ইলেকট্রনিক সিস্টেমে ব্যবহৃত হ্যান্ড টুলস ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড টুলসঃ

কোন কাজ করার ক্ষেত্রে হাতের মাধ্যমে ব্যবহৃত হতে পারে, এরকম টুলস বা যন্ত্রকে হ্যান্ড টুলস বলে। যেমনঃ-

(i) প্লায়ার্স, 

(ii) ইলেকট্রিশিয়ান নাইফ,

(iii) স্ক্রু-ড্রাইভার।

ইলেকট্রনিক সিস্টেমে ব্যবহৃত হ্যান্ড টুলস ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ইলেকট্রনিক্স হ্যান্ড টুলসঃ

ইলেকট্রনিক্স কাজের ক্ষেত্রে হাতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী টুলসকে ইলেকট্রনিক্স হ্যান্ড টুলস বলে। যেমনঃ-

(i) নিয়ন টেস্টার,

(ii) স্প্যানার,

(iii) সোল্ডারিং আয়রন।

নিম্নে বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড টুলস-এর নাম উল্লেখ করা হলোঃ-

১। ভাইস

২। সাইড কাটিং পায়ার্স

৩। হ্যাকস

৪। সোল্ডারিং আয়রন

৫। সোল্ডার সাকার

৬। ওয়্যার ব্রাশ

৭। ছুরি

৮ । মেটাল

৯। ইনস্পেকশন গগলস

১০। ডেন্টাল মিরর

১১। ম্যাগনিফাইং গাস

১২। ড্রিল মেশিন

১৩ ৷ ডায়গনাল কাটিং পায়ার্স

১৪ । নোজ পায়ার্স

১৫। কম্বিনেশন পায়ার্স

১৬। ক্রু-ড্রাইভার

১৭। নিয়ন ল্যাম্প টেস্টার

১৮। স্প্যানারস

১৯ । অ্যালাইন কি

২০। হেক্সাগন কি

২১ । অফসেট স্ক্রু-ড্রাইভার

২২ । ফ্ল্যাট ফাইল

২৩। হ্যান্ড ফাইল

২৪ । রিপার ফাইল

২৫ । রাউন্ড ফাইল

২৬। থ্রি স্কোয়ার ফাইল

২৭। হাফ রাউন্ড ফাইল

২৮ । অ্যাডজাস্টেবল রেঞ্জ এবং

২৯। বক্স স্প্যানারস।

হ্যান্ড টুলস-এর প্রয়োজনীয়তাঃ

যে কোনো কারিগরি কাজ করতে গেলে খালি হাতে তা সুসম্পন্ন হয় না। যেমন- আমরা লিখতে গেলে কলমের প্রয়োজন হয়, কোনো রোগীর জ্বর পরীক্ষা করতে গেলে প্রয়োজন হয় থার্মোমিটারের। তেমনি কোনো বৈদ্যুতিক কাজ করতে কোনো না কোনো টুলসের প্রয়োজন হয়। প্রায় সকল কারিগরি কর্মক্ষেত্রে টুলস বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন রয়েছে। কোনো বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করতে গেলে শুধু হাত দ্বারা সম্ভব নয়, খালি হাতে কাজ করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবে।

যেমনঃ- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টাম্বলার সুইচ, ব্যাটেন হোল্ডার, টু-পিন সকেট, কাট-আউট ও পাগ ইত্যাদি খোলা বা তারে সংযোগ করা এবং লাইনের কারেন্ট পরীক্ষা প্রভৃতি কাজ যন্ত্র ছাড়া মোটেই সম্ভব নয়। খালি হাতে কাজ করলে কর্মরত ব্যক্তির বিপদ হতে পারে। তাই কার্যক্ষেত্রে সঠিকভাবে নিরাপদে কার্যসম্পাদন করতে যন্ত্রপাতি বা সাধারণ হ্যান্ড টুলস এর একান্ত প্রয়োজন।

বিভিন্ন প্রকার ইকুইপমেন্টঃ

ওয়ার্কশপ এবং ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হ্যান্ড টুলস ব্যতীত অন্য সমস্ত মেশিনারি এবং অ্যাপায়েন্সকে ইকুইপমেন্ট বলে। যেমনঃ- 

(i) অ্যামিটার,

(ii) ভোল্টমিটার,

(iii) ড্রিল মেশিন,

(iv) টিভি রিসিভার,

(v) টেপ রেকর্ডার ইত্যাদি।

কার্যক্রম অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট চার প্রকার। যেমনঃ-

(১) সিগন্যাল জেনারেটিং ইকুইপমেন্টঃ অডিও সিগন্যাল জেনারেটর, প্যাটার্ন জেনারেটর ইত্যাদি।

(২) মেজারিং ইকুইপমেন্টঃ ভোল্টমিটার, অ্যামিটার ইত্যাদি।

(৩) রিসিভিং এবং ট্রান্সমিটিং ইকুইপমেন্টঃ রেডিও ট্রান্সমিটার, টেলিফোন রিসিভার ইত্যাদি।

(৪) টেস্টিং ইকুইপমেন্টঃ টিউব টেস্টার, ট্রানজিস্টর টেস্টার ইত্যাদি।

বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্টের নাম নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

১। অ্যামিটার

২। ভোল্টমিটার

৩। ওহম মিটার

৪ । মাল্টিমিটার

৫ । অডিও সিগন্যাল জেনারেটর

৬ । আরএফ সিগন্যাল জেনারেটর

৭ । কয়েল ওয়াইন্ডিং মেশিন

৮ । ট্রানজিস্টর চেকার

৯ । টিভি সুয়েমার জেনারেটর

১০। ক্যাথোড রে-অসিলোস্কোপ

১১। সিগন্যাল ট্রেসার ইনডিকেটর

১২। টিভি প্যাটার্ন জেনারেটর

১৩ । ট্রান্সফরমার

১৪ । ভিডিও ক্যাসেট পেয়ার

১৫ । ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার

১৬। রেডিও রিসিভার

১৭। টিভি রিসিভার

১৮। টেপ রেকর্ডার

১৯ । অ্যাভোমিটার

২০ । ওয়াইড ব্যান্ড সিগন্যাল জেনারেটর

২১। আরএলসি মিটার

২২ । কিউ মিটার

২৩। অসিলোস্কোপ।

বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড টুলস-এর ব্যবহারঃ

১।  ভাইসঃ কোন বস্তুকে শক্তভাবে আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

২। হ্যাকসঃ ধাতব বস্তু কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়।

৩। সোল্ডারিং আয়রনঃ কম্পোনেন্টস, লিডস ইত্যাদি সংযোজন করা এবং খোলা হয়।

৪। সোল্ডার সাকারঃ গলিত সোল্ডারকে শোষণ করে টেনে নেওয়া হয়।

৫। ছুরিঃ ক্যাবল বা তারের ইনসুলেশন ছাড়াবার জন্য, কোনো কিছু কাটার জন্য, দাগ দেওয়া ইত্যাদির জন্য ব্যবহার হয়।

৬। মেটাল স্ক্রাইবারঃ ধাতব বা পাস্টিক বস্তুর উপর প্যাটার্ন লে-আউট করার সময় তাতে দাগ কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়।

৭। ডেন্টাল মিররঃ সোল্ডার করা সংযোগ পরীক্ষা করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

৮। ডায়গনাল কাটিং পায়ার্সঃ এর সাহায্যে পার্টস-এর লেগ, তার কাটা হয়।

৯। নিয়ন ল্যাম্প টেস্টারঃ এর সাহায্যে কোনো সার্কিট বা কোনো পদার্থের মধ্যে বিদ্যুৎ আছে কিনা, তা যাচাই করা হয়।

১০। ডি-সোল্ডারিং গানঃ এর সাহায্যে একই সাথে সোল্ডার সাকার ও সোল্ডারিং আয়রনের কাজ করা হয়।

ইকুইপমেন্ট এর ব্যবহারঃ

১। অ্যামিটারঃ এ মিটারের সাহায্যে সার্কিট অথবা কোনো পরিবাহী বা অর্ধপরিবাহীর কারেন্ট পরিমাপ করা হয়।

২। ভোল্টমিটারঃ এ মিটারের সাহায্যে সার্কিট অথবা কোনো পরিবাহী বা অর্ধপরিবাহীর ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়।

৩। ওহম মিটারঃ এ মিটারের সাহায্যে কোনো পদার্থের রেজিস্ট্যান্স ও কন্টিনিউইটি পরিমাপ করা হয়।

৪। আর এফ সিগন্যাল জেনারেটরঃ রেডিও রিসিভারে ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

৫। এল এফ সিগন্যাল জেনারেটরঃ নেটওয়ার্ক কাপলিং, লাউড স্পিকারের টোন পুনঃউৎপাদন, গেইন নির্ণয়, এসি ব্রিজ মেজারমেন্ট, অ্যালাইনমেন্ট এবং টিউনিং-এর কাজে, RF অসিলেটর মডিউলেটিং ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

৬। ট্রানজিস্টর টেস্টারঃ ট্রানজিস্টর ভালোমন্দ নির্ণয়, PNP ও NPN নির্ণয়, এটি বেইস ইমিটার বা কালেক্টর নির্ণয়, লিকেজ কারেন্ট নির্ণয় ইত্যাদির কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

৭। আর এল সি মিটারঃ এর সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স, ইন্ডাকট্যান্স ও ক্যাপাসিট্যান্স পরিমাপ করা হয়।

৮। মাল্টিমিটারঃ এর সাহায্যে কারেন্ট, ভোল্টেজ, রেজিস্ট্যান্স ও বিভিন্ন সার্কিটের ভালোমন্দ নির্ণয়সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।

৯। অসিলোস্কোপঃ এটি ভোল্টেজ অপারেটেড মেজারিং ইনস্ট্রুমেন্ট। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের কোয়ান্টিটি মাপা যায়।

১০। টিভি রিসিভারঃ এর সাহায্যে বিভিন্ন খরব, ছবি, নাটক ইত্যাদি দেখা যায়।

বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড টুলস ও ইকুইপমেন্ট-এর রক্ষণাবেক্ষণঃ

টুলস ও ইকুইপমেন্ট সর্বদা সচল ও ভালো রাখতে হলে এটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে উক্ত যন্ত্রপাতিগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে আমরা নিম্নের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারিঃ-

১। যে স্থানে টুলস ও ইকুইপমেন্ট রাখব সেখানটা সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।

২। যে কক্ষে টুলস ও ইকুইপমেন্ট থাকবে, তা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।

৩। অব্যবহৃত ও পুরাতন নষ্ট মালামালগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।

৪। মাঝে মাঝে কাপড় দিয়ে উক্ত মালামাল পরিষ্কার করতে হবে।

৫। নরম বুরুশ ও লম্বা সরু ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নজেল দিয়ে অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ ও বর্তনী পরিষ্কার করতে হবে।

৬। কোনো টুলস বা ইকুইপমেন্টে ক্ষয় প্রক্রিয়া শুরু হলে তা প্রতিরোধ করতে হবে।

৭। টুলস ও ইকুইপমেন্টের ব্যবহারকালে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

৮। টুলস ও ইকুইপমেন্টের প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে।

৯। মালামাল রাখার সঠিক স্থান নির্বাচন করে রাখতে হবে।

১০ । ভেজা স্থানে টুলস বা ইকুইপমেন্ট যাতে না রাখা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url