নার্সিং বা রোগীর শুশ্রূষা প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

নার্সিং বা রোগীর শুশ্রূষা প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

নার্সিং বা রোগীর শুশ্রূষা প্রণালীঃ

রোগীর শুশ্রূষাকারীকে বা নার্সের অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হবে। রোগীর চিকিৎসার সাথে সাথে নার্সিংও যেন ঠিকমত করা হয়। নার্সের যদি নিতান্তই অভাব হয় তবেই সাধারণ লোক দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে-নতুবা নয়। নার্স বা শুশ্রূষাকারীকে কর্তব্যজ্ঞান, ধৈর্য্য, সহানুভূতি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

নার্স বা শুশ্রূষাকারীঃ 

নার্স এর কাজ যদি নিকট আত্মীয় স্বজন করে থাকে তবে সবচাইতে ভাল হয়, তবে নার্সিং-এর বিষয়ে তাদের জ্ঞান থাকতে হবে। যদি না থাকে তবে তাদেরকে নির্দেশ বা শিক্ষা দান করতে হবে। নার্সিং এর কাজ যারা করবেন তাদের মনে যথেষ্ট সাহস রাখতে হবে। কোনও রকম কঠিন সংক্রামক রোগে যেন শুশ্রূষাকারী ভীত না হন। এ সময় পোষাক যত কম পরা যায় ততই ভাল। পোষাক পরিচ্ছদ ঢিলেঢালা হওয়া উচিত, রোগীর কক্ষ থেকে বাইরে আসার সময় তা পরিবর্তন করা উচিত। এ সব ব্যাপারে সাবধান থাকলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতা, ধৈর্য্য ও সহানুভূতি ইত্যাদিও শুশ্রূষাকারীর ভেতরে পরিপূর্ণভাবে থাকতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেমন- নখ, চুল ইত্যাদিও পরিপাটি রাখতে হবে।

রোগীর শয়নকক্ষঃ

১। রোগীর ঘর সর্বদা প্রশস্ত ও আলো বাতাসপূর্ণ হবে। ঘরটি বাড়ির অন্যান্য ঘরগুলো থেকে স্বাস্থ্যকর হতে হবে। কারণ, ঘর যদি শুকনো, তাপযুক্ত এবং প্রশস্ত না হয় এবং যদি স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকে তবে রোগী এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

২। রোগীর ঘরের এক কোণে একটি তাক কিংবা টেবিল রাখা উচিত যেখানে অনায়াসে ওষুধ পত্র, কাগজ, কলম ইত্যাদি রাখা যায়।

৩। কোনও ছোঁয়াচে রোগ হলে যেমন- কলেরা, বসন্ত, হাম ইত্যাদিতে রোগীকে একটি আলাদা কক্ষে রাখা উচিত সেই কক্ষে লোকজন যত কম যাতায়াত করবে ততই মঙ্গলজনক হবে।

৪। যে সকল রোগীর চোখের সমস্যা আছে কিংবা ধনুষ্টংকারের রোগী- এদেরকে অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে কিন্তু ঘরটি প্রশস্ত হতে হবে। যেন, রোগী নিজেকে বন্দী বলে না ভাবতে পারে।

৫। রোগীর শয্যার পাশে এককোণে হাত ধোয়ার সাবান, তোয়ালে গামছা ইত্যাদি রাখার ব্যাবস্থা থাকবে, সেই সাথে উপযুক্ত স্থানে একটি ঘড়িও রাখতে হবে। যেন সময়ানুযায়ী রোগীকে ওষুধ এবং পথ্য খাওয়ানো যায়।

৬। ঘরটি দিনে দুই তিনবার জীবাণুনাষক ওষুধ ছিটিয়ে ধুতে হবে। বিছানাপত্র পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখতে হবে। ঘরের কোণে ময়লা আবর্জনা ফেলার পাত্র রাখতে হবে এবং সেই পাত্রে ওষুধ ছিটিয়ে দিতে হবে।

রোগীর শয্যার স্থানঃ

১। রোগীর শয্যার স্থান ঘরের মাঝখানে হওয়াই উত্তম। এতে করে যারা রোগীর সেবা যত্ন করেন তাদের চলা ফেরায় সুবিধা হয়।

২। প্রয়োজন মতো এবং প্রতিদিনই রোগীর বিছানার চাদর পরিবর্তন করে দিতে হবে। মাঝে মাঝে এগুলো রোদে দিলে রোগ জীবাণু মুক্ত হয়। এজন্য কয়েকটি বিছানার চাদর রাখা উত্তম।

৩। রোগীর বিছানার চাদর, মশারী, জামাকাপড় ইত্যাদি পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে।

৪ । যে সব রোগী বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করে এদের শয্যার নিচে রবার-ক্লথ দিতে হবে।

৫। কোন্ ধরনের রোগীকে কি ধরনের শয্যা পেতে দিতে হবে তা বুঝতে হবে।

রোগীর জন্য কোন্ কোন্ ধরনের জিনিসপত্র আবশ্যক?

রোগীর ঘরে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র থাকবে। অনাবশ্যক এমন কোনও জিনিস রাখা উচিত নয় যা রোগীর শুশ্রূষাকারীর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

কি কি জিনিস রাখবেন?

১। থার্মোমিটার।

২। রোগীর থালা, বাটি, গ্লাস ইত্যাদি।

৩। প্রস্রাব পায়খানা করার পাত্র।

৪। রোগীর রবার-ক্লথ, তোয়ালে, বালিশ ইত্যাদি।

৫। রোগীর সাবান, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট ইত্যাদি।

৬। হট ওয়াটার ব্যাগ, আইস ব্যাগ।

৭। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য পাত্র।

৮। রোগীর ব্যবহার্য কাপড় রাখার জন্য প্লাস্টিকের বালতি।

৯। রোগীর শরীরের তাপমাত্রা এবং ওষুধ পত্রের রিপোর্ট রাখার জন্য খাতা কলম।

নার্সিং-এর ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তাঃ

কথায় বলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রোগ নিরাময় করে থাকে। যে লোক স্বভাবতঃ নোংরা থাকে তার ওপর রোগীর নার্সিং-এর ভার দিলে রোগ কমে না বরঞ্চ বেড়ে যায়। রোগীর বিছানাপত্র রোগীর দেহ ইত্যাদি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগী নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে করে এবং রোগ যন্ত্রণাও অনেকটা কমে।

ইসলাম ধর্মে একটি কথা আছে যে, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’। শুধু মাত্র পরিচ্ছন্নতার জন্য আল্লাহকে লাভ করা যায় কি-না তা জানা নেই। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য— মনকে পরিচ্ছন্ন না রাখলে আল্লাহকে পাওয়া যায় না। মনকে শুদ্ধ রাখতে হলে দেহের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। দেহ পবিত্র না হলে মন পবিত্র হতে পারে না। পরিচ্ছন্ন থাকলে রোগ জীবাণু বাড়তে পারে না। এজন্য রোগীর পোষাক পরিচ্ছদ, আসবাব পত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিতI

সাধারণ রোগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যতটা প্রয়োজন, সংক্রামক রোগে আরও বেশি পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।আমাদের গ্রাম দেশে কলেরা, হাম, বসন্ত ইত্যাদি হলে রোগীকে খুব সাবধানে রাখা হয়। এই পরিচ্ছন্নতার জন্য রোগ যেমন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়াতে পারে না, তেমনি রোগীর দেহ পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ সারা শরীরে ছড়াতে পারে না। পরিবারের কেউ একজন যদি অসুস্থ হয়, তবে অন্যান্যদের উচিত রোগীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দেওয়া।

এতে রোগ আর দশজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যেমন- স্কুলে পড়ে এমন শিশুর যদি হাম হয় তবে তার অসুখ সেরে যাওয়ার পরেও কিছুদিন তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এতে করে আর দশটা শিশু সংক্রামক রোগ থেকে রেহাই পাবে। একজনের এসব রোগ হলে পরিবারবর্গ, মহল্লার এমনকি সভ্য সমাজের নজর রাখা একান্তভাবে কর্তব্য।

নিষ্ঠাবান হওয়াঃ

নার্সিং পেশার একটি বিরাট অঙ্গ হলো নিষ্ঠা ও কর্তব্যজ্ঞান। এ দুটো জিনিস যার মধ্যে নেই তিনি আর যাই করেন একজন ভাল নার্স হতে পারেন না। নার্সের কর্তব্য হতে হবে নিখুঁত। এ কথা মনে রাখতে হবে যিনি কর্তব্য কাজে অবহেলা করেন তিনি নার্সিং পেশায় অযোগ্য। রোগীকে সারিয়ে তোলার সংকল্প নিয়েই নার্সকে এগিয়ে যেতে হবে।

রোগীকে সারিয়ে তুলতে হলে, নিম্নোক্ত কাজগুলো নার্স বা শুশ্রূষাকারীকে নিষ্ঠার সাথে করতে হবে। যেমন-

১। রোগীকে সময়ানুযায়ী ওষুধপত্র খাওয়ানো।

২। রোগীকে পথ্য দেওয়া।

৩। নিয়মিত তাপগ্রহণ ও তা লিখে রাখা।

৪। নাড়ীর গতি দেখা ও লিখে রাখা।

৫। ইনজেকশন দেওয়া।

৬। প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন হলে তা সময়মত করানো।

৭। রোগীর পানির পিপাসা পেলে পানি পান করানো।

৮। রোগীর দুর্বলতা ও ভয় দূর করা।

৯। রোগীর সাথে সব সময় সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলা।

১০। আর্থিক ব্যাপারে বেশি ভাবা উচিত নয়। রোগী কিভাবে সুস্থ হবে সেই কামনা করা।

নার্সের নিষ্ঠার অভাবে অন্যান্য গুণও চাপা পড়ে যেতে পারে। তাই নিষ্ঠাবান হওয়া নার্সের কর্তব্য।

ধৈর্য্য ও সহানুভূতিশীল হওয়াঃ

নার্স বা শুশ্রূষাকারীকে অসীম ধৈর্য্যের অধিকারী ও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। নার্স বা শুশ্রূষাকারী যদি ধৈর্য্য অবলম্বন না করে কথাবার্তা ও ব্যবহারে দুর্বলতা প্রকাশ করে তবে রোগী হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। শুধু নার্স বা শুশ্রূষাকারীই নয় রোগীর আত্মীয় স্বজনকেও যথেষ্ট ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। অনেক সময় রোগীর আত্মীয় স্বজন রোগ আরোগ্য লাভে দেরী হলে পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক পরিবর্তন করিয়ে থাকেন। এতে তারা রোগকে বাড়িয়ে তুলে, অভিভাবক বা পরিজনের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি করে থাকেন। 

এদের বোঝা উচিত যে, এমন কিছু রোগ আছে, যার নির্দিষ্ট ভোগকাল শেষ না হলে রোগ সারে না। আবার কিছু কিছু রোগীও আছেন বেশ অধৈর্য্য। মনে রাখা উচিত যে, ধৈর্য্যের অভাব হলে রোগীর ক্ষতি হবে। তাদের বোঝা উচিত যে, রোগ হলে যন্ত্রণা হওয়াটা স্বাভাবিক। এ সময় বেশি অস্থির হলে চিকিৎসকের চিকিৎসা উল্টোপাল্টা হয়ে যেতে পারে। রোগী যদি মানসিকভাবে বেশি অস্থির হয়ে পড়েন, তবে তার সাথে আত্মীয় স্বজন, শুশ্রূষাকারী সকলেই বিচলিত হয়ে পড়তে পারেন।

রোগী বহুদিন একই গৃহে, একই শয্যায় এবং একই নার্সের অধীনে থাকার জন্যই রাগী ও খিটখিটে হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে নার্স বা শুশ্রূষাকারীকে প্রচুর ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। অনেকদিন ধরে রোগীর সেবা শুশ্রূষা করার জন্য বিরক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা মুখমণ্ডলে ও কথাবার্তায় প্রকাশ পেলে রোগীর ওপরে তার প্রতিক্রিয়া ঘটে। মনে রাখা উচিত, রোগ নিরাময় হওয়ার পেছনে যথেষ্ট মনের প্রভাব থাকে।

এজন্য নার্সকে অবশ্যই ধৈর্য্য অবলম্বন করে কাজ করতে হবে। রোগীর কিছু আত্মীয় স্বজন থাকেন এরা অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন। এ ধরনের লোককে রোগীর কাছে আসতে দেওয়া উচিত নয়। রোগীর আত্মীয় স্বজন, রোগী, শুশ্রূষাকারীও চিকিৎসক সকলেরই প্রচুর ধৈর্য্য থাকতে হবে। নচেৎ রোগীর অকল্যাণ ও ক্ষতি হতে পারে।

নার্সিংঃ

নার্স বা শুশ্রূষাকারীর লেখাপড়া জানা উচিত। শিক্ষিত নার্স দ্বারা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করানো যায়। যেমন- রোগীর কেস হিস্ট্রি লেখানো যায়। রোগীকে ইনজেকশন দেওয়ানো যায়, ডুস দেওয়ানো যায়, ক্যাথেটার দেওয়ানো ইত্যাদি আরও বহু প্রয়োজনীয় কাজও শিক্ষিত নার্স দ্বারা করানো যায়। অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা সেবা করালে রোগ যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নার্সিং-এর ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম মানা উচিতঃ

১। রোগীর প্রতিদিনের শরীরের উত্তাপ, মল, মূত্র, নাড়ী, শ্বাস ইত্যাদি লক্ষণ একটি খাতায় লিখে রাখতে হবে।

২। রোগী যাতে পূর্ণ বিশ্রাম পায় সেদিকে নার্সের পূর্ণ দৃষ্টি দিতে হবে।

৩। সময়মত রোগীকে পথ্য দিতে হবে।

৪। রোগীর মল, মূত্র, থুথু ইত্যাদি যেন যেদিকে সেদিকে না ছড়ায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

৫। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় চোপড় পুকুরের পানিতে ধোয়া উচিত নয়। এতে করে মহামারী প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য প্রথমেই কাপড় চোপড় জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৬। প্রতি ৩, ৪, ৬ ঘণ্টা অন্তর রোগীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। শ্বাস প্রশ্বাস দেখতে হবে। প্রেসার পরীক্ষা করতে হবে। রোগীর মল-মূত্র ত্যাগ এবং ঘুম ইত্যাদি ঠিকমত হচ্ছে কি-না সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

৭। জ্বরের সময় ঠিকমত শরীর স্পঞ্জ করতে হবে।

নার্সিং-এর ক্ষেত্রে যে শিক্ষাগুলো বিশেষ প্রয়োজনীয়ঃ

কিভাবে মাথা ধোয়াবেনঃ

মাথা ধোয়ানোর সময় রোগীর ঘাড়ের নিচে একটি রবার-ক্লথ দিতে হবে যেন পিঠের দিকে পানি না যায়। নিচে একটি গামলা কিংবা বালতি দিতে হবে যেন পানি রবার-ক্লথের মাধ্যমে গড়িয়ে গিয়ে বালতিতে পড়ে। মাথা যখন ধোয়ানো শেষ হবে তখন তোয়ালে দিয়ে ভালভাবে মাথা মুছে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, চুলে যেন বেশি পানি আটকে না থাকে। পানি বেশি থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

রোগীর নাড়ী দেখার পদ্ধতিঃ

ঘড়ির কাঁটা এক মিনিটে একবার ঘুরে আসতে যতটা সময় নেবে ততক্ষণে নাড়ী কতবার Beat করেছে তা দেখে Pulse Rate বোঝা যায়। ডান হাতের কব্জির বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচে সামনের দিকে চাপ দিলে Radial Pulse পাওয়া যায়। সেকেণ্ডের কাঁটাযুক্ত ঘড়ির সাহায্যে Pulse Rate বুঝতে হবে। সুস্থ লোকের নাড়ীর গতি প্রতি মিনিটে ৭২ থেকে ৮০ বার পর্যন্ত হয়। এর চেয়ে দ্রুত কিংবা ধীরে নাড়ী চললে ধরে নিতে হবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ নয়।

কিভাবে শরীরের তাপ নেবেন?

রোগীর শরীরে সাধারণত তাপ গ্রহণ করতে হলে থার্মোমিটারের পারদ অংশ বগল কিংবা জিহ্বার নিচে দিতে হবে। থার্মোমিটার লাগাবার পূর্বে ঝাঁকি দিয়ে নিয়ে পারদ স্তম্ভকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে নিতে হবে। তারপর এক মিনিট জিহ্বার নিচে কিংবা বগলের নিচে লাগিয়ে তাপ কতটা উঠলো তা দেখে নিতে হবে।

নার্সিং বা রোগীর শুশ্রূষা প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শ্বাস প্রশ্বাস পরীক্ষা করার নিয়মঃ

একজন সুস্থ লোকের সাধারণ শ্বাসের গতি প্রতি মিনিটে ১৮ থেকে ২০ বার হয়। রোগীকে শুইয়ে তার বুকের ওপর হালকা কোনও ধাতু দিয়ে রাখলে শ্বাস নিতে থাকলে ঐ ধাতু কতবার ওঠানামা করছে তা দেখতে হবে। নাড়ীর গতি যদি মিনিটে ১৮ থেকে ২০ বার এর বেশি হয় তবে শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে বইছে বুঝতে হবে।

আইস ব্যাগ কিভাবে প্রয়োগ করবেন?

আইস ব্যাগে বরফ ঢুকাতে হলে মাঝারী আকারের বরফ নিতে হবে। ব্যাগ খালি থাকতেই বাতাস বের করে নিয়ে যতটা সম্ভব বরফ দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করতে হবে। ব্যাগের বাইরে যদি ভিজে ওঠে তবে তা মুছে নিতে হবে। বরফ গলে পানি হয়ে গেলে তা ফেলে দিতে হবে। এরপর চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী মাথায়, কপালে, ঘাড়ে ও পেটে আইস ব্যাগ দিতে হবে।

হট ওয়াটার ব্যাগ দেবার পদ্ধতিঃ

হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ঢুকাতে গেলে ব্যাগের কিছু অংশ খালি রেখে পানি ঢুকাতে হয়। ব্যাগের মুখ দিয়ে যখন ভালভাবে বাষ্প বেরিয়ে যাবে তখনই ব্যাগের মুখ বন্ধ করতে হবে। ব্যাগের উত্তাপ বেশি হলে রোগী তা সহ্য করতে পারবে না। তাই প্রথমে উত্তাপ পরীক্ষা করে ব্যাগের মধ্যে কাপড় পেঁচিয়ে দিতে হবে। ক্রমান্বয়ে ব্যাগ ঠাণ্ডা হয়ে আসলে কাপড় খুলে দিতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশ মতো প্রয়োজনীয় স্থানে সেঁক দিতে হবে।

প্রেসার পরীক্ষা করার পদ্ধতিঃ

রক্তচাপ দুই ধরনের হয়। হৃদপিন্ডের চাপে রক্ত সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লে তাকে সিস্‌টোলিক প্রেসার বলে। আবার যখন রক্ত হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে ঐ সময় হৃদপিণ্ড প্রসারিত হয় বিধায় চাপ কম পড়ে তখন তাকে ডায়াস্টোলিক প্রেসার বলে। পূর্ণ বয়স্ক একজন সুস্থ লোকের সিস্টোলিক ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক ৮০ থাকে।সাধারণত ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ এর বেশি হলে আমরা তাকে হাই প্রেসার বলে থাকি।

সাধারণ অবস্থায় সিস্টোলিকের থেকে ডায়াস্‌টোলিক প্রেসার প্রায় ৪০ এর মতো কম হয়। বয়স অনুযায়ী প্রেসার কমে বাড়ে। বয়সের সঙ্গে ৯০ যোগ করলে তা হবে স্বাভাবিক সিস্টোলিক চাপ এবং ডায়াস্টোলিক তার চেয়ে ৪০ কম হবে। যেমন একজন ৪৫ বছরের লোকের স্বাভাবিক প্রেসার হবে—

৪৫+৯০ = ১৩৫ সিটোলিক

১৩৫–৪০ = ৯৫ ডায়াস্টোলিক

যদি প্রেসার এর চেয়ে বেশি কিংবা কম হয় তবে বুঝতে হবে লোকটি রোগগ্রস্থ।

রোগীকে স্পঞ্জ করানোঃ

প্রথমে রোগীর মাথা ধোয়াতে হবে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। তারপর হাত, বুক, পিঠ এবং সবশেষে পা প্রভৃতি স্পঞ্জ করতে হবে। স্পঞ্জ করার সময় ঘরের দরজা জানালা ঠিকমত বন্ধ করতে হবে। স্পঞ্জ করার সময় গামছা বা তোয়ালে পানিতে ভিজিয়ে ভাল করে নিংড়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পানি যেন খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা না হয়। স্পঞ্জ করার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুকনো গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। কোনও কোনও রোগের ক্ষেত্রে গরম পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে স্পঞ্জ করা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url