ওয়াটার টারবাইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

টারবাইন

ওয়াটার টারবাইনঃ

পানিকে যখন কোন সরু ছিদ্র পথে প্রবাহিত হতে দেওয়া হয়। তখন এটি প্রচন্ড বেগে ধাবিত হয়। তখন এই পানির যােয়ারের নিচে কোন টারবাইন, স্থাপন করা হলে, টারবাইনটি পানির ধাক্কায় ঘুরতে থাকে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

অতএব বলা যায়, যে মেশিন ওয়াটার এনার্জি (হাইড্রো পাওয়ার)-কে মেকানিক্যাল এনার্জিতে কনভার্ট করে তালে ওয়াটার টারবাইন বলে।

ওয়াটার টারবাইনের শ্রেণিবিভাগঃ

ওয়াটার টারবাইনকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায। যথাঃ

(ক) ওয়াটার অ্যাকশন অনুসারেঃ

(১) ইম্পালস টারবাইন ( Impulse Turbine) যেমনঃ পেল্টন টারবাইন ।

(২) রিঅ্যাকশন টারাবইন (Reaction Turbine) যেমনঃ কাপলান টারবাইন, ফ্রান্সিস টারবাইন।

(খ) ওয়াটার ফ্লো ডিরেকশন অনুসারেঃ

(১) ট্যানজেনশিয়াল ফ্লো টারবাইন (Tangential Flow Turbine)

(২) রেডিয়াল ফ্লো টারবাইন (Radial Flow Turbine)

(৩) এক্সিয়াল ফ্লো টারবাইন (Axial Flow Turbine)

(৪) মিক্সড ফ্লো টারবাইন (Mixed Flow Turbine)

(গ) হেড অনুসারে অনুসারেঃ

(১) হাই-হেড টারবাইন (High Head Turbine)

(২) মিডিয়াম হেড টারবাইন (Medium Head Turbine)

(৩) লাে হেড টারবাইন (Low Head Turbine)

(ঘ) স্প্যাসিফিক স্পিড় অনুসারেঃ

(১) লাে স্প্যাসিফিক স্পিড টারবাইন (Low specific Turbine)

(২) মিডিয়াম স্প্যাসিফিক স্পিড় টারবাইন (Medium Specific Turbine)

(৩) হাই স্প্যাসিফিক স্পিড় টারবাইন (High Specific Turbine)

(ঙ) ডিসপজিশন অব শ্যাফট অনুসারেঃ

(১) ভার্টিক্যাল শ্যাফট টারবাইন (Vertical Shaft Turbine)

(২) হরিজন্টাল শ্যাফট টারবাইন (Horizontal Shaft Turbine)

(চ) আবিষ্কারকের নাম অনুযায়ীঃ

(১) পেল্টন টারবাইন

(২) ফ্রান্সিস টারবাইন

(৩) কাপলান টারবাইন

(৪) কারনেয়রন টারবাইন

(৫) থমশন টারবাইন

(৬) জনভাল টারবাইন

(৭) গিরার্ড টারবাইন।

ইম্পালস ওয়াটার টারবাইনের নীতিঃ

ইম্পালস অর্থ আঘাত। পানির আঘাতে এ টারবাইন পরিচালিত হয় বলে এ টারবাইনকে ইম্পালস টারবাইন বলা হয়। ইম্পালস টারবাইন এ, পানির সমস্ত এনার্জি কাইনেটিক এনার্জি বা ভেলােসিটি হেডে কনভার্ট হয়ে এই এনার্জি কনভারশন সাধারণত একটি অথবা একের অধিক নজল দ্বারা সংঘটিত হয়। নজল হতে পানির জেট রানারের সাথে সংযুক্ত বাকেটের উপর আঘাত করে এবং এভাবে এনার্জি ট্রান্সফারড হয়।

রিঅ্যাকশন ওয়াটার টারবাইনের নীতিঃ

যে টারবাইনে পানির চাপশক্তি এবং গতিশক্তি উভয়ই ব্লেডে ক্রিয়া করে চাকায় ঘূর্ণন গতি সৃষ্ট করে, তাকে রিঅ্যাকশন টারবাইন বলে। রিঅ্যাকশন টারবাইন এ পানি প্রথমে স্থির গাইড ভেনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় যেখানে সমস্ত এনার্জির কিছু অংশ কাইনেটিক এনার্জিতে কনভার্ট হয়। অতঃপর গাইড ভেনসমূহ পানি ডাইরেক্টলি রানারের সমস্ত পরিধি বরাবর ডিসচার্জ করে। ফলে রানারে প্রেসার এনার্জি কাইনেটিক এনার্জিতে কনভার্ট হয়। 

ইম্পালস এবং রিঅ্যাকশন টারবাইনের মধ্যে পার্থক্যঃ

ইম্পালস টারবাইনঃ

(১) পানির সমস্ত এনার্জি কাইনেটিক এনার্জিতে কনভার্ট হয়।

(২) পানির জেট নজল হতে বাকেটে আঘাত করে।

(৩) পানি কাইনেটিক এনার্জি নিয়ে বাকেটে আঘাত করে।

(৪) প্রেসার অ্যাটমােসফেরিক (বায়মণ্ডলীয়)।

(৫) রানার পানিপূর্ণ অবস্থায় না থাকলেও সমস্যা হয় না।

(৬) পানির জেটের কাইনেটিক এনার্জির পরিবর্তনই হচ্ছে কাজ।

(৭) হুইল পানিপূর্ণ অবস্থায় চলা প্রয়ােজনীয় নয়। অধিকন্তু, ভেন এবং হুইলের মধ্যে মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা উচিত।

(৮) হুইলের পরিধির কোন এক অংশে বা পুরাে পরিধি জুড়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।

(৯) কোন লস ব্যতিরেকে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

রিঅ্যাকশন টারবাইনঃ

(১) পানির সমস্ত এনার্জির কিছু অংশ কাইনেটিক এনার্জি এবং বাকি অংশ প্রােসর এনার্জিতে কনভার্ট হয়।

(২) পানি স্থির গাইড ভেনের মধ্য দিয়ে মুভিং রানারে

ডিসচার্জ হয়।

(৩) পানি রানারে প্রেসার এনার্জি নিয়ে গড়িয়ে যায়।

(৪) রানারে প্রেসার ডিফারেন্স থাকে।

(৫) রানার পানিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

(৬) প্রায়ই প্রেসার এনার্জির পরিবর্তনই কাজ।

(৭) হুইল সবসময় পানিপূর্ণ অবস্থায় চলা প্রয়ােজন

এবং পানিপূর্ণ রাখা হয়।

(৮) হুইলের পুরাে পরিধি জুড়ে পানি প্রবেশ করবে।

(৯) কোন লস ব্যাতিরেকে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

পেল্টন, কাপলান এবং ফ্রান্সিস ওয়াটার টারবাইনের গঠনঃ

টারবাইন

(১) পেন্টল ওয়াটার টারবাইন (Pelton Water Turbine) : পেল্টন ওয়াটার টারবাইনের প্রধান অংশগুলোঃ

(ক) নজল (Nozzle) : এটি পেনস্টকের (Penstock) শেষপ্রান্তে অবস্থিত এবং হাইড্রলিক এনার্জি কাইনেটিক এনার্জিতে কনভার্ট করে। নজলে স্পিয়ার মেকানিজম (Spear Mechanism) থাকে যা পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

(খ) বাকেটস এবং রানার (Buckets and Runner): রানার হলাে একটি গােলাকার ডিস্ক। বাকেটসমূহ মুভিং রানারের পরিধিতে সংযুক্ত থাকে।

(গ) ক্যাসিং (Casing) : ক্যাসিং সাধারণত পানির এসপ্লাশিং (Splashing) প্রতিরােধ করে এবং দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে সেফগার্ড হিসাবে কাজ করে।

(ঘ) হাইড্রলিক ব্রেক (Hydraulic Brake) : নজল বন্ধ করলেও ইনারশিয়ার কারণে রানার রিভলভিং হতে থাকে। হাইড্রলিক ব্রেক বাকেটের বিপরীত দিকে অবস্থিত একটি ছােট নজলের মাধ্যমে পানির জেট নিক্ষেপ করার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই রানার থেমে যায়।

(ঙ) ডিফ্লেকটর (Deflector) : যখন টারবাইনের উপর লােড কমে যায় তখন নজল বন্ধ হয়ে ওয়াটার সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। ফলে পেনস্টকে অত্যধিক ওয়াটার হ্যামার হয়। ওয়াটার হ্যামার এড়ানাের জন্য নজল ধীরে ধীরে বন্ধ হয় এবং কিছু পানি বাকেট হতে ডিফ্লেকটর হয় একটি মােভাবল স্টিল প্লেট যায় একে ডিফ্লেকটর বলে।

টারবাইন

(২) কাপলান ওয়াটার টারবাইন (Kaplan Water Turbine) :

কাপলান টারবাইনে স্করল ক্যাসিং গাইড মেকানিজম এবং ড্রাফট টিউব থাকে। এদের আকৃত ফ্রান্সিস টারবাইনের মতাে। তবে রানারের ব্লেডের আকৃতি ফ্রান্সিস টারবাইনের হতে আলাদা।

টারবাইন

(৩) ফ্রান্সিস টারবাইন (Francis Turbine) : 

ফ্রান্সিস টারবাইনের প্রধান অংশগুলাের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলােঃ

(ক) স্করল ক্যাসিং (Scroll Casing) : টারবাইন রানার এবং গাইড মেকানিজম এর চতুপার্শ্বে স্করল ক্যাসিং অবস্থিত। গাইড ভেনের উপর দিয়ে পানি ডিস্ট্রিবিউটর করা এর কাজ।

(খ) গাইড ভেলস (Guide vanes) : এটি রানারের পরিধিতে অবস্থিত। গাইড ভেনসমূহের কাজ হচ্ছে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে রানারে সাপ্লাই করা এবং রানারের উপর পানির দিক প্রয়ােজনীয় ডিজাইনের কোণে পৌছান।

(গ) রানার (Runner) : ফ্রান্সিস টারবাইনে রানার হচ্ছে কতকগুলাে ভেনের সমন্বয়ে গঠিত এবং দুটি সার্কুলার প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। ভেনের সংখ্যা সাধারণত 16-24 টি।

(ঘ) ড্রাফট টিউব (Draft Tube) : ড্রাফট টিউব হচ্ছে পাইপ বা প্যাসেস (passage) যা রানারের আউটলেট হতে পানি সংগ্রহ করে এবং টেইলরেন্সকে ডিসচার্জ করে।

টারবাইন

পেল্টন, কাপলান এবং ফ্রান্সিস ওয়াটার টারবাইনের কার্যপ্রণালিঃ

পেল্টন ওয়াটার টারবাইন (Pelton water Turbine) : পেল্টন ওয়াটার টারবাইন ইম্পালস টারবাইন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি অধিক হেড এবং কম ডিসচার্জের জন্য কাজ করে। পেনস্টক হতে নজলের মাধ্যমে পানি রানারের টানজেনসিয়াল ডাইরেকশনে বাকেটে আঘাত করে। পানির ইম্প্যাক্ট অব ফোর্সে রানার বা হুইল ঘুরতে শুরু করে। হুইল হতে পানি টেইলরেন্সে ডিসচার্জ হয়।

পেল্টন ওয়াটার টারবাইন

কাপলান টারবাইন (Kaplan Turbine) : এটি এ্যাক্সিয়াল ফ্লো রিঅ্যাকশন টারবাইন (Axial Flow Reaction turbine) এই টারবাইন কম হেড এবং অধিক ডিসচার্জের জন্য উপযুক্ত এই টারবাইনে পানি শাফটের প্যারালালে ফ্লো হয়। পেনস্টক দিয়ে পানি স্করল ক্যাসিং এ প্রবেশ করে। অতঃপর গাইড ব্লেডের মাধ্যমে ভেনসমূহের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রানারে আঘাত করে। ফলে রানার ঘুরতে থাকে।

কাপলান টারবাইন

ফ্রান্সিস টারবাইন (Francis Turbine) : ফ্রান্সিস টারবাইন রেডিয়াল ফ্লো রিঅ্যাকশন টারবাইন। পেনস্টক হতে পানি স্করল বা স্পাইরাল ক্যাসিং প্রবেশ করে অতপর পানি গাইড ভেনসমূহের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টারবাইনের রানারের পরিধির চারদিকে সরবরাহ করে। ফলে রানার ঘুরতে থাকে। পানি রানারের প্রবাহিত হওয়ার পর ড্রাফট টিউরের ভেতর দিয়ে টেইলরেন্সে ফ্লো হয়।

ফ্রান্সিস টারবাইন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url