মাল্টিমিটার ও ডিসোল্ডারিং পাম্প এবং ব্রেডবোর্ড কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ইলেকট্রনিক্স

মাল্টিমিটারঃ

আমরা যারা ইলেকট্রনিক্স নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করি তাদের কাছে মাল্টিমিটার খুবই দরকারী একটি যন্ত্র। আর এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানাটাও অত্যন্ত জরুরী। কেননা মাল্টিমিটার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতিগুলো জানা থাকলে একদিকে যেমন একটি কমদামী মাল্টিমিটার থেকেও আদায় করা যায় অনেক বেশি সুবিধা অন্যদিকে তা ভুলভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলবারও ভয় থাকে না। এ কারণে একেবারে গোড়া থেকে মাল্টিমিটার ব্যবহার পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু বলতে চেষ্টা করছি।

মাল্টিমিটার

উপরে একটি সাধারণ মাল্টিমিটারের ছবি রয়েছে। আমরা জানি, একটি সাধারণ মাল্টিমিটার ভোল্টমিটার, ওহমমিটার এবং মিলিঅ্যাম্পেয়ার মিটার—এই তিন ধরনের মিটারের সমন্বয়ে তৈরি। তবে কৌশল জানা থাকলে এই তিন ধরনের মিটারের সাহায্যেই আরও অনেক কিছু পরিমাপ ও পরীক্ষা করা সম্ভব। একটি নতুন মিটার হাতে পাওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ হবে সেটিকে এমন একটি জায়গায় স্থাপন করা যেখান থেকে আপনি ঠিক খাড়াভাবে মিটার-ডায়ালের উপর চোখ রাখতে পারবেন; কেননা, সামান্য একটু কোণ করে তাকালে মিটারের রিডিং আপনার চোখে ভুলভাবে দৃশ্যমান হবে। সাধারণ অবস্থায় মিটারের কাঁটাটি 0V-এর উপর অবস্থান করে। যদি তা না থাকে তবে 0V অ্যাডজাস্টিং স্ক্রুটি ঘুরিয়ে খুব ভালভাবে তা ঠিক করুন। নতুবা মিটারের পাঠ সব সময়ই কিছু কম বা বেশি দৃশ্যমান হবে। মিটারের ভেতরে ব্যাটারি পুরে নেয়া আছে কিনা দেখে নিন এবং লাল এবং কালো রঙের প্রোব দু’টি যথাক্রমে '+' ও –' চিহ্নিত প্রোব-সকেটে লাগান। মিটারটিতে ব্যাটারি লাগানো হয় শুধু ওহম মাপার জন্য। এ কারণে রেঞ্জ সিলেক্টরটি 1MΩ /100 KΩ পজিশনে এনে প্রোব দু'টি একটির সাথে আরেকটি লাগিয়ে 0Ω অ্যাডজাস্টিং নব ঘুরিয়ে কাঁটাটিকে ঠিক 0Ω পজিশনে আনুন। যেহেতু ব্যাটারির চার্জ ধীরে ধীরে কমে আসে সেহেতু 0Ω  ঠিক রাখার কাজটি প্রায়ই (0V মাত্র একবারই অ্যাডজাস্ট করতে হয়) আপনাকে করতে হবে। যখন দেখবেন নব সম্পূর্ণ ঘোরানোর পরও 0Ω অ্যাডজাস্ট হচ্ছে না তখন বুঝবেন ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে এবং সাথে সাথে তা পরিবর্তন করে নতুন একটি লাগান। নাহলে পুরানো ব্যাটারি গলে গিয়ে সম্পূর্ণ মিটারটিকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।

রেঞ্জ সিলেক্টরঃ

রেঞ্জ সিলেক্টরের কাজ হলো সম্পূর্ণ মিটারটির রেঞ্জ বা সীমা নির্ধারণ করা। অর্থাৎ, রেঞ্জ সিলেক্টর যদি AC 1000V পজিশনে থাকে এবং সে অবস্থায় AC 250V -এর বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিমাপ করা হয় তবে কাঁটাটি সম্পূর্ণ স্কেলের এক-চতুর্থাংশ অতিক্রম করে থেমে যাবে। আর সিলেক্টর AC 500V পজিশনে থাকলে কাঁটা অতিক্রম

করবে সম্পূর্ণ স্কেলের অর্ধেক পথ। একটুখানি চিন্তা করলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। ভোল্ট, ওহম, অ্যাম্পেয়ার—সবকিছু পরিমাপের ক্ষেত্রেই রেঞ্জ সিলেক্টরের ব্যবহার পদ্ধতি একই রকম।

AC ভোল্টেজ পরিমাপঃ

AC তড়িৎ উৎসের যেহেতু কোন পজিটিভ-নেগেটিভ প্রান্ত থাকে না সেহেতু AC ভোল্ট পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রোব দু'টির পজিটিভ-নেগেটিভ লক্ষ করারও প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে প্রোব দু'টি AC উৎসের দু’প্রান্তে ধরলেই ভোল্টের পরিমাপ পেয়ে যাবেন। এ সময় রেঞ্জ সিলেক্টরটি কিভাবে ব্যবহার করবেন বলছি । মনে করুন, 9V-এর একটি ট্রান্সফরমারের ভোল্ট মাপবেন। এ অবস্থায় কোন কারণে (বা আপনার অজানা থাকলে) ট্রান্সফরমারটির সেকেণ্ডারি কয়েলে 9V-এর বেশি (12V, 15V ইত্যাদি) ভোল্ট থাকতে পারে। এ সময় রেঞ্জ সিলেক্টর যদি 10V রেঞ্জে থাকে তবে কাঁটা স্কেলের শেষ প্রান্ত অতিক্রম করে একটি ঘাঁ খাবে যা মিটারটির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর (এমনকি নষ্টও হয়ে যেতে পারে)। তাই এক্ষেত্রে উচিত হবে AC 50V রেঞ্জে দিয়ে প্রথমে তা পরিমাপ করা। যদি দেখেন সত্যি সত্যিই তা 9V নির্দেশ করছে' (অর্থাৎ 10V-এর নিচে) তখন আপনি 10V রেঞ্জে দিয়ে তা আরও সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করতে পারেন। আবার আপনি আপনার বাসার বিদ্যুৎ-সরবরাহের ভোল্টেজ মাপার ইচ্ছে অনুভব করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো নিশ্চিত যে সেখানে 220V বা বড়জোর 230V থাকতে পারে এবং তা মাপার জন্য 250V রেঞ্জই যথেষ্ট। কিন্তু তবুও আপনি তা করবেন না। অবশ্যই সিলেক্টর প্রথমে 500V বা 1000V রেঞ্জে দিয়ে মেপে দেখবেন সত্যি সত্যিই তা 250V-এর নিচে আছে কিনা। ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তার পরবর্তী নিম্ন রেঞ্জে গিয়ে পরিমাপ করবেন। কারণ সামান্য একটু ঝুঁকি নিতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার শখের মূল্যবান যন্ত্রটি। আর এই পদ্ধতি শুধু AC ভোল্টের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য সবকিছু পরিমাপের ক্ষেত্রেও মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

DC ভোল্টেজ পরিমাপঃ

DC ভোল্টেজ পরিমাপ করার নিয়ম AC ভোল্টের মতই; শুধু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রয়েছে পজিটিভ-নেগেটিভ ঠিক রাখার বিষয়টি। এ ব্যাপারে ভুল করলেও মিটারের সাংঘাতিক ক্ষতি হয়, এমনকি নষ্ট হয়েও যেতে পারে।

DC ডোল্টেজ পরিমাপ

তাছাড়া যে কোন ধরনের ভোল্ট (AC/DC) মাপার সময় মিটারটিকে তড়িৎ উৎসের প্যারালাল (সমান্তরাল) অবস্থানে রেখে পাঠ নিতে হয়—এ কথা বোধ করি সবাই জানেন । তবুও উপরের ছবি দেখে বিষয়টি আরেকবার মনে করে নিন।

অ্যাম্পেয়ার পরিমাপঃ

একটি সাধারণ মাল্টিমিটারে বড়জোর 100mA বা 200mA. পর্যন্ত (1000mA=1A) মাপা যায়। অথচ আমাদের ব্যবহৃত অধিকাংশ যন্ত্র এর চেয়ে বেশি অ্যাম্পেয়ারে চলে। এ কারণে সব ক্ষেত্রে মিটারটি আমরা ব্যবহার করতে পারি না (অবশ্য দামী/ডিজিটাল মিটারে 10A পর্যন্ত মাপা যায়)। তবে যদি রেঞ্জে কুলোয় তখন আমরা এটিকে কিভাবে ব্যবহার করব তা দেখানো হয়েছে নিচের ছবিতে।

অ্যাম্পেয়ার পরিমাপ

অ্যাম্পেয়ার মাপার ক্ষেত্রে মিটারটি ব্যবহার করতে হয় সিরিজে। অর্থাৎ কোন একটি সার্কিটের (LOAD) মধ্য দিয়ে কী পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত হয় তা নির্ণয় করার জন্য মিটার স্থাপন করতে হয় পাওয়ার সাপ্লাই এবং সার্কিটের মাঝখানে। পজিটিভ-নেগেটিভ প্রোব দু'টি কিভাবে থাকবে তা-ও ভালভাবে লক্ষ করুন উপরের ছবিতে। 

ওহম (রেজিস্ট্যান্স) পরিমাপঃ

একটি সাধারণ মাল্টিমিটারের সাহায্যে 1MΩ পর্যন্ত মাপা যায়। রেঞ্জ সিলেক্টর 1MΩ  বা 100KΩ  রেঞ্জে রেখে টেস্ট-প্রোব দু'টি কোন একটি রেজিস্টরের দু’প্রান্তে ধরলে সেই রেজিস্টরটির মান মিটারে দেখা যায়। এক্ষেত্রে পজিটিভ-নেগেটিভ এবং রেঞ্জের ব্যাপারটি লক্ষ না রাখলেও চলে। অর্থাৎ, 100KΩ -এর বেশি মানের রেজিস্টর যদি 100KΩ রেঞ্জে রেখেও মাপা হয় তবুও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

‘ইলেকট্রনিক্স’ কাজটি যাঁরা করেন তাঁদের প্রত্যেকেই রেজিস্টরের কালার কোড জানেন। তাই একটি রেজিস্টর নষ্ট কিনা তা Check করার জন্যই সাধারণত ওহম মিটার ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ 2.2KΩ -এর একটি রেজিস্টরের মান নির্ণয়ের সময় যদি মিটারে অসীম বা 0Ω পাঠ দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেটি নষ্ট। তবে কোন রেজিস্টর সার্কিটে লাগানো অবস্থায় তা check করতে গেলে সার্কিটের অন্যান্য ক্যাপাসিটরে অবস্থিত চার্জের কারণে মিটার সঠিক পাঠ দেয় না। সেজন্য রেজিস্টরটির যে কোন একটি পা খুলে পাঠ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।মাল্টিমিটারের প্রধান কাজগুলো ছাড়াও এটি আরও যেসব কাজে ব্যবহার করা যায় সেগুলো সম্পর্কে বলছি।

কানেকশন টেস্টঃ

যে কোন ধরনের কানেকশন টেস্ট করার কাজে ওহম-মিটারটিকে ব্যবহার করা হয়। কোন একটি ইনস্যুলেটেড তারের মাঝখানে ছেঁড়া আছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায় তারটির দু'প্রান্তে প্রোব দু'টি ধরলে 0Ω রিডিং দেয় কিনা তা লক্ষ করে। একটি স্পিকারের মূল অংশ হলো সেটির কয়েল। কাজেই স্পিকারের দু'প্রান্তে প্রোব দু'টি ধরে পরীক্ষা করা সম্ভব কয়েলটি (অর্থাৎ, স্পিকারটি) নষ্ট কিনা। আবার একটি ট্রান্সফরমারের কয়েলও একইভাবে পরীক্ষা করে বোঝা সম্ভব সেটি ভাল না খারাপ। অল্প ভোল্টের ট্রান্সফরমারগুলোর প্রাইমারি কয়েল সাধারণত সরু তারের হয়ে থাকে এবং প্যাচ সংখ্যা থাকে অনেক (প্রায় দু'তিন হাজার)। ফলে অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের কারণে বেশ ভাল মানের একটি রোধ তৈরি হয় কয়েলটিতে। সুতরাং, সেক্ষেত্রে তা পরীক্ষা করতে গেলে 0Ω -এর পরিবর্তে আরও বেশি মানের রিডিং পাওয়া যেতে পারে।

ডায়োড টেস্টঃ

ওহম-মিটারের সাহায্যে যে-কোন ধরনের ডায়োডও পরীক্ষা করা সম্ভব। একটি ভাল ডায়োডের পজিটিভ ও নেগেটিভ প্রান্তে যথাক্রমে মিটারটির পজিটিভ ও নেগেটিভ প্রোব দু'টি ধরলে একটি রিডিং পাওয়া যায়। কিন্তু তার উল্টোটি করলে কোন রিডিং পাওয়া যায় না বা কয়েক MΩ রিডিং পাওয়া যায়। কোন ডায়োড নষ্ট হলেই শুধু এর ব্যতিক্রম ঘটবে। ডায়োড সম্বন্ধে অবশ্য একটি বিষয় জানার রয়েছে। একটি অ্যানালগ মিটারে 100KΩ রেঞ্জে ডায়োড টেস্ট করলে এক রকম রিডিং দেয়, আবার 1MΩ রেঞ্জে তা পরীক্ষা করলে পাওয়া যায় আরেক রকম রিডিং। কিন্তু এটি দোষের কিছু নয়। ডায়োড টেস্ট করার সময় মিটার রিডিং দেয় কি দেয় না সেটা লক্ষ করাই আসল কথা। পাঠ কত দিচ্ছে সেটি ধর্তব্য নয়। এবার ইলেকট্রনিক্স হবিস্টদের অতি প্রয়োজনীয় দু'টি জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বিদায় নেব।

ডিসোল্ডারিং পাম্পঃ

ঝালাই করে পার্টস্ জোড়া দিয়ে আমাদের বিভিন্ন সার্কিট তৈরি করতে হয়। আবার প্রায়ই বিভিন্ন কারণে পার্টগুলোকে সার্কিট থেকে খুলে ফেলবারও প্রয়োজন হয়। রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর কিংবা ডায়োডের মত পার্টস্ হলে তা সোল্ডারিং আয়রনের সাহায্যেই খুলে ফেলা কোন সমস্যা নয়। কিন্তু এভাবে ট্র্যানজিস্টর, আই.সি. কিংবা বহু-পিন বিশিষ্ট কোন পার্টস্ খোলা খুব সহজ নয়। সেক্ষেত্রে যে যন্ত্রটির সাহায্য নেয়া হয় সেটির নাম ডিসোল্ডারিং পাম্প (Desoldering Pump)।

ডিসোল্ডারিং পাম্প
ডিসোল্ডারিং পাম্প

এটি আসলে স্প্রিংযুক্ত মোটা একটি সিরিঞ্জের মত যন্ত্র। এর লিভারটি চাপ দিলে তা এক জায়গায় আটকে যায় এবং সুইচটি চাপার সাথে সাথে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। এর অগ্রভাগ দিয়ে তখন প্রচণ্ড জোরে বাতাস এর ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে পার্টসে্র পা এবং পি. সি. বি.-র গায়ে লেগে থাকা রাং, সোল্ডারিং আয়রনের সাহায্যে গলিয়ে সেখানে এই যন্ত্রটির অগ্রভাগ লাগিয়ে সুইচটি চাপ দিলে বাতাসের সাহায্যে এটি গলিত রাং-টুকু ভিতরে টেনে নেয়। এভাবে এটির সাহায্যে সার্কিট থেকে অনেক সহজে পার্টস গুলো খোলা যায়। এটি সাকার নামেও পরিচিত এবং ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মানে এটি কিনতে পাওয়া যায়। এই যন্ত্রের অগ্রভাগটি প্লাস্টিকের তৈরি বলে এটি ব্যবহারের সময় অনেকে তা গলিত সোল্ডারের সংস্পর্শে নিয়ে যান না বলে খুব কার্যকরভাবে এটি তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না । কিন্তু সকলকে আশ্বস্ত করার জন্য বলছি—এর অগ্রভাগটি বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে তা সরাসরি গলিত রাং-এর সংস্পর্শে (এমনকি অল্প সময়ের জন্য সোল্ডারিং আয়রনের মাথাতেও) নিয়েও কাজ করা যায়। এমনকি বহু ব্যবহারের পর তা গলে গেলেও ভয়ের কিছু নেই। কারণ শুধু অগ্রভাগটি আলাদা কিনতে পাওয়া যায় যা সহজেই পরিবর্তন করে নেয়া সম্ভব।

ব্রেডবোর্ডঃ

হবিস্ট থেকে শুরু করে প্রফেশনাল—প্রত্যেকেরই বিভিন্ন সার্কিট নিয়ে প্রায়ই গবেষণা করবার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কোন সার্কিট থেকে এক বা একাধিক পার্টস্ বারবার খুলে আবার তা ঝালাই করা একদিকে যেমন বিরক্তিকর ও সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে পার্টস্ এর জন্যও তা ক্ষতিকর। আবার একই ধরনের কয়েকটি সার্কিট দ্রুত তৈরি করে সেগুলোর মাঝে তুলনা করে সেরাটি বেছে নেবার প্রয়োজনও পড়তে পারে। কিন্তু এভাবে ঝালাই করে দ্রুত সার্কিট তৈরি করা সম্ভব নয়। আর এ সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাবার জন্যই উদ্ভাবিত হয়েছে ব্রেডবোর্ড (Breadboard)।
ব্রেডবোর্ড
ব্রেডবোর্ড

ব্রেডবোর্ড আসলে জটিল কোন জিনিস নয়। সারি সারি অসংখ্য সকেটের সমন্বয়ে এটি তৈরি এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কলাম ও সারিতে এর নিচ দিয়ে সংযোগ দেয়া থাকে। সেজন্যে একটি আই.সি. সকেটে লাগিয়ে দিলে প্রত্যেকটি পিনের জন্য পাওয়া যায় একটি করে সকেটযুক্ত সারি। এসব সারিতে অন্যান্য পার্টস্ লাগিয়ে (প্রয়োজনে আবরণযুক্ত শক্ত তারের সাহায্যে সংযোগ দিয়ে) খুব সহজেই একটি সার্কিট অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা যায়। আর যেহেতু এর জন্য কোন ঝালাইয়ের প্রয়োজন হয় না, তাই সহজেই একটি পার্টস্ খুলে নিয়ে লাগানো যায় আরেকটি। ফলে গবেষণাধর্মী কাজসহ যে কোন সার্কিট এতে বার বার তৈরি করা যায় এবং বাঁচানো যায় প্রচুর খরচ ও সময়। 6.5 cm × 17 cm ক্ষেত্রফলের একটি ব্রেডবোর্ডের মূল্য পড়ে প্রায় ৩৫০ টাকা এবং এরকম দুই বা ততোধিক বোর্ড পরস্পরের সাথে জোড়া দিয়ে ক্ষেত্রফল বাড়ানোরও ব্যবস্থা থাকে। তবে যে কেউ ইচ্ছে করলে আই.সি.-বেস্ এবং ভেরো-বোর্ডের সাহায্যে খুব অল্প খরচেই এটি তৈরি করে নিতে পারেন। একটি ব্রেডবোর্ড হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই এটি কিভাবে তৈরি করা যায় সে বিষয়টি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। পাউরুটির মত অসংখ্য ছিদ্রবিশিষ্ট বলে এটির নাম ব্রেডবোর্ড।তবে বিমবোর্ড (Bimboard) নামেও এটি পরিচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url