেকেই আলুর উপকারিতা সম্পর্কে জানি। এই আলুর রস চুলের বৃদ্ধিতেও সমানভাবে কার্যকরী। পরিমাণমতো আলুর রস নিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করতেও সাহায্য করে।

নারিকেলের দুধঃ
নারিকেলের দুধ হচ্ছে প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম এবং এসেনশিয়াল ফ্যাটে সমৃদ্ধ একটি উপাদান। এটি চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে আপনাকে দিবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, সুন্দর চুল। চুল পড়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে তাই ব্যবহার করতে পারেন নারিকেলের দুধ। নারিকেল কুড়িয়ে অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে এরপর সেই নারিকেল চিপে এর রস বের করে নিন। স্ক্যাল্পে এবং চুলে নারিকেলের দুধ লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের রুক্ষ ভাব কমে গিয়ে চুল নরম এবং সুন্দর হবে।

জবা ফুলঃ
চুলের যত্নে এই ফুলের উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না। চুলের বিভিন্ন পণ্যে তাই এই ফুলের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। চুলের খুশকি রোধ করা থেকে শুরু করে চুলের বৃদ্ধিতে, নতুন চুল গজাতে এবং অকালে চুল পাকা রোধ করতে এই ফুলের জুড়ি নেই। একটি জবা ফুল বেটে পরিমাণ মতো নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। মুহূর্তের মধ্যেই চুল হয়ে উঠবে নরম, কোমল এবং সিল্কি।

আপেল সিডার ভিনেগারঃ
এই ভিনেগার স্ক্যাল্প ভালো মতো পরিষ্কার করে এবং চুলের PH ব্যালান্স ঠিক রাখে যা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চুল শ্যাম্পু করে ধোয়ার সময় পানির সাথে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে শেষে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল ঝলমলে এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল থাকবে এবং চুল ঠিকমতো বেড়ে উঠবে।

গ্রিন টিঃ
গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট যা চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। গ্রিন টি স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে এক ঘণ্টা রাখুন এবং এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও নিয়মিত গ্রিন টি পানের মাধ্যমে চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url